১৯৯১ সাল থেকে প্রথিতযশা চিকিৎসক ও রাজ্যের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের জন্ম ও মৃত্যুদিনটি পালন হয়ে আসছে ‘‌জাতীয় চিকিৎসক দিবস’‌ হিসেবে। তিনি শুধুমাত্র একজন চিকিৎসকই ছিলেন না, ছিলেন সর্বগুণের অধিকারী একজন ব্যক্তিত্ব

সেদিন ডাঃ রায়ের যুক্তির কাছে হেরে 
চিকিৎসা নিতে বাধ্য হন গান্ধীজি
প্রীতিময় রায়বর্মন

একদিকে বাংলার রূপকার, অন্যদিকে ধন্বন্তরি চিকিৎসক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে মতিলাল নেহরু, মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহরু, কমলা নেহরু, বল্লভভাই প্যাটেল, ইন্দিরা গান্ধী— সবাই তাঁর কাছ থেকে নিতেন চিকিৎসা–সংক্রান্ত পরামর্শ। দেশের গণ্ডী ছাড়িয়ে বিদেশেও ছিল তাঁর যথেষ্ট সুনাম। একবার জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী চিকিৎসা নিতে অস্বীকার করলেন। ডাঃ রায়ও ছাড়ার পাত্র নন। চলল দু’‌জনের তর্ক। হারলেন স্বয়ং গান্ধীজি। বাধ্য হলেন চিকিৎসা নিতে। 

১৯৪৩। গান্ধীজি তখন পুনেতে। জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। জেলে দীর্ঘ অনশনে শরীর বেশ কাহিল। জ্বর, ম্যালেরিয়া, পেটের সমস্যায় নাজেহাল। তখন বোম্বাইতে (‌বর্তমান মুম্বই)‌ কোনও এক কাজে এসেছেন বিধান রায়। অসুস্থ গান্ধীজিকে দেখতে গেলেন তিনি। বিধান রায় এসেছেন দেখে খুশি হলেও চিকিৎসা নিতে অস্বীকার করলেন গান্ধীজি। কারণ তিনি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করাতেন। অ্যালোপ্যাথিতে ছিল তাঁর অনীহা। 
বিধান রায়কে গান্ধীজি বলেন, ‘‌তোমার চিকিৎসা তো আমি নিতে পারব না।’‌
বিধান রায় বলেন, ‘আমি কি জানতে পারি, আমার কী অপরাধ?’‌ 

গান্ধীজি বললেন, ‘‌দেশের ৪০ কোটি দীন–দুঃখী মানুষের অসুখে যখন ওই অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা করতে পারো না, তখন আমিই বা তোমার চিকিৎসা নেব কী করে?’‌
বিধান রায়ও ছাড়ার পাত্র নন। তিনি চিকিৎসা করবেনই। বিধান রায় বললেন, ‘‌না গান্ধীজি, আমি দেশের সব রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতে পারিনি। কিন্তু এখানে আমি মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর চিকিৎসা করতে আসিনি, বরং তাঁর চিকিৎসা করতে এসেছি, যিনি আমার কাছে আমার দেশের ৪০ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী।’‌
বিধান রায়ের সঙ্গে তর্কে কিছুতেই পেরে উঠছেন না গান্ধীজি। এবার তিনি বলে বসলেন, ‘‌আমি তো অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা কখনও নিই না।’‌

আবার যুক্তি সাজাতে শুরু করলেন ডাঃ রায়। বললেন, ‘‌আপনি তো বলেন পৃথিবীর সব কিছু, এমনকী ধূলিকণাটিও ঈশ্বরের সৃষ্টি, এ কথা কি আপনি সত্যি বিশ্বাস করেন?’‌
গান্ধীজি বললেন, ‘‌আমি বিশ্বাস করি সবই ভগবানের সৃষ্টি।’‌
এবার বিধান রায় বললেন, ‘‌তাহলে আমাকে বলুন, অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসাও তো তাঁরই সৃষ্টি, তাই না?‌’‌
বিধান রায়ের যুক্তির সঙ্গে আর পেরে উঠলেন না গান্ধীজি। হেসে বললেন, ‘‌তোমার তো ব্যারিস্টার হওয়ার কথা ছিল, তুমি ডাক্তার হলে কী করে?’‌

বিধান রায়ের উত্তর, ‘‌ভগবান আইনজীবী না করে ডাক্তার করেছেন, কারণ তিনি জানতেন, এমন এক দিন আসবে যেদিন ভগবানের সেরা ভক্ত মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর চিকিৎসার ভার পড়বে আমার উপর।’‌
এমন ক্ষুরধার যুক্তির সঙ্গে সেদিন পেরে ওঠেননি স্বয়ং গান্ধীজি। বাধ্য হন বিধান রায়কে চিকিৎসার সুযোগ দিতে। 

সব ছবি:‌ আন্তর্জাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *