প্রেমের মরশুম। হাজির প্রেমের ঋতু বসন্ত। রোজ, প্রোপোজ, চকোলেট, টেডি, প্রমিজ, হাগ, কিস–এর পর আজ ভ্যালেন্টাইন্স ডে। প্রিয়জনকে ভালোবাসা প্রকাশের দিন। আমাদের দেশে ভ্যালেন্টাইন্স ডে–র রমরমা খুব বেশিদিনের না হলেও, দিনটি পালনের পেছনের ইতিহাস বেশ প্রাচীন। চলুন প্রেমের জোয়ারে গা ভাসিয়ে ঢুকে পড়ি ভ্যালেন্টাইন্স ডে–র ইতিহাসের অন্দরে।
ভ্যালেন্টাইন্স ডে ও
সেন্ট ভ্যালেন্টাইন
প্রীতিময় রায়বর্মন
তৃতীয় শতাব্দীর রোম। সাল ২৬৯। সিংহাসনে রোমান সম্রাট ক্লডিয়াস। তাঁর বিশ্বাস ছিল সেনাবাহিনীতে বিবাহিত সৈন্যদের চেয়ে অবিবাহিত সৈন্যরা অনেক বেশি দক্ষ। ফলস্বরূপ তিনি করলেন এক আইন। তাতে বলা হল, সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া কোনও যুবক বিয়ে করতে পারবেন না। তখন রোমের এক খ্রীষ্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক সেন্ট ভ্যালেন্টাইন সম্রাটের এই অন্যায় ও অদ্ভূত আইনের বিরুদ্ধে সরব হলেন। তিনি গোপনে সেনাদের বিয়ের ব্যবস্থা করতে থাকেন। পাশাপাশি তিনি মানুষকে প্রেম, ভালোবাসার প্রতি উদ্বুদ্ধ করার কাজও করে যাচ্ছিলেন। সম্রাটের কানে ভ্যালেন্টাইনের এইসব কাজের খবর পৌঁছতে দেরি হল না। দিলেন মৃত্যুদণ্ডের আদেশ। যে মানুষটি প্রেম, ভালোবাসার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করলেন, তাঁর সেই আত্মত্যাগকে মনে রাখতে সেখানকার বাসিন্দারা ঠিক করলেন একটি দিন তারা সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে উৎসর্গ করবেন।
আবার কারও মতে, ধর্ম প্রচারের অভিযোগে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের হয় কারাবাস। কারাবাসে থাকাকালীন তাঁর চিকিৎসায় দৃষ্টিশক্তি ফিরে পায় এক কারারক্ষীর মেয়ে। চিকিৎসায় ভ্যালেন্টাইনের এই সাফল্য লোকমুখে চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে ভ্যালেন্টাইনের। কারারক্ষীর পরিবারসহ আরও অনেকেই তাঁর কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে খ্রীষ্টধর্ম গ্রহন করেন।
দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়া মেয়েটির সঙ্গেও ভ্যালেন্টাইনের এক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ভ্যালেন্টাইনের এই বিপুল জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে ওঠেন সম্রাট। আইন অমান্য করে ধর্ম প্রচারের অপরাধকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার আগে তিনি সেই মেয়েটির উদ্দেশ্যে একটি পত্র লেখেন, যার শেষে লেখা ছিল— ‘ফ্রম ইওর ভ্যালেন্টাইন।’
ভালোবাসার প্রতীক সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের নামানুসারেই ভ্যালেন্টাইন্স ডে। পঞ্চম শতাব্দীর শেষের দিকে ৪৯৬ সালে পোপ গেলাসিয়াস ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে ভ্যালেন্টাইন্স ডে হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর পঞ্চদশ শতাব্দীতে প্রেম নিবেদনের জন্য জনপ্রিয় হয় ‘ভালোবাসা’ শব্দটি। প্রেমের কবিতা এবং গল্পে ব্যবহৃত হতে থাকে ‘ভালোবাসা’ শব্দটি। আঠারো শতকে ভ্যালেন্টাইন নামসহ বেশ কিছু গল্প ও কবিতার বই প্রকাশ পায়। আর সেগুলি অবধারিতভাবে যুব সমাজের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ভ্যালেন্টাইন্স ডে চলে এলো গ্রিটিংস কার্ডে। ফলে দিনটি পেল আরও প্রচার।
ইতিহাসের প্রেক্ষিতে দিনটির মুখ্য উদ্দেশ্য— প্রিয়জন, ভালোবাসার মানুষের জন্য দিনটিকে উৎসর্গ করা; জীবনে যাঁদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে, তাঁদের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জানানো। চলে ভালোবাসার মানুষের একে অপরকে উপহার দেওয়া ও শুভেচ্ছা বিনিময়। আর এই ভালোবাসার উদ্যাপন রোজ ডে দিয়ে শুরু হয়ে চলে টানা সাতদিন; যা পরিচিত ভ্যালেন্টাইন উইক নামে।
ভালোবাসার জন্য সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের আত্মত্যাগ শুধু একদিন বা এক সপ্তাহে আটকে না থেকে ভালোবাসার অটুট বন্ধন থাকুক সারাবছর, সারাজীবন।
হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন্স ডে।
সব ছবি: আন্তর্জাল
Leave a Reply
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Comments