শরীর দুর্বল লাগলে অনেকেরই অভ্যেস চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ভিটামিন ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল খাওয়া। তাঁদের ধারণা, ভিটামিন ওষুধ খেলেই শরীর চাঙ্গা হয়ে যাবে। ‘ওভার দ্যা কাউন্টার’ ওষুধ হিসেবে বিশ্বের বাজারে ভিটামিন ও আয়রন ট্যাবলেটের চাহিদা তুঙ্গে। এ ব্যাপারে সতর্কবার্তা দিল অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‌পাবলিক হেলথ নিউট্রিশন‌ বিভাগ। তারা জানিয়েছে, ভিটামিন ওষুধ কখনই দুর্বলতা দূর করার একমাত্র চিকিৎসা হতে পারে না। কেন শরীর দুর্বল লাগছে সেটা জেনে তার চিকিৎসা করাটাই দরকার

খেয়ালখুশি মতো ভিটামিন নয়
প্রীতিময় রায়বর্মন

অনেকেই আজ ‘নিজেই ডাক্তার’। ভাবেন ভিটামিন ট্যাবলেট খেলেই শরীর ফিট থাকবে। অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‌পাবলিক হেলথ নিউট্রিশন বিভাগের গবেষকরা বলছেন, অতিরিক্ত মাত্রায় ভিটামিন শরীরকে সুস্থ করার বদলে অন্য কোনও রোগ ডেকে আনতে পারে। গবেষকদের মতে, সুষম খাদ্য যদি ঠিক মতো খাওয়া যায়, তা হলে দরকার পড়ে না ভিটামিন ট্যাবলেটের।

অনেকেই ভাবেন, ভিটামিন ওষুধ খাচ্ছি তো আর শাক–সবজি, ফলমূল, মাছ ইত্যাদি ঠিক মতো খাওয়ার দরকার নেই। তাঁদের ভাবনাটা একেবারেই ভুল। গবেষকরা বলছেন, ভিটামিন কখনই সুষম খাদ্যের বিকল্প নয়। এছাড়া প্রতিদিন একটা বা দুটো ভিটামিন ট্যাবলেট কখনই শরীরে ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করতে পারে না।
অতিরিক্ত ভিটামিন ট্যাবলেট খাওয়ার বিপদ সম্পর্কে গবেষকরা বলছেন— 

অতিরিক্ত বিটা ক্যারোটিন (ভিটামিন ‘এ’) জাতীয় ভিটামিন ওষুধ খেলে ফুসফুসের ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে‌। 
কিছু কিছু ভিটামিন ওষুধ অন্য ওষুধের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

ক্যালসিয়াম বেশি মাত্রায় খেলে কিডনিতে পাথর হতে পারে। 
কোনও কোনও ভিটামিনে হজম ক্ষমতা কমে যায়। 
অতিরিক্ত ভিটামিন বি–৬ জরায়ুর ক্ষতি করতে পারে।
রক্ত পরীক্ষা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া আয়রন ট্যাবলেট খেলে শরীরে বেড়ে যেতে পারে আয়রনের পরিমাণ, যা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। 
অতএব, ভিটামিন ওষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

এর পাশাপাশি কোন সময় কোন ধরনের ভিটামিন শরীরের প্রয়োজন তাঁরও পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা। তবে কোনওটাই মাত্রাতিরিক্ত বা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নয়— 
যাঁদের বয়স ‌৬০ পেরিয়েছে তাঁদের জন্য উপকারি ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ‘ডি’, ভিটামিন ‘বি–১২’।
যাঁরা খুব একটা পরিশ্রম করেন না, তাঁদের জন্য উপকারি ভিটামিন ‘ডি’। 

উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, শরীরে মেদ বেশি থাকলে উপকারি ওমেগা থ্রি।
যাঁরা মাছ, মাংস খান না, নিরামিষ খান, তাঁদের জন্য উপকারি ভিটামিন বি–১২। 
গর্ভবতী মহিলাদের প্রথম ৩ মাস উপকারি ভিটামিন ফলেট বা ফলিক অ্যাসিড।

হজম ও বিপাকে সমস্যা থাকলে উপকারি ভিটামিন বি–১ এবং ভিটামিন বি–১২।
যাঁরা হাড়ের অসুখ অস্টিওপোরোসিসে ভুগছেন, তাঁদের জন্য উপকারি ক্যালসিয়াম জাতীয় ভিটামিন। 
কার্টিলেজ বা তরুণাস্থির ক্ষয়ের রোগীদের জন্য উপকারি গ্লুকোস্যামাইন।

শেষে আবারও বলছি, যে কোনও ভিটামিন ওষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।‌ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া যে কোনও ‘ওভার দ্যা কাউন্টার’ ওষুধ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

সব ছবি: আন্তর্জাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *