শরীরকে সুস্থ রাখতে ঘুম খুব প্রয়োজনীয় হলেও, সারাদিন ঘুম ঘুম ভাব মোটেই ভালো নয়, বরং বেশ অস্বস্তির। দৈনন্দিন কাজকর্মে ঘটায় ব্যাঘাত। সারাদিন চোখে ঘুম লেগে থাকার অনেকগুলো কারণ আছে। সেটা যেমন লাইফ স্টাইলের কারণে হতে পারে, তেমনই আবার কোনও ওষুধে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও হতে পারে। আবার অতিরিক্ত ঘুম কোনও অসুখের লক্ষণও হতে পারে। চলুন যাওয়া যাক অতিরিক্ত ঘুম বা সারাদিন ঘুম ঘুম ভাবের খানা তল্লাশিতে।


সারাদিন ঘুম ঘুম
প্রীতিময় রায়বর্মন

প্রথমে সারাদিন ঘুম ঘুম ভাবের সাধারণ কিছু কারণ দেখে নেওয়া যাক—
✦‌ অতিরিক্ত পরিশ্রম, রাতে পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া বা বিশ্রামের ঘাটতি দেখা দিলে শরীরে আসে ক্লান্তি। আর সেই ক্লান্তির কারণেই সারাদিন ঝিমুনি বা ঘুম ঘুম ভাব। 
✦‌ ডিহাইড্রেশন বা জলশূন্যতাও বাড়তি ঘুমের কারণ হতে পারে। 
✦‌ ওবেসিটি বা অতিরিক্ত স্থূলতা‌র কারণেও অনেক সময় ঘুম বেশি হয়। 
✦ শরীরে যদি‌ আয়রন, ভিটামিন ‘‌ডি’‌ ইত্যাদির ঘাটতি দেখা দেয়, তাহলেও অনেক সময় ঝিমুনি ভাব লক্ষ্য করা যায়। 

✦‌ এখন অনেকেই ডায়েট করতে গিয়ে খাবারদাওয়া এতটাই নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেন যে, শরীর হয়ে পড়ে দুর্বল। দেখা দেয় পুষ্টির অভাব এবং অবসাদ। যা থেকেও সারাদিন ঘুম ঘুম ভাবের সূত্রপাত হতে পারে। 
✦‌ মাত্রাতিরিক্ত ব্যায়াম বা শারীরিক কসরতও বেশি ঘুমের কারণ হতে পারে।
✦ অ্যারকোহল বা অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণেও অনেক সময় দিনের বেলায় ঘুম পায়।

✦ রাতে শোবার পর মোবাইল বা অন্য কোনও ইলেকট্রনিক সরঞ্জামে নিজেকে ব্যস্ত রাখলে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে। ফলে দিনের বেলায় ঝিমুনি অনিবার্য।
✦ মানসিক সমস্যা যেমন অতিরিক্ত স্ট্রেস‌ বা মানসিক চাপ, বিষণ্নতা ইত্যাদি কারণেও দিনেরবেলায় ঝিমুনি বা ঘুম ঘুম ভাব দেখা দিতে পারে।

কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া—
কিছু রোগের ওষুধ আছে যেগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় সারাদিন ঘুম ঘুম ভাব দেখা দিতে পারে। যেমন মানসিক সমস্যা,‌ অ্যালার্জি, স্নায়ু বা নার্ভের ওষুধ ইত্যাদি।  

বেশি ঘুম বা ঘুম ঘুম ভাব যখন রোগের লক্ষণ—
‌✦‌ হাইপোথাইরয়েডিজম বা থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি দেখা দিলে শরীরে আসে ক্লান্তি বা দুর্বলতা, দেখা দেয় ঘুম ঘুম ভাব।  
‌✦ কিডনি, লিভার বা হার্টের কিছু সমস্যা অনেক সময় অতিরিক্ত ঘুমের কারণ হতে পারে। 
‌✦ বেশি ঘুম ব্রেন বা‌ মস্তিষ্কের কিছু রোগেরও লক্ষণ হতে পারে। 
✦ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যান্সারের কারণেও অতিরিক্ত ঘুম হতে পারে।

​​​​​​✦ ওবেসিটি বা অতিরিক্ত স্থূল মানুষদের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই থাকে স্লিপ অ্যাপনিয়া সিনড্রোম। এতে আক্রান্তরা রাতে প্রচণ্ড শব্দে নাক ডাকেন, ঘুমও ঠিকমতো হয় না। ফলে সারাদিনই তাঁদের মধ্যে থাকে ঝিমুনিভাব। এমনকী তাঁরা বাসে, ট্রেনেও বসার সুযোগ পেলেই ঘুমোন।
✦‌ ক্যাটাপ্লেক্সি, নারকোলেপসি ইত্যাদি অসুখেও যে কেউ হঠাৎ করে ঘুমিয়ে পড়তে পারে।

তাই দিনে ঘুম ঘুম ভাব বা অতিরিক্ত ঘুম হলে তার কারণ অনুসন্ধান জরুরি। কারণ খুঁজে চিকিৎসা শুরু হলে বেশিরভাগ সময়ই সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে। আর শরীরকে সুস্থ রাখতে পুষ্টিকর খাবার, পরিমিত পরিমাণ তরল বা জল, নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, ওজন নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি জরুরি। আর ঘুম সংক্রান্ত কোনও সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কারণ ঘুম শরীরকে সুস্থ রাখার অন্যতম প্রধান চাবিকাঠি।

(‌নিবন্ধটি শুধুমাত্র সচেতনতার জন্য।
কোনও ডাক্তারি পরামর্শ নয়।
ঘুম সংক্রান্ত যে কোনও সমস্যায়
চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।)

 ছবি:‌ আন্তর্জাল ও প্রতীকী
ব্যবহৃত ছবির সঙ্গে
অসুখের কোনও সম্পর্ক নেই

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *