আজ ৪ মার্চ। ‌বিশ্ব স্থূলতা দিবস। এবারের থিম— ‘‌Let's Talk About Obesity And...’‌। বিশ্বে প্রতি ৮ জনের মধ্যে ১ জন স্থূলতার শিকার। ওবেসিটি নিতে চলেছে এপিডেমিকের আকার!‌ অর্থাৎ মেদ মহামারী!‌ এমনটাই আশঙ্কা করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (‌হু)‌। 


যত কাণ্ড ওবেসিটিতে
প্রীতিময় রায়বর্মন

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গবেষণা রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, বিশ্বের কয়েকশো কোটি মানুষ ওবেসিটি বা স্থূলতার শিকার। উন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোর পাশাপাশি নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতেও এখন হানা দিয়েছে ওবেসিটি। বিশ্ব স্থূলতা দিবসের প্রাক্কালে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাবিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকী ‘‌দ্যা ল্যানসেট’‌–এ প্রকাশিত এক গবেষণা রিপোর্ট আমাদের চমকে দিল। গবেষণাপত্রের প্রধান ও লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের অধ্যাপক মাজিদ ইজ্জতির কথায়, যতদিন যাচ্ছে ততই বাড়ছে ওবেসিটির থাবা। 

১৯৯০ সালে সারা বিশ্বে প্রাপ্তবয়স্ক, কিশোর ও বাচ্চাদের মধ্যে স্থূলতার সমস্যা ছিল ২২ কোটি ৬০ লক্ষ মানুষের। ২০২২ সালে সংখ্যাটা দাঁড়ায় ১০৩ কোটি ৮০ লাখ! ১৯৯০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্কদের স্থূলতার হার বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। আর ৫ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের স্থূলতার হারের বৃদ্ধি ৪ গুণেরও বেশি। ৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে প্রায় ৭৭ কোটি ৪০ লক্ষ মানুষ ওবেসিটিতে আক্রান্ত। উন্নত দেশের গণ্ডী ছাড়িয়ে নিম্ন আয়ের অনেক দেশেই অপুষ্টির পাশাপাশি স্থূলতার বিপদও দেখা দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পুষ্টিবিষয়ক প্রধান ফ্রান্সেস্কো ব্রানকার কথায়, আগে মনে করা হতো স্থূলতা শুধুমাত্র ধনী দেশগুলোরই সমস্যা। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, স্থূলতা সারা বিশ্বেরই সমস্যা।

নব্বইয়ের দশকের পর থেকে আমরা যত ‘‌মর্ডান’‌ হচ্ছি, ততই অভ্যস্ত হচ্ছি অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে। ফলে শিকার হতে হচ্ছে স্থূলতা বা ওবেসিটির। গবেষণাপত্রে শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক, স্থূলতার বৃদ্ধির হার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। একদিকে যখন স্থূলতা মহামারীর আকার নিচ্ছে, অন্যদিকে তখন লক্ষ লক্ষ মানুষ অনাহারে বা অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন!‌ ক্যারিবিয়ান, মধ্যপ্রাচ্যের কিছু অংশসহ কিছু নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে ওবেটিসি ও অপুষ্টি একই সঙ্গে দেখা দিচ্ছে। অনাহারে যেমন মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে, তেমনই ওবেসিটিও ডেকে আনে অকালমৃত্যু। ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনি ডিজিজ, লিভারে সমস্যাসহ একাধিক অসুখের কারণ লুকিয়ে ওবেসিটিতে। শরীরে অতিরিক্ত মেদ থাকলে প্রায় ১৩ ধরনের জটিল ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা মারাত্মকভাবে বাড়ে। প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ওবেসিটিতে বাড়ছে মৃত্যু ঝুঁকি। 

হু–র দাবি, ইতিমধ্যেই ওবেসিটি এপিডেমিক শুরু হয়ে গেছে ইউরোপে। ২০২৫ সালের মধ্যেই এর প্রভাব ভালোমতন টের পাওয়া যাবে। আর এই এপিডেমিকে ইউরোপের সব দেশকে ছাপিয়ে যেতে পারে ব্রিটেন। ওবেসিটির এই বাড়বাড়ন্তের জন্য হু দায়ী করেছে, জাঙ্ক ফুড, কোল্ড ড্রিঙ্কস বা ঠান্ডা মিষ্টি পানীয় এবং শরীরচর্চাহীন জীবনযাপনকে।

সব ছবি:‌ আন্তর্জাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *