এই বুঝি হুড়মুড়িয়ে এসে
পড়বে প্রকাণ্ড সব পাথর!
প্রীতিময় রায়বর্মন
পাথর, পাহাড় আর প্রাচীন ধ্বংসস্তূপ। দেখলে মনে হবে এই বুঝি ওপর থেকে হুড়মুড়িয়ে এসে পড়বে প্রকাণ্ড সব পাথর। কিন্তু সেটা চোখের ভ্রম। উত্তর কর্ণাটকের এক ধংসপ্রাপ্ত গ্রাম। ১৪-১৬ শতকে রাজত্ব করা বিজয়নগর সাম্রাজের রাজধানী হাম্পি। আর সেই সময়কার ধংসাবশেষের জন্যই আজ বিখ্যাত এই গ্রাম। ১৪-১৬ শতকে যে সব পর্যটক এখানে এসেছেন সবাই এখানকার স্থাপত্য শিল্পের প্রশংসা করেছেন। আর আজ সেই স্থাপত্যের ধ্বংসাবশেষকে যত্নে আগলে রেখেছে হাম্পি।
চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে দ্রাবিড় স্থাপত্যকলার মন্দির ও প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ। খ্রিস্টের জন্মের আগে ৩য় শতকে এখানে অশোক রাজের রাজত্ব ছিল। আর এ সব কিছুরই নীরব সাক্ষী হয়ে আপন গতিতে বয়ে চলেছে তুঙ্গভদ্রা। ইউনেস্কোর ‘বিশ্বের বিস্ময়’-এর তালিকায় স্থান করে নিয়েছে হাম্পি। বলা হয় বিশ্বের বৃহত্তম ওপেন-এয়ার মিউজিয়াম।
হাম্পির প্রধান আকর্ষণ বিরূপাক্ষ মন্দির। মন্দিরে বিরাজমান শিব ও পম্পাদেবী। হাম্পি বাজারের কাছেই এই মন্দির। টিলার ওপর মাতঙ্গেশ্বর শিবের মন্দির। বাসস্ট্যান্ডের পাশেই মাতঙ্গ পর্বত। দেখতেই হবে রথাকার বিঠালা মন্দির। দক্ষিণ ভারতীয় স্থাপত্যরীতির নজরকাড়া কারুকার্য ছাড়াও চোখে পড়বে মন্দিরের দেওয়ালে খোদাই করা রামায়ণ ও অন্যান্য নানান চিত্রকলা। এর পর প্রাসাদ-এর অন্দরে প্রবেশ করে টের পাওয়া গেল সেই সময়কার অনবদ্য স্থাপত্য ও উন্নত জীবনযাত্রার এক খণ্ড চিত্র। প্রাসাদের ভেতর রয়েছে হাজার রামস্বামী মন্দির, মহানবমী ডিব্বা, হাতিশালা, লোটাস মহল, কুইনস বাথ— যা আজও আগলে রেখেছে সেই উজ্জ্বল দিনগুলোর স্মৃতিকথা।
অতীত ইতিহাসের হালহদিশ পেতে কার না ভাল লাগে? তার জন্য যেতে হবে কমলাপুরে হাম্পির প্রত্নতত্ত্ব মিউজিয়ামে। রয়েছে সেই সময়কার অসংখ্য নিদর্শন। তুঙ্গভদ্রার ওপারে ঘুরে আসা যায় ছবির মতো সাজানো গ্রাম আনেগুন্ডি (পূর্বনাম কিষ্কিন্ধ্যা) থেকে। পৌরাণিক বিভিন্ন ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে আছে আনেগুন্ডির নাম। দেখবেন– আনেগুন্ডি ফোর্ট। কথিত আছে, আনেগুন্ডি ফোর্টের দুর্গা মন্দিরে প্রার্থনা করে যুদ্ধে যেতেন বিজয়নগরের রাজা। এ ছাড়া চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বেশ কিছু মন্দির। লক্ষ্মী মন্দির, গণেশ মন্দির ইত্যাদি। দেখবেন পম্পা সরোবর, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে শিব-পার্বতীর নাম।
উৎসব: হাম্পির সবচেয়ে বড় উৎসব হাম্পি ফেস্টিভ্যাল। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ৩ দিন ধরে চলে এই ফেস্টিভ্যাল। জানুয়ারি অথবা ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হয় আধুনিক গানের অনুষ্ঠান পুরান্দারাসাদাসা আরাধনা। হাম্পি ফেস্টিভ্যালের পর সেখানকার আরেকটি সবচেয়ে বড় উৎসব হল বিরূপাক্ষ কার ফেস্টিভ্যাল। এ ছাড়া দেওয়ালি ও শিবরাত্রিও সেখানে পালন করা হয় বেশ ধুমধামের সঙ্গে।
কাছাকাছি: হাতে সময় থাকলে ঘুরে আসা যায় দারোজি বিয়ার স্যাংচুয়ারি, বেল্লারি ফোর্ট থেকে।
যাওয়া: হাওড়া থেকে ট্রেনে বা বিমানে বেঙ্গালুরু পৌঁছে সেখান থেকে সড়ক পথে দূরত্ব ৩১৫ কিমি। রেলপথের সুবিধা থাকায় ট্রেনে যাওয়াটাই ভাল। বেঙ্গালুরু থেকে ট্রেনে হসপেট পৌঁছে সেখান থেকে বাস বা অটোয় হাম্পি। হসপেট থেকে হাম্পির দূরত্ব ১৩ কিমি।
থাকা: কমলাপুরে রয়েছে কর্ণাটক পর্যটনের মৌর্য ভুবনেশ্বরী। ফোন: +৯১–৮৯৭০৬–৫০০২৫। ই–মেল: hampi@karnatakaholidays.net। থাকতে পারেন হাম্পি হেরিটেজ অ্যান্ড ওয়াইল্ডারনেস রিসর্টে। যোগাযোগ: +৯১–৯৪৪৯৫–৯৭৮৭৪। ই–মেল: info@junglelodges.com। আর আনেগুন্ডিতে থাকার জন্য রয়েছে কিষ্কিন্ধ্যা ট্রাস্টের উরান্মা হেরিটেজ হোম। ধনী কোনও এক জমিদারের বাড়ি আজ পরিণত হয়েছে অতিথি–আবাসে। এ ছাড়া সেখানে থাকার জন্য রয়েছে বেশ কিছু ছোট ছোট কটেজ।
এস টি ডি কোড: ০৮৩৯৪
হাম্পি সম্পর্কে আরও জানতে লগঅন করুন: www.karnatakatourism.org
সব ছবি: আন্তর্জাল
Leave a Reply
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Comments