নামছে উষ্ণতার পারদ। গায়ে লাগছে হিমেল হাওয়া। অনেককেই ভোগাচ্ছে হাঁচি, সর্দি, কাশি। ক্ষণিকের অতিথি শীতের শারীরিক সমস্যাগুলোকে পাশ কাটিয়ে নিজেকে সুস্থ রাখাটা রীতিমতো চ্যালেঞ্জের। চলুন সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার কিছু উপায়ে আজ আলোকপাত করা যাক
গায়ে লেগেছে হিমেল হাওয়া
প্রীতিময় রায়বর্মন
শীতের ভোগান্তি
✦ এ সময় সিওপিডি এবং অ্যাজমা রোগীদের সমস্যা বাড়ে। একদিকে শীতের শুষ্ক আবহাওয়া, অন্যদিকে দূষণ। দুয়ে মিলে ফুসফুসের দফারফা। ঠান্ডা ও শুষ্ক আবহাওয়ায় শ্বাসনালি সরু ও সংবেদনশীল হয়ে যায়। ফলে দেখা দেয় শ্বাসকষ্টের সমস্যা।
✦ যাঁদের ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস রয়েছে তাঁদের কাশি বাড়ে।
✦ ঠান্ডায় বাড়ে সাইনাসের ব্যথা।
✦ হৃদ্রোগীদের অ্যানজাইনা পেইন বা বুকে ব্যথা হতে পারে। কারণ শীতে রক্তনালি সঙ্কুচিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
✦ টনশিল ও কানে ইনফ্লামেশন বা প্রদাহ দেখা দিতে পারে।
✦ এ সময় নার্ভগুলো অতি সংবেদনশীল হয়ে যায়। ফলে আর্থারাইটিস বা বাতের ব্যথা বাড়তে পারে।
✦ শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হতে পারেন।
✦ দেখা দেয় ত্বকের নানা সমস্যা। যেমন শুষ্কতা, ফেটে যাওয়া, চর্মরোগ ইত্যাদি।
✦ আর এ সবের সঙ্গে করোনার বিপদ কিন্তু এখনও চলে যায়নি।
মোকাবিলা
▲ শীতে অনেকেই জল খাওয়া কমিয়ে দেন। কারণ এ সময় খুব একটা তেষ্টা পায় না। জল কম খাওয়ার ফলে শরীর কষে গিয়ে নাক দিয়ে রক্ত বেরোতে পারে এবং জলশূন্যতা থেকে ভাইরাল সংক্রমণের সম্ভাবনা দেখা দেয়। তাই এ সময় দিনে অন্তত ৮–১০ গ্লাস জল পান করুন। সঙ্গে স্যুপ, ফলের রস ইত্যাদিও খান।
▲ সিওপিডি, অ্যাজমা ও ব্রঙ্কাইটিসের রোগীরা এ সময় চিকিৎসকের পরামর্শ মতন নিয়ম করে ওষুধ ও ইনহেলার নিন।
▲ নাক বন্ধ বা মাথা ধরার সমস্যা থেকে রেহাই পেতে ফুটন্ত জলে এক চিমটে কর্পূর ও সামান্য মেনথল মিশিয়ে ভাপ নিতে পারে। নাকের কোনও স্প্রে ব্যবহারের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
▲ অ্যালার্জির ধাত থাকলে প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ মতন অ্যান্টি–অ্যালার্জি ওষুধ খেতে পারেন।
▲ ঠান্ডা লাগার ধাত থাকলে সকালে খালি পেটে এক কোয়া রসুন খেতে পারেন।
▲ গলা ব্যথার সমস্যা থাকলে গরম জলে সামান্য নুন দিয়ে ২–৩ বার গার্গেল করুন।
▲ বিশেষ করে প্রবীণ ও ছোটদের বাইরে বেরনোর সময় এমন পোশাক পরতে হবে যাতে ঠান্ডা না লাগে। কান ও গলা ভালো করে ঢেকে রাখা দরকার।
▲ হাত, মুখ ধোয়ার জন্য গরম জল ব্যবহার করতে পারেন।
▲ ঠান্ডায় সকালে হাঁটতে ইচ্ছে না করলে বিকেলে হাঁটুন।
▲ পেশি সচল রাখতে সামান্য শরীরচর্চা দরকার।
▲ আর্থারাইটিসের ব্যথায় গরম সেঁক দেবার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। শুয়ে–বসে না থেকে হাঁটা–চলা ও সামান্য ব্যায়াম করুন।
▲ স্নানের জলে সামান্য গরম জল মিশিয়ে স্নান করুন।
▲ শুষ্ক ত্বকের সমস্যায় স্নানের পর শরীরে ভালো ব্র্যান্ডের ময়েশ্চারাইজার লাগান। নারকেল তেলও ব্যবহার করতে পারেন। ত্বকে সমস্যায় ত্বকরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
▲ হালকা রোদে বেরোলেও ভালো ব্র্যান্ডের সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
▲ মরশুমি ফল ও শাকসবজি খান।
▲ এ সময় রাতে ভালো ঘুম শরীরকে সুস্থ রাখতে খুব জরুরি।
▲ আর অবশ্যই কোভিড–১৯ প্রতিরোধক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। বাইরে বেরোলে মাস্ক পরুন, বারবার সাবান জলে হাত ধোবেন বা স্যানেটাইজ করুন, যতটা সম্ভব শারীরিক দূরত্ব মেনে চলুন এবং ভ্যাকসিন নিন।
▲ কোভিড–১৯ ভ্যাকসিন ছাড়া প্রবীণরা নির্দিষ্ট সময় অন্তর চিকিৎসকের পরামর্শ মতো নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিরোধক ভ্যাকসিন নিন। খেয়াল রাখুন শিশুর যেন কোনও ভ্যাকসিনেশন বাদ না যায়।
করবেন না
▼ শীতের ভয়ে জবুথবু হয়ে ঘরে বসে থাকবেন না।
▼ হৃদ্রোগীদের বেশি ঠান্ডায় বাইরে না বেরনোই ভালো।
▼ কাশি হল আর অমনি পুরনো প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে বা নিজে ডাক্তারি করে ওষুধের দোকান থেকে কাফ সিরাপ বা অ্যান্টিবায়োটিক এনে খাওয়া শুরু করলাম! এটা কখনই করবেন না। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এইসময় কখনোই এভাবে নিজে ওষুধ খাবেন না। আর বাড়ির ছোটদেরও খাওয়াবেন না।
▼ অনেকেই এ সময় ‘কাক স্নান’ করেন বা স্নান করেন না। এটা একেবারেই নয়। রোজ স্নান করুন। স্নান না করলে শুষ্ক আবহাওয়ায় শরীর কষে যেতে পারে।
▼ বাচ্চাদের খুব আঁটসাট পোশাক পরিয়ে বদ্ধ জায়গায় রাখবেন না।
▼ সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর খালি পায়ে ঘরে হাঁটবেন না। চটি বা মোজা ব্যবহার করুন।
▼ ঘুম থেকে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে দরজা, জানলা খুলবেন না।
▼ বছরের এই সময়টা ঘুরে–বেড়ানো আর চুটিয়ে খাওয়া–দাওয়া করার সময়। সেগুলোকে নিয়মের মধ্যেই রাখার চেষ্টা করুন।
শীতের এই সময়টা সুন্দরভাবে উপভোগ করতে গেলে সবার আগে দরকার নিজের সচেতনতা, তবেই নিজেকে সুস্থ রাখতে পারবেন।
ছবি: সৌজন্যে আন্তর্জাল ও লেখক
Leave a Reply
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Comments