আজ ৭ জুন। ‘ওয়ার্ল্ড ফুড সেফটি ডে’ বা ‘বিশ্ব খাদ্য সুরক্ষা দিবস’। এবারের থিম— ‘Food standards save lives’ অর্থাৎ ‘খাদ্যের গুণগত মান বাঁচায় জীবন’
সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও সুষম খাবারই
শরীরকে সুস্থ রাখার প্রথম পদক্ষেপ
প্রীতিময় রায়বর্মন
আমাদের মৌলিক চাহিদাগুলির অন্যতম হল খাদ্য। ২০১৯ সাল থেকে ৭ জুন পালিত হয়ে আসছে ‘বিশ্ব খাদ্য সুরক্ষা দিবস’। ‘বিশ্ব খাদ্য সুরক্ষা দিবস’ পালনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ২০১৬ সাল থেকে রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ সভার একাধিক অধিবেশনে আলোচনা চলতে থাকে। ২০১৮ সালে রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ সভায় ৭ জুন দিনটিকে ‘বিশ্ব খাদ্য সুরক্ষা দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর থেকেই রাষ্ট্রসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষি বিভাগ (এফএও) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) যৌথভাবে এই দিনটি পালন করে আসছে। ২০১৯ সালে প্রথম ‘বিশ্ব খাদ্য সুরক্ষা দিবস’–এর থিম ছিল— ‘Food Safety, everyone’s business’।
খাবারের মধ্যে দিয়ে শরীরে নানা ধরনের জীবাণুর প্রবেশ ঘটে। চিকিৎসকরা বলছেন, খাবারে থাকা ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া–সহ অন্যান্য জীবাণু থেকে প্রায় ২০০ রকমের রোগ হতে পারে। আর এই জীবাণুর কোনওটিকেই খালি চোখে দেখা যায় না। তাই খাদ্যশস্য উৎপাদন থেকে প্রক্রিয়াকরণ, সংরক্ষণ, বাজারে নিয়ে যাওয়া এবং বিক্রি বা বন্টন— প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাড়তি সুরক্ষা বলয়ের প্রয়োজন। এর পাশাপাশি আমরা দৈনন্দিন যে খাবার খাচ্ছি সেটা শরীরের পক্ষে আদৌ উপকারি না তার কোনও ক্ষতিকর দিক আছে— সেটা সম্পর্কেও আমাদের অবগত থাকা দরকার।
খাবার থেকে হওয়া রোগের প্রবণতা কমানো ও খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং সচেতনতা বাড়ানোই দিনটির মুখ্য উদ্দেশ্য। বর্তমানে খাবারের গুণগতমান যাচাইয়ে বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। ভেজাল বা সঠিক খাবার না খেলে যে সব রোগ হতে পারে সে বিষয়ে মানুষকে সচেতন করার নানা কর্মসূচি পালন করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। তাদের মতে, নিরাপদ উপায়ে খাদ্যের উৎপাদন ও ব্যবহার বিশ্ববাসীকে যেমন সুস্থ রাখবে, তেমনই অর্থনীতিকেও দীর্ঘদিন সুফল দেবে।
খাদ্য সুরক্ষায় বাড়তি সচেতনতার পাশাপাশি হাইজিন বা পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতাকেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। খাওয়ার আগে অন্তত ২০ সেকেন্ড সাবান জলে হাত ধোয়া বা হাত স্যানেটাইজ করা খুবই জরুরি। প্যাকেটজাত খাবার সংরক্ষণের সময় সেগুলো যাতে জীবাণুমুক্ত থাকে সেদিকে বাড়তি নজরদারি দরকার। বাজার থেকে কেনা ফল, সবজি বাড়ি এনে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে তবেই তা ফ্রিজে বা অন্যত্র সংরক্ষণ করুন। খাবার বা রান্না করার থালা, বাসন ভালো করে ধুয়ে তবেই ব্যবহার করুন। সবচেয়ে ভালো গরম জলে ধোয়া।
উন্নয়নশীল ও নিম্ন আয়ের দেশগুলিতে খাবার থেকে হওয়া অসুখ–বিসুখের প্রবণতা বেশি। মূলত ৫ বছরের কমবয়সীদের মধ্যে এর প্রবণতা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। রাষ্ট্রসঙ্ঘের পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১,৬০,০০০ মানুষ অসুরক্ষিত খাবারের কারণে অসুস্থ হয় পড়েন। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩৪০ জন শিশু মারা যাচ্ছে খাদ্যবাহিত অসুখের কারণে। শুধুমাত্র ভেজাল খাবারের কারণে সারা বিশ্বে প্রায় ৪ লক্ষ ২০ হাজার মানুষ নানা সংক্রমণে সংক্রমিত হন। এর মধ্যে ৪০%–এর বয়স ৫–এর কম। প্রতি বছর প্রায় ১ লক্ষ ২৫ হাজার শিশুর মৃত্যুর কারণ ভেজাল খাবার। বিশ্বে প্রতি ১০ জনের মধ্যে ১ জন খাদ্যবাহিত অসুখে আক্রান্ত। শুধুমাত্র খাদ্য সুরক্ষা বা খাদ্য সঙ্কট দূর করাই নয়, শরীরকে সুস্থ ও প্রাণবন্ত রাখার জন্য দরকার সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও সুষম খাদ্য, তার উপরও গুরুত্ব দিয়েছে রাষ্ট্রসঙ্ঘ।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন। ভেজাল খাবার থেকে দূরে থাকুন। উৎপাদন থেকে বন্টন প্রতিটি ক্ষেত্রেই থাকুক সুরক্ষা বলয় ও রাষ্ট্রের নজরদারি। সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও সুষম খাবারই শরীরকে সুস্থ রাখার প্রথম পদক্ষেপ।
সব ছবি: আন্তর্জাল
Leave a Reply
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Comments