আজ ১৫ অক্টোবর। গ্লোবাল হ্যান্ডওয়াশিং ডে বা বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস। এবারের থিম— ইউনাইট ফর ইউনিভার্সাল হ্যান্ড হাইজিন। ২০০৫ সাল থেকেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) প্রচার করে আসছে— ক্লিন হ্যান্ড সেফ লাইফ
পরিচ্ছন্ন হাত, সুস্থ জীবন
প্রীতিময় রায়বর্মন
আমাদের সুস্থ রাখতে সচেতনতা অভিযানের শেষ নেই। বড় বড় সেলিব্রিটিদের দিয়ে চলে সেই অভিযান। কখনও অমিতাভ, আমির, অক্ষয়; তো কখনও শচীন। সংবাদপত্রের পাতায় বা টিভির পর্দায় বিজ্ঞাপন দিয়ে চলে স্বাস্থ্য সচেতনতা। কিন্তু তাতে কি আমরা আদৌ সচেতন হই? অতিমারি আমাদের যতটা স্বাস্থ্য সচেতন করতে পেরেছে, অতিমারি পরবর্তী দিনগুলোতে আমরা কি সেই সচেতনতা বজায় রাখতে পারব?
করোনা অতিমারি আমাদের যে যে বিষয় স্বাস্থ্য সচেতন করেছে তার মধ্যে অন্যতম হল সাবান জল বা স্যানিটাইজার ব্যবহার করে হাত পরিষ্কার বা জীবাণু মুক্ত রাখা। কিন্তু করোনা সংক্রমণ কমতেই অনেকেই আর তা মানছেন না। শুধুমাত্র করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতেই নয়, খাবার আগে কেন ভালো করে হাত ধোয়া উচিত— তা আমরা সবাই জানি। কিন্তু তা মেনে চলি না! ট্রেন বা বাস থেকে নেমে পথের ধারের কোনো দোকান থেকে মুড়ি আর তেলেভাজা কিনে খেতে শুরু করে দিলাম! খাবারের সঙ্গে শরীরে জীবাণুর প্রবেশ।
কেন এবং কখন হাত ধোয়া উচিত?
✦ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট বলছে, প্রতিদিন বিশ্বে প্রায় একহাজার মৃত্যুর কারণ শরীরে বাইরে থেকে ঢোকা সংক্রমণ বা জীবাণু। নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস ছাড়া আমাদের শরীরে সবচেয়ে বেশি জীবাণু ঢোকে হাতের মাধ্যমে। তাই হাত পরিষ্কার রাখাটা খুবই জরুরি।
✦ ট্রেনে বা বাসে যাতায়াতের সময় আমরা যে রড বা হাতল ধরি সেগুলো কিন্তু জীবাণুর বাসা। কারণ ওগুলো রোজ জীবণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার হয় না।
✦ গবেষণায় দেখা গেছে, টাকাতেই নাকি সবচেয়ে বেশি জীবাণুর বাস। কারণ টাকা ঘুরছে সমাজের সর্বস্তরে। আর আমাদের টাকার ব্যবহার করতে হয় প্রতিটা মুহূর্তে। টাকা গোনা বা লেনদেন করার পর অবশ্যই ভালো করে হাত ধুয়ে নিন।
✦ সাধারণত একটা বয়স পর্যন্ত বাড়ির বাচ্চাদের খাইয়ে দিতে হয় বড়দের। বাচ্চাদের শরীরে যাতে রোগ-জীবাণু প্রবেশ না করে সেটা দেখার দায়িত্ব বড়দের। কারণ ওদের শরীরে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কম।
✦ এমনিতেই আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ লাইফস্টাইল আর খাদ্যাভ্যাসের কারণে পেটের অসুখে ভোগেন, তার ওপর যদি খাবারের সঙ্গে রোগ-জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে তা হলে রোগের আরও বাড়বাড়ন্ত।
✦ কোনো রোগীর সংস্পর্শে এসে তাঁকে স্পর্শ করার আগে ভালো করে হাত ধোয়া উচিত। কারণ খেয়াল রাখতে হবে যাতে ক্ষতিকর জীবাণু রোগীর শরীরে প্রবেশ না করে।
✦ রোগীর শরীরে ইঞ্জেকশন বা তাঁকে কোনো ওষুধ খাওয়ানোর আগে ভালো করে হাত ধোয়া উচিত।
✦ কোনো ঘা বা ফোড়া থেকে পুঁজ বা রস বেরোলে তা হাতে লাগলে অবশ্যই জীবাণুনাশক সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন। এমনকি সর্দি বা মুখের সামনে হাত দিয়ে কাশির পর ভালো করে হাত ধোন। কারণ আপনার হাত থেকে রোগের জীবাণু বাড়ির অন্যদের মধ্যে ছড়াতে পারে।
কীভাবে হাত ধোবেন?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হাত ধোয়ার যে নিয়মের কথা বলছে তাতে হাত ধুতে সময় লাগবে ৪০-৬০ সেকেন্ড। কী সেই নিয়ম—
জল দিয়ে ভালো করে হাত ভেজান।
▼
জীবাণুনাশক সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ যথেষ্ট পরিমাণে নিন যাতে দু’হাতের কবজির নিচ পর্যন্ত ভালো করে ধোয়া যায়।
▼
এক হাতের তালু দিয়ে আরেক হাতের তালু ভালো করে ঘষুন।
▼
ডান হাতের তালু বাঁ হাতের পৃষ্ঠদেশের ওপর নিয়ে বাঁ হাতের আঙুলের ফাঁকে ডান হাতের আঙুল ঢুকিয়ে একটু ঘষুন এবং এর উল্টোটাও করুন।
▼
দু’হাতের তালু মিলিয়ে আঙুলগুলো ভালো করে পরিষ্কার করুন।
▼
দু’হাতের আঙুলের পেছনের দিকটা বুড়ো আঙুল দিয়ে পরিষ্কার করুন।
▼
এরপর বুড়ো আঙুলটা ভালো করে ধুয়ে নিন। ডান হাতের তালু দিয়ে বাঁ হাতের এবং বাঁ হাতের তালু দিয়ে ডান হাতের বুড়ো আঙুলটি ধরে চারদিকে ঘুরিয়ে ঘষুন।
▼
ডান হাতের আঙুলগুলোকে এক করে বাঁ হাতের তালুতে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সামনে–পেছনে ঘষুন। আবার এর উল্টোটাও করুন। বাঁ হাত দিয়ে ডান হাত একইভাবে পরিষ্কার করুন।
▼
এবার ভালো করে জল দিয়ে হাত খুঁয়ে নিন।
▼
একবার ব্যবহারযোগ্য পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে হাত মুছে ফেলুন।
▼
হাত মুছে ফেলার পর আর কল বন্ধ করার জন্য হাত ব্যবহার করবেন না। হাত মোছার তোয়ালে দিয়েই কল বন্ধ করুন।
▼
এবার আপনার হাত জীবাণুমুক্ত ও আপনি নিরাপদ।
অতিমারি আমাদের হাত পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখার যে অভ্যেসটা শিখিয়েছে, সেটা যদি আমরা আগামী দিনেও বজায় রাখতে বা মেনে চলতে পারি তাহলে রোগ–জীবাণুর হাত থেকে অনেকটাই রেহাই পাব।
সব ছবি: আন্তর্জাল
Leave a Reply
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Comments