অনেককেই বলতে শোনা যায়, রাতে দু–তিন ঘণ্টা ঘুমের পর যে ঘুম ভেঙে গেল, তারপর আর কিছুতেই ঘুম আসে না। ঘুম ভাঙার পর আবার যাতে ঘুমের দেশে পাড়ি জমানো যায়, সেই পথের হদিশে চলেছি আমরা


চোখে ঘুম নেই
প্রীতিময় রায়বর্মন

খাওয়াদাওয়া, খেলাধুলো বা নিয়মিত শরীরচর্চার পাশাপাশি শরীরকে সুস্থ রাখতে আরেকটা জিনিস খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তা হল ঘুম। অনেকেই এখন ব্যালেন্স ডায়েট ফলো করছেন, নিয়ম করে শারীরিক কসরত–ও করছেন, কিন্তু ঘুম ঠিকমতন হয় না!‌ 

শরীরকে সুস্থ রাখতে আমাদের ৭–৮ ঘণ্টা ঘুমের দরকার। ঘুমের রয়েছে অনেকগুলি পর্যায় বা ধাপ। যদি একটানা ঘুম হয়, তাহলে প্রতিটা পর্যাই ঠিকঠাক সম্পন্ন হয়। তবে এক ঘুমে রাত কাবার হওয়া মানুষের সংখ্যা খুবই কম, অধিকাংশেরই কোনও না কোনও কারণে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে বা ঘুম ভেঙে যায়। সেটা কোনও শব্দ বা আওয়াজ হতে পারে, আবার কোনও ভয়ের স্বপ্ন হতে পারে, কখনওবা অকারণেই ঘুম ভেঙে যায়। রাতে এই ঘুম ভাঙা খুবই সমস্যার, কারণ নতুন করে ঘুম আসাটা বেশ মুশকিলের অনেকের কাছেই। এমন পরিস্থিতিতে কী করণীয়, আর কী করণীয় নয়, রইল কয়েকটি টিপস—

ঘড়ি দেখা বারণ
রাতে ঘুম ভেঙে গেলে ভুলেও ঘড়ির দিকে তাকাবেন না। ঘড়ি দেখলেই কটায় ঘুম ভাঙল বা কতক্ষণ ধরে ঘুমানোর চেষ্টা করছেন, এইসবের হিসেব চলতে থাকবে আপনার অবচেতন মনে। পরিণতি মানসিক চাপ বৃদ্ধি। তাই ঘড়ি দেখা থেকে বিরত থাকুন। দরকারে ওয়াশরুমে যেতে পারেন।

আলোর অনুপ্রবেশ যেন না হয়
রাতে শোবার সময় ঘরের সব উজ্জ্বল আলো অফ করে দিন। জানলার পর্দা এমনভাবে রাখুন যাতে বাইরে থেকে আলো এসে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাতে না পারে। 

মোবাইল ধারেকাছে নয়
হঠাৎ করে রাতে ঘুম ভাঙলে এখন আমাদের অভ্যেস মাথার কাছে রাখা মোবাইল দেখা। এটা করবেন না। কারণ গবেষণায় দেখা গেছে ডিজিটাল স্ক্রিনের আলো ঘুমের প্রতিবন্ধক, সহজে ঘুম আসতে চায় না। তাই ঘুম ভাঙা মাত্রই মোবাইল হাতে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া বা অন্য কিছু স্ক্রল করার অভ্যেসটা ছাড়ুন। আর চিকিৎসকরা তো বারবার বলছেন, ঘুমের সময় কাছাকাছি কোথাও মোবাইল রাখবেন না।

বাইরের শব্দ যাতে ব্যাঘাত না ঘটায়
অনেক সময় বাইরে থেকে আসা কোনও শব্দ ঘুমের দফারফা করে দেয়। এর থেকে রেহাই পেতে জানলা খুব ভালো করে বন্ধ করুন। এখন গরমের দিন আসছে, ফ্যান চললে ফ্যানের শব্দে অন্য শব্দ এমনিতেই কান পর্যন্ত পৌঁছবে না। শব্দের উৎপাত বেশি হলে কানে এয়ারপ্লাগ ব্যবহার করতে পারেন। এমন অনেক ধরনের স্লিপিং মিউমিক রয়েছে, চাইলে লো ভলিউমে সেগুলো শুনতে পারেন।

নিজেকে শান্ত রাখুন
ঘুম আসছে না বলে নিজেকে চাপ বা স্ট্রেসের সাগরে নিমজ্জিত করে ফেলবেন না। শান্ত থাকুন। শরীরের পেশিগুলোকে রিল্যাক্স রাখুন। চোখ বুজে শুয়ে থাকুন। আস্তে আস্তে শ্বাস নিন ও ছাড়ুন। মনোযোগ দিন মুখের পেশির দিকে। খেয়াল রাখুন মুখের পেশি যেন কুঁচকে বা টানটান না হয়ে যায়, রিল্যাক্সে থাকে। ঘাড় ও কাঁধের পেশিগুলোকে একইভাবে রিল্যাক্স রাখার চেষ্টা করুন। এইভাবে শরীরের সব অংশকেই রিল্যাক্স রাখার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

অনেকক্ষণ ঘুম না এলে, বিছানা ছাড়ুন
ঘুম ভেঙে গেলে মোটামুটি ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মধ্যে ঘুম না এলে বিছানা থেকে উঠে পড়ুন। বাড়ির মধ্যে পায়চারি করতে পারেন। যদি বই পড়ার অভ্যেস থাকে, তাহলে ড্রয়িংরুমে বসে কোনও বই পড়ুন। তবে বই পড়ার সময় খেয়াল রাখুন, উদ্দীপনা বা মনের উপর চাপ তৈরি করতে পারে, এমন কোনও বই না পড়াই ভালো। এতে শুধু মানসিক চাপই বাড়বে, কাজের কাজ কিছুই হবে না। আর সবচেয়ে ভালো হয় ঘুম ভেঙে যাওয়ার পর অনেকক্ষণ ঘুম না এলে ধ্যান বা মেডিটেশন করতে পারেন। এতে শরীর এবং মন দুই–ই শান্ত হবে।

ঘুমের সঙ্গে আমাদের শরীরের প্রতিটা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কার্যকলাপের যোগ রয়েছে। তাই নিজেকে সুস্থ রাখতে দরকার পরিমিত ঘুম। আর কম ঘুম মানেই যে মহাবিপদের সূত্রপাত!‌‌‌

সব ছবি:‌ আন্তর্জাল‌

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *