নুন বেশি খাওয়া যেমন স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর, তেমনই শরীরে নুনের ঘাটতি দেখা দিলে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। কারণ নুনে রয়েছে সোডিয়াম। প্রতি ১০০ গ্রাম নুনে সোডিয়ামের পরিমাণ ৩৮,৭৫৮ এমজি। আর শরীরকে সুস্থ রাখতে সোডিয়াম অপরিহার্য। সোডিয়ামের ঘাটতি দেখা দিলে শরীর পড়ে নানা সমস্যার কবলে। নুন কম বা বেশি খাওয়ার ক্ষতিকর দিকগুলোর পাশাপাশি জানবো, শরীরকে সুস্থ রাখতে নুনের ভূমিকা ও রোজ কতটা নুন খাওয়া যেতে পারে।


রোজ কতটা নুন?‌
প্রীতিময় রায়বর্মন

বেশি খেলে.‌.‌.‌
✦ বেশি নুন খেলে ব্লাড প্রেশার বা রক্তচাপ বাড়তে পারে। অরিরিক্ত নুনের কারণে রক্তের জলীয় অংশ বেড়ে গেলে, কিডনি তখন সেই অতিরিক্ত জল শরীর থেকে বের করতে পারে না। তখন তা রক্তনালিতে থেকে যায় এবং রক্তচাপ বাড়ে।
✦ জল জমে পা ফুলতে পারে।
✦ অনেক সময় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ কাজ করে না।

✦ মাঝবয়সী, প্রবীণ ও যাঁরা ওবেসিটিতে আক্রান্ত বেশি নুন তাঁদের জন্য ক্ষতিকর।
✦ বেশি নুন দেওয়া খাবার খেলে পাকস্থলীতে হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি ব্যাকটিরিয়ার বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়। হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরির কারণে পাকস্থলীতে আলসার হতে পারে এবং বাড়ে ক্যান্সারের ঝুঁকি।

ঘাটতি দেখা দিলে.‌.‌.‌
✤ ‌ব্লাড প্রেশার বা রক্তচাপ কমে যেতে পারে। রক্তচাপ কমে যাওয়াও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
✤ কমে যেতে পারে শরীরে সোডিয়ামের পরিমাণ। সোডিয়াম কমে গেলে মানসিক ভারসাম্যহীনতা, অসংলগ্ন কথাবার্তা, ঝাপসা দেখা, মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব, মাথাব্যথা, জলশূন্যতা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।

✤ শরীরে নুনের ঘাটতি দেখা দিলে খিঁচুনি, অজ্ঞান হয়ে যাবার মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
✤ রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল (‌এলডিএল)‌ এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণ বাড়তে পারে।

তাহলে রোজ কতটা.‌.‌.‌
আমাদের এখন নুন খাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। ফাস্ট ফুড, জাঙ্ক ফুড বা প্রসেস্‌ড ফুডে আমাদের ঝোঁক। আর এ সবে নুনের পরিমাণ থাকে বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)‌–এর গাইডলাইন অনুযায়ী, প্যাকেটবন্দী আলুর চিপ্‌সের মতো খাবারে প্রতি ১০০ গ্রামে ৫০০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম থাকা বাঞ্ছনীয়। পেস্ট্রিতে ১২০ মিলিগ্রাম এবং প্রসেস্‌ড মিটে ৩৪০ মিলিগ্রাম।

‘‌হু’‌ বলছে, উচ্চ রক্তচাপ বা হার্টের অসুখ থাকলে প্রতিদিন ৫ গ্রামের কম নুন খাওয়াই বাঞ্চনীয়। ৫ গ্রাম নুনে সোডিয়ামের পরিমাণ প্রায় ২ গ্রাম। ডায়াবেটিস বা কিডনির অসুখেও ৫ গ্রামের কম পরিমাণ নুন খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে ‘‌হু’‌। তবে কাঁচা নুন নয়, রান্নায় নুন দিয়ে খাওয়াই ভালো। হার্ট বা কিডনির ক্রনিক অসুখ বা ডায়াবেটিস থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন নুন খাওয়ার ব্যাপারে। ‌

আর যাঁদের হার্ট, কিডনি বা ডায়াবেটিসের সমস্যা নেই তাঁদেরও প্রতিদিন এক টেবিল চামচ অর্থাৎ ৫ গ্রামের বেশি নুন খাওয়া উচিত নয়। তবে সেটাও রান্নায়, কাঁচা নয়। ‘‌হু’‌–র মতে, দৈনন্দিন খাবারদাওয়ারে নুনের পরিমাণ কমাতে পারলে প্রতি বছর প্রায় ২৫ লক্ষ মানুষকে বাঁচানো সম্ভব। বিশেষ করে কমবে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি।

সব ছবি:‌ আন্তর্জাল
(‌নিবন্ধটি কোনও ডাক্তারী পরামর্শ নয়)‌‌‌

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *