চেনা ভাইরাসের হঠাৎ অচেনা রূপ! ভয়ঙ্কর হচ্ছে অ্যাডিনো হানা। কাড়ছে প্রাণ। হঠাৎ করে কেন প্রাণঘাতী হয়ে উঠল অ্যাডিনো? টার্গেট কি শিশুরা? বাঁচার উপায়? খুঁজে নিই উত্তর
সাধারণ থেকে মারাত্মক
হচ্ছে অ্যাডিনো?
ডাঃ অরিন্দম বিশ্বাস
বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ; কনসালট্যান্ট, রবীন্দ্রনাথ টেগোর ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ কার্ডিয়াক সায়েন্সেস, কলকাতা
ninthvibration@gmail.com
অ্যাডিনোভাইরাস হঠাৎ করে এতো বিপজ্জনক হয়ে উঠল কেন?
ডাঃ বিশ্বাস: একটা ভাইরাস যে কোনও সময় তার পরিকাঠামো পরিবর্তন করতে পারে। সে ক্ষেত্রে সাধারণ ভাইরাস যেমন মারাত্মক আকার নিতে পারে, আবার মারাত্মক কোনও ভাইরাস সাধারণ ভাইরাসে পরিণত হতে পারে। সাধারণ অ্যাডিনোভাইরাস আমাদের চিন্তায় ফেললেও, এখনই ভয় বা আতঙ্কের কোনও কারণ নেই। যদিও কিছু মানুষের প্রাণ যাচ্ছে, তবে এটা ভুললে চলবে না আজ থেকে চারবছর আগে আমেরিকাতে প্রচুর মানুষের প্রাণ কেড়েছিল আপাত নিরীহ এই অ্যাডিনোভাইরাস।
বিশ্বের নানা প্রান্তে অ্যাডিনোভাইরাসের কারণে মানুষের প্রাণ গেছে। অ্যাডিনোভাইরাসে সংক্রমিত হলে সাধারণত সর্দি, কাশি, জ্বর হয় এবং ৯৯ শতাংশের উপর মানুষ সেরেও ওঠেন। আবারও বলছি, এই সময় অ্যাডিনোভাইরাস কিছু অঘটন ঘটালেও, এখনই চিন্তার কোনও কারণ নেই। আমরা যদি সচেতন, সতর্ক থাকি তাহলে অ্যাডিনোভাইরাস আমাদের কিছু করতে পারবে না।
টার্গেট কি শিশুরা?
ডাঃ বিশ্বাস: শিশুরাই যে শুধুমাত্র আক্রান্ত হচ্ছে এমনটা নয়, বড়োরাও আক্রান্ত হচ্ছেন, তবে সেই সংখ্যাটা শিশুদের তুলনায় কম। অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত হলে কনজাংটিভাইটিস হতে পারে, গ্ল্যান্ড ফুলতে পারে, জ্বর–সর্দি–কাশি হতে পারে; ব্যতিক্রমী কিছু ঘটলে ডায়েরিয়া হতে পারে, লিভার আক্রান্ত হতে পারে, সঙ্গে ইউরিনে ইনফেকশনও হতে পারে। ভাইরাস কতটা বিপজ্জনক তা নির্ভর করছে সেরোটাইপের উপর। অ্যাডিনো–৭ সেরোটাইপ জটিল থেকে জটিলতর পরিস্থিতি তৈরি করছে কিছু কিছু ক্ষেত্রে।
এত বছর ধরে অ্যাডিনোভাইরাসের কর্মকাণ্ড, রীতিনীতি দেখে আমরা একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলাম যে, এটা খুব একটা বিপজ্জনক ভাইরাস নয়। তবে যে কোনওদিন যে কোনও জীবাণু বিপজ্জনক আকার নিতেই পারে। এখানে অ্যাডিনোভাইরাস ‘হয়তো’ নিচ্ছে। ‘হয়তো’ বলছি কারণ এখনও সেভাবে কোনও গবেষণা শুরু হয়নি। এ কাজে কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় সরকারেরই তৎপড়তা দরকার। ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিং করলে তবেই আমরা জানতে পারবো ভাইরাসের কোনও মিউটেশন বা পরিকাঠামোর পরিবর্তন হয়েছে কিনা।
চিকিৎসা কী?
ডাঃ বিশ্বাস: এর নির্দিষ্ট কোনও ভ্যাকসিন নেই, নির্দিষ্ট কোনও ওষুধও নেই। জ্বর, সর্দি, কাশি হলে সকলের থেকে আলাদা থাকুন। বাচ্চাকে স্কুলে পাঠাবেন না। নিজে ডাক্তারি না করে, যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং চিকিৎসার দিকনির্দেশ করাটা চিকিৎসকের উপরেই ছাড়ুন। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো রোগ নির্ণয়কারী পরীক্ষাগুলো করুন। প্রাথমিক পর্যায়ে প্যারাসিট্যামল, অ্যান্টি–অ্যালার্জিক ওষুধ দেওয়া হয়, যদি দেখা যায় শরীরে ব্যাকটিরিয়াও প্রবেশ করেছে তখন অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার প্রশ্ন আসতে পারে।
কী কী সাবধানতা অবলম্বন?
ডাঃ বিশ্বাস: ৫ বছরের কম বয়সী শিশু ও ৬৫ ঊর্ধ্ব প্রবীণদের বেশি সাবধানতা প্রয়োজন। শিশু এবং প্রবীণরা জনসমাগম থেকে দূরে থাকুন। আর সবাইকেই বলব, মাস্ক পরুন, স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন। মাস্ক বা স্যানিটাইজার শুধুমাত্র কোভিড থেকে নয়, অন্য অনেক সংক্রামক অসুখ থেকেই আমাদের সুরক্ষিত রাখতে পারে।
সাক্ষাৎকার: প্রীতিময় রায়বর্মন
সব ছবি: আন্তর্জাল
ব্যবহৃত ছবির সঙ্গে রোগের কোনও সম্পর্ক নেই
Leave a Reply
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Comments