চলছে দহন দিন। তাপপ্রবাহ। ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গরমে নাজেহাল দশা


উফ‌!‌ কী গরম!‌
প্রীতিময় রায়বর্মন

গরম বলে তো আর ঘরে বসে থাকলে চলবে না। ঘর থেকে বেরোতেই হবে। কাজও করতে হবে। কারণ জীবন থেমে থাকে না। তাই এই গরমে সুস্থ থাকতে মেনে চলতে হবে বেশ কিছু নিয়ম—

কী করবেন
খুব দরকার ছাড়া প্রবীণ মানুষরা রোদে বেরোবেন না। দুপুর ১১টা থেকে ৪টে পর্যন্ত বাইরে কোনও কাজ না রাখাই ভালো।
বেরোনোর আগে স্নান করেই বেরোবেন। বাড়ি ফিরে কিছুক্ষণ পর আবার স্নান করুন। স্নানের জলে জীবাণুনাশক কিছু মিশিয়ে নিতে পারেন। সব থেকে ভালো হয় যদি দিনে ২–৪ বার স্নান করতে পারেন। এতে দেহের হিট রেগুলেটিং সিস্টেম ঠিক থাকবে। যাঁদের ঠান্ডা লাগার ধাত আছে, তাঁরা গামছা বা তোয়ালে ভিজিয়ে গা মুছুন।
হালকা রঙের ঢিলেঢালা পোশাক পরুন। এমন পোশাক হবে যাতে বাতাস চলাচল করতে পারে ও শরীরে যেন সরাসরি রোদ না লাগে। পোশাক হবে অবশ্যই সুতির।
প্রবীণরা খুব সাবধানে থাকুন। অনেক সময় গরমে তাঁদের সোডিয়াম–পটাশিয়ামের মাত্রা কমে যায়। অসুস্থ বোধ করলেই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশার যাঁদের, তাঁদের খুব সাবধানে থাকতে হবে। নিয়মিত ব্লাড প্রেশার চেক করুন। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলুন।
দিনে অন্তত ৩ থেকে ৫ লিটার জল খান। তবে ক্রনিক কিডনি ডিজিজ বা হার্ট ফেলিওরের সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো জল খাবেন। যাঁদের প্রচুর ঘাম হয়, তাঁদের শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে নুন বেরিয়ে যায়। ফলে অবসাদ, মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব, হাতে–পা–পেটে খিঁচুনি হতে পারে। তাই তেষ্টা পেলে তবেই জল খাবো, এটা একদমই নয়। তেষ্টা না পেলেও কিছু সময় অন্তর অন্তর জল খান। এর পাশাপাশি ফলের রস, ডাবের জল, নুন–চিনির জল, ওআরএস, স্যুপ খান।

একদম হালকা খাবার। তেল, মশলা দেওয়া খাবার আপাতত বাদের তালিকায় রাখুন।
ছাতা ব্যবহার করুন। আর তা না হলে গলফ টুপি, পানামা হ্যাট ব্যবহার করুন। চোখে রাখুন সানগ্লাস।
ভালো ব্র্যান্ডের সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। সানস্ক্রিন মেখে সঙ্গে সঙ্গে রোদে বেরোবেন না। বেরোনোর অন্তত ৩০ মিনিট আগে মাখুন। এসপিএফ ৩০ বা তার বেশি হলে ভালো।
বাড়িতে এসি থাকলে ভালো, আর না হলে কুলার ব্যবহার করুন। কারণ ৩৫ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রায় প্রতি ডিগ্রি বাড়তি তাপে শরীর থেকে কগনিটিভ রিফ্লেক্স কমে।
অনেকেরই এই প্রচণ্ড গরমে ঘুম আসতে চায় না। কিন্তু এই সময় রাতে ঘুমের খুবই প্রয়োজন। অন্তত ৭–৮ ঘণ্টা ঘুম দরকার। শুতে যাওয়ার আগে পারলে স্নান করুন।
ঘাম বসতে দেবেন না। ঘাম হলেই তা মুছে ফেলুন। ত্বককে সবসময় শুকনো রাখুন। 
ত্বকে এই সময় নানা ধরনের সংক্রমণ দেখা দেয়। ব্যাকটিরিয়া বা ছত্রাকঘটিত এই সংক্রমণগুলো কিন্তু মারাত্মক। সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন থাকুন। ত্বককে যেমন পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, তেমনই পোশাকও পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখুন।

কী করবেন না
বাইরে বেরিয়ে তেষ্টা পেলে কোল্ড ড্রিঙ্কস একদম নয়। কাটা ফলও এড়িয়ে চলুন‌।
সিন্থেটিক বা সিল্কের পোশাক একদম নয়।
অসুস্থ বোধ করলে বাড়ি থেকে বেরোবেন না। ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
বদ্ধ জায়গায় একসঙ্গে অনেকে থাকবেন না। এতে সাফোকেশনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন।
অনেকেই গাড়ি পার্কিং করে গাড়িতে শিশু বা পোষা জীবজন্তুকে কাচ বন্ধ অবস্থায় রেখে শপিং করতে চলে যান। সেটা একদমই নয়। 
রোদ সরাসরি মাথায় লাগতে দেবেন না। রোদ সরাসরি মাথায় লাগলে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন।

বাইরে থেকে এসে সঙ্গে সঙ্গে জল খাবেন না। একটু জিরিয়ে নিয়ে তবেই জল খান। আর মনে রাখবেন, ফ্রিজের ঠান্ডা জল একদম নয়।
রোদ থেকে এসে সঙ্গে সঙ্গে স্নান নয়। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে ঘরের তাপমাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে তবেই স্নানে যান।
শরীরে অতিরিক্ত পাউডার লাগাবেন না। এতে ঘাম বা স্বেদগ্রন্থির মুখগুলো আটকে গেলে কিন্তু বিপদ।
ঘামাচি যেখানে হয়েছে সেখানটা ভুলেও চুলকাবেন না। তা হলে কিন্তু আরও বিপদ। ওখানে সংক্রমণও হতে পারে।
ঘামে ভেজা জামা ফ্যানের হাওয়ায় শুকিয়ে আবার পরলাম, এটা একদম নয়। একনাগাড়ে অনেকক্ষণ পায়ে মোজা–জুতো না রাখাই ভালো।

প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে তো আর গরম কমানো যাবে না, তাই এই দহন দিনে সুস্থ থাকতে আমাদের মেনে চলতে হবে কিছু নিয়ম। আর চাতক পাখির মতো আকাশের দিকে চেয়ে থাকা, কখন নামবে স্বস্তির বৃষ্টি!

সব ছবি:‌ আন্তর্জাল
নিবন্ধটি শুধুমাত্র সচেতনতার জন্য
কোনও ডাক্তারি পরামর্শ নয়।
যে কোনও শারীরিক সমস্যায়
চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *