৩৬৫ বছরের প্রাচীন
শিবমন্দিরে মাতৃ আরাধনা

প্রীতিময় রায়বর্মন

উত্তর কলকাতার শোভাবাজার অঞ্চলের ৩৬৫ বছরের প্রাচীন রামেশ্বর শিবমন্দির। মন্দিরটি স্থাপন করেন নন্দরাম সেন। ১৭০২ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মুঘল সম্রাটের কাছ থেকে ফরমান পান সুতানটি-গোবিন্দপুর অঞ্চলের ইজারা এখন তাদের। সেই ইজারার প্রথম কালেক্টর হন রালফ শেলডন‌। ডেপুটি কালেক্টর হন নন্দরাম সেন। তিনিই স্থাপন করেন এই মন্দির। মন্দিরের অধিষ্ঠিত দেবতা শিব। স্থানটিতে আগে থেকেই একটি শিবক্ষেত্র ছিল। 

৩৬৫ বছরের প্রাচীন শিবমন্দিরে মাতৃ আরাধনা প্রসঙ্গে কথা হল মন্দিরের অধ্যক্ষ তাপস দত্তর সঙ্গে। তিনি জানালেন, মন্দির প্রতিষ্ঠার ১২০ বছর বাদে ১৮২৮ বা ১৮৩০ সাল নাগাদ এখানে অষ্টধাতুর ছোট দুর্গামূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। এবং সেই সময় অষ্টধাতুর মূর্তিতেই দুর্গাপুজো হত। বেশ জাঁকজমক ভাবই হত শিবরাত্রি, নীলের উৎসব। কালের প্রবাহে ১৯৪০/‌৪২ সাল নাগাদ দুর্গাপুজো খুবই ম্রিয়মাণ হয়ে যায়। কোনোক্রমে অষ্টমী, নবমীতে নমো নমো করে পুজো সারা হত। মন্দির জবরদখল হয়ে যায় এবং প্রায় বন্ধ হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়। এরপর ২০১১ সালে প্রায় ৭০/‌৭৫ বছর বাদে ‘মানববিকাশ ট্রাস্ট’ মন্দির অধিগ্রহণ করে এবং শাস্ত্রবিধি মেনে শুরু হয় দুর্গাপুজো। 
শরতের দুর্গাপুজো অর্থাৎ বাৎসরিক দুর্গাপুজো। সারা বছরে যে দুর্গা উৎসব হয়, সেই দুর্গাপুজো এটা নয়, এটা মূলত অকাল বোধনের পুজো। বাৎসরিক পুজো আমরা সংকল্প করে থাকি। সংকল্প বাক্যে আছে— ‘রাবণস্য বধার্থয় রামস্য অনুগ্রহায়’। রাবণকে বধ করতে রামের অনুগ্রহে যুগে যুগে এই পুজো হয়ে আসছে। তাপসবাবুর সঙ্গে কথায় উঠে এলো নবরূপে ২০১১ সাল থেকে পুজোর নানা কথা। তিনি বলেন, এই পুজোকে বিশেষ মাত্রা দেওয়ার জন্য ২০১১ সাল থেকে অষ্টধাতুর মূর্তির পাশাপাশি মৃন্ময়ী মূর্তিতেও বড়ো করে দুর্গাপুজো শুরু হয়। পুজো সম্পন্ন হয় কালিকা পুরাণ এবং যাঁর স্মার্ত্যমত বাংলা ও বাঙালি মেনে চলে সেই রঘুনন্দ ভট্টাচার্যের শাস্ত্রবিধি মেনে। কল্পারম্ভ থেকে শুরু করে নবপত্রিকা স্নান সবই হয় শাস্ত্রমতে। তিন জায়গায় স্নান হয় নবপত্রিকার— গঙ্গা, মন্দিরের দ্বারপ্রান্ত এবং মন্দিরের অভ্যন্তরে। অষ্টকলসে সম্পূর্ণ হয় মা দুর্গার স্নান।  

পুজোর ইতিহাস ও পুজোর আচার-বিচার সম্পর্কে নানা বিষয় জানার পর মন্দিরের অধ্যক্ষ তাপস দত্তের কাছে আমরা জানতে চেয়েছিলাম পুজোর ভোগের ব্যাপারে। তিনি জানালেন, এখানে পুজোয় দেবী দুর্গাকে মাছ ভোগ দেওয়া হয়। প্রতিদিনই ভোগের মেনুতে থাকে ঘি, ভাত, পোলাও, পাঁচরকম ভাজা এবং ২০ থেকে ২১ রকম তরকারি। এছাড়া রামেশ্বর শিবমন্দিরে সারা বছরই শিবের অন্নভোগ হয়। এখানে শিবকে যে অন্নভোগ দেওয়া হয়। তাতেও মাছ থাকে। দেবতার উদ্দেশ্যে যে ভোগ উৎসর্গ করা হয় তার সবটাই হয় শাস্ত্র মেনেই।‌

ছবি: তাপস দত্ত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *