অনেক কিছুতেই আমাদের জ্ঞানের নাড়ি টনটনে। যেমন ধূমপান করলে শরীরের বারোটা বাজবে জেনেও ধূমপান করা চাই, তেমনই প্লাস্টিকের ক্ষতিকর দিকগুলো বর্তমান সময়ে অধিকাংশের কাছেই অজানা নয়, তবুও জল খাবো প্লাস্টিকের বোতলে, খাবার রাখবো প্লাস্টিকের বাটিতে, এমনকি মাইক্রোওয়েভ ওভেনে খাবার গরম করবোও প্লাস্টিকের বাটিতে!‌‌ জেনে–বুঝে এই প্লাস্টিক–প্রীতি কিন্তু ঢেকে আনতে পারে অনেক বড়ো বিপদ 


প্লাস্টিকের বিপদ
প্রীতিময় রায়বর্মন‌

ক্ষতির অন্ত নেই.‌.‌.‌ 
প্লাস্টিক কীভাবে শরীরের ক্ষতি করে তা উঠে এসেছে বিভিন্ন গবেষণা রিপোর্টে। তাতে দেখা যাচ্ছে, প্লাস্টিকে রয়েছে ফ্যালেটস, বিসফেনলের মতো ক্ষতিকর সব রাসায়নিক পদার্থ। প্লাস্টিকের পাত্রে জল বা খাবার রাখলে এইসব ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ জল বা খাবারে মিশতে পারে। আর এতে দেখা দিতে পারে নানা শারীরিক সমস্যা। যেমন স্থূলতা, নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার, এমনকী হ্রাস পেতে পারে গর্ভধারণ ক্ষমতা!‌ আর পরিবেশ দূষণের যে অন্যতম কারণ প্লাস্টিক, তা কারও অজানা নয়। প্লাস্টিক নির্গত মাইক্রোপ্লাস্টিক ও নানাধরনের রাসায়নিকের প্রভাবে নষ্ট হয় খাদ্যশৃঙ্খল, ক্ষতি হয় পরিবেশের।

ঝুঁকি ক্যান্সারের!‌
প্লাস্টিকের পাত্র বা বোতলের সঙ্গে ক্যান্সারের সরাসরি সম্পর্ক আছে কিনা, তার প্রমাণ এখনও আমাদের হাতে নেই। শক্ত, স্বচ্ছ প্লাস্টিকের জিনিস তৈরিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক বিসফিনল এ, ফ্লামিংস ইত্যাদির সঙ্গে ক্যান্সারের সম্পর্ক থাকলেও থাকতে পারে। এগুলো নিয়ে আরও গবেষণা দরকার। 

মাইক্রোওয়েভ ওভেনে প্লাস্টিকের কনটেইনারে খাবার গরম!‌
তাপের সংস্পর্শে এলে প্লাস্টিকে থাকা রাসায়নিকের ক্ষতিকর প্রভাব কয়েকগুণ বেড়ে যায়। প্লাস্টিকের কনটেইনারের প্রধান স্বাস্থ্য ঝুঁকি হল বিপিএ। মাইক্রোওয়েভ ওভেনে প্লাস্টিকের কনটেইনারে খাবার গরমের ফলে এই বিপিএ সহজেই খাবারে মিশতে পারে। আর এটা সবচেয়ে বেশি শারীরিক সমস্যায় ফেলে বাচ্চা ও প্রেগন্যান্ট মহিলাদের। কিছু গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, গর্ভাবস্থায় দীর্ঘকালীন বিপিএ–এর প্রভাবে গর্ভস্থ শিশুর ফুসফুসে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া বিপিএ–এর প্রভাবে বাচ্চাদের অ্যাজমার সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই মাইক্রোওয়েভ ওভেনে প্লাস্টিকের পাত্র বা কনটেইনারে খাবার গরম করা থেকে বিরত থাকুন।

বিকল্পের সন্ধানে...‌
✦ ‌মাইক্রোওয়েভ ওভেনে কাচ বা সিরামিকের পাত্র ব্যবহার করুন।
✦ জলের বোতলও হোক কাচ বা স্টেইনলেস স্টিলের।
✦ খাবার সংরক্ষণের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ কাচ বা স্টেইনলেস স্টিলের পাত্র। 
✦ খাবার ঢাকার জন্য সিলিকন বা স্টিলের ঢাকনা ব্যবহার করুন।
✦ গরম বা তৈলাক্ত খাবার প্লাস্টিকের পাত্র বা বাটিতে কখনও–ই রাখবেন না।

✦ প্লাস্টিক প্যাকেজিংয়ের সংস্পর্শ এড়াতে যতটা সম্ভব টাটকা, প্যাকেজহীন খাবার বেছে নিন। কাগজ বা কার্ডবোর্ডে প্যাকেজ করা পণ্য তুলনামূলক কম ক্ষতিকর প্লাস্টিকের চেয়ে।
✦ একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের পাত্র ব্যবহার থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকুন। বাঁশ বা স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি পুনঃব্যবহারযোগ্য জিনিসগুলোর ব্যবহার বাড়ান।
✦ টিনজাত খাবার কেনার সময় অবশ্যই দেখে নিন কৌটায় বিপিএ–মুক্ত আস্তরণ ব্যবহার করা হয়েছে কিনা। 

সব ছবি:‌ আন্তর্জাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *