প্রত্যন্ত মরু অঞ্চলে আজও সংবাদপত্র পৌঁছে দিচ্ছেন ৯০ বছরের
মালিক-সম্পাদক 
ফ্রান্স হুগো

প্রীতিময় রায়বর্মন

বয়স ৯০। তাতে কী?‌ এখনও প্রতি বৃহস্পতিবার আসা–যাওয়া মিলিয়ে ১,২০০ কিমি (‌৭৫০ মাইল)‌ পথ পাড়ি দিয়ে পাঠকদের কাছে পৌঁছে দেন সংবাদপত্র। চার্ল ফ্রাঁসোয়া হুগো। তবে সবার কাছে তিনি ফ্রান্স হুগো নামেই পরিচিত। প্রায় চারদশক ধরে এভাবেই তিনি সংবাদপত্র বিলি করে আসছেন। 

১৯৩২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে জন্ম ফ্রান্স হুগোর। এখন তিনি তিন–তিনটি সাপ্তাহিক পত্রিকার মালিক ও সম্পাদক। দ্য মেসেঞ্জার, দ্য নুয়র্দওয়েস্টার এবং দ্য ওবারনুস। প্রতিটি সাপ্তাহিকই ৮ পাতার। ছাপা হয় মোট ১,৩০০ কপি। দেশ-বিদেশের নানা খবর থাকলেও, বেশিরভাগই থাকে স্থানীয় খবর। পাঠক মূলত কৃষকরা। ভাষা আফ্রিকান হলেও মাঝেমধ্যে ইংরেজিতেও কিছু লেখা প্রকাশিত হয়। পত্রিকাগুলি প্রকাশের কাজে ফ্রান্সকে সাহায্য করেন তাঁর স্ত্রী, আর রয়েছেন তিন সহকারী। 

দক্ষিণ আফ্রিকার কারু অঞ্চলের কালভিনিয়া জেলা শহরে বাস ফ্রান্সের। প্রতি সপ্তাহে পত্রিকাগুলি ছাপা শেষ হলে রাত দেড়টাতেই গাড়ি নিয়ে রওনা দেন কারু মরু অঞ্চলের প্রত্যন্ত গ্রাম ও শহরে। গাড়িতে ফ্রান্সের সঙ্গী পুরনো পোর্টেবল রেডিও। পাঠকদের কাছে পৌঁছে দেন তাঁদের প্রিয় পত্রিকা। সংবাদপত্র বিলি শেষ করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে হয়ে যায় পরেরদিন সন্ধে।
পত্রিকা বিলির সময় তাঁর কাঁধের ঝোলা ব্যাগে থাকে কফির ফ্লাস্ক, আর কয়েকটা সেদ্ধ ডিম। গরম আর লু থেকে বাঁচাতে সঙ্গে রাখেন একটি তোয়ালে। 

ফ্রান্স নিজেকে মনে করেন ‘পম্পডঙ্কি’। মাটির অনেক গভীর থেকে জল তোলার জন্য এক ধরনের পাম্প ব্যবহৃত হয়, যাকে বলা হয় ‘ডঙ্কি পাম্প’। ফ্রান্সের কথায়, ‘‌আমি প্রতি বৃহস্পতিবার পত্রিকা বিতরণের কাজ করি। এখনও পর্যন্ত এ কাজে কোনও ছেদ পড়েনি। আমি হয়তো তখনই থামবো, যখন আর শরীর সঙ্গ দেবে না।’

দ্য মেসেঞ্জার, দ্য নুয়র্দওয়েস্টার এবং দ্য ওবারনুস— ফ্রান্স এই তিনটি পত্রিকার মালিক–সম্পাদক হলেও, তাঁর সাংবাদিকতার শুরু কেপটাউনে সংবাদমাধ্যমে। ফ্রান্সের জন্মের আগে অনেক আগে থেকেই প্রকাশিত হতো পত্রিকাগুলি। ‘‌দ্য মেসেঞ্জার’‌–এর পথ চলা শুরু হয়েছিল ১৮৭৫ সালে, তখন নাম ছিল ‘‌ভিক্টোরিয়া ওয়েস্ট মেসেঞ্জার’‌। বাকি দুই সাপ্তাহিক ‘‌দ্য নুয়র্দওয়েস্টার’‌ এবং ‘‌দ্য ওবারনুস’‌–এর প্রকাশকাল ১৯০০ সালের আশপাশে। 

দক্ষিণ আফ্রিকায় ২০ বছর সাংবাদিকতার পর তিনি পাড়ি দেন প্রতিবেশি দেশ নামিবিয়ায়। সেখানে প্রায় ১০ বছর কাজ করার পর ফিরে আসেন নিজ দেশে। থাকতে শুরু করেন কারু অঞ্চলে। তাঁর কথায়, ‘‌ওইসব জায়গায় কাজের চাপ প্রচুর। তা আর নেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই কারুতে চলে আসা।’‌
কারুতে কিছুটা ধাতস্থ হওয়ার পর, এক প্রেস মালিক ফ্রান্সের কাছে এসে পত্রিকাগুলি কেনার প্রস্তাব দেন, তিনি সেই প্রস্তাব লুফে নেন এবং কিনে নেন পত্রিকাগুলি। সেই থেকেই মরুদেশে মালিকানা ও সম্পাদনার গুরু–দায়িত্বের পাশাপাশি বিতরণ সবই নিজ হাতে করে চলেছেন ৯০ বছরের প্রবীণ চার্ল ফ্রাঁসোয়া হুগো।

ভালো থাকুন ফ্রান্স হুগো। এই ডিজিটাল যুগে ফ্রান্সের মতো মানুষেরা প্রিন্ট মিডিয়াকে টিকিয়ে রাখার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

তথ্য সূত্র ও ছবি সৌজন্যে:‌ গলফ নিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *