বাজারে এখন চুলের কৃত্রিম রঙের চাহিদা তুঙ্গে। কেউ পাকা চুলকে কালো করতে, আবার কেউ স্টাইলের জন্য। এই কৃত্রিম রং কি আদৌ স্বাস্থ্যসম্মত?
চুলের কৃত্রিম রঙে
ক্যান্সারের ঝুঁকি?
প্রীতিময় রায়বর্মন
মূলত কেরাটিন নামক প্রোটিনে তৈরি আমাদের চুল। চুলের গোড়ায় চামড়ার নীচে থাকে ফলিকল। বাইরে থাকে শ্যাফট। বাইরে থেকে ভেতরে চুলের শ্যাফটে রয়েছে তিনটি আবরণ— কিউটিকল, কর্টেক্স, মেডুলা। স্থানভেদে চুলের রং একেক রকম হয়। যেমন আমাদের চুলের রং কালো, আবার ইউরোপিয়ানদের লালচে। চুলের এই রঙের জন্য দায়ী গোড়ায় থাকা মেলানিন। আবার অনেক সময় অসুখ–বিসুখ বা বংশগত কারণে চুলের রঙে পরিবর্তন আসে অর্থাৎ অসময়ে চুলে ধরে পাক। বয়সে বা অসময়ে পাক ধরা চুলকে আবার কালো বা অন্য কোনও রঙে রাঙাতে আমরা কৃত্রিম রং বা হেয়ার ডাই (কলপ) ব্যবহার করি।
এই কৃত্রিম রং বা হেয়ার ডাই আসলে কী? সাধারণত তিনধরনের ডাই আছে। ভেজিটেবিল, মেটালিক এবং সিন্থেটিক অর্গ্যানিক ডাই। এই ডাই চুলের যত বেশি গভীর স্তরে ঢুকবে, তা তত বেশি ক্ষতিকর। বর্তমানে পার্লার বা সেলুনে এই ধরনের ডাই বা রং–ই বেশি ব্যবহার হয়। কারণ রং চুলের যত গভীর স্তরে ঢুকবে তার স্থায়িত্ব যেমন বেশি হবে, তেমনই তা ন্যাচরাল রং বলে মনে হবে। আর তাই এখন আমাদের ঝোঁক সিন্থেটিক অর্গ্যানিক রং–এ।
হেয়ার ডাইয়ে থাকে ক্ষতিকর কিছু রাসায়নিক পদার্থ। যেমন অ্যারাইলামাইন, অ্যামাইনোফেনলের মতো কারসিনোজেনিক। ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকেই যায়। বিশেষ করে মূত্রথলি, ফুসফুস, লিভার ক্যান্সার; এমনকী ব্লাড ক্যান্সার বা লিউকোমিয়ার ঝুঁকিও রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, সেলুনের কর্মীদের ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি। কারণ তাদের ত্বকের সংস্পর্শে আসে এই কৃত্রিম চুলের রং। তাই তাদের হাতে গ্লাভস পরে হেয়ার ডাই স্পর্শ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়াও কৃত্রিম রং থেকে মাথার ত্বকে চুলকানি, চোখ দিয়ে জল পড়া, চোখ লাল হয়ে ফুলে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
তাহলে কি চুলে কালার করাই যাবে না? উত্তর, হ্যাঁ যাবে। তবে এমন কালার বা ডাই ব্যবহার করতে হবে যেটা চুলের ভেতরের স্তর কম ভেদ করবে। এর জন্য সবচেয়ে নিরাপদ ভেজিটেবল ডাই। যেমন মেহেদি বা হেনা। এইধরনের ডাই চুলের কিউটিকল পর্যন্ত যায়, ফলে চুলের খুব একটা ক্ষতি হয় না। আর এগুলোতে অ্যালার্জিক কনটাক্ট ডার্মাটাইটিসের সম্ভাবনাও অনেকটাই কম। তাই হেনা বা এইধরনের ভেজিটেবল ডাই ‘ননটক্সিক ডাই’ হিসেবে পরিচিত।
চুলে কৃত্রিম রং ব্যবহারের আগে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির দিকটিও খেয়াল রাখুন।
সব ছবি: আন্তর্জাল
ব্যবহৃত ছবির সঙ্গে রোগের কোনও সম্পর্ক নেই
(নিবন্ধটি শুধুমাত্র সচেতনতার জন্য।
কোনও ডাক্তারী পরামর্শ নয়।)
Leave a Reply
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Comments