পল আলেকজান্ডার
৭০ বছর লোহার ফুসফুসের ভেতর!‌
প্রীতিময় রায়বর্মন

পল আলেকজান্ডার। বয়স ৭৭ বছর। গত ৭ দশক ধরে একটি ৬০০ পাউন্ডের লোহার ফুসফুসের মাধ্যমে বেঁচে আছেন! গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস পলকে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকা ‘‌আয়রন লাঙ পেশেন্ট’‌–এর স্বীকৃতি দিয়েছে। ‌১৯৫২ সালে মাত্র ৬ বছর বয়সে পোলিওতে আক্রান্ত হন পল। তখন আবিষ্কার হয়নি পোলিও টিকা। 

১৯৪৬–এ জন্মের পর থেকেই নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে পলকে। যে বছর পল পোলিওতে আক্রান্ত হন, সে বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রেকর্ড সংখ্যক শিশু পোলিওর শিকার হন। পোলিওমাইলাইটিস, সংক্ষেপে পোলিও স্পাইনাল কর্ডের মোটর নিউরনকে আক্রমণ করে, কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র এবং পেশীর মধ্যে সংযোগ ব্যাহত হয় এবং শেষে সেগুলিকে এতটাই দুর্বল করে তোলে যে, একজন ব্যক্তি নিজে থেকে আর শ্বাস নিতে পারেন না।

১৯৫৫ সালে এল ভ্যাকসিন। ১৯৭৯ সালে ঘোষণা করা হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পোলিও মুক্ত দেশ। ১৯৫৫–তে ভ্যাকসিন এলেও, পলের জন্য তা অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে। কারণ তাঁর ঘাড় থেকে নীচের অংশ পোলিওর কারণে তখন অবশ।

শ্বাস নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করতেন পল। কিন্তু পারতেন না। ধীরে ধীরে মুখের রং নীল হয়ে যাচ্ছিল। তখন এক চিকিৎসক আপৎকালিন পরিস্থিতিতে করেন ট্র্যাকিওটমি। বের করা হয় ফুসফুসে জমে থাকা ফ্লুইড। কিন্তু ততদিনে পক্ষাঘাতে অসাড় হয়ে গেছে পলের ফুসফুস। তখন ছ’বছরের পলকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় সিলিন্ডার আকৃতির এক বিশাল মেশিনের ভেতর। যেটি কৃত্রিম ফুসফুসের কাজ করে। মেশিনটিকে বলা হয় ‘আয়রন লাঙ’ বা ‘‌লোহার ফুসফুস’‌। 

এরপর চিকিৎসাবিজ্ঞানের হাত ধরে আরও আধুনিক সরঞ্জাম এলেও পলের পছন্দ সিলিন্ডার আকৃতির এই লোহার ফুসফুস। ২০২০ সালে এক সাক্ষাৎকারে পল বলেছিলেন, নতুন মেশিন তৈরি হলেও, তিনি এই পুরানো মেশিনের সঙ্গেই দিব্যি অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। নতুন ডিভাইসগুলির জন্য গলায় আরেকটি ছিদ্র করতে হয়, পল আর তাঁর গলায় কোনও ছিদ্র করতে রাজি নন। লোহার ফুসফুসের বাইরে খুব অল্প সময় শ্বাস নিতে পারেন পল, যাকে বলে ফ্রগ ব্রিদিং। 

ইচ্ছা থাকলে কোনও কিছুই যে বাধা নয়, তারও জলন্ত উদাহরণ পল। এতো বাধা সত্ত্বেও পল স্কুলের পাঠ শেষ করে স্নাতক হওয়ার পর আইন নিয়ে চালিয়ে গেছেন পড়াশোনা। আইনে ডিগ্রি অর্জনের পর কয়েক দশক ধরে আইন প্র‌্যাকটিসও করেছেন!‌

পলের কথায়, ‘‌সবই সম্ভব হয়েছে লোহার ফুসফুসের জন্য। আমি কখনই হাল ছাড়িনি এবং এখনও ছাড়বো না।’‌ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি কনট্র‌্যাপশনের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছেন এবং এখন তাঁকে সব সময় নজরে রাখতে হয়। পল একটি ছোট ফ্ল্যাটে থাকেন, যার কোনও জানলা নেই। 

গত বছর একটি সংস্থা পলের শরীরের যত্নের জন্য একটি তহবিল সংগ্রহ করেন। সংগৃহিত হয় ১ লক্ষ ৩২ হাজার ডলার। তখন সাধারণের উদ্দেশ্যে সংস্থাটি বলেছিল, ‘যে মানুষটি সারাজীবন অন্যের প্রতি যত্নশীল থেকেছেন এবার তাঁকে যত্ন নেবার সময় এসেছে।’‌
ভালো থাকুন পল।‌

সব ছবি:‌ আন্তর্জাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *