কম্পিউটার, স্মার্টফোন ছাড়া এখন আমরা এক মুহূর্তও চলতে পারিনা। এতে অনেক ক্ষেত্রে যেমন সুবিধা হয়েছে, তেমনই দেখা দিচ্ছে কিছু শারীরিক সমস্যাও। একটানা দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকায় সবচেয়ে নাজেহাল দশা চোখের। অনেক সময় ডিজিটাল ডিভাইসে এতটাই মনোনিবেশ করে ফেলি যে চোখের পাতা খুবই কম পড়ে। ফলে ডিজিটাল ডিভাইস থেকে নির্গত আলো চোখে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার সৃষ্টি করে। তবে শুধুমাত্র চোখ নয়, অনেক সময় মাথা, ঘাড়ে ব্যথারও কারণ হয়ে ওঠে মাত্রাতিরিক্ত ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার।
চোখ ভালো রাখতে
২০–২০–২০
প্রীতিময় রায়বর্মন
ডিজিটাল ডিভাইস ছাড়া এখন দৈনন্দিন জীবনযাপন প্রায় অসম্ভব। তাই এইসব সমস্যাকে পাশ কাটিয়েই ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করতে হবে আমাদের। কিন্তু কীভাবে পাশ কাটবেন? চলুন জেনে নেওয়া যাক
কী কী সমস্যা দেখা দিতে পারে?
দীর্ঘক্ষণ ডিজিটাল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখ অনেক সময় লাল হয়ে যায়। দেখা দেয় ড্রাই আই–এর সমস্যা, অর্থাৎ চোখের শুষ্কতা। চোখের পাশাপাশি ঘাড়ে, মাথায় যেমন ব্যথা হতে পারে, তেমনই দেখা দেয় ঘুমের ব্যাঘাত। অনেকের আবার দেখা দেয় মনোযোগে সমস্যা। বাচ্চারও এর ব্যতিক্রম নয়। তাদেরও চোখের পাশাপাশি অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারে দেখা দিচ্ছে মানসিক সমস্যাও।
সবচেয়ে নাজেহাল চোখ
ডিজিটাল স্ক্রিন নির্গত নীল আলো চোখের ওপর চাপ তৈরি করে। কারণ ডিজিটাল ডিভাইসের আলোর তীব্রতা ফিল্টার করতে পারে না চোখ। আর এতে ক্ষতি হয় ম্যাকুলার। যাকে চিকিৎসার পরিভাষায় বলে ম্যাকুলার ডিজেনারেশন। দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে রেটিনার খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই ম্যাকুলা। আগে ম্যাকুলার ডিজেনারেশন প্রবীণদের বয়সজনিত অসুখ হিসেবেই পরিচিত ছিল, এখন যে কোনও বয়সেই চোখে এই সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এছাড়া বাচ্চাদের মধ্যে এখন মায়োপিয়ায় সমস্যা আগের থেকে অনেকটাই বেড়েছে। ময়োপিয়া অর্থাৎ দূরের জিনিস স্পষ্ট দেখতে না পাওয়া। ফলে ছোটবেলাতেই যেমন চশমার প্রয়োজন পড়ছে, তেমনই যাদের চশমা রয়েছে তাদেরও অল্পদিনের ব্যবধানে লাফিয়ে লাফিয়ে পাওয়ার বাড়ছে।
বাচ্চাদের ক্ষতি একটু বেশি
বড়োরা অনেক সময় ডিজিটাল ডিভাইস থেকে নির্গত আলো থেকে বাঁচতে কোনও না কোনও উপায় অবলম্বন করলেও, বাচ্চাদের দিয়ে তা অবলম্বন করানো বেশ কঠিন। এছাড়া বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চোখও ক্ষতিকর আলোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কিছুটা প্রস্তুত থাকে। কিন্তু ছোটদের ক্ষেত্রে সেটা হয় না। ফলে ক্ষতিকর আলো সামান্যতেই চোখের ক্ষতি করে। দেখা দিতে রেটিনার সমস্যা। সেই সঙ্গে বাচ্চাদের মাথাব্যথার অন্যতম বড় কারণ ঘণ্টার পর ঘণ্টা ডিজিটাল ডিভাইসে মুখ গুঁজে বসে থাকা।
সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে সুস্থ থাকতে
✔ একটানা অনেকক্ষণ ডিজিটাল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকবেন না। মেনে চলুন টোয়েন্টি–টোয়েন্টি–টোয়েন্টি (২০–২০–২০) রুল বা নিয়ম। অর্থাৎ ডিজিটাল ডিভাইসে কাজের সময় ২০ মিনিট অন্তর ২০ ফুট দূরে থাকা কোনও বস্তুর দিকে লক্ষ্য স্থির করে অন্তত ২০ সেকেন্ড তাকিয়ে থাকুন।
✔ একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে ব্যবহার করুন ডিজিটাল ডিভাইস।
✔ ২ ঘণ্টা অন্তর কম করে ১৫ মিনিটের বিরতি নিন। এই ১৫ মিনিট হাঁটাহাঁটি করুন। হালকা শরীরচর্চাও করতে পারেন, যাতে শরীরের বিভিন্ন পেশির মুভমেন্ট হয়।
✔ এখন স্মার্টফোন বা ল্যাপটপে নাইট মোড, রিডিং মোড ইত্যাদি থাকে। এগুলো অ্যাকটিভ রাখলে চোখ কিছুটা সুরক্ষিত থাকে।
✔ এখন অধিকাংশই বাসে, ট্রেনে চলার পথের পুরো সময়টাই ফোনের দিকে তাকিয়ে কাটিয়ে দেন। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ডিজিটাল ডিভাইস দেখার সময় ঝাঁকুনি হলে তা চোখের জন্য ক্ষতিকর। তাই ট্রেনে, বাসের ঝাঁকুনিতে খুব প্রয়োজন ছাড়া ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার না করাই ভালো।
✔ শুয়ে ডিজিটাল স্ক্রিন দেখা থেকে বিরত থাকুন। কারণ এতে চাপ পড়ে চোখের পেশিতে। দীর্ঘদিন চোখের পেশিতে চাপ পড়ার অর্থ দৃষ্টিশক্তি কমে আসা বা ঝাপসা দেখা। দেখা দেয় মাথাব্যথার সমস্যা।
সব ছবি: আন্তর্জাল
ব্যবহৃত ছবির সঙ্গে অসুখের কোনও সম্পর্ক নেই
Leave a Reply
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Comments