পুলিশ মাত্র একজন। গোটা একটা শহরের দায়িত্বে! চোখে দেখেন না। তার পরেও সেখানে নেই কোনও অপরাধ!
অপরাধহীন এক শহর
পুলিশ মাত্র একজন! তিনিও দৃষ্টিহীন!
প্রীতিময় রায়বর্মন
‘ক্রাইম–ফ্রি’ শহর। দক্ষিণ–পশ্চিম চীনের শহর লানবা। শহরের নিরাপত্তার দায়িত্বে দৃষ্টিহীন প্যান ইয়ং। সি চং পুলিশ স্টেশনের একমাত্র পুলিশ অফিসার। ২০০২ সালে গ্লুকোমায় হারান দৃষ্টিশক্তি। তা সত্ত্বেও হারাতে হয়নি কাজ। কারণ কাজের প্রতি নিষ্ঠা, ভালোবাসা আর দায়িত্ববোধ। চোখে না দেখেও নিজ দায়িত্বে অবিচল থেকেছেন প্যান ইয়ং।
প্রতিদিন টহল দেন গোটা শহরটায়। চোখে না দেখলেও পুরো শহরের ছবিটাই যেন ‘স্ক্যান’ হয়ে রয়েছে তাঁর মস্তিষ্কে। কেউ বিপদে পড়লে ছুটে যান। সব সময় বাড়িয়ে রেখেছেন সাহায্যের হাত। আর তাঁর এই কাজে সর্বদা পাশে থাকেন স্ত্রী তাও হংগিং। তিনিও একজন নিরাপত্তা আধিকারিক। তিনি রয়েছেন স্থানীয় রেল স্টেশনের নিরাপত্তার দায়িত্বে।
প্রতিদিন নিয়ম করে স্বামী যখন সারা শহর টহলে বেরোন, তিনিও সঙ্গে থাকেন। সি চং রেল স্টেশনের আশপাশ নিয়ে মোট ৩৮ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে শহর লানবা। রয়েছে ৩টি প্রশাসনিক গ্রামসহ ১৩টি ছোট গ্রাম। খুন বা কোনও দুর্ঘটনা তো দূরের কথা, ঘটে না কোনও চুরি–ছিনতাইয়ের ঘটনাও।
এমন একটি শহর শুধুমাত্র খুঁজে পাওয়াই নয়, ভাবনায় এমন একটি শহরকে আনাও বেশ মুশকিল। এই চীনা দম্পতির ভরসায় নিশ্চিন্তে রাতে ঘুমোন এখানকার মানুষেরা। প্যান ইয়ংয়ের কথায়, ‘আমি আমার কাজটাকে ভালোবাসি, আমার স্ত্রী আমায় বলে কাজ পাগল। এখন আর আমি ট্রেন দেখতে পাই না, শুনতে পাই শুধু শব্দ। আমি বিশ্বাস করি, মানুষের সেবা করাটাই জীবনের আসল উদ্দেশ্য।’
২০০৪ সালে তাও হংগিংকে বিয়ে করেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘আমি ওকে বিশ্বাস করি। আমি যখন ওর হাত ধরি, তখন আমি নিশ্চিন্তে হাঁটতে পারি। কোনও বাধাই তখন বাধা নয় আমার কাছে।’
সব ছবি: আন্তর্জাল
Leave a Reply
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Comments