ক’‌দিন পরেই বাঙালির পিঠে–পুলির উৎসব। পৌষ পার্বণ। তার আগে বছরের শেষ সপ্তাহ জুড়ে চলে কেক পার্বণ। ফ্রুট, ক্রিম কতই না তার রকমফের। তবে ক্রিম কেকের দুনিয়ায় সবাইকে টেক্কা দিচ্ছে চকোলেট কেক। জন্মদিন বা যে কোনও সেলিব্রেশন, ডেজার্ট হিসেবে চকোলেট কেকেরই জয়জয়কার। ক্রিম কেকের রাজা এই চকোলেট কেক এল কীভাবে?‌‌ 

চকোলেট কেক
শুরুর দিনগুলো
প্রীতিময় রায়বর্মন

সালটা ১৭৬৪। কোকোয়া বিন থেকে চকোলেট বানালেন ডঃ জেমস বেকার। কেক তৈরিতেও এলো বদল। তবে প্রথম চকোলেট কেক কে এবং কোথায় বানিয়েছিলেন তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। অনেকের মতে, ফ্রান্সে নেপোলিয়ন বোনাপার্টের স্ত্রী জোসেফিনের জন্য প্রথম চকোলেট কেক বানিয়েছিলেন এক কুক। আবার কারও ধারণা, ১৮০০ সালে প্রথম চকোলেট কেক বানান মার্কিন মুলুকের সারাহ লি। তবে চকোলেট কেক বানানোর রেসিপি প্রথম ছাপা অক্ষরে প্রকাশিত হয় ১৮৪৭ সালে রান্নার বইয়ের জগৎখ্যাত লেখিকা এলিজা লেসলির ‘‌The Lady’s Receipt Book’–এ। এলিজা লেসলির রেসিপিতে কেক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছিল কুচো চকোলেট।

১৮২৮ সালে চকোলেট কেক বানানো হল আরও সহজ। আবিষ্কার হল লিকুইড কোকোয়া থেকে ফ্যাট আলাদা করার পদ্ধতি। বাজারে এসে গেল কোকোয়া বাটার এবং কোকোয়া গুড়ো। বর্তমানে অধিকাংশ চকোলেট কেকই বানানো হচ্ছে কোকোয়া পাউডার এবং তরল চকোলেট দিয়ে। 

বর্তমানে চকোলেট কেকে চকোলেট ছাড়াও ভ্যানিলা ক্রিম সহ বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি জাতীয় উপাদান থাকে। ১৮৮৬ সাল থেকে মার্কিন কুকরা কেকের ব্যাটারে মেশাতে শুরু করেন চকোলেট। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৮০–তে ‘‌চকোলেট ডিকেডেন্স’‌ এবং ১৯৯০–এ ‘‌মল্টেন চকোলেট কেক’ জনপ্রিয় হয়। মল্টেন চকোলেট কেকে লিক্যুইড চকোলেটের সঙ্গে থাকত ইনফিউজড চকোলেটও। আর ইনফউশনে চকোলেটের সঙ্গে মেশানো হত বিভিন্ন ফ্লেভার। কেকের ব্যাটারে ময়দা নয়, থাকে লিক্যুইড চকোলেট৷ 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২৭ জানুয়ারি পালিত হয় জাতীয় চকোলেট কেক দিবস। সমীক্ষায় দেখা গেছে, অন্যান্য কেকের তুলনায় ৫৮% মানুষ বেশি চকোলেট কেক পছন্দ করেন। মুড সুইং হলে খেতে পারেন চকোলেট কেক। এতে মনে একটা ফিল গুড অনুভূতি আসে। আর জানেন কী বিশ্বের সবচেয়ে দামি চকোলেট কেকের দাম কত?‌ ৯৫ লক্ষ ডলার!‌ যা ছিল ওসাকার এক ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে। কেকটি উচ্চতায় ১৪ ইঞ্চি এবং সাজানো ছিল ৫০ ক্যারট ডায়মন্ড দিয়ে।

এক নজরে আরও কিছু বিখ্যাত চকোলেট কেক
জার্মান চকোলেট কেক
নামে জার্মান হলেও, জার্মান কেক নয়। মার্কিন চকোলেট মেকার স্যামুয়েল জার্মান দেশের নামানুসারে তার তৈরি কেকের নামকরণ করেন। কেক তৈরিতে ডার্ক বেকিং চকোলেট ব্যবহার করা হয়। এই লেয়ারড চকোলেট কেক সাজানো হয় কোকোনাট–পিকান ফ্রস্টিং দিয়ে।

স্যাচারটরট কেক
১৮৩২ সালে তৈরি হয় এই কেক। স্যাচারটরট বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত চকোলেট কেক। ভিয়েনার প্রিন্স ওয়েনজেল ভন মেটারনিখের জন্য বানানো হয় এই কেক। প্রস্তুত করে অস্ট্রিয়ান ফ্রাঞ্জ স্যাচার। ৩ লেয়ারে চকোলেট স্পঞ্জ কেকের প্রতি লেয়ারে থাকত এপ্রিকট জ্যাম। পুরো কেকটিতে আচ্ছাদনের মতো থাকত ডার্ক চকোলেটের আইসিং। মিষ্টিছাড়া হুইপড ক্রিম দিয়ে সার্ভ করা হত স্যাচারটরট কেক।

জোফ্রি কেক
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর যখন ফ্রেঞ্চ মার্শাল জোসেফ জোফ্রি ‘‌Bucharest'‌s Casa Capsa’‌ রেস্টুরেন্টে আসেন তখন তাঁর জন্য বানানো হয় এই কেক। এই চকোলেট কেকে ছিল বাটারমিল্কের লেয়ার।
ডিং ডং কেক
১৯৬৭ সালে বাজারে আসে ডিং ডং কেক। আমেরিকার হস্টেস ব্র্যান্ড এবং কানাডার ভ্যাকোন কিং ডন্সের নামে এই কেকের নামকরণ। কেকের ভেতরে সাদা ক্রিম ফিল আর উপরে চকোলেট।‌‌

সব ছবি:‌ আন্তর্জাল‌

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *