আজ ২৬ জুন। মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস (International Day Against Drug Abuse and Illicit Trafficking)। ১৯৮৯ সালের ২৬ জুন দিনটি প্রথম পালন করা হয়। এবারের থিম— ‘People First: stop stigma and Discrimination, strengthen Prevention’
শিক্ষা থেকে স্বাভাবিক জীবনযাপন
তছনছ করে দেয় মাদকের নেশা
প্রীতিময় রায়বর্মন
২৬ জুন কেন এই দিনটি পালন করা হয় তার ইতিহাসের দিকে একবার ফিরে দেখা যাক। ভারতে উৎপাদিত আফিম ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি চীনে রপ্তানি করত। উদ্দেশ্য আফিমের নেশায় বুঁদ করে চীনের মানুষদের শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে অর্থনৈতিকে পঙ্গু করে দেওয়া। ব্রিটিশদের এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান লিন জেক্সু। ১৮৩৯ সালের ২৬ জুন তাঁর নেতৃত্বে চীনে মাদকের ব্যবসা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ব্রিটেনের সঙ্গে চীনের এই মাদক–বিরোধী যুদ্ধ ইতিহাসে প্রথম আফিম–যুদ্ধ হিসেবে পরিচিত। এই যুদ্ধের মধ্য দিয়েই চীনে সূচনা হয় উন্নতি ও আধুনিকতার। ওই দিনটিকে স্মরণে রেখেই ২৬ জুন পালিত হয়ে আসছে ‘মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস’।
১৯৮৭ সালে ১৭ থেকে ২৬ জুন ভিয়েনায় রাষ্ট্রসঙ্ঘের সভায় মাদকদ্রব্যের পাচার ও তার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে একটি দিন আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব আসে। আলোচনায় ওঠে আসে দুটি দিন— ১৭ জুন ও ২৬ জুন। পরবর্তী সভায় আলোচনার ভিত্তিতে শিলমোহর পড়ে ২৬ জুনে। দিনটি পালনের প্রধান উদ্দেশ্য মাদকদ্রব্য গ্রহন ও তার অবৈধ পাচার সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা।
বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, মাদকের করালগ্রাসে যুবসমাজের একাংশ আজ বিপন্ন। মনোবিদ ও মনরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জীবনকে মাদকমুক্ত করা না গেলে, সমাজ ও সংস্কৃতি— দুইয়েরই অবক্ষয় নিশ্চিত। বিশ্ব মানচিত্রের দিকে তাকালে দেখা যাবে, মাদকের ছোবলে আজ বিশ্বের কত দেশের টালমাটাল অবস্থা। তছনছ সামাজিক জীবন, বেহাল অর্থনীতি। যেমন আফ্রিকার কিছু দেশ।
মাদকপাচার আজ এক গভীর সমস্যা। শিক্ষা থেকে স্বাভাবিক জীবনযাপন— সবকিছুকেই তছনছ করে দেয় মাদকের নেশা। সমাজে বাড়ে অপরাধমূলক কাজকর্ম। একবার মাদকের নেশার কবলে পড়লে পরিমাণ ভয়ঙ্কর। শরীর দেখা দেয় নানা সমস্যা। হার্ট থেকে ফুসফুস; লিভার থেকে কিডনি— সবেরই দফারফা। ঠেলে দেয় মৃত্যু মুখে।
সামাজিক অবক্ষয়ের অন্যতম কারণ মাদক। মাদকাসক্তি ও অবৈধ মাদক ব্যবসারই পরোক্ষ ফল অর্থনৈতিক মন্দা, অসামাজিক কার্যকলাপ, অপরাধমূলক কাজকর্ম। মাদক পাচারকারীদের আন্তর্জাতিক চক্রের বিরুদ্ধে বিশ্বের সব রাষ্ট্র যদি একযোগে প্রতিরোধ না করে, তাহলে মাদকের অবৈধ পাচার রোখা সম্ভব নয়। সুস্থ সমাজ গঠনে যা খুবই প্রয়োজন।
মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে সামাজিক বয়কট বা দূরে সরিয়ে দেওয়া কখনোই সমস্যার সমাধান নয়। মাদকাসক্তকে মাদকের নেশা থেকে বের করে এনে নতুন জীবন উপহার দেওয়াই সমাজের কর্তব্য। অনেকক্ষেত্রেই কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে নেশামুক্তি সম্ভব, আছে কিছু মেডিকেশনও। যুবসমাজকে যদি মাদকের কু–প্রভাব থেকে দূরে না রাখা যায়, তাহলে কোনও জাতিরই উন্নতি সম্ভব নয়।
সব ছবি: আন্তর্জাল
Leave a Reply
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Comments