অন্যরকম বর্ষবরণ 
প্রীতিময় রায়বর্মন

থার্টি ফাস্ট নাইট মানেই পার্টি, আতসবাজি, হইহুল্লোড়। তবে বেশ কিছু দেশে বর্ষবরণের রীতি একটু আলাদা। বেশ মজার। বর্ষবরণ নিয়ে তাঁদের রয়েছে বেশ কিছু মজাদার সংস্কার।

খরগোশ সেজে শাকসবজি খেয়ে
পোল্যান্ডে বর্ষবরণটা বেশ মজার। এখানকার তরুণীরা বর্ষবরণের রাতে খরগোশের মতো পোশাক পরে জড়ো হন। 

তারপর খরগোশের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি সংগ্রহ। এরপর ওই শাকসবজির যতটা সম্ভব চিবিয়ে খাওয়ার পালা!‌ তাঁদের ধারণা, শাকসবজি খেয়ে নতুন বছর শুরু করলে নতুন বছরের দিনগুলো হবে সুন্দর। বছরটা কাটবে শান্তিতে।

হেঁচে উপহার
হাঁচি নিয়ে আমাদের কতই না সংস্কার!‌ কথার মাঝে হাঁচি— ‘সত্যি হাঁচি’! কথাটা সত্যি।‌ কোথাও বেরনোর সময় হাঁচি অমঙ্গল সূচক!‌ ঘরে ঢুকে কিছুক্ষণ অপেক্ষা, তারপর আবার বেরনো।‌

তবে বুলগেরিয়াবাসীর কাছে বর্ষবরণের দিন হাঁচি বেশ মঙ্গলের। বর্ষবরণের দিন বাড়িতে আসা কোনো অতিথি যদি হেঁচে ফেলেন তাহলে বাড়ির কর্তা তাঁকে নিজের খামারে নিয়ে যান। এরপর হেঁচে ফেলা ব্যক্তির প্রথম নজর খামারের যে পশুটির উপর ‌‌পড়ে সেই পশুটিকে গৃহকর্তা ওই ব্যক্তিকে উপহার দেন। ভাগ্য সঙ্গ দিলে অনেকে ঘোড়াও উপহার পান। বুলগেরিয়ানদের ধারণা, হেঁচে ফেলা অতিথি পরিবারের জন্য সুখ ও সমৃদ্ধি নিয়ে আসবে। তাই ওই অতিথিকে দেওয়া হয় উপঢৌকন।

মদ শেষ করতেই হবে
ফ্রান্সে বছরের শেষ দিনে ঘরে থাকা সব মদ শেষ করতেই হবে। নতুন বছরে ঘরে পুরনো মদ পড়ে থাকা অশুভ।

সৌভাগ্য ঘরে আসবে না। তবে ঘরে থাকা মদ ফেলে দিলে চলবে না। খেয়েই শেষ করতে হবে। তবেই নতুন বছর কাটবে আনন্দে, শান্তিতে।

স্যুপ জাতীয় খাবার চলবে না
ভিয়েতনামের উত্তরে কিছু সংখ্যালঘু জাতি রয়েছেন যাঁরা বছরের শেষ দিনে যে জলাধারের জল প্রতিদিন ব্যবহার  করেন সেই জলাধারে দল বেঁধে গিয়ে মোমবাতি জ্বেলে মাটিতে মাথা ছুঁয়ে প্রণাম করে জলাধার থেকে এক কলসি জল নিয়ে আসেন।

এরপর ওই জল দিয়ে বছরের প্রথম দিন রান্না করে পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করার পর নিজেরা খান। তবে বছরের প্রথম দিন স্যুপ জাতীয় খাবার মেনুতে থাকে না। তাঁদের ধারণা, বছরের প্রথম দিন স্যুপ জাতীয় খাবার খেলে নাকি মাঠের ফসল বন্যায় ভেসে যাবে!‌

মুরগি মাংস
নতুন বছর শুরুর সাত দিন আগে থেকে মাংস খাওয়া বন্ধ আফ্রিকার মাদাগাস্কারায়। বছরের প্রথম দিন বাড়িতে মুরগির মাংস রান্না হয়। প্রথমে তা খেতে দেওয়া হয় বাবা-মাকে।

বাবা-মাকে দেওয়া হয় মুরগির লেজের দিকের অংশটা। আর ভাই-বোনেদের জন্য মুরগির পা। তাঁদের মতে, এভাবে খেতে দেওয়াটা যত্ন আর মৈত্রীর বন্ধন।

উড়ন্ত পাখির মাংস নয় 
বছরের শেষ দিন হাঙ্গেরিবাসী হাঁস, মুরগি বা কোনও ধরনের পাখির মাংস খান না। তাঁদের ধারণা, ওই দিন উড়তে পারে এমন পাখির মাংস খেলে নতুন বছরে জীবন থেকে উড়ে যাবে সব সৌভাগ্য!

এর পাশাপাশি নতুন বছরে তাঁরা পরিচিত বা বন্ধুদের যে উপহার দেন তাতে চিমনি পরিষ্কার করছেন এমন একজন শ্রমিকের ছবি থাকে। কারণ হিসেবে তাঁদের ব্যাখ্যা, উপহারে এই ছবিটি থাকলে পুরনো বছরের সব দুঃখ নতুন বছরে মুছে যাবে।

এরকম নানা সংস্কারকে সাক্ষী রেখে বর্ষবরণে মাতেন এসব দেশের বাসিন্দারা।‌

ছবি: প্রতীকী, সৌজন্যে আন্তর্জাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *