‌এখন অসুখ–বিসুখ নিয়ে আমরা আগের থেকে অনেক বেশি সচেতন। কোনও রোগের নাম শুনলেই আন্তর্জালে সেই রোগ সম্পর্কে শুরু করি তথ্যের হদিশ। অসুখ–বিসুখ থেকে আমাদের যতটা দূরে রাখা যায় সে ব্যাপারে সচেতনতা বাড়াতে রাষ্ট্রসঙ্ঘ এবং বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যার অঙ্গ হিসেবে প্রতি মাসেই থাকে কোনও না কোনও অসুখ নিয়ে সচেতনতা বা প্রতিরোধ দিবস। ডিসেম্বরও তার ব্যতিক্রম নয়। ১ ডিসেম্বর বিশ্ব এইডস প্রতিরোধ দিবস। 

এইচআইভি ছোঁয়াচে নয়
প্রীতিময় রায়বর্মন

এইডস–এর বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রতিরোধের লক্ষ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (‌হু)‌ ১৯৮৮ সাল থেকে ১ ডিসেম্বর পালন করে আসছে বিশ্ব এইডস দিবস। এবারের থিম— ‘‌Putting ourselves to the Test : Achieving Equality and End HIV’‌। সহজ কথায়, সবাইকে টেস্টের আওতায় আনতে হবে। সমতা অর্জন করে এইচআইভি শেষ বা নির্মূল করতে হবে। পরীক্ষা–নিরীক্ষা এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের মধ্যে অসমতা দূর করা এবং সব ধরনের সুযোগ–সুবিধা নিশ্চিত করা। কারণ অসাম্যের শেষ না হলে এইডস বা এইচআইভি নির্মূল করা সম্ভব নয়।

২০০৭ সালে হোয়াইট হাউসে বিশ্ব এইডস দিবসের প্রতীক হিসাবে লাল ফিতাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তাই দিনটি ‘‌রেড রিবন ডে’‌ নামেও পরিচিত। ইউএনএইডস–এর পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২১ সালে প্রায় ১.‌৫ কোটি মানুষ এইচআইভি–তে সংক্রমিত হন। যার মধ্যে ৬.‌৫০ লক্ষ মানুষ এই সংক্রমণ এবং সম্পর্কিত রোগের কারণে মারা যান। এখনও পর্যন্ত সারা বিশ্বে প্রায় ৮ কোটি ৪২ লক্ষ মানুষ এইডসে আক্রান্ত হয়েছেন, যার মধ্যে মারা গেছেন প্রায় ৪ কোটি ১ লক্ষ মানুষ।

এইডস (অ্যাকোয়ার্ড ইমিউনো ডেফিয়েন্সি সিনড্রোম) হল এইচআইভি নামক ভাইরাসের দ্বারা সৃষ্ট এক ব্যাধি, যা মানুষের শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে সহজেই যে কোনও সংক্রামক রোগ শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। একবার সংক্রামক এইচআইভি শরীরে ঢুকলে তাকে পুরোপুরি নির্মূল করা এখন পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। আফ্রিকার কঙ্গোতে ১৯৫৭ সালে প্রথম এইডস আক্রান্তের হদিশ মেলে। মৃত্যুর পর ওই ব্যক্তির রক্ত ​​পরীক্ষা করে দেখা যায় তাঁর মৃত্যুর কারণ এইচআইভি ভাইরাস। তবে রোগটি বিশ্ববাসীর সামনে আসে ১৯৮০ সালে। ১৯৮১ সালে আমেরিকায় এবং ১৯৮৬ সালে ভারতের চেন্নাইয়ে প্রথম এইডস আক্রান্তের সন্ধান মেলে। 

এইডস–র লক্ষণ—
✦ ‌হঠাৎ করে দ্রুত ওজন কমে যাওয়া এবং দিনের পর দিন দুর্বলতা অনুভব। 
✦ ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হওয়া। 
✦ রাতে প্রচন্ড ঘাম। 
✦ কিছু স্থানের লসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়া।
✦ এক সপ্তাহের বেশি সময় ডায়েরিয়া। 
✦ শুকনো কাশি। 
✦ জিভ বা মুখের ভেতর হঠাৎ করে ব্যতিক্রমী কোনও দাগ বা সাদা দাগ।
✦ শরীরে লাল দাগ দেখা দেওয়া। 
✦ শ্বাস নিতে কষ্ট। 
✦ দিনের পর দিন মাথা ও গলা ব্যথা।
✦ জ‌য়েন্ট বা সন্ধিস্থল এবং পেশীতে ব্যথা।

এইচআইভি ভাইরাস ছড়ায় কীভাবে?‌ 
✦ এইচআইভি‌–তে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত গ্রহণ বা তাঁর ব্যবহৃত ইঞ্জেকশনের সূচ ব্যবহার। 
✦ এই ভাইরাসে আক্রান্ত গর্ভবতী মায়ের সন্তানও এতে আক্রান্ত হতে পারে। তবে এখন কিছু ওষুধ রয়েছে যাতে এর সম্ভাবনা কিছুটা কমানো সম্ভব। 
✦ এইচআইভি–তে আক্রান্ত কারও সঙ্গে অসুরক্ষিত (কনডম ব্যবহার না করে) যৌন সম্পর্ক। 

শুধুমাত্র স্পর্শ, একসঙ্গে খাওয়া, একই জামাকাপড় পরা ইত্যাদি থেকে কখনই এইচআইভি ছড়ায় না। তাই এইচআইভি ছোঁয়াচে নয়। এইচআইভি শরীরের বাইরে বেশিক্ষণ বাঁচে না। তাই সরাসরি রক্ত বা যৌন নিঃসরণ শরীরে প্রবেশ না করলে এইচআইভি সংক্রমণের সম্ভাবনা খুবই কম।
এইচআইভি–র মতো ভাইরাসের থেকে বাঁচতে শুধুমাত্র নিজে সচেতন হলে হবে না, অন্যকেও সচেতন করার কাজ চালিয়ে যেতে হবে প্রতিনিয়ত।

সব ছবি:‌ আন্তর্জাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *