শাক খেলে অম্বল, না খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য
তাহলে আমরা যাব কোথায়?

ডাঃ কিংশুক দাস
অধ্যাপক ও বিশিষ্ট ক্লিনিক্যাল টিউটর, এএইচআরএফ; সিনিয়র গ্যাস্ট্রো-এন্টেরোলজিস্ট; হেপাটোলজিস্ট ও ইন্টারভেনশনাল এন্ডোস্কোপিস্ট
অ্যাপোলো গ্লেনইগলস্‌ হসপিটাল, কলকাতা

এই তো পুজো আসব আসব করছিল আর হুস করে চলেও গেল। শরতের মেঘ, ভোরের ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা ভাব, শিউলির গন্ধ আর কাশফুল দেখতে দেখতে কোথা দিয়ে যে সময়টা কেটে গেল তা বোঝাই গেল না। আসলে জানেন তো, দুর্গাপুজো মানেই মিলনমেলা। আর এই মিলনমেলার একটা প্রধান অঙ্গ হল পেটপুজো। নিশ্চয়ই অবাক হননি। সে নারকেল নাড়ু, জিভে গজা বা বোঁদে, ফ্রায়েড রাইস বা মটন বিরিয়ানি যাই হোক, খাওয়ার কোনো সময় নেই আর কোনো শেষ নেই। প্যান্ডেলে ঠাকুর দেখতে দেখতে হঠাৎ আমার মাসির সঙ্গে দেখা। পা-টা ছুঁতে না ছুঁতেই মাসির জিজ্ঞাসা, তুই তো বড়ো ডাক্তার, আচ্ছা শাক খেলে অম্বল হয় আর না খেলে হয় কোষ্ঠকাঠিন্য— কোথায় যাই বল তো? আমি মনে মনে ভাবলাম, তুমি আর কোথায় যাবে! আমাকেই যাইয়ে ছাড়বে। কোনো মতে মাসির হাত থেকে রেহাই পেতে দশ মিনিট কেটে গেল। ঠাকুর দেখা মাথায় উঠল। পরে দশমীর দিন ভেবে দেখলাম প্রতিমা মাসি তো ভুল কিছু বলেনি। কত লোকই তো এসে বলেন যা খাই তাই গ্যাস হয়ে যায়, আবার কেউ বলেন সারা দিনই চোঁয়া ঢেকুর দিচ্ছে, আবার কারোর জন্ডিস হয়েছে, তিনি ছ’মাস ধরে সেদ্ধ খাচ্ছেন। 

তাহলে চলুন দেখি কোন কোন রোগে সত্যিকারের কী কী না খাওয়াটাই শ্রেয়। অতিপরিচিত রোগ অর্থাৎ পেপটিক আলসার, জি.ই.আর.ডি এবং সাধারণ মানুষের ভাষায় গ্যাসের ব্যথা (যাঁর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই)‌ তাতে মানুষ বা রোগী কী করবেন। 
এই রোগগুলোতে যত না অ্যাসিড ক্ষরণ বেশি হয় তার চেয়ে দেখা যায় রোগীর অন্ননালী, পাকস্থলি এবং অন্ত্রের স্পর্শকাতরতা বেশি। অর্থাৎ তারা অম্বল, গ্যাস, ঢেকুর এগুলোর বেশি অভিযোগ করে থাকেন। বৈজ্ঞানিক দিক দিয়ে দেখা গেছে জীবনধারার পরিবর্তন হল এ রোগের প্রধান মহৌষধ। সে তো একটা গালভরা নাম, ব্যাপারটা ঠিক কী একটু বুঝে নিই।
মােদ্দা কথা, রাতের খাওয়া আটটার আগে করতে হবে। কমপক্ষে দু’ থেকে আড়াই ঘণ্টা শোবেন না। বসে থাকা, বই পড়া, টিভি দেখা, কাজ করা সবই চলতে পারে। এই সময় সামনে ঝুকে কিছু করবেন না আর ভারি জিনিস তুলবেন না। সকালবেলা পাঁচটা থেকে ছ’টার মধ্যে উঠে একঘণ্টা হাঁটা, জগিং, যোগব্যায়াম, দৌঁড়ানো, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো অথবা জিমে যেতে পারেন। সকাল সাতটায় ভারি ব্রেকফাস্ট, দশটায় হালকা টিফিন, দুপুর একটার আগে লাঞ্চ। দুপুরবেলায় ঘুমনো বা শুয়ে রেস্ট নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিকেল চারটে থেকে পাঁচটার মধ্যে মুড়ি, বিস্কুট, চা বা হালকা খাবার চলতে পারে। তার মানে অফিস থেকে ফিরে রাত আটটা-নটায় মুড়ি, সিঙাড়া-চপ কিংবা চা খাওয়া তারপর রাত এগারোটা থেকে বারোটায় রাতের খাবার (ডিনার) খাওয়া চলবে না।

সত্যিকথা বলতে, এসব রোগে দুধ প্রায় বিষের মতো কাজ করে। ভুল করে অনেকেই ঠাণ্ডা দুধ খান, দয়া করে আর খাবেন না। দুধের মধ্যে থাকা ক্যালসিয়াম এবং কেজিন অ্যাসিড ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। ১৯১৫ সাল থেকে চলে আসা পেপটিক আলসারের চিকিৎসায় ডাঃ সিপ্পির ঘণ্টায় ঘণ্টায় দুধ খাওয়া তো ১৯৭৮ সাল থেকেই বন্ধ হয়ে গেছে। ২০২১-এ এসে দুধ খাওয়া মানে নিজেকে শেষ করে দেওয়া। গ্যাস, অম্বল, ঢেকুরে আর যেগুলো চলবে না সেগুলো হল মিষ্টি, টক ফলের রস, শুকনো লঙ্কা, আর গোল মরিচের গুঁ‌ড়ো। এখানে বলে রাখা দরকার অনেকেই দুঘণ্টা অন্তর খাবার খান, এতে রিবাউন্ড অ্যাসিডিটি হয়। দুবার খাওয়ার মধ্যে ব্যবধান তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টা রাখাই ভালো।
এবার দেখে নিই কোন কোন খাবার থেকে গ্যাস বেশি হয়। প্রথম এবং প্রধান হল দুধ। আমাদের এশিয়ানদের ৭০ শতাংশ মানুষেরাই ল্যাক্টোজ ইনটলারেন্ট। দুধকে হজম করার এনজাইম ল্যাকটেজ ক্ষুদ্রান্ত্রে থাকেই না, তাই তাদের দুধ পুরোপুরি বন্ধ। কোল্ডড্রিঙ্কস এবং মধুতে ফ্রুকটোজ থাকায় যারা এটা হজম করতে পারে না তাদের ডায়েরিয়া হয়। বরবটি, বিনস, শশা, বাঁধাকপি, আপেল, টম্যাটো এগুলো খেলেও গ্যাস হতে পারে। কারণ এতে স্টার্চ এবং ফাইবার থাকে, যেগুলো হজম হয় না। আটা, কর্ন এবং আলু খেলেও গ্যাস হতে পারে যদি এগুলোকে বেশি দিন ফ্রিজে রেখে দেন। অনেকক্ষণ ধরে যদি চুইংগাম চেবানো হয় তাতেও গ্যাস হয়। এই লিস্ট দেখে ঘাবড়াবেন না। সবাইয়ের তো এগুলো থেকে গ্যাস হয় না। যার যেটা থেকে গ্যাস হচ্ছে সেটাকে বাদ দিতে হবে খাওয়ার তালিকা থেকে।
এখানে বলে রাখা দরকার গ্যাসের ব্যথা বলে কোনোদিন কোনো রোগ ছিল না, এখনও নেই। যে কারণের জন্য পেটে ব্যথা হচ্ছে সেই কারণেই গ্যাস হচ্ছে। তাই পেট ব্যথার কারণ বার করে তার চিকিৎসা করতে হবে। মাথায় রাখতে হবে গ্যাসের বড়ি বলে কোনো ওষুধ হয় না। যার জি.ই.আর.ডি আছে তাদের এসব তো মানতেই হবে, এর সঙ্গে ধূমপান, মদ্যপান বন্ধ করতে হবে। ওজন কমাতে হবে। আর মাথায় রাখতে হবে এই সমস্ত ঘটনাগুলোর জন্য অনেকাংশে দায়ী রোজকারের টেনশন, তা বাড়িতে কিংবা কাজের জায়গায়। কারণ জানা গেছে, টেনশন করলে হরমোন এবং এনজাইমের ক্ষরণ উল্টোপাল্টা হয় এবং পাকস্থলি বা ক্ষুদ্রান্ত্রের সংকোচন–প্রসারণ বেনিয়মে চলে। এসব রোগীদের বেশি প্রোটিন এবং ফ্যাট চলবে না। এই রোগ বাড়ে ফাস্টফুড, বিরিয়ানি, মটন, চিকেন এবং বেশি মশলাদার খাবার খেলে। মাথায় রাখবেন, মশলাদার খাবারে যা পেটের রোগ হয় তার থেকে বেশি হয় মিষ্টি থেকে। আর দেখুন কোনো নতুন মিষ্টির দোকান খুলেছে আর ওই দোকানের মিষ্টি পড়ে আছে! পারলে এ সমস্ত রোগের মোকাবিলায় মিষ্টির দোকানের উল্টো ফুটপাথ দিয়ে হাঁটুন!

এবার আসি ডায়েরিয়ায় রোগী কী করবে যার ফুডপয়জনিং থেকে ডায়েরিয়া হয়েছে। তার যদি রোগটা হালকা ধরনের হয় তাহলে সেই রোগী ও.আর.এস খাওয়া শুরু করবে। ধীরে ধীরে হালকা স্যুপ, ডালের জল, গলা ভাত, আলু সেদ্ধ ইত্যাদি সহজ পাচ্য খাবার খাবে। এই সময় রুটি এবং হাই ফাইবার জাতীয় খাবার না খাওয়াই ভালো। আর দু–তিনদিন পর অল্প ডায়েরিয়ায় স্বাভাবিক খাবারে ফিরে যাওয়া যেতে পারে।
আরে ভুলেই যাচ্ছিলাম, সেদিনই টুকাই জিজ্ঞাসা করল, কাকু চরণামৃতটা কী ঠিক করে বানানো হয়? গঙ্গার জলটা যদি পরিশুদ্ধ না হয় অর্থাৎ তার মধ্যে সিগেলা সালমোনেলা বাসা বেঁধে থাকে তাহলে টাইফয়েড বা আন্ত্রিক অনিবার্য। তাই ভগবানে বিশ্বাস রাখুন। ওনাকে স্মরণ করুন। কিন্তু পুজোর প্রসাদ আর চরণতি বুঝে খান।
যার বদহজমের রোগ আছে তাকে দুধ, ফ্যাট, হাই ফাইবার যুক্ত খাবার এবং কিছুদিনের জন্য প্রোটিন কম খেতে হবে। দুই থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে তার খাদ্যে প্রোটিনের পরিমাণ বাড়াতে হবে। ভিটামিন বি কমপ্লেক্স বিশেষ করে বি-১২, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট দিতে হবে। যাদের আই.বি.ডি অর্থাৎ ইনফ্লামেটরি বাওয়েল ডিজিজ আছে এবং যাদের পায়খানায় রক্ত পড়ে তাদের বাইরের রেস্টুরেন্টের খাবার, হাইফাইবার যুক্ত খাবার, দুধ, শুকনো লঙ্কা এড়িয়ে যাওয়া উচিত।

চলুন দেখি, সিলিয়াক ডিজিজ-এর রোগীরা কী খাবে সে বিষয়ে। সিলিয়াক ডিজিজ-এ রোগীর ক্ষুদ্রান্ত্রে অ্যালার্জি থাকে। যে অ্যালার্জিটা দেখা যায় রুটিতে। আটা, রাই, বার্লিতে থাকে গ্লুটেন। এই গ্লুটেন অ্যালার্জি থেকে ক্ষুদ্রান্ত্রে ভিলাস অ্যাট্রোফি হয়। এই রোগীরা ওইসব খাবারগুলো খেলে পেটে ব্যথা, গ্যাস, পাতলা পায়খানা, ওজন কমে যাওয়া, অ্যানিমিয়া ইত্যাদি হতে পারে। ওই খাবারগুলো বর্জন করলে রোগী ছ’সপ্তাহ থেকে ছ’মাসের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন। কোন খাবারগুলো খাবেন না তার লিস্টটা একটু দেখে নিন। চমকে উঠবেন না যেন। গ্লুটেন ফ্রি ডায়েট মানে আটা, রুটি, বিস্কুট, পাউরুটি, নুডুলস, আইসক্রিম, পেস্ট্রি, সসেজ, চকলেট, ই‌য়োগার্ট, ইনস্ট্যান্ট কফি, কেচাপ, টম্যাটো সস, ক্যাডবেরি—এগুলো কিছুই খাওয়া যাবে না। সব বাদ। রোগী খেতে পারবে ভাত, কর্ন, মিলেট, ভুট্টা আর সোয়াবিন। দুধ এবং বিয়ারও বন্ধ করতে হবে। আর খাবারে রাখতে হবে এই বিধিনিষেধ সারা জীবনের জন্য। আর মনে রাখতে হবে সিলিয়াক ডিজিজ শুরু হয় বাচ্চা বয়সে। শিশুর বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটে। ভীষণভাবে খেয়াল রাখবেন কোণাভাঙা বিস্কুট বা এক টুকরো ক্যাডবেরি রোগটাকে পুনরায় তীব্রভাবে বাড়িয়ে দিতে পারে যার নাম সিলিয়াক ক্রাইসিস। এতে মৃত্যুও হতে পারে।

প্যাংক্ৰিয়াটাইটিসে রোগীরা যদি হাসপাতালে ভর্তি থাকেন তাহলে তো স্যালাইন, গ্লুকোজ চলবে। একবার ছুটি হয়ে বাড়িতে এসে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক খাবার খাবে। যিনি অ্যাকিউট প্যাংক্ৰিয়াটাইটিসের রোগী তার কিন্তু সারা জীবনের জন্য কোনো বাধানিষেধ থাকে না। কিন্তু যিনি ক্রনিক প্যাংক্ৰিয়াটাইটিসের রোগী তার গলা অবধি খাওয়া চলবে না। একসঙ্গে অনেক প্রোটিন খাবেন না। সারাদিন ছ’ থেকে আট চামচ তেল তিনি রান্নাতে খেতে পারেন কিন্তু অতিরিক্ত ঘি–মাখন খাবেন না।
জন্ডিস বা লিভার ডিজিজে রোগীরা কী করবেন? 
আচ্ছা দেখি নিই, সাধারণ মানুষ এবং কিছু জেনারেল ফিজিশিয়ানের কী ধারণা। যুগ যুগ ধরে চলে আসছে জন্ডিসে সেদ্ধ খাবার (তেল, হলুদ ছাড়া) খাওয়া, মড়ার মতো শুয়ে থাকা, এমনকী টিভি না দেখা, গল্প না করা, উঠে না বসা। সোজা কথায় এটা বুজরুকি ছাড়া কিছু নয়। গত কুড়ি বছরেরও বেশি সময় ধরে জানা গেছে জন্ডিসে রোগীর প্রায় সব খাবারই চলবে। জন্ডিসের প্রথম অবস্থায় যখন অ্যাকিউট লিভার সেল নেক্রোসিস চলে অর্থাৎ লিভারের কোষগুলো ভেঙে যায় তখন রোগীর তীব্র ক্ষুধামান্দ্যতা হয়, সেই সময় রোগীর সবকিছু আঁশটে লাগে, কিছুই ভালো লাগে না। এমনকী ধূমপানেও অনীহা প্রকাশ করে। এই সময়টুকু ছাড়া রোগীকে পছন্দমতো সুস্বাদু পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। কুড়ি থেকে তিরিশ মিলিগ্রাম বিলিরুবিন হলেও খাবারটা আলুকাবলি কিংবা অমলেটও হতে পারে। কিন্তু বাড়িতে বানানো। আঁতকে ওঠার কোনো ব্যাপার নেই। লিভার শরীরের রান্নাঘর। অসুস্থ লিভারকে বাইরে থেকে পুষ্টির যোগান না দিলে আমাদের শরীরের সমস্ত কোষ দুর্বল হয়ে পড়বে। তার ফলে মাল্টিঅর্গান ফেলিওর হবে। সমীক্ষায় দেখা গেছে লিভারের রোগে না খেয়ে মৃত্যুহার খেয়ে মৃত্যুহারের চেয়ে অনেক বেশি। সাধারণ মানুষ সারাদিনে যে প্রোটিন খায় লিভারের রোগে (অজ্ঞান না হলে) তার চেয়ে বেশি প্রোটিন খাওয়াতে হবে। মনে রাখতে হবে বাজার চলতি লিভার টনিক, আখের রস, বাতাবিলেবু, গ্লুকোজের অবদান নেই বললেই চলে। আখের রস থেকে ডায়েরিয়া বা জন্ডিস দ্বিতীয়বার হতে পারে। বাতাবিলেবু খেয়ে অম্বল, বুক জ্বালা বাড়বে আর ঘণ্টায় ঘণ্টায় গ্লুকোজ খেলে পেট তো ফাঁপবেই কিংবা গা গুলোবে, বমি হবে। একবার রোগী জন্ডিস থেকে সুস্থ হয়ে উঠলে দেখা যায় বাড়ির লোকেরা সারাজীবন ধরে তাকে সেদ্ধ খাবার খাইয়ে যাচ্ছেন। এর থেকে দুঃখ আর কষ্ট কী আছে! আমরা খুব কষ্ট পাই যখন দেখি ছেলে বা মেয়ের জন্ডিসের জন্য মা সেদ্ধ খাওয়াচ্ছেন দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, রোগী শুকিয়ে যাচ্ছে। তখন বলি রোগীকে খেতে না দেওয়াটা বিষ খাওয়ানোর নামান্তর।

গলব্লাডার স্টোনের রোগীর গ্যাস–অম্বল হলে চিকিৎসা আর পাঁচটা সাধারণ রোগীর মতো। কিন্তু ফ্যাট বেশি খেলে যদি গলব্লাডারের স্টোনের ব্যথা হয় তাহলে ফ্যাটের পরিমাণ কমাতে হবে। আর বিশেষ ভাবে সচেতন হতে হবে পেটের রোগের সঙ্গে ডায়াবেটিস, কিডনি, লাং বা অন্য কোনো অর্গানের অসুখ থাকলে, সেক্ষেত্রে রোগীকে আরো বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। এখানে বলে রাখা দরকার প্রেগন্যান্সিতে যদি পেটের রোগ হয় তাহলে ডাক্তারবাবুকে আরো বেশি সতর্ক হতে হবে দুটো জীবনের জন্য।
অবস্ট্রাকটিভ জন্ডিসে (যার পিত্তনালীতে পাথর বা ক্যান্সার হয়েছে) যদি রোগীর গা–হাত–পা চুলকোয় তাহলে খাদ্যে চর্বির পরিমাণ কমাতে হবে। চলুন দেখি সিরোসিস বা ক্রনিক লিভার ডিজিজ। এখানেও একই ভুল করেন ডাক্তারবাবু বা সাধারণ মানুষেরা। এই রোগে মানুষের শরীরে মেটাবলিজম ঠিকঠাক চালাতে এবং ক্যাটাবলিজম বন্ধ করতে পরিমাণ মতো আহার (বিশেষ করে প্রোটিন যুক্ত আহার) ভীষণ জরুরি। দু’বেলাই রোগী মাছ, ডিমের সাদা অংশ, দু’টুকরো চিকেন খেতেই পারেন। ডাল, সোয়াবিন, দই, ছানা চলবে। জল এবং নুনের পরিমাণ ঠিক করে দেবেন ডাক্তারবাবু টাইম টু টাইম। সিরোসিস নিয়েও একজন মানুষ ঠিকঠাক জীবনযাপন করে একদশকেরও বেশি সময় কাটিয়ে দিতে পারেন ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিয়ে। হেপাটাইটিস বি এবং সি মানেই জীবনের শেষ নয়। তারা আর একজন সাধারণ মানুষেরই মতো। শুধু ওষুধটা খাবেন নিয়মিত ডাক্তারবাবুর তত্ত্বাবধানে। 

যে রোগটা নিয়ে আলােচনা না করলেই নয় বা অনেকেই উদগ্রীব হয়ে বসে আছেন তা হল ফাংশনাল বাওয়েল ডিজিজ (এফ.বি.ডি)। নন–আলসার ডিসপেপসিয়া এবং আই.বি.এস অর্থাৎ ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম-এর মধ্যে পড়ে। আসল মুশকিলটা হল এই রোগীদের ইসোফেগাস, পাকস্থলি, ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদন্ত্রে স্পর্শকাতরতা এতটাই বেশি যে কখন কোন পরিপ্রেক্ষিতে কোন খাবার থেকে কী কষ্ট হবে তা আগে থেকে ভাবাই মুশকিল। পেটের কষ্টগুলো তো এই সব রোগীর মানসিক স্থিতিশীলতার ওপর নির্ভরশীল। তার জ্বলন্ত নিদর্শন হল, যে খাবারগুলো মানসিক চাপে অর্থাৎ পরীক্ষা বা ইন্টারভিউয়ের সময় পেটের সমস্যা তৈরি করে, সেগুলো পুজোর সময় পেটে কোনো প্রভাবই বিস্তার করে না। তাই প্রত্যেকের এফ.‌বি.‌ডি বা আই.‌বি.‌এস একে অন্যের থেকে আলাদা। তাই প্রত্যেককে পরিচালনা করতে হবে আলাদা ভাবে দায়িত্ব নিয়ে।
চলে আসি প্রতিমা মাসির প্রশ্নের উত্তরে। শাক খাওয়ার জন্য ওনার পাকস্থলির মুভমেন্টে হেরফের হয় এবং পাকস্থলি থেকে সেটা বেরোতে চায় না, ফলে রিফ্লাক্স হয়ে অ্যাসিডিটি হয় আবার উল্টোদিকে শাকের মধ্যে ফাইবার থাকায় ওনার কনস্টিপেশন চলে যায়, তাই শাক না খেলে কনস্টিপেশন হয়।

সেই ডাবল এজেড্‌ শোর্ড অর্থাৎ শাঁখের করাত। এ কি, ভয় পেলেন নাকি‌!‌ ঠিক করলেন কিছুই খাবেন না। একদম নয়। বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারাগুলো ঠিক রাখুন। আর চেষ্টা করুন আমাদের শৃঙ্খলা বোধ আবার ফিরিয়ে আনতে, তাহলে কিন্তু অনেক অজানা শৃঙ্গকে আমরা জানতে এবং জিততে পারব।

সব ছবি: আন্তর্জাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *