এই স্বস্তি কতদিনের?
ডাঃ পল্লব বসু 
বিশিষ্ট চিকিৎসক, মালদা মেডিক্যাল কলেজ

এই মুহূর্তে দৈনিক কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা সারা ভারতেই কমের দিকে, চল্লিশ হাজারের আশেপাশে। কিন্তু, আমাদের মনে তৃতীয় ঢেউ নিয়ে একটা আতঙ্কের আবহ তৈরি হয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তৃতীয়, এমনকি চতুর্থ ঢেউও এসে গিয়েছে, ভারতে প্রবল পরাক্রমী দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর সামান্য সময়ের জন্য মানুষ একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। কিন্তু সবার মধ্যে আতঙ্ক কাজ
করছে যে এই স্বস্তি কতদিনের? এখানেই একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে ভ্যাকসিন

 

দেশি ও বিদেশি কী কী টিকা এই মুহূর্তে আমাদের হাতে রয়েছে?
ফাইজার

এমআরএনএ ভ্যাকসিন (mRNA or Nucleic Acid)– করোনা ভাইরাসের আরএনএ ব্যবহার করে তৈরি। ১২ বছর বয়সের উপরে দেওয়া যাবে। ১২ বছরের নীচে ট্রায়াল চলছে। দুটো ডোজ একুশ দিনের ব্যবধানে দিতে হবে। এই ভ্যাকসিনটি মাইনাস ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা মাইনাস ১১২ ডিগ্রি ফারেনহাইটে সংরক্ষণ করতে হয়। এটাই এই ভ্যাকসিনের সবচেয়ে বড় সমস্যা ভারতের প্রত্যন্ত জায়গায় পৌঁছে দেওয়া বা সেখানে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সংরক্ষিত রাখা। 

মডার্না

এমআরএনএ ভ্যাকসিন (mRNA or Nucleic Acid)– করোনা ভাইরাসের আরএনএ ব্যবহার করে তৈরি। ১৮ বছর বয়সের উপরে দেওয়া যাবে। ১৮ বছরের নীচে ট্রায়াল চলছে। দুটো ডোজ আঠাশ দিনের ব্যবধানে দিতে হবে। এই ভ্যাকসিন যে কোন রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করা যায়। 

জনসন অ্যান্ড জনসন

নিষ্ক্রিয় অ্যাডেনো ভাইরাস বাহক বা ভেক্টরর মধ্যে করোনা ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন রাখা হয়। একটাই ডোজ যথেষ্ট। ১৮ বছর বয়সের উপরে দেওয়া যাবে। 

অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকা বা কোভিশিল্ড (ভারত)

নিষ্ক্রিয় অ্যাডেনো ভাইরাসকে এমনভাবে গঠনগত পরিবর্তন ঘটানো হয়, যাতে সেটা করোনা ভাইরাসের মত অনেকটা দেখতে লাগে। দুটো ডোজ দিতে হয় ১২ থেকে ১৬ সপ্তাহের ব্যবধানে। ১৮ বছরের কম বয়সীদের দেওয়া হয় না। 

কোভ্যাক্সিন

এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ করোনা ভাইরাসের মৃত শরীর ভ্যাকসিনে ব্যবহৃত হয়। ২৮ দিনের ব্যবধানে দুটো ডোজ এক্ষেত্রে নিতে হয়। ১৮ বছরের কম বয়সীদের উপর ট্রায়াল চলছে। 

স্পুটনিক ভি

নিষ্ক্রিয় অ্যাডেনো ভাইরাস বাহক বা ভেক্টরর মধ্যে করোনা ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন রাখা হয়। দুটো ডোজ ২১ দিনের ব্যবধানে দেওয়া হয়। অন্য ভ্যাকসিনগুলোর সঙ্গে স্পুটনিকের পার্থক্য হল, এর দুটো ডোজের ক্ষেত্রে দুটো আলাদা ধরনের নিষ্ক্রিয় অ্যাডেনো ভাইরাস বাহক ব্যবহৃত হয়। এতে অ্যান্টিবডি তৈরির ক্ষমতা বাড়ে। 

জাইডাস ক্যাডিলা

ডিএনএ ভ্যাকসিন। দুটো ডোজের মধ্যে ২১ থেকে ২৮ দিনের ফারাক রাখা প্রয়োজন।

  • এদের মধ্যে ফাইজারের ভ্যাকসিনটি ১২ থেকে ১৫ বছরের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ইউরোপে ইতিমধ্যেই অনুমোদন পেয়ে গেছে।
  • জাইডাস ক্যাডিলা ট্রায়াল শেষ করেছে ১২ থেকে ১৮ বছরের মধ্যের শিশু এবং কিশোরদের উপর। ভারতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য দপ্তর ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে।
  • কোভ্যাক্সিনের ট্রায়াল চলছে ১৮ বছরের নিচে। সেপ্টেম্বরে ট্রায়াল শেষ হয়ে যেতে পারে। 

এই মুহূর্তে ১৮–এর উপরে ভ্যাকসিন দেওয়ার হার প্রতিদিন গড়ে ৪০ লাখের মত। জনসংখ্যার ২৭.৭% অন্তত ভ্যাকসিনের একটি ডোজ পেয়েছেন আর ৭.৮% ভ্যাকসিনের দুটো ডোজই পেয়েছেন। তবে তৃতীয় ওয়েভ রুখতে হলে এই হার প্রতিদিন ৮০ থেকে ৯০ লাখে নিয়ে যেতে হবে। শিশুরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার হয়। ফলে ১৮–এর নিচের টিকাকরণ অত্যন্ত জরুরি, তবেই এই ইনফেকশনের   চেনটাকে আটকানো সম্ভব। 

৬ মাস বয়স থেকেই যাতে টিকাকরণ করা যায় তার ট্রায়াল চলছে। এবার কত দ্রুত শিশু কিশোরদের জন্য টিকা সরকার অনুমোদিত হয়ে দেওয়া শুরু হয় তার অপেক্ষা।

তবে একটাই কথা খুব জরুরি, যাঁদের একটা বা দুটো ডোজ ভ্যাকসিন ইতিমধ্যে দেওয়া হয়ে গেছে, তাঁরা এমন মনে করবেন না যে তাঁদের আর করোনা হতে পারে না। কোনও টিকাই ১০০ শতাংশ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে পারে না।

সুতরাং টিকাকরণের পরেও একমাত্র উপযুক্ত মাস্ক এবং বারবার স্যানিটাইজারের ব্যবহারই রুখে দিতে পারে তৃতীয় ঢেউ। মানুষের সচেতনতা বাড়াতে হবে। বারবার নিষেধ সত্ত্বেও সোশ্যাল গ্যাদারিং, সেখানে দুরত্ববিধি না মানা এবং মাস্ক ব্যবহার না করা, দ্বিতীয় ঢেউ সামান্য চুপ করার সঙ্গেই ঘোরা বেড়ানো, উৎসব, উল্লাসে গা ভাসিয়ে দিলে তৃতীয় ঢেউ কিন্তু কেবল সময়ের অপেক্ষা হয়ে দাঁড়াবে।

ছবি: আন্তর্জাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *