আজ ২০ মার্চ ‘‌ইন্টারন্যাশনাল ডে অফ হ্যাপিনেস’‌ বা ‘‌আন্তর্জাতিক সুখ দিবস’‌। মনোবিজ্ঞান বলছে, সুখ বা হ্যাপিনেস হল মনের অবস্থা বা মানবিক অনুভূতি। যা নিয়ন্ত্রিত হয় আনন্দ, উচ্ছ্বাস, তৃপ্তি, ভালো লাগা বা ভালোবাসার দ্বারা


 সুখের সন্ধানে.‌.‌.‌
প্রীতিময় রায়বর্মন

সুখে বা খুশিতে থাকতে কে না চায়। জীবনটাকে আনন্দে কাটাতে কার না ভালো লাগে। কিন্তু সেটা কি সবসময় হয়ে ওঠে? ‘আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে...’‌ কি শুধুই আটকে গানে? দুশ্চিন্তার গ্রাসে মাঝে মধ্যে সুখ যেন কর্পূরের মতো কোথাও উবে যায়। এক চিলতে সুখের জন্যই আমরা করে চলেছি এত কাণ্ড। সুখের ডেফিনেশন বা সংজ্ঞা সবার কাছে এক নয়। একেক জন একেকটা জিনিসের মধ্যে খুঁজে পায় সুখ বা আনন্দ। কেউ অর্থকরী, কেউ বা অপরকে আনন্দ দিয়ে, কেউ বা তার কাজের মধ্যে।

আজ ‘‌ইন্টারন্যাশনাল ডে অফ হ্যাপিনেস’‌ বা ‘আন্তর্জাতিক সুখ দিবস’। ২০১৩ সাল থেকে ইউনেস্কো ২০ মার্চ পালন করে আসছে ‘ইন্টারন্যাশনাল ডে অফ হ্যাপিনেস’। রাষ্ট্রসঙ্ঘের প্রাক্তন‌ মহাসচিব বান-কি-মুনের কথায়, ‘সুখকে অনুসরণ করাটা অনেকটা ব্যবসার ঐকান্তিক প্রয়াসের মতো।’‌ 

রাষ্ট্রসঙ্ঘের স্বাধীন গবেষণা সংস্থা ‘‌সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশন নেটওয়ার্ক’‌ (‌এসডিএসএন) সম্প্রতি ২০২৩ সালের যে ‘‌ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট’‌ প্রকাশ করেছে তাতে বিশ্বের ১৩৭টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে সুখী দেশ ফিনল্যান্ড। তারপরে একে একে প্রথম দশে রয়েছে ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড, ইজরায়েল, নেদারল্যান্ড, সুইডেন, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ  এবং নিউজিল্যান্ড। আর ভারত ১২৬তম স্থানে! সমীক্ষাটি চালানো হয়, দেশের মাথাপিছু জিডিপি, গড় আয়ু, জীবনযাপন পদ্ধতি নির্বাচনের সুযোগ, সামাজিক পরিষেবা ও দেশের দুর্নীতির ধারণাকে মানদণ্ড করে। 

কীভাবে আপনি খুশিতে থাকবেন? কী বলছে মনোবিজ্ঞান?‌
‌✔ মুখ গোমড়া করে না থেকে প্রাণ খুলে হাসুন। জন লিলির সেই বিখ্যাত উক্তি— ‘‌মন খুলে যে হাসতে পারে না, সেই পৃথিবীর সবচেয়ে অসুখী ব্যক্তি।’‌ হাসি শুধুমাত্র মানসিক শাস্তিই দেয় না, ভালো রাখে শরীরকেও। কিন্তু আজ আমাদের জীবনে হাসির এতটাই অভাব যে হাসির জন্য আমাদের ছুটতে হয় লাফিং ক্লাবে! 
✔ একা সব কিছু ভোগ করার মানসিকতাটা ছেড়ে সবাইকে নিয়ে চলার মানসিকতা গড়ে তুলুন। সবাইকে নিয়ে চললে তার মধ্যে একটা তৃপ্তি খুঁজে পাবেন।

✔ কাজের সময় ছাড়া বাকি সময়টা শুয়ে, বসে, টিভি দেখে, আজেবাজে চিন্তাকে মাথায় না এনে একটু সময় বার করে শরীরচর্চা করুন। 
✔ খেতে হবে স্বাস্থ্যকর খাবার। 
✔ অবশ্যই যেন নিজের মধ্যে থাকে কৃতজ্ঞতাবোধ।

✔ নেতিবাচক চিন্তাভাবনাকে দূরে সরিয়ে রেখে ইতিবাচক চিন্তাকে স্থান দিন।

✔ কাজের পরিধির বাইরে পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান। সম্ভব হলে ছুটির দিনে ছোট্ট ট্যুরে বেরিয়েও পড়তে পারেন। 
✔ কিছুটা সময় একাও কাটান।
✔ পছন্দের শিল্পীর গান শুনুন। 
✔ আশপাশের সব কিছু সম্পর্কে সতর্ক বা সজাগ থাকুন। 

✔ অলীক কল্পনায় না গিয়ে বাস্তবে থাকাটাই ভাল।

✔ কারোর কাছ থেকে কিছু পেলে তার প্রতিদানও দিন। তা না হলে ওই পাওয়ার মধ্যে যে তৃপ্তিটা থাকবে সেটা কদিন বাদেই হারিয়ে যাবে। যা ভোগাবে মানসিক অশান্তিতে।
✔ কারোর সাহায্য পেলে অবশ্যই তাকে ধন্যবাদ জানান।
✔ ‘আরও চাই, আরও চাই’ মানসিকতাটা ছেড়ে, যা পাচ্ছি তাতেই সন্তুষ্ট থাকার চেষ্টা করুন। 
✔ খুশি বা আনন্দকে নিজের মধ্যে আটকে না রেখে ছড়িয়ে দিন সবার মধ্যে।

মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, সুখী না থাকার জন্য দায়ী আমাদের বিশৃঙ্খল জীবনযাপন, অল্পতে খুশি না হওয়া ও কিছুটা হিংসুটে মানসিকতা। এর উল্টোটা কি আমরা করতে পারি না? পারলে হয়ত দেখবেন সুখের পেছনে আর ছুটতে হচ্ছে না, সুখ নিজেই ধরা দিচ্ছে আপনার কাছে।

সব ছবি:‌ আন্তর্জাল‌
নিবন্ধটি শুধুমাত্র সচেতনতার জন্য।
যে কোনও মানসিক সমস্যায় মনোবিদ বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *