আঃ! আইসক্রিম 
প্রীতিময় রায়বর্মন

গরমে তার জুড়ি মেলা ভার। মুখে দিলেই যেন সারা শরীরে ফুটে ওঠে তৃপ্তির অনাবিল আনন্দ। চকোলেট, ভ্যানিলা, অরেঞ্জ, ম্যাঙ্গো কতরকমই না তার ফ্লেভার। কোনওটা বাটিতে, তো আবার কোনওটা কাঠিতে। আবার কোনওটা কুলফি বিস্কুটে। আইসক্রিম। 

আর এই সুস্বাদু জনপ্রিয় খাবারটি সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য যার কৃতিত্ব অনস্বীকার্য, তিনি হলেন ইতালীয় পরিব্রাজক মার্কোপোলো। আজকের আইসক্রিমের মতো কিছু একটা প্রথমে তৈরি করেছিলেন চিনের অধিবাসীরা। যা আজ থেকে কয়েক শো বছর আগে।

শীতকালে যখন নদীর জল বরফ হয়ে যেত তখন তাঁরা সেই বরফকে টুকরো টুকরো করে মাটির নিচে রেখে দিতেন এবং এমন একটি প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছিলেন, যাতে সেই বরফ গলে না যায়। এরপর যখন গরমকাল আসত তখন তাঁরা ভূগর্ভ থেকে সেই বরফ বার করে ফলের সঙ্গে খেতেন। ফলের সঙ্গে বরফ মিশিয়ে খাওয়ার সময় তাঁদের ভাবনায় আসে আজকের আইসক্রিম তৈরির কথা। 

হুনান রাজবংশের সময় প্রথম শুরু হয় আইসক্রিম উৎপাদন। উৎপাদন পদ্ধতিটি রাখা হয়েছিল গোপন। হুনান রাজবংশের পঞ্চম সম্রাট কুবলাই খান এক নির্দেশ জারি করেছিলেন। নির্দেশে বলা হয়েছিল, রাজপরিবারের সদস্য ব্যতীত কেউ আইসক্রিম তৈরির সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না। কুবলাই খানের লোকেরা ঠেলাগাড়িতে করে দুধ, চিনি ও জলের মিশ্রণে তৈরি একটি জমাট খাবার বিক্রি করতেন। সেই সময় চিনে ছিলেন ইতালীয় পরিব্রাজক মার্কোপোলো।

তিনি এই দুধ, চিনি ও জলের মিশ্রণে তৈরি ঠান্ডা জমাট বাঁধা খাবারটি খান এবং খাবারটি তাঁর খুব ভালো লাগে। তখন তিনি সুকৌশলে খাবারটি তৈরির পদ্ধতি জেনে নেন। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে তিনি চিন ত্যাগ করে স্বদেশের উদ্দেশে যাত্রা করেন এবং খাবারটি তৈরির পদ্ধতিও তাঁর সঙ্গে চিন থেকে পাড়ি দেয় ইতালিতে। কুবলাই খানের শত চেষ্টাতেও আর গোপন রইল না আইসক্রিম তৈরির পদ্ধতি। 

মার্কোপোলো যখন পদ্ধতিটি ইতালিতে নিয়ে আসেন এবং যখন এটি ইতালি-সহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়তে থাকে, তখন এই ঠান্ডা খাবারটির নাম রাখা হয় ‘আইসক্রিম’। ১৫৩৩ সালে ইতালি থেকে আইসক্রিম তৈরির প্রণালী আসে ফ্রান্সে। ফ্রান্স থেকে প্রস্তুতপ্রণালী শিখে নেয় ইংল্যান্ড। এরপর সেখান থেকে তা ছড়িয়ে পড়ে আমেরিকা-সহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে। ১৯০০ সাল থেকে শুরু হয় বাণিজ্যিকভাবে আইসক্রিম উৎপাদন।

সব ছবি: আন্তর্জাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *