শীত পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডাইনিং টেবিলে রাখা জলের বোতলগুলো আর মুহূর্তে খালি হয় না। বাড়ি থেকে স্কুল, কলেজ বা অফিসে ব্যাকপ্যাকে নিয়ে যাওয়া জলের বোতলটা কিছুদিন আগেও নিমেষে শেষ হয়ে যেত। কিন্তু এখন কিছুটা জল সমেত তা আবার বাড়ি ফেরে! শীতে খুব একটা তেষ্টা পায় না। তাই বলে জল পান বেমালুম ভুললে চলবে? জল খাওয়া কমানোর অর্থ বিভিন্ন সমস্যাকে নেমতন্ন করে ডেকে আনা।
ভুললে চলবে?
প্রীতিময় রায়বর্মন
জল খেয়ে আপনি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন ওজন, ব্লাড সুগার, সোডিয়ামের মাত্রা; কমাতে পারেন শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট। এমনটাই উঠে এসেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের চালানো গবেষণায়।
১৮,৩০০ জন প্রাপ্তবয়স্কের ওপর চালানো গবেষণায় দেখা গেছিল এদের মধ্যে যাঁরা জল খাওয়া বাড়িয়েছেন, তাঁদের ১%–এর হলেও স্যাচুরেটেড ফ্যাট, সুগার এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা কমেছে। যারা দিনে ১–৩ কাপ জল খাওয়া বাড়িয়েছেন, তাঁদের শরীরে প্রতিদিন অতিরিক্ত ক্যালরির পরিমাণ কমেছে ৬৮ থেকে ২০৫, সুগার কমেছে ৫ থেকে ১৮ গ্রাম এবং কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমেছে ৭ থেকে ২১ মিলিগ্রাম।
শুধু কি তাই? পরিমিত পরিমাণ জল খেলে, তা সাহায্য করে খাদ্য পরিপাকেও। এখন বেভারেজের রমরমা। গরমে তেষ্টা পেলে যেমন কোল্ড বেভারেজ, তেমনই শীতে এসে গেছে হট বেভারেজ। এগুলো থেকে শরীরে ঢোকে প্রচুর পরিমাণ ক্যালরি। তাই তেষ্টা মেটাতে প্লেন জল খাওয়ারই পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
আর একটা কথা মানতেই হবে জল ছাড়া অন্য পানীয়ে আদৌ তেষ্টা মেটে? সারাদিন জল ছাড়াও অন্য কোনও তরল পান করলেও সেটা দিনে আপনি কতটা জল খেলেন তার মধ্যেই পড়বে। যেমন চা, কফি ইত্যাদি।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের শরীরে প্রতিদিন ঢুকছিল গড়ে ২,১৫৭ ক্যালরি। যার মধ্যে ১২৫ ক্যালরির জোগান আসছিল মিষ্টি জাতীয় বেভারেজ থেকে এবং ৪৩২ ক্যালরি আসছিল খেয়ালখুশি মতো খাবার যেমন ডেজার্ট, প্যাটিস ইত্যাদি থেকে। দেখা গেছে যাঁরা পরিমাণ মতো জল খেয়েছেন, তাঁদের শরীরে কমেছে ক্যালরির পরিমাণ।
শুধুই কি ক্যালরির পরিমাণ কমায় জল? জল মুখের ভেতর লালা নিঃসরণে সাহায্য করে, যা খাদ্য গলাধঃকরণে বিশেষভাবে সাহায্য করে। খাদ্য পরিপাকের প্রথম ধাপ খাদ্য সরলীকরণ থেকে শেষ ধাপ পর্যন্ত জলের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। এ ছাড়া শরীরের জন্য বিশেষ উপকারি ভিটামিন ‘এ’, ‘ডি’, ‘ই’ ও ‘কে’ এবং কিছু মিনারেল জলে দ্রবীভূত হওয়ার পর তবেই হজম হয়।
জল শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। নিয়ন্ত্রণ করে শরীরের তাপমাত্রাকে। আর লিভার ও শরীরের অন্যান্য অঙ্গে ফ্যাট মেটাবলিজমের জন্য জল ভীষণ জরুরি। ওবেসিটি আর মেটাবলিক সিনড্রোমের যুগে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল যে খেতেই হবে।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের আড়াই লিটার ও মহিলার দু’লিটার জল খাওয়া জরুরি। তবে এই জল খাওয়ার পরিমাণটা নির্ভর করে আবহাওয়া (শীত, গ্রীষ্ম না বর্ষা প্রধান দেশ), শরীরে কোনও ক্রনিক অসুখ (হার্টের অসুখ, কিডনির সমস্যা, লিভার বা ফুসফুসে সমস্যা ইত্যাদি) আছে কি না তার ওপর।
তবে মিনিটে মিনিটে বা ঘণ্টায় ঘণ্টায় অ্যাকোয়াহোলিকদের মতো জল খেলে কিডনির ওপর চাপ বাড়বে, রক্তে সোডিয়াম কমবে, শরীরের বিভিন্ন অংশে জল জমবে, স্বভাব হবে মিটখিটে, হবে না ঘুম, করবে মাথাব্যথা।
তাই একদম কম খাওয়া বা অতিরিক্ত জল না খেয়ে পরিমিত পরিমাণ জল খান এবং শরীরকে ফিট রাখুন।
সব ছবি: আন্তর্জাল
Leave a Reply
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Comments