আজ বিশ্ব ঘুম দিবস। ব্যালান্সড ডায়েট, নিয়মিত শরীরচর্চার পাশাপাশি শরীরকে সুস্থ রাখতে প্রয়োজন গড়ে প্রতিদিন ৬–৮ ঘণ্টা ঘুম। এবারের থিম— ‘‌স্বাস্থ্যের জন্য ঘুম অপরিহার্য’


ভালো ঘুম
ভালো থাকা
প্রীতিময় রায়বর্মন

ঘুমের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে ২০০৮ সাল থেকে ‘‌ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশন অফ স্লিপ মেডিসিন’ (‌বর্তমানে ওয়ার্ল্ড স্লিপ সোসাইটি)‌‌ বিশ্ব ঘুম দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। প্রতি বছর মার্চ মাসে মহাবিষুবের আগের শুক্রবার পালন করা হয় বিশ্ব ঘুম দিবস। দিনটি পালনের মূল লক্ষ্য— সুস্থ থাকতে ঘুমের প্রয়োজনীয়তা জনসমক্ষে তুলে ধরা। 

জেগে থাকাকালীন শারীরিক ও মানসিক কার্যকলাপ ঠিক রাখার জন্য পরিমিত ঘুম প্রয়োজন। আমরা যখন ঘুমোই, তখন শরীরের বিভিন্ন অংশ বিশ্রাম নেয়। যদি ঠিকমতো ঘুম না হয়, তাহলে তার প্রভাব পড়ে মস্তিষ্কের কার্যকলাপে। শরীরে আসে ক্লান্তি। কম ঘুমের ফলে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৪৫%‌ মানুষ নানারকমের অসুখের ঝুঁকিতে রয়েছেন।

‘ল্যানসেট’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক তথ্যে দেখা যাচ্ছে, করোনা অতিমারীর সময় থেকে প্রায় ৫১% প্রাপ্তবয়স্ক এবং ৬৭% শিশু অনিদ্রার শিকার। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে ডিজিটাল ডিভাইসের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত আসক্তি। ডিজিটাল ডিভাইস নির্গত নীল আলোকরশ্মি ঘুমের জন্য প্রয়োজনীয় মেলাটোনিন হরমোনের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

আমেরিকার ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশনের বিশেষজ্ঞদের মতে, ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সি বয়স্কদের ৭–‌৮ ঘণ্টা, ২৬–‌৬৪ বছর বয়সি প্রাপ্তবয়স্ক ও ১৮–‌২৫ বছর বয়সি তরুণদের ৭–‌৯ ঘণ্টা এবং ১৪–‌১৭ বছর বয়সি কিশোরদের ৮–‌১০ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন।

এ ছাড়া শিশুদেরও সুস্থ শরীরের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমের দরকার। ৩ মাস পর্যন্ত শিশুর ঘুম দরকার ১৪–‌১৮ ঘণ্টা, ৪–‌১১ মাস ১২–‌১৫ ঘণ্টা, ১–‌২ বছর ১১–‌১৪ ঘণ্টা, ৩–‌৫ বছর ১০–‌১৩ ঘণ্টা এবং ৬–‌১৩ বছর ৯–‌১১ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন।

অনেকেই এখন ব্যালান্সড ডায়েট থেকে নিয়মিত শরীরচর্চা, ওজন নিয়ন্ত্রণের‌ চেষ্টা— ‌সবটাই করেন, কিন্তু কখনওই ঠিক সময় পরিমিত ঘুমোন না, আর এই না ঘুমনোটাই হার্ট অ্যাটাক বা অন্য কোনও অসুখের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আমাদের এখানে এখন অনেক পেশার কর্মীরাই ঘুমের সময় কমিয়ে কাজের সময় বাড়িয়েছেন। কিছুদিন হয়তো তাঁরা এভাবে কাজ করে যেতে পারবেন। কিন্তু কম ঘুমিয়ে দীর্ঘদিন সুস্থ শরীরে কাজ করে যাওয়া সম্ভব নয়। শরীরে নানা সমস্যা দেখা দিতে বাধ্য। ফলে কাজের গুণগতমান যেমন খারাপ হবে, তেমনই কমবে হিউম্যান রিসোর্সও।

ভালো ঘুমের জন্য
✔‌ দিনের বেলায় না ঘুমনোই ভাল।
✔ রাতে ঘুম পেলে তবেই বিছানায় যান। 
✔ সন্ধের পর চা, কফি, ধূমপান, মদ্যপান ইত্যাদি যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন।

✔ ঠান্ডা লাগার ধাত না থাকলে, সম্ভব হলে শুতে যাওয়ার আগে স্নান করতে পারেন। 
✔ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনওরকম ওষুধ খাবেন না, আর ঘুমের তো একেবারেই নয়।
✔ বই পড়তে ভালো লাগলে ঘুমনোর আগে বই পড়ুন, গান ভালবাসলে গানও শুনতে পারেন।

✔ বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, সন্ধের পর বা ঘুমনোর কিছুক্ষণ আগে ঠান্ডা জল, গ্রিন টি, ঠান্ডা দুধ, কলা ইত্যাদি অল্প পরিমাণে খেলে তা ভালো ঘুমে সহায়তা করে। 
✔ নিয়মিত শরীরচর্চা, হালকা ব্যায়াম বা যোগব্যায়াম, সাঁতার কাটা, হাঁটা ইত্যাদি করুন এবং নিজেকে সবসময় সচল রাখার চেষ্টা করুন। 

✔ এখন অনেকেই রাত পর্যন্ত কম্পিউটারে কাজ বা মোবাইলে চ্যাট বা বিভিন্ন খেলাকে অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন। আজকের দিনে ঘুম না হওয়ার অন্যতম কারণ এই ডিজিটাল ডিভাইসে নিজেকে ব্যস্ত রাখা। তাই ভালো ঘুমের জন্য শুতে যাওয়ার কিছুক্ষণ আগে থেকেই এগুলো থেকে বিরত থাকুন। অফ রাখুন স্মার্টফোন। 
✔ সম্ভব হলে প্রতিদিন ঘুমনোর আর ঘুম থেকে ওঠার নির্দিষ্ট সময় বজায় রাখার চেষ্টা করুন।

ভালো ঘুম, ভালো থাকা।

সব ছবি:‌ আন্তর্জাল
ব্যবহৃত ছবির সঙ্গে অসুখের কোনও সম্পর্ক নেই
নিবন্ধটি শুধুমাত্র সচেতনতার জন্য, ঘুম সংক্রান্ত সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *