উষ্ণতার পারদ চড়ছে। হাঁসফাঁস দশা। আর গরম মানেই ত্বকে নানা সমস্যা। বলা যায় ত্বকের সর্বনাশ। সত্যিই। শীতে দিনে দু–তিনবার ময়েশ্চারাইজার মেখে শুষ্কতার সমস্যা আটকানো গেলেও গরমে কিন্তু ত্বকের সমস্যা অনেক। শরীরের পাশাপাশি ত্বকও এই সময় বেশ কাহিল। শীতের থেকে গরমে ত্বকের অনেক বেশি যত্নের প্রয়োজন


গরমে কাহিল ত্বক
প্রীতিময় রায়বর্মন

ঘামাচি
গরমে ঘামাচির চিড়বিড়ে হতে হয় নাজেহাল। এই সময় বাতাসে জলীয় বাষ্প বা আর্দ্রতার পরিমাণ অনেকটাই বেশি থাকে। ফলে আমরা হয়ে যাই ঘেমে স্নান। একদিকে আর্দ্রতা আর অন্যদিকে ঘাম, ফলে ত্বকের ওপরের মরা কোষ ও ব্যাকটিরিয়া শরীর থেকে ঘাম বেরনোর পথ বা ঘাম–গ্রন্থির মুখ আটকে দেয়। ফলে ভেতরে ঘাম ও ময়লা জমে গ্রন্থির মুখ খুব ছোট ছোট ফুসকুড়ির মতো ফুলে ওঠে। কখনও কখনও এগুলো একটু লালচে ধরনেরও হয়। ঘামাচি অনেক সময় এতটাই চুলকায় যে চুলকানোর ফলে সংক্রমণের সৃষ্টি হয়। ফোড়ার মতন ভেতরে পুঁজও হতে পারে। শরীরের ঢাকা জায়গাগুলিতেই ঘামাচির বাড়বাড়ন্তটা একটু বেশি। ব‌ড়োদের থেকে ছোটদেরই ঘামাচি বেশি হয়। কারণ ছোটদের ঘাম–গ্রন্থির মুখ খুব ছোট হয়। হিট র‌্যাশ বা প্রিকলি নামেও ঘামাচি পরিচিত।

বাঁচার উপায়:‌ ঘাম বসতে দেবেন না। ঘাম হলেই তা মুছে ফেলুন। ত্বককে যতটা পারেন শুকনো রাখুন। ঘামাচি যেখানে হয়েছে সেখানটা ভুলেও চুলকাবেন না। তা হলে আরও বিপদ। ওখানে সংক্রমণও হতে পারে। দিনে দু–তিনবার স্নান জরুরি। তবে রোদ থেকে এসে সঙ্গে সঙ্গে স্নান নয়। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে ঘরের তাপমাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে তবেই স্নানে যান। নইলে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। যাঁদের ঠান্ডা লাগার ধাত আছে তাঁরা গামছা বা তোয়ালে ভিজিয়ে গা মুছতে পারেন। স্নানের জলে জীবাণুনাশক কিছু মিশিয়েও স্নান করতে পারেন। স্নানের পর গা ভালো করে মুছুন। গা ভালোভাবে শুকিয়ে গেলে মাইকোনাজোল বা ঘামাচি–নাশক কোনো পাউডার ব্যবহার করতে পারেন। তবে অতিরিক্ত মাত্রায় নয়। বেশি পাউডার মাখলে তা ঘামের সঙ্গে মিশে ঘাম–গ্রন্থির মুখকে আটকে দেয়। গায়ে মাখার কোনও তৈলাক্ত ক্রিম এড়িয়ে চলাই ভালো। আর একদম টাইট পোশাক নয়। পোশাক হওয়া চাই ঢিলেঢালা। এমন পোশাক হবে যাতে বাতাস চলাচল করতে পারে। সবচেয়ে ভালো পাতলা সুতির পোশাক।
সানবার্ন
বেলা যত বাড়ে রোদের তাপও ততই বাড়তে থাকে। এই প্রখর রোদে বেরোলে অনেকের ত্বকে কালো ছোপ ছোপ দাগ বা একটা পোড়া পোড়া ভাব দেখা যায়। রোদে পোড়া বা সানবার্ন গরমের এক সমস্যা। সান হিট বা সূর্যের তাপ চোখেরও ক্ষতি করে।

প্রতিরোধের উপায়:‌ রোদে পোড়ার ভয়ে ঘরে বসে থাকলে চলবে না, বেরোতই হবে। বেরোবার অন্তত ৩০ মিনিট আগে ভালো ব্র্যান্ডের সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। সানস্ক্রিন লাগিয়ে সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে পড়লে কাজের কাজ কিছুই হবে না। অবশ্যই ছাতা আর সানগ্লাস ব্যবহার করুন। এমন সুতির পোশাক পরুন যাতে রোদ সরাসরি শরীরে লাগতে না পারে। 
ব্রণ
এমনিতে যাঁদের তৈলাক্ত ত্বক তাঁদের সবসময়ই ব্রণর সমস্যা লেগে থাকে। গরমে এই সমস্যা আরও বাড়ে। শুধু তৈলাক্ত ত্বকেই নয়, নর্মাল ত্বকেও অনেক সময় গরমে ব্রণ হতে দেখা যায়। 

প্রতিরোধের উপায়:‌ ঠান্ডা জল নিয়ে বারবার মুখ ধুতে হবে। এতে মুখের ওপরের অতিরিক্ত তেল ধুয়ে যাবে। আর ব্রণ এড়ানোর জন্য খাওয়ার দিকটাতেও একটু বাড়তি নজর দিতে হবে। বেশি তেল, মশলা দিয়ে বানানো রিচ খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলাই ভালো। ভাজা, বাড়া যতটা কম খাওয়া যায় ততই ভালো। গরমকালে শরীরের তাপ এমনিতেই বেশি থাকে। আর খাবার যখন হজম হয় তখন শরীরের ভেতরও একটা তাপ উৎপন্ন হয়। তাই এমন খাবার খেতে হবে যা সহজেই হজম হবে এবং ঠান্ডা খাবার, যা শরীরে কম তাপ উৎপন্ন করবে। আর অবশ্যই খেতে হবে পরিমিত পরিমাণ জল।
সংক্রমণ
ঘাম আর আর্দ্রতার ফলে ত্বকে এ সময় দেখা দেয় নানা ধরনের সংক্রমণ। ব্যাকটিরিয়া বা ছত্রাক ঘটিত এই সংক্রমণ কিন্তু মারাত্মক। ঘামের সঙ্গে ত্বকের ওপরে ময়লা জমে এই সংক্রমণের সৃষ্টি। মূলত পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার অভাবই ত্বকে সংক্রমণের প্রধান কারণ। 

প্রতিরোধের উপায়:‌ সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচার উপায় পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন থাকা। ত্বককে যেমন পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, তেমনই পোশাকও পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন হওয়া চাই। ঘামে ভেজা জামা রাতে ফ্যানের হাওয়ায় শুকিয়ে আবার পরের দিন পরে বেরিয়ে পড়লাম, এটা না করাই ভালো। এছাড়া প্রয়োজন ছাড়া অনেকক্ষণ পায়ে জুতো, মোজা পরে থাকবেন না।
চুলের সমস্যা
গরমে মাথার ত্বকেও সমস্যা দেখা দেয়। অনেকের মাথায় ছোট–ছোট ফুসকুড়ি বা ফোড়া হয় এই সময়। ঘামের ফলে অন্যসময়ের থেকে এ সময় মাথায় বেশি ময়লা জমে, যা চুলের জন্য ক্ষতিকর। এতে অনেক সময় চুল পড়া বা খুশকির সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

সমাধান:‌ সম্ভব হলে প্রতিদিন মৃদু কোনও শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। যাতে ময়লা ধুলো, বালি মাথার ত্বকে জমতে না পারে। চুল যাতে ভিজে না থাকে সেই দিকেও নজর রাখুন। 

অনেকেই ভাবেন শুধু শীতেই ত্বকের যত্নের প্রয়োজন, গরমে অতটা দরকার নেই। তাঁদের বলব, শীতের থেকেও গরমে ত্বকের অনেক বেশি যত্নের প্রয়োজন।‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌

সব ছবি:‌ আন্তর্জাল
নিবন্ধটি কোনও ডাক্তারী পরামর্শ নয়
শুধুমাত্র সচেতনতার জন্য‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *