রাত পেরোলেই কালীপুজো বা দীপাবলি। আলোর উৎসব। বৈদ্যুতিন আলোর রোশনাইয়ের সঙ্গে সঙ্গত দেয় আতস ও শব্দবাজি। কিন্তু এই বাজির দূষণে শারীরিক ক্ষতির অন্ত নেই, এমনই মত চিকিৎসকদের

বাতাসে বিষ!‌
প্রীতিময় রায়বর্মন

আমরা জানি, দূষণ রেসপিরেটরি ডিজিজ বা ফুসফুসের অসুখ এবং হার্টের অসুখের অন্যতম প্রধান রিস্ক ফ্যাক্টর। প্রতি বছর বায়ুদূষণ সারা বিশ্বে প্রায় ৭০ লক্ষ মানুষের প্রাণ কাড়ছে। সংখ্যাটা দিনের দিন বাড়ছে। মূলত গাড়ির তেল পোড়া ধোঁয়াই এই দূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী।

এর সঙ্গে প্রতিবছর দীপাবলিতে বাজির দূষণের ফলে বাতাসে বাড়ে সালফার–ডাই–অক্সাইড, নাইট্রোজেন–ডাই–অক্সাইডের মতো শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর বিষাক্ত সব পদার্থ। যা হার্ট, ফুসফুসের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। একে মরশুম বদলের সময়, এর মধ্যে যদি বাতাসে দূষণের পরিমাণ বাড়ে তাহলে সমস্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে একবার ভেবে দেখেছেন!‌

বাজি পোড়া ধোঁয়া কী কী বিপদ ডেকে আনতে পারে?
✶ কারও মৃদু নিউমোনিয়া জটিল আকার ধারণ করে পরিণত হতে পারে সিভিয়ার নিউমোনিয়ায়।
✶ যাঁরা করোনা‌কে হারিয়ে সুস্থ হয়েছেন, তাঁদের একটা বড় অংশের ফুসফুসে কোনও সমস্যা বা লাং ডিসঅ্যাবিলিটি দেখা দিয়েছে। যেমন লাং ফাইব্রোসিস, সামান্য পরিশ্রমেই হাঁপিয়ে ওঠা ইত্যাদি। এর মাঝে যদি বাতাসে দূষণের পরিমাণ বাড়ে তাহলে ওই মানুষগুলোর কী অবস্থা হবে বুঝতে পারছেন? অ্যাজমা অ্যাটাক হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। অনেক ক্ষেত্রেই প্রাণঘাতী সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে বাজির দূষণ।

✶ ‌যাঁদের সিওপিডি–র মতো ক্রনিক ফুসফুসের অসুখ আছে, দূষণ বাড়লে মরশুম বদলের এই সময় তাঁদের সমস্যা আরও বাড়বে। দেখা দিতে পারে তীব্র শ্বাসকষ্ট। 
✶ ‌প্রতিবছরই কালীপুজোর পর বাড়ে অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টের রোগীর সংখ্যা। অনেককেই ভর্তি হতে হয় হাসপাতালে।  

✶ আমরা জানি, বাতাসে ফগ বা ধোয়া যত বেশি হবে ততই সাসপেন্ডেড পার্টিক্‌ল বা ভাসমান কণার বেশিক্ষণ ভেসে থাকার সম্ভাবনা বাড়বে। সে ক্ষেত্রে কারও হাঁচি বা কাশির মধ্যে যদি সাসপেন্ডেড পার্টিক্‌ল হিসেবে কোনও সংক্রামক ভাইরাস থাকে, তাহলে তা অনেকক্ষণ বাতাসে ভাসমান অবস্থায় থেকে অনেককে সংক্রামিত করতে পারে। যদিও এ নিয়ে কোনও গবেষণালব্ধ তথ্য আমাদের হাতে নেই, তবুও এই দাবিকে একেবারে নস্যাৎ করা যায় না। 

বাজি পোড়ানোয় দূষণ যদি লাগামছাড়া হয়, তাহলে হার্ট, ফুসফুসের সমস্যা দেখা দেওয়া অবধারিত, যা আমাদের ঠেলে দিতে পারে চরম বিপদের মুখে। শুধুমাত্র আইন করে বা প্রশাসনের নজরদারিতে বাজির দূষণ থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব নয়, যতক্ষণ না আমরা সচেতন হচ্ছি। 

সবার কাছে অনুরোধ, কালীপুজো বা দীপাবলিতে দূরে থাকুন বাজি পোড়ানো থেকে, বাজির দূষণ নয়, বৈদ্যুতিক আলোর পাশাপাশি চারদিক আলোকিত হোক মাটির প্রদীপ, মোমবাতির আলোয়।‌ ফিরিয়ে আনুন বাংলার নিজস্ব ঐতিহ্য, সংস্কৃতিকে।‌

সব ছবি: আন্তর্জাল‌