হার্টের অসুখ নিয়ে পুরুষদের মতো মহিলারা ততটা সচেতন নন। আমাদের সমাজে অধিকাংশ মহিলারই হার্টের অসুখ নিয়ে খুব একটা হেলদোল নেই। যদি ক্যান্সার ও হার্টের অসুখের সচেতনতা নিয়ে মহিলাদের মধ্যে কোনও সমীক্ষা করা হয়, দেখা যাবে অধিকাংশই ক্যান্সার নিয়ে অনেক বেশি সচেতন, হার্টের অসুখ নিয়ে নয়। বুকে ব্যথা হলে অধিকাংশ মহিলাই ধরে নেন ওটা গ্যাস, অম্বলের ব্যথা। নিজে ডাক্তারি করে রোগ নির্ণয় করার ফল কিন্তু মারাত্মক
অ্যারিদ্মিয়া বা অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন
পুরুষদের চেয়ে মহিলারা বেশি ঝুঁকিতে?
প্রীতিময় রায়বর্মন
বিভিন্ন সমীক্ষায় প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, অ্যার্ট্রিয়াল ফিব্রিলেশন বা অনিয়মিত হৃৎস্পন্দনের কারণে পুরুষদের থেকে মহিলারাই হৃদ্রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর অন্যতম বড় কারণ এই অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন। আমাদের স্বাভাবিক হৃৎস্পন্দন মিনিটে ৬০–৯০ বার। কী ধরনের কাজ করছি তার ওপর নির্ভর করে হৃৎপিণ্ডের স্পন্দনের হার।
বেশি কাজ করলে শরীরে অক্সিজেনের চাহিদা বাড়ে, আর তখন সেই চাহিদা মেটানোর জন্য হৃৎপিণ্ডকে অনেক বেশি পাম্প করতে হয়। তখন হৃৎস্পন্দন বাড়ে। হৃৎপিণ্ডের ইলেকট্রিক্যাল ইমপালস্ হৎপিণ্ডের সঙ্কোচনে সাহায্য করে স্পন্দনের হারকে নিয়ন্ত্রণ করে। যখন কোনও কারণে হৃৎপিণ্ডের ধমনীতে এই ইলেকট্রিক্যাল ইমপালস্ চলাচলে বাধা পায় তখনই হৎস্পন্দনের হার কমে যায়। হৎস্পন্দন অনিয়মিত হয়ে পড়ে। এই অনিয়মিত হৃৎস্পন্দকে বলে অ্যারিদ্মিয়া। স্পন্দন অনিয়মিত হয়ে পড়লে শ্বাসকষ্ট, হঠাৎ জ্ঞান হারানো বা মাথা ঘোরার মতো উপসর্গগুলো দেখা দিতে পারে।
দেখা গেছে, উন্নত আর উন্নয়নশীল দেশে এই অনিয়মিত হৎস্পন্দনে আক্রান্ত হওয়া মহিলাদের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। পুরুষ ও মহিলাদের হৃদ্রোগ ব কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজের রিস্ক ফ্যাক্টরগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একই। যেমন— ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত ধূমপান, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে মাত্রাধিক কোলেস্টেরল, বংশগত করোনরি হার্ট ডিজিজের সমস্যা ইত্যাদি।
১৯৬৬ সালে থেকে এখনও পর্যন্ত এই অ্যার্ট্রিয়াল ফিব্রিলেশন ও কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ নিয়ে বহু গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন সাময়িকীতে। প্রতিটা গবেষণাতেই অন্তত ৫০ জন অংশগ্রহণকারী ছিলেন যাঁদের হৃৎস্পন্দন অনিয়মিত এবং আরও ৫০ জন ছিলেন যাঁদের হৃৎস্পন্দন নিয়মিত।
আর তাতেই উঠে এসেছে পুরুষদের থেকে মহিলারাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন ও অন্যান্য হার্টের অসুখ যেমন— কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, স্ট্রোক, মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন, হাট ফেলিওর–এ। অনিয়মিত হৃৎস্পন্দনের কারণে পুরুষদের থেকে অন্তত ১২% বেশি মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছেন মহিলারা।
হার্টের অসুখকে খুব একটা গুরুত্ব না দেওয়াই আজ মহিলাদের ঠেলে দিয়েছে এই ঝুঁকির মধ্যে। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন ও গবেষকদের মতে, এ বিষয়ে মহিলাদের যেমন রিস্ক ফ্যাক্টরগুলো নিয়ে সচেতনতা দরকার, তেমনই দরকার দ্রুত চিকিৎসার।
অনেক সময় পুরুষ ও মহিলাদের হার্টের অসুখের রিস্ক ফ্যাক্টর বা কারণ আলাদা হতে পারে। তাই চিকিৎসার সময় সেই দিকটাও খেয়াল রাখা দরকার। এবার কি হার্টের অসুখ নিয়ে একটু সচেতন হবেন মহিলারা?
সব ছবি: আন্তর্জাল
Leave a Reply
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Comments