দূষণ শুধুমাত্র ফুসফুসেরই ক্ষতি ‌করে না, হার্টের জন্যও ক্ষতিকর। বেশ কয়েক বছর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (‌‌হু‌‌)‌–র জনস্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান মারিয়া নেইরা বলেছিলেন, ‘যা ভাবা হত, দূষণ তার থেকে অনেক বেশি ক্ষতিকর স্বাস্থ্যের পক্ষে। আজ বিশ্ব জুড়ে হার্টের অসুখ ও স্ট্রোকের অন্যতম কারণ দূষণ।’

দূষণ 
বাড়ছে হার্টের অসুখ‌
প্রীতিময় রায়বর্মন‌‌

হার্টের অসুখের পাঁচটি রিস্ক ফ্যাক্টর— ‌ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, ধূমপান এবং হার্টের অসুখের পারিবারিক ইতিহাস। এর সঙ্গে এখন যোগ হয়েছে বায়ুদূষণ। উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলিতে বনাঞ্চল ধ্বংস করে অপরিকল্পিত নগরায়ন, শিল্প কারখানার বিস্তারের ফলে অতিরিক্ত কার্বন, সীসার মতো বিষাক্ত পদার্থ মিশছে বাতাসে। এই দূষণ ধমনী ও শিরাতে রক্ত চলাচলে বাধা দেয়, ফলে দেখা দিতে পারে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা। 

প্যারিস কার্ডিওভাসকুলার রিসার্চ সেন্টার প্রকাশিত গবেষণা রিপোর্টে দেখা গেছে, দূষিত বাতাসে থাকা কার্বন–মনো–অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড এবং ধূলিকণা হার্টের পক্ষে ক্ষতিকর। যা হৃদরোগের ঝুঁকিকে বাড়াতে পারে। 

অন্য একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া এবং পূর্ব এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলিতে দূষণ ক্রমেই বাড়ছে। দূষণ মানেই অনেকেই ভাবেন শুধুমাত্র পথ‌ঘাটের ধুলোবালি আর গাড়ির ধোঁয়া। তা কিন্তু নয়। এখনও অনেক জায়গাতেই জ্বালানি হিসেবে কাঠকয়লা, ঘুঁটে ইত্যাদি ব্যবহার হয়, তা থেকেও দূষিত হয় বাড়ির পরিবেশ। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (‌হু)‌–র মতে, পরিবহণের পাশাপাশি বিভিন্ন শিল্পের পরিকাঠামোহীন অবস্থার কারণে দূষণ ক্রমেই বাড়ছে। দূষিত বায়ুতে থাকে নাইট্রোজেন ও সালফার। এই দুটোই হার্টের অসুখ বা হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম কারণ। দূষণের কারণে আর্টারি এবং ভেইনের ভেতরে যে লাইনিং থাকে, তা ধীরে ধীরে নষ্ট হয়। ফলে বাড়ে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির গবেষণায় দেখা গেছে, বাইরের দূষণের পাশাপাশি ঘরের দূষণও হার্টের অসুখের সম্ভাবনাকে অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে বাড়িতে কেরোসিন বা ওইজাতীয় তেলকে রান্নার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছেন। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (‌হু)‌–র সমীক্ষা রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, অনেকেই রান্নার জ্বালানির পাশাপাশি ঘরে আলো জ্বালানোর জন্য কেরোসিন বা ডিজেলজাতীয় তেল ব্যবহার করেন। কারও বাড়িতে যদি একটানা ১০ বছর ওই তেলের জ্বালানি ব্যবহার করা হয়, তা হলে তাঁদের কার্ডিওভাসকুলার রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সম্ভাবনা ১১% পর্যন্ত বাড়তে পারে। আর ইসকিমিক হার্ট ডিজিজের সম্ভাবনা বাড়তে পারে ১৪%। 

শুধুমাত্র পরিবেশ বা বায়ুদূষণই নয়, শব্দদূষণও পরোক্ষে হার্টের ক্ষতি করে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, দিনের পর দিন যানবাহনসৃষ্ট শব্দ ও বায়ুদূষণের মধ্যে যাঁরা থাকেন তাঁদের রক্তচাপ, কম শব্দ ও কম বায়ুদূষণ এলাকায় থাকা মানুষের চেয়ে অনেক বেশি। এই উচ্চ রক্তচাপ হার্টের অসুখের অন্যতম প্রধান রিস্ক ফ্যাক্টর। 

বাঁচার উপায়
বায়ুদূষণ এড়াতে
☞ কারখানা ও গাড়ির ধোঁয়া নিঃসরণ থেকে বাঁচতে মাস্ক পরুন।
☞ আতশবাজির ব্য‌বহার কমাতেই হবে। 
☞ বাড়ির আবর্জনা না পুড়িয়ে নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে ফেলুন।

শব্দদূষণ থেকে বাঁচতে
☞ অযথা টিভি ‌বা মিউজিক সিস্টেম খুব জোরে চালাবেন না।
☞ অযথা গাড়ির হর্ন বাজানো বন্ধ করুন।
☞ লাউডস্পিকার, শব্দবাজির ব্যবহার যতটা সম্ভব কমান।
☞ মেনে চলুন শব্দদূষণ সংক্রান্ত আইন।

রাসায়নিক দূষণ কমাতে
☞ রাসায়নিক সার, পলিথিনের ব্যবহার যতটা সম্ভব কমাতেই হবে।
☞ গাছ কাটা বন্ধ করে নতুন গাছ লাগান।

তবে দূষণ থেকে বাঁচতে সবার আগে দরকার নিজেদের সচেতনতা। কারণ আইন করে বা প্রশাসনিক ভয় দেখিয়ে দূষণ রোধ করা সম্ভব নয়। একমাত্র সচেতনতাই পারে দূষণের কালো ছায়া থেকে আমাদের বাঁচাতে।

সব ছবি:‌ আন্তর্জাল‌

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *