জীবন এখন দ্রুতগতির। অনেক আধুনিক। তবে কায়িক পরিশ্রম বা শরীরচর্চায় অনেকেরই তীব্র অনীহা। বাড়ির খাবারের চেয়ে ফাস্ট বা জাঙ্ক ফুডে বেশি ঝোঁক। সেই সঙ্গে মদ্যপান, অতিরিক্ত মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়া, কোমল পানীয় ইত্যাদি তো রয়েছেই। পরিণতি ওবেসিটি বা স্থূলতা


যত কাণ্ড ভুঁড়িতে!‌
প্রীতিময় রায়বর্মন

ওবেসিটির অন্যতম হল অ্যাবডোমিনাল বা সেন্ট্রাল ওবেসিটি। পেটে মেদ জমা। সোজা কথায় ভুঁড়ি। আর এখন কিন্তু ভুঁড়ি মানেই শরীরে রোগের বাস বলেই মনে করা হয়। সঠিক ওজন মাপার পরিমাপকে বলা হয় বিএমআই। বিএমআই = ওজন (‌কেজি)‌ ÷‌ উচ্চতার বর্গফল (‌মিটার)।‌‌ বিএমআই ১৮.‌৫–২৪.‌৯ পর্যন্ত স্বাভাবিক। ২৫–২৯.‌৯ বেশি ওজন বা ওভারওয়েট। আর ৩০–এর ওপর হলে ওবেসিটি বা স্থূলতা। এশীয় বংশোদ্ভূতদের ক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায় বিএমআই স্বাভাবিক থাকলেও পেটে মেদ বেশি অর্থাৎ তিনি অ্যাবডোমিনাল ওবেসিটির শিকার। আর এই অ্যাবডোমিনাল ওবেসিটি–ই এই অঞ্চলের মানুষদের ঠেলে দিচ্ছে নানা রোগের দিকে। ছেলেদের ক্ষেত্রে ৯০ সেমি এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে ৮০ সেমি বেশি পেটের মাপ হলে সেটা অ্যাবডোমিনাল ওবেসিটি।

গবেষণায় দেখা গেছে, দক্ষিণ এশিয়াবাসীদের ওজন বা বিএমআই খুব একটা বেশি না হলেও, শুধুমাত্র পেটে মেদাধিক্যর কারণে হার্টের অসুখের ঝুঁকি বাড়ছে। পেটে মেদাধিক্যে বা ভুঁড়ির সঙ্গে যদি হাই ব্লাডপ্রেশার বা উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি ইত্যাদি যদি থাকে তখন তাকে বলা হয় মেটাবলিক সিনড্রোম। এই মেটাবলিক সিনড্রোম হার্টের অসুখ, ফ্যাটি লিভার ইত্যাদির অন্যতম প্রধান একটি কারণ। 

ভুঁড়ি মানেই পেটের ভেতরকার বিভিন্ন অঙ্গ–প্রত্যঙ্গের গায়েও চর্বির পরিমাণ বেশি থাকা। চিকিৎসার পরিভাষায় যাকে বলে ভিসেরাল ফ্যাট। আর এই ফ্যাটই উচ্চ রক্তচাপ থেকে টাইপ–টু ডায়াবেটিস, খারাপ কোলেস্টেরল বৃদ্ধি, হার্ট অ্যাটাক, ফ্যাটি লিভার ইত্যাদি আরও অনেক অসুখের সূত্রপাত করে। তাই বলাই যায়, সুস্থ শরীরের অন্যতম প্রধান শত্রু ভুঁড়ি।
তাহলে অ্যাবডোমিনাল ওবেসিটি থেকে বাঁচবো কীভাবে?‌
✦  সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন ৩০–৩৫ মিনিট করে হাঁটুন। সঙ্গে পরিমিত শরীরচর্চা ও কায়িক পরিশ্রম। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ওবেসিটির হাত থেকে বাঁচতে প্রতিদিন ৮,০০০ বেশি স্টেপস আর ওভারওয়েট হলে প্রতিদিন অন্তত ১১,০০০ স্টেপস হাঁটা দরকার।

✦ যতটা সম্ভব উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। বেশি চর্বিযুক্ত খাবার, ট্রান্সফ্যাট খাওয়া চলবে না। ওয়ের্ক ফোর্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, যখন কোনও কিছু ভাজার জন্য একই তেলে বারবার ব্যবহার করা হয়, তখনই উৎপন্ন হয় ট্রান্সফ্যাট। পেটে মেদ বাড়ার অন্যতম কারণ এই ট্রান্সফ্যাট। 
✦ জাঙ্ক ফুড, ফাস্ট ফুডের মোহ কাটিয়ে খেতে হবে পরিমিত পরিমাণে সবুজ ও তাজা শাকসবজি, ফলমূল। ডায়েটে থাকা চাই স্বাস্থ্যকর প্রোটিনও। খেতে পারেন গ্রীন টি। এতে রয়েছে অ্যান্টি–অক্সিড্যান্ট, যা মেদ ঝরাতে সাহায্য করে। খেতে হবে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবারও। যেমন সামুদ্রিক মাছ।

✦ একবারে অতিরিক্ত খাবার না খেয়ে, বারে বারে অল্প পরিমাণে খাবার খান। আর সেটা ৫–৬ বার হতেই পারে।
✦ কিছু গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, মেদ কমাতে রসুনের কার্যকরি ভূমিকা রয়েছে। তাদের পরামর্শ সকালে এক কোয়া রসুন চুষে খান। এতে ঝরবে বাড়তি মেদ। আর সকালে হালকা গরম জলে লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন।

✦ ছাড়তে হবে ধূমপান, মদ্যপানের বদভ্যাস।
✦ স্ক্রিন টাইম কমিয়ে হাঁটাহাটি, শরীরচর্চায় নজর দিন। খাবার পর শুয়ে বা বসে না থেকে অন্তত ১৫–২০ মিনিট হাঁটুন। যাদের অনেকক্ষণ বসে কাজ করতে হয়, তাদের পেটে খুব সহজেই মেদ জমে। তাই ৩০–৪০ মিনিট অন্তর ১০–১৫ মিনিট হাঁটাহাঁটি করুন। 
✦ ঘুম খুব জরুরি। রাতে কম করে ৭–৮ ঘণ্টা ঘুম দরকার। 

অ্যাবডোমিনাল ওবেসিটি বা ভুঁড়িতে লুকিয়ে থাকে অনেক রোগের বার্তা। তাই শরীরচর্চায় অনীহা, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের মোহ কাটিয়ে নিয়মিত শরীরচর্চা, হাঁটাহাঁটি, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত হোন। আর না হলে বিপদ আসন্ন। প্রয়োজনে ডায়েটেশিয়ান বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।

সব ছবি:‌ আন্তর্জাল
(‌নিবন্ধটি শুধুমাত্র সচেতনতার জন্য।
কোনও ডাক্তারী পরামর্শ নয়।
অ্যাবডোমিনাল ওবেসিটি সংক্রান্ত সমস্যায় চিকিৎসক, ডায়েটেশিয়ান বা ফিটনেস ট্রেনারের পরামর্শ নিতে পারেন।)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *