আজ ১৪ মে। ওয়ার্ল্ড ব্লাড ডোনার ডে বা বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। যাঁরা স্বেচ্ছায় রক্তদান করে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ বাঁচাচ্ছেন তাঁদের-সহ সাধারণ মানুষকে রক্তদানে উৎসাহিত করাই এই দিনটির উদ্দেশ্য। এবারের থিম— ‘ডোনেটিং ব্লাড ইজ অ্যান অ্যাক্ট অব সোলিডারিটি, জয়েন দ্য এফোর্ট অ্যান্ড সেভ লাইভ’ অর্থাৎ রক্তদান একটি সম্মিলিত প্রয়াস, এই প্রয়াসে যুক্ত হন, রক্তদান করুন এবং জীবন বাঁচান
বছরের প্রতিটা দিনই
‘রক্তদাতা দিবস’
সঞ্জীব আচার্য
অধিকর্তা, সেরাম গ্রুপ; সম্পাদক, সেরাম থ্যালাসেমিয়া প্রিভেন্শন ফেডারেশন
দিনটির তাৎপর্য কতটা?
সঞ্জীব আচার্য: রক্ত কোনো পরীক্ষাগারে তৈরি হয় না। রক্তের প্রয়োজনীয়তা মেটাতে আমাদেরকেই এগিয়ে আসতে হয়। শুধুমাত্র আজকের দিনটি নয়, বছরের প্রতিটা দিনই আমাদের কাছে ‘ওয়ার্ল্ড ব্লাড ডোনার ডে’ বা ‘বিশ্ব রক্তদাতা দিবস’। আজ একটি প্রতীকী দিন। সাধারণ মানুষ যাতে সারাবছর রক্তদানে এগিয়ে আসেন, সেই জন্য এইদিন নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে রক্তদানে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। তাই আজকের এই প্রতীকী দিনটির তাৎপর্যপূর্ণ নিঃসন্দেহে অপরিসীম।
শারীরিক সমস্যা বা এমন কোনো অসুখ কি আছে যেখানে রক্তদান থেকে বিরত থাকতে হয়?
সঞ্জীব আচার্য: ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, নিউরো সাইকিয়াট্রিক ইত্যাদি অসুখের ওষুধ খেলে রক্তদান থেকে বিরত থাকাই ভালো। এইসব অসুখের ওষুধ যিনি খাচ্ছেন তার রক্তদানে কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু যাঁর শরীরে সেই রক্ত দেওয়া হবে তাঁর সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া এইচআইভি, হেপাটাইটিসের মতো কোনো অসুখে রক্তদানের প্রশ্নই নেই, তাঁদের রক্ত কোনোভাবেই নেওয়া চলবে না। জন্ডিস হলে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার পর রক্ত দেওয়া যায়। সদ্য জন্ডিস থেকে উঠে কেউ রক্ত দেবেন না।
অনেকেই রক্ত দিতে ভয় পান। ভাবেন রক্ত দিলে হয়তো শরীরে কোনো শারীরিক সমস্যা দেখা দেবে। রক্তদানে কি সত্যিই কোনো শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে?
সঞ্জীব আচার্য: রক্তদানে কোনো শারীরিক সমস্যা দেখা দেওয়ার কথা নয়। আমাদের রক্তে থাকা লোহিত রক্তকণিকা বা আরবিসি-র আয়ু ১২০ দিন। ১২০ দিন পর মৃত আরবিসি এমনিই শরীর থেকে বেরিয়ে যায় এবং নতুন আরবিসি তৈরি হয়। তাই রক্ত দিলে শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়া আরবিসি ১২০ দিন পর আগের জায়গায় আবার ফিরে আসে।
রক্ত দেওয়ার পর বিশেষ কোনো খাওয়াদাওয়া...
সঞ্জীব আচার্য: আমাদের শরীর থেকে যতটুকু রক্ত নেওয়া হয় তাতে শরীরে মারাত্মক কোনো প্রভাব পড়ার কথা নয়। তবুও মাঝে মাঝে দেখি কারও মাথা ঘোরে। এটা রক্ত দিয়েছে বলেই হচ্ছে এমনটা নয়। টেনশন বা রক্ত দেখেও অনেকের এ রকম হতে পারে বা শারীরিক দুর্বলতা থাকলে রক্ত দেওয়ার পর সামান্য দুর্বল লাগতে পারে। রক্ত দেওয়ার পর একেবারেই নর্মাল খাওয়াদাওয়া করুন। তবে চিরাচরিত প্রথা রক্ত দেওয়ার পর চিকেন স্টু খাওয়া। এটা খেলে যতটা রক্ত বেরিয়ে গেল ততটা রক্ত তৈরি হয়ে যাবে তা কিন্তু নয়। প্রোটিন জাতীয় খাবার দেওয়া হয় দুর্বলতা কাটানোর জন্য।
একজন সুস্থ মানুষ কতদিনের ব্যবধানে রক্ত দিতে পারেন?
সঞ্জীব আচার্য: ১২০ দিনের ব্যবধানে। কারণ রক্ত দিলে শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়া লোহিত রক্তকণিকা ১০০ শতাংশ তৈরি হতে সময় লাগে ১২০ দিন।
কোভিডের সময়ে রক্তের যে সঙ্কট দেখা দিয়েছিল তা কি আমরা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি?
সঞ্জীব আচার্য: পরিস্থিতি এখন অনেকটাই ভালো। এখন বিভিন্ন ক্লাব, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, রাজনৈতিক দল প্রত্যেকেই রক্তদান শিবিরের আয়োজন করছে। আগের থেকে পরিস্থিতি ভালো হলেও, আরও ভালো হওয়া উচিত। কারণ এখনও প্রতিদিন রক্তের যে চাহিদা রয়েছে, যোগান সেই তুলনায় অনেকটাই কম। অর্থাৎ চাহিদা ও যোগনের মধ্যে ফারাক রয়েছে। কোভিড বা নির্বাচনের সময় যে ফারাকটা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল।
সাক্ষাৎকার: প্রীতিময় রায়বর্মন
ছবি সৌজন্যে: আন্তর্জাল
Leave a Reply
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Comments