১৯৯১ সাল থেকে প্রথিতযশা চিকিৎসক ও রাজ্যের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের জন্ম ও মৃত্যুদিনটি পালন হয়ে আসছে ‘জাতীয় চিকিৎসক দিবস’ হিসেবে। তিনি শুধুমাত্র একজন চিকিৎসকই ছিলেন না, ছিলেন সর্বগুণের অধিকারী একজন ব্যক্তিত্ব
রোগীকে দেখেই করে ফেলতেন রোগনির্ণয়!
প্রীতিময় রায়বর্মন
১৯৬১ সালের ৬ আগস্ট। মার্কিন রাষ্ট্রপতি জে এফ কেনেডির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকারে নানা বিষয় নিয়ে কথাবর্তা চলছে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ও প্রথিতযশা চিকিৎসক ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের। হঠাৎ কেনেডির উদ্দেশ্যে ডাঃ রায় বললেন, ‘আচ্ছা, আপনার কি বেশ কিছুদিন ধরে পিঠে খুব ব্যথা?’
শুনে রীতিমতো অবাক মার্কিন রাষ্ট্রপতি। বললেন, ‘ঠিক বলেছেন। পিঠে বেশ যন্ত্রণা। কিন্তু আপনি জানলেন কীভাবে?’ এ ছিল তাঁর এক অদ্ভূত ক্ষমতা। রোগীকে দেখেই করলে ফেলতে পারতেন রোগনির্ণয়!
ডাঃ রায়ের সহাস্য উত্তর, ‘আমি পেশায় চিকিৎসক। আর নেশায় রাজনীতিবিদ।’
ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়
উত্তর শুনে মার্কিন রাষ্ট্রপতি তখন বিস্ময়ের সুরে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনি তো আমার অসুখের কোনও পরীক্ষাই করেননি! শুধুমাত্র দেখেই বলে দিলেন অসুখ সম্পর্কে!’
কেনেডির কথা শুনে হাসলেন বিধান রায়।
এরপর কেনেডি তাঁর চিকিৎসার যাবতীয় প্রেসক্রিপশন, টেস্ট রিপোর্ট এনে হাজির করলেন বিধান রায়ের সামনে। যেভাবে চিকিৎসা চলছে তাতে অসন্তুষ্ট বিধান রায়। নিজে প্রেসক্রিপশন করে দিলেন। বললেন, ‘আমি শুধু কিছু ওষুধ লিখে দিলাম। আগামী এক বছরের মধ্যে ব্যথা না সারলে, আমি নিজের খরচায় আবার আসবো আপনার কাছে।’
বেজায় খুশি মার্কিন রাষ্ট্রপতি। বেরিয়ে আসার সময় হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়লেন বিধান রায়। কেনেডিকে বললেন, ‘আচ্ছা, আমার ডাক্তারির পারিশ্রমিক?’
বেশ লজ্জায় পড়লেন কেনেডি। বিধান রায়ের প্রশ্ন শুনে অস্বস্তিতে পড়া কেনেডি বললেন, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ, নিশ্চই, কত টাকা আপনার ফি?’
জে এফ কেনেডি
তখন বিধান রায় কলকাতার উন্নয়নের মাস্টারপ্ল্যান বের করে বললেন, ‘এই পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপ দানের জন্য ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ প্রয়োজন।’
ভারতের এক অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর রাজ্যের উন্নয়নের এমন আন্তরিক প্রচেষ্টায় মুগ্ধ মার্কিন রাষ্ট্রপতি বিধান রায়ের কথায় সম্মতি জানালেন এবং বললেন, ফোর্ড ফাউন্ডেশনের সহায়তায় কলকাতা উন্নয়ন পরিকল্পনার সমীক্ষা হবে।
নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন
যেমন কথা, তেমন কাজ। তৈরি হল ক্যালকাটা মেট্রোপলিটন প্ল্যানিং অর্গানাইজেশন। এরপর শুধুই কর্মযক্ষ আর উন্নয়নের বাস্তবায়ন। কলকাতার বুকে টাউনশিপ থেকে শুরু করে স্কুল, হাসপাতাল, পৌরসভা, শিল্পঞ্চল সবই বাস্তবের রূপ পেতে শুরু করল।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জে এফ কেনেডির সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের সৌজন্য সাক্ষাৎকার বিস্তারিতভাবে প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৬১ সালের ৮ আগস্ট ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’।
সব ছবি: আন্তর্জাল
Leave a Reply
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Comments