খেয়াল-খুশি মতো অ্যান্টিবায়োটিক নয়
প্রীতিময় রায়বর্মন
চলছে ‘বিশ্ব অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সচেতনতা সপ্তাহ’। প্রতি বছর ১৮ থেকে ২৪ নভেম্বর বিশ্ব জুড়ে পালিত হয় বিশ্ব অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সচেতনতা সপ্তাহ৷ এবারের থিম— ‘প্রিভেনটিং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স টুগেদার।’ একই সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)–র ‘গো ব্লু’ ক্যাম্পেনও চলছে। দিনটি পালনের উদ্দেশ্য— অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বা অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের কারণে কী কী সমস্যা দেখা দিতে সে সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা।
জীবাণুঘটিত রোগের চিকিৎসায় যুগান্তকারী পরিবর্তন এনে দিয়েছিলেন স্যার আলেকজান্ডার ফ্লেমিং। তাঁর তৈরি প্রথম অ্যান্টিবায়োটিক ‘পেনিসিলিন’ আবিষ্কারের পর চিকিৎসাবিজ্ঞানের হাত ধরে আমরা একে একে পেয়েছে আরও শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক; যা রোগীকে সুস্থ করতে সাহায্য করছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু এখন এর মাত্রাতিরিক্ত অপব্যবহার নিয়ে চিন্তায় চিকিৎসকরা। অপব্যবহারের কারণে প্রয়োজনের সময় আর কাজ করেছে না অ্যান্টিবায়োটিক।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)–র মতে, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স তখনই হয় যখন ব্যাকটিরিয়া, ভাইরাস বা অন্য কোনও পরজীবী জীবাণু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের এমনভাবে পরিবর্তিত করে যে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ওষুধ আর তাদের ধ্বংস করতে পারে না। এর ফলে সংক্রমণের চিকিৎসা হয়ে ওঠে কঠিন থেকে কঠিনতর এবং রোগও দ্রুত শরীরে বিস্তার লাভ করে।
আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স খুবই ঝুঁকির ও জটিল সমস্যা। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধী জীবাণুর সংক্রমণে ২০১৯ সালে বিশ্বে মারা যান প্রায় ১২ লক্ষ ৭০ হাজার মানুষ। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি)–এর পরিসংখ্যান বলছে, শুধুমাত্র আমেরিকায় প্রতিবছর প্রায় ২৮ লক্ষ মানুষের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীবাণু সংক্রমণ ঘটে। ২০১৯ সালে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীবাণু সংক্রমণে আমেরিকায় মৃত্যু হয় প্রায় ৩৫ হাজার মানুষের।
শরীরে কোনও ব্যাকটিরিয়াঘটিত সংক্রমণ মারাত্মকভাবে বাসা বাঁধলে তার চিকিৎসায় জীবনদায়ী ওষুধ হিসেবে অ্যান্টিবায়োটিকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ঠিক সময়ে ঠিক অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ না করলে এবং এটা যদি বারংবার চলতে থাকে, তা হলে অ্যান্টিবায়োটিক শরীরে রোগ প্রতিরোধ ও ব্যাকটিরিয়া মারার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। চিকিৎসক খুব সতর্কভাবে রোগের লক্ষণ বা উপসর্গ দেখে তবেই রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার পরামর্শ দেন।
অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার আগে চিকিৎসক অবশ্যই মাথায় রাখেন রোগীর বয়স, ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ইত্যাদি। এই মুহূর্তে অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার সারা বিশ্বে এক গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা, যার মধ্যে অন্যতম ভারত। এভাবে চলতে থাকলে একটা সময়ের পর ব্যাকটিরিয়াল সংক্রমণে আর কাজ করবে না কোনও অ্যান্টিবায়োটিক।
অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার রুখতে—
❁ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কখনওই বাড়ির পাশের ওষুধের দোকান থেকে কিনে অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না।
❁ জটিল নয় এমন কোনও সংক্রমণ বা ভাইরাঘটিত অসুখে অযথা অ্যান্টিবায়োটিক খেলে কোনও উপকার তো হয়ই না, উল্টে শরীরে রোগের জটিলতা আরও বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের অপপ্রয়োগ থেকে অ্যানাফাইলেকটিক রিঅ্যাকশন বা কার্ডিয়াক অ্যারিদ্মিয়া পর্যন্ত হতে পারে।
❁ নির্দিষ্ট সময়ের পর চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অপ্রয়োজনে বারবার অ্যান্টিবায়োটিক খেলে ভবিষ্যতে শরীরে জটিল রোগ বাসা বাঁধতে পারে।
❁ চিকিৎসক যখন অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার পরামর্শ দেন, তখন সেই অ্যান্টিবায়োটিকের পুরো কোর্সটা অবশ্যই শেষ করতে হবে। যদি পুরো কোর্সটা শেষ না করা হয় তা হলে শরীরে বাসা বাঁধা ব্যাকটিরিয়ার ক্ষমতা আরও বেড়ে যায়, যা ভবিষ্যতে স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর।
❁ যখন খুব দরকার পড়বে তখনই অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োগ হওয়া দরকার এবং অবশ্যই তা চিকিৎসকের পরামর্শে, যাতে ভবিষ্যতে শরীরে কোনও জটিলতা সৃষ্টি না হয়।
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খেয়াল-খুশি মতো অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে বিপদ ডেকে আনবেন না।
সব ছবি: আন্তর্জাল
Leave a Reply
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Comments