‘এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি—
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’
— ছাড়পত্র, সুকান্ত ভট্টাচার্য
ওরাই ভবিষ্যৎ
প্রীতিময় রায়বর্মন
আজ ১৪ নভেম্বর। শিশু দিবস। ১৯২০ সালের ২৩ এপ্রিল প্রথম শিশু দিবস পালিত হয় তুরস্কে। ১৯৫৪ সালে রাষ্ট্রসঙ্ঘ ২০ নভেম্বর ‘বিশ্ব শিশু দিবস’ পালনের কথা ঘোষণা করে। তবে বিভিন্ন দেশে শিশু দিবস পালনের আলাদা আলাদা দিন ধার্য্য রয়েছে। আমাদের দেশে যেমন স্বাধীন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর (১৪ নভেম্বর, ১৮৮৯ — ২৭ মে, ১৯৬৪) জন্মদিন শিশু দিবস হিসেবে পালিত হয়, তেমনই আবার ওপার বাংলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন শিশু দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয় ১৯৯৬ সালে।
পণ্ডিত নেহরু ছোটোদের সঙ্গে সময় কাটাতে খুব ভালোবাসতেন। শিশুদের প্রতি তাঁর স্নেহ ও ভালোবাসার কথা কারও অজানা নয়। ছোটদের কাছে তিনি ছিলেন ‘চাচা নেহরু’। ১৯৬৪ সালের ২৭ মে, তাঁর প্রয়াণের পর ছোটোদের প্রতি তাঁর চরিত্রের এই বিশেষ দিকটিকে স্মরণে রেখে সর্বসম্মতভাবে তাঁর জন্মদিন শিশু দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তারপর থেকেই প্রতিবছর ১৪ নভেম্বর শিশু দিবস পালিত হয়ে আসছে।
শুধু ভালোবাসা নয়, ছোটো থেকেই সঠিক ও যথাযথ শিক্ষায় শিশু যাতে বড়ো হয়ে ওঠে সেদিকেও তীক্ষ্ম নজর ছিল নেহরুর। তিনি বলতেন, আজ আমরা যেভাবে শিশুদের বড়ো করব, কাল সেভাবেই তারা দেশ চালাবে। আর তাঁর এই ভাবনার ফলশ্রুতিতে তাঁর হাত ধরে জন্ম নেয় একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। চিকিৎসার উন্নতিতে আইএমএস–এর পথ চলাও তাঁর হাত ধরেই। আইআইটি বা ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্টও তাঁরই উদ্ভাবন। প্রথমে স্বাধীনতা সংগ্রাম, পরে দেশের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সঙ্গে ছোটোদের জন্য তাঁর ভালোবাসার অবদান অনস্বীকার্য।
দিনটি পালনের উদ্দেশ্য— দেশের ভবিষ্যৎ গঠনে শিশুদের গুরুত্বের কথা মনে করানো এবং শিশুর অধিকার সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করা। শিশু যাতে সঠিক শিক্ষা পায়, দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারে, সে ব্যাপারেও বড়োদের দায়িত্বের কথা মনে করানোও দিনটির উদ্দেশ্য। শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে পুষ্টির। শিশু যাতে পরিমিত পরিমাণ পুষ্টি পায়, সেদিকেও বড়োদের খেয়াল রাখতে হবে।
আজও অনেক জায়গায় অবহেলিত শিশুরা। যে সময় তাদের হাতে বই তুলে দেওয়ার কথা, তার বদলে তুলে দেওয়া হচ্ছে কাজের সামগ্রী! তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে শিশু শ্রমিক হিসেবে! দুর্ভাগ্য আমাদের! পণ্ডিত নেহরুর স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে চাইলে, শিশুদের স্কুলমুখী করতেই হবে, যাতে শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয় ওদের ভবিষ্যতের চলার পথ। যে সব শিশুদের দিন কাটে রাস্তার ফুটপাতে বা যারা অনাথ, তারাও যাতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত না হয় সেদিকেও নজর রাখাতে হবে।
শিশু দিবস মানেই ছোটোদের আনন্দদানে স্কুল বা বিভিন্ন সংস্থায় নানা অনুষ্ঠান। কোথাও ছোটোদের জন্য আয়োজন করা হয় প্রতিযোগিতার। শিক্ষক–শিক্ষকরা অংশ নেন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। শিশুদের জন্য থাকে নানা উপহার। কোথাও আবার শিশুদের জন্য হয় শিশু–চলচ্চিত্র দেখানোর ব্যবস্থাও। বলা যায় স্কুলে বেশ জমজমাটই কাটে এই দিনটি।
সব ছবি: আন্তর্জাল
Leave a Reply
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Comments