তবে একলা চলো রে...
প্রীতিময় রায়বর্মন
এই মুহূর্তে খুবই জনপ্রিয় সোলো ট্রাভেল বা একা ভ্রমণ। অনেকেই দলবেঁধে বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়ার বদলে বেছে নিচ্ছেন একা ভ্রমণ। গ্লোবালাইজেশনের যুগে সবাই ছুটছে। সবাই কর্মব্যস্ত। ফলে অনেক সময়ই বেড়ানোর প্ল্যানে সবাকে একসঙ্গে পাওয়া সম্ভব হয় না। তাই তখন ‘একলা চলো রে’। আবার অনেকে সবার সঙ্গে যাওয়ার চেয়ে একা ঘুরতে যাওয়াই শ্রেয় মনে করেন। তাঁদের যুক্তি, নিজেকে জানার সবচেয়ে ভালো উপায় একা ভ্রমণ। কারণ সোলো ট্রাভেল নিজেকে সম্পূর্ণ আবদ্ধ করার সুযোগ দেয়। একা ভ্রমণের একটা আলাদা মজা বা রোমাঞ্চ আছে, যাঁরা সোলো ট্রাভেল বিরোধী তাঁরও বোধ হয় এটা অস্বীকার করতে পারবেন না। তবে এই রোমাঞ্চ বা আনন্দ পুরোটাই নির্ভর করছে কোথায়, কীভাবে ঘুরতে যাচ্ছেন তার ওপর। যাঁরা সোলো ট্রাভেলে অভ্যস্ত তাঁরা জানেন রোমাঞ্চ বা অ্যাডভেঞ্চার চাইলে সোলো ট্রাভেলই বেস্ট। তবে ব্যাকপ্যাক গুছিয়ে একা সফর শুরুর আগে কিছু বিষয়ে অবগত থাকা দরকার। কী সেগুলো? চলুন একে একে জেনে নিই
কেন সোলো ট্রাভেলে ঝোঁক বাড়ছে?
রক্ষণশীল মানসিকতা এখনও সোলো ট্রাভেল মানতে না পারলেও, যাঁরা সোলো ট্রাভেল করেন তাঁরা জানেন এর হাজারও সুবিধা। বাড়ে আত্মবিশ্বাস। সাহসে ভর করে একবার বেরিয়ে পড়তে পারলে নিজের প্রতি বিশ্বাস বেড়ে যায় কয়েকগুণ। একবার যদি মন সোলো ট্রাভেলে সায় দেয় তাহলে পারিপার্শ্বিক নেগেটিভ ধ্যানধারণাকে উপেক্ষা করে বেরিয়ে পড়ুন। আস্থা যেন থাকে নিজের বুদ্ধির উপর।
সোলো ট্রাভেলে নিজেই তো রাজা। নিজেই নিজের গাইড। নিজের চিন্তা বা ট্যুর প্ল্যানই শেষ কথা। কারও সিদ্ধান্ত বা চাওয়া-পাওয়ার জন্য নিজের ইচ্ছেকে জলাঞ্জলি দিতে হবে না। থাকে না কোনো সিদ্ধান্ত ভুল হলে কাউকে জবাবদিহির ঝক্কি। কোথায় কতক্ষণ সময় কাটাবো, কোথায় থাকবো, কী খাবো ইত্যাদি সব কিছুতেই নিজের সিদ্ধান্তই বলবে শেষ কথা। বলা যায় নিজের ইচ্ছে বা নিজে যেভাবে নিজেকে এক্সপ্লোর করতে চাই, ঠিক সেই ইচ্ছেটাই পূরণ করে সোলো ট্রাভেল।
কী করবো, কী করবো না
● প্রথমেই ঠিক করে নিন ট্রাভেল বাজেট। বাজেটের উপরই নির্ভর করে ট্যুর প্ল্যানের অনেকটা। আর এই বাজেটের একটা বড় অংশ জুড়ে থাকে থাকা-খাওয়ার খরচ। থাকার খরচ কমাতে চাইলে সরকারি হোস্টেল বা হোম স্টে-তে থাকতে পারেন।
● যেহেতু একা তাই নিজের জিনসপত্রের উপর নিজেকেই নজর রাখতে হবে। যেমন মোবাইল, ওয়ালেট, ট্রাভেল ব্যাগ ইত্যাদি যেন কখনই নজরের বাইরে না যায়।
● বিদেশে গেলে পাসপোর্ট, ভিসা কখনই হাতছাড়া করবেন না। পাসপোর্ট, ভিসা এবং দরকারি কাগজপত্র কয়েক কপি জেরক্স করে রাখুন। সম্ভব হলে বা চাইলে খুব কাছের বা পরিবারের কাউকে পাসপোর্ট, ভিসার ডিটেইল দিয়ে রাখুন। কোথায় থাকছেন সেটাও জানাতে পারেন। কাছের মানুষদের সঙ্গে কখনই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করবেন না।
● সফর-পথে নিরাপত্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সোলো ট্রাভেলে নিজের নিরাপত্তা নিজেকেই সুনিশ্চিত হয়। অপরিচিত জায়গায় সন্ধের পর বা রাতে হোটেল থেকে খুব বেশি দূরে না যাওয়াই শ্রেয়। সন্ধের পর নিতান্তই বেরতে হলে অনেক মানুষজন আছেন এমন জায়গাতেই যান। একা নিরাপদ ভ্রমণের জন্য ভ্রমণ-বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, বেড়াতে গিয়ে কখনই নিজেকে পর্যটক হিসাবে সবার কাছে ব্যক্ত করবেন না বা সবার মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করবেন না। বরং খুব সাধারণ হিসেবে থাকার চেষ্টা করুন।
● রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড বা বিমানবন্দর থেকে যে হোটেলে থাকবেন তার দূরত্ব, কীভাবে যাবেন তা আগেই জেনে নিন।
● সোলো ট্রাভেলে বেড়ানোর সময় গাড়ি ভাড়া নিয়ে অনেককেই হয়রানির শিকার হতে হয়। তাই গাড়িতে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার আগে গাড়ি ভাড়া নিশ্চিত করে তবেই গাড়িতে উঠুন।
● হোটেল বুকিংয়ের আগে হোটেল সম্পর্কে সব তথ্য খতিয়ে দেখে তবেই বুকিং নিশ্চিত করুন। এখন ইন্টারনেটের কল্যাণে ঘরে বসেই পর্যটকদের ওই হোটেল সম্পর্কে রিভিউ জানতে পারবেন।
● নিজের উপর আস্থা কখনই হারাবেন না। সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হলে কখনই অপরিচিত কারও সিদ্ধান্তে কোনো কিছু করা থেকে বিরত থাকুন। বরং কোনো কিছুতে নিজের সিদ্ধান্ত বা আস্থায় বিশ্বাস না থাকলে সেখান থেকে সরে আসুন।
● অবশ্যই সরকার অনুমোদিত সচিত্র পরিচয়পত্র (প্যান কার্ড নয়) সঙ্গে রাখুন। সফর-পথের প্রতিটি জায়গাতেই একই পরিচয়পত্র ব্যবহার করুন।
● একা রয়েছেন, এটা কাউকে বুঝতে না দেওয়াই শ্রেয়। অপরিচিত কাউকে, ‘দাদা/ ভাই, আমি এখানে নতুন, একা ঘুরতে এসেছি, ওই জায়গাটায় কীভাবে যাবো?’— এইধরনের কথা না বলাই ভালো।
● সোলো ট্রাভেলারদের মতে, সোলো ট্রাভেলে অনেক নতুন মানুষদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ থাকে। কিন্তু নতুন কারও সঙ্গে পরিচিত বা বন্ধুত্বের আগে ভালো করে তাঁকে স্টাডি করে নিন। কারণ একা আছেন দেখে অনেকে বন্ধুত্বের ফাঁদ ফেঁদে আপনাকে বিপদে ফেলতেই পারে।
● এটিএম কার্ড থাকলেও সঙ্গে হার্ড ক্যাশও রাখুন।
● কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবেন না। কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে আপনার ব্যবহারই সেই সমস্যা থেকে আপনাকে বের করে আনতে পারে।
অনেকের সঙ্গে বেড়াতে গেলে সবার মানসিকতা, পরামর্শ, পছন্দ-অপছন্দ ইত্যাদি অনেক কিছুরই প্রভাব পড়ে বেড়ানোতে। সোলো ট্রাভেলে নিজের ইচ্ছাই সব। ছকে বাঁধা ভ্রমণের বাইরে বেরিয়ে নতুন অনেক কিছুই আত্মস্থ করে ঘরে ফেরা যায়। আর এই একা বেড়ানোর মূল মন্ত্র— নিজের উপর আস্থা, যা কখনই হারানো চলবে না।
সব ছবি: আন্তর্জাল
Leave a Reply
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Comments