সান্তা ক্লজ ও ক্রিসমাস ট্রি
এত জনপ্রিয় কেন?
সুমন কল্যাণ চক্রবর্তী
খ্রিস্টানদের সার্বজনীন রীতি তথা যিশু খ্রিস্টের জন্মদিনই হল ‘বড়দিন’। প্রায় সব দেশেই বড়দিন হিসেবে ২৫ ডিসেম্বরকে মানা হলেও রাশিয়া, মিশর, জর্জিয়া, আর্মেনিয়া প্রভৃতি কয়েকটি দেশে ইস্টার্ন ন্যাশনাল চার্চ ৭ জানুয়ারি বড়দিন পালন করে। এর কারণ স্বরূপ বলা হয়, এই সব চার্চ ‘জুলিয়ান ক্যালেন্ডার’ ব্যবহার করে, যা ২৫ ডিসেম্বর প্রামাণ্য ‘জর্জিয়ান ক্যালেন্ডার’-এর ৭ জানুয়ারি হয়। বড়দিন উৎসব, গৃহসজ্জা ও উপহার আদান-প্রদানের মধ্যে পালিত হয়। এ ছাড়াও ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের দ্বারা যিশু খ্রিস্টের জন্ম সম্বন্ধীয় নাটক এবং ক্যারোল (সংকীর্তন) গাওয়া হয়। এই সংকীর্তনের মূল মন্ত্র হ’ল— ‘যিশু আসছেন, তোমরা প্রস্তুত হও’। আবার অনেকে তাদের বাড়ির সামনে খ্রিস্ট ধর্মের অন্তর্গত চরিত্রের পুতুল সাজিয়ে প্রদর্শনীও করেন, যাকে ‘ক্রিব’ বলে। এই বড়দিনের সময়ই সান্তা ক্লজ চোখে পড়ে, তারই সঙ্গে চোখে পড়ে ক্রিসমাস ট্রি এবং সান্তা ক্লজের বল্গা হরিণও। সান্তা ক্লজ কেন জনপ্রিয়? কে এই সান্তা ক্লজ? সান্তা ক্লজের আসল পরিচয়-ই বা কী? ক্রিসমাস ট্রি-র গুরুত্ব-ই বা কী? ক্রিসমাসকে x-mas বলার যৌক্তিকতা কোথায়? সান্তা ক্লজের বলগা হরিণের রহস্যই বা কী?
সান্তা ক্লজ নামটা শুনলেই আমরা ধারণা করতে পারি, স্থূলাকৃতি, মুখভর্তি সাদা দাড়ি গোঁফ, গায়ে লাল রঙের কোট, লাল রঙের প্যান্ট, কোমড়ে মোটা কালো বেল্ট, পায়ে কালো বুট, মাথায় লাল টুপি এবং পিঠে একটি বৃহৎ ঝোলা বিশিষ্ট একজন বৃদ্ধ মানুষ, যে বড়দিনের সময় ছোটো ছোটো ছেলে-মেয়েদের জন্য ক্রিসমাস ইভনিং-এ নর্থ পোল থেকে তার আটটি রেইন ডিয়ার (ড্যাসার, ড্যান্সার, প্রান্সার, ভিক্সেন, কমেট, কুপিড, ডোনার, ব্লিটজেন; এ ছাড়াও কখনো কখনো রুদল্ফ এবং অলিভ-ও এদের সঙ্গে যুক্ত হয়) নিয়ে আকাশে উড়ে উড়ে ঘরে ঢুকে উপহার, চকোলেট রেখে যায়। উপহার পাওয়ার পর বাচ্চাদের ভুবন ভোলানো হাসিমুখ পছন্দ করতেন এই সান্তা ক্লজ, পরিচিতি পেতেন বাচ্চাদের পরম বন্ধু ও সঙ্গী হিসেবে। কিংবদন্তি চরিত্র হিসেবে ও মহানুভবতা নিয়ে সান্তা মানুষের মনে অনেক শ্রদ্ধা কুড়িয়েছেন; তার উত্তরে বলা হয়, তিনি বিপদগামী যুবক-যুবতীদের ক্ষমা করে জীবনের সঠিক দিক দেখিয়ে দিতেন, ছোটো ছোটো ছেলে-মেয়েদের আচরণের খোঁজ খবর নিতেন, দয়া ও উপহার প্রদান করতেন।
সান্তা ক্লজ নামটা ডাচ ‘সিন্টারক্লাস’ নামের অপভ্রংশ মাত্র। ডাচ ভাষায়, সেন্ট নিকোলাসের উচ্চারণ ‘সিন্টারক্লজ’ বা ‘সিন্টারক্লাস’— শব্দটি থেকে ‘সান্তা ক্লজ’ নামের উৎপত্তি। বড়দিন ও উপহার দেওয়ার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এই সেন্ট নিকোলাস কয়েকশো বছর আগে আধুনিক তুরস্কের কাছাকাছি সমুদ্রবর্তী ‘পাতরা’ নামক একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মায়রার বিশপ নির্বাচিত হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই তাঁকে কারাদন্ড দেওয়া হয়। পরে, সম্রাট কনস্টেনটাইন ক্ষমতায় এসে তাঁকে মুক্তি দিলে, উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সমস্ত ধন-সম্পত্তি নিঃস্বদের স্বার্থে বিলিয়ে দেন। এ ছাড়াও তিনি এক দেশ থেকে অপর দেশ ঘুরে বেড়াতেন এবং দুঃস্থদের সাহায্য করতেন। বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ভীষণভাবে যুক্ত ছিলেন এই সেন্ট নিকোলাস। এই সেন্ট নিকোলাস-ই ফাদার খ্রিস্টমাস, ক্রিস ক্রিঙ্গল, পেরে নোয়েল কিম্বা ক্রাইস্ট কাইন্ড নামেও পরিচিত। বর্তমানে এই চরিত্রগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় হল লাল পোশাকের সেন্ট নিকোলাস বা সান্তা ক্লজ চরিত্রটি। খ্রিস্টিয় ত্রয়োদশ শতাব্দীতে সেন্ট নিকোলাসের নাম জনপ্রিয় হয় নেদারল্যান্ডস্–এ। তারপর আস্তে আস্তে মধ্য ও দক্ষিণ ইউরোপে তাঁর নাম ও উপহার আদান-প্রদানের ঐতিহ্য রীতির বিন্যাস ঘটে। একটি তথ্য মতে, ফাদার খ্রিস্ট মাসের নিবাস, ফিনল্যান্ডের ল্যাপল্যান্ড প্রদেশের কোরভাটুনটির পার্বত্য অঞ্চলে। সান্তা ক্লজ, তাঁর স্ত্রী জেসিকা (জার ট্রুড, ক্যারোল) এবং প্রচুর জাদু ক্ষমতা সম্পল ‘এলফ্’ নিয়ে সুদূর চিরতুষারাবৃত অঞ্চলে বসবাস করেন। এই সান্তা ক্লজ চরিত্রটি সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথমদিকে ইংল্যান্ডে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
এই দেশেই (ইংল্যান্ড) সান্তা ক্লজ চরিত্রটির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ফাদার খ্রিস্ট মাস-ই বেশি জনপ্রিয় হয়ে যায়। একইভাবে ফ্রান্সে পেরে নোয়েল চরিত্রটি নতুন মাত্রা পায়। অপরদিকে ইতালিতে বাব্বো নাতালে (অর্থ– ফাদার খ্রিস্টমাস)-র চরিত্রটি হলেন একজন ঝাড়ুতে উড়ন্তকারী কিংবদন্তি মহিলা জাদুকরী (লে বাফানা) যিনি ছোট্ট যিশু জন্মানোর পরে ওয়াইজ ম্যান (বিবলিক্যাল মেজাই)-এর সঙ্গে নিজের যাওয়া প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বলা হয়, সান্তা ক্লজের সঙ্গীও রয়েছেন, যিনি কালো পিটার অথবা নেচ রুপরেক নামে জনপ্রিয়। ভেনিজুয়েলা বা কলম্বিয়ার মতো কয়েকটি দেশে ধারণা করা হয়, এই সান্তা ক্লজ-ই বাচ্চাদের জন্য খেলনা প্রস্তুত করে যিশুকে দেন, যিশু বাড়ি বাড়ি ঘুরে বাচ্চাদের সেই খেলনাই উপহার স্বরূপ দিয়ে যান। যাইহোক, সেন্ট নিকোলাস ৩৪৩ খ্রিস্টাব্দের ৬ ডিসেম্বর মারা যান। তাকে কবর দেওয়া হয় তুর্কিতে। সেন্ট নিকোলাসের কবর থেকে মিষ্টি ঘ্রাণ বের হত বলে জানা যায়, ধর্মযাজকরা যাকে ‘মালা অব সেন্ট নিকোলাস’ বলেন। শোনা যায়, ১০৮৭ সালে ইতালির কিছু খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী তাঁর ওই কবর ভেঙে হাড়গোড় নিয়ে যায়, আর নিকোলাসের শরীরের অবশিষ্টাংশ ফ্রান্স, জার্মানি-সহ কয়েকটি দেশের চার্চে রয়েছে বলে জানা যায়। ১৮০০ শতকের শেষের দিকে নিউ ইয়র্ক পত্রিকাতে একদল ওলন্দাজ সেন্ট নিকোলাস সম্বন্ধীয় একটি প্রবন্ধ বের করেন। ১৮০৯ সালে ওয়াশিংটন আরভিং ‘নিউইয়র্কের ইতিহাস’ নামক বইয়ে ‘সিন্টার ক্লাস’-কে নিয়ে গল্প লেখেন, যেটা সান্তা ক্লজকে আমেরিকার মানুষের কাছে বিশাল জনশ্রুতি দেয়। ঊনবিংশ শতাব্দীতে, বিখ্যাত আমেরিকান কার্টুনিস্ট টমাস নাস্ট, যিনি ফাদার অফ দি আমেরিকান কার্টুন নামে পরিচিত— এর প্রভাবে আমেরিকা ও কানাডায়, সান্তা ক্লজের চরিত্রটি এক নতুন রূপ পায়, যা আজ আমাদের কাছে নাদুসনুদুস লাল পোশাকের এক বৃদ্ধ মানুষ হিসেবে চিহ্নিত।
বড়দিনের উৎসব পালিত হয় উপহার আদান-প্রদান এবং অবশ্যই গৃহসজ্জার মাধ্যমে। এই গৃহসজ্জার মজাটা আরও ত্বরাণ্বিত হয় ক্রিসমাস ট্রি সাজিয়ে। মধ্যযুগে অনেকে এই ক্রিসমাস ট্রি-কে ট্রি অফ প্যারাডাইস নামে অভিহিত করতেন। এই ট্রি হিসেবে ব্যবহৃত হয় সরলবর্গীয় চিরসবুজ ফার জাতীয় গাছ। ক্রিসমাস ট্রি সত্যিকারের অথবা কৃত্রিমভাবে তৈরি করে বিভিন্ন রঙের আলো ও বিভিন্ন দ্রব্যে সাজিয়ে তোলা হয়। এ ছাড়াও এই গাছের উপরে একটি তারা বসানো হয়, যেটি স্বর্গদূত বেথেলহেমে জন্ম নেওয়া যিশু খ্রিস্টের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। শোনা যায়, প্রাক খ্রিস্টিয় যুগে রোমান সাম্রাজ্যের অধিবাসীরা শীতকালে তাদের বিভিন্ন রীতিতে চিরহরিৎ বৃক্ষের ডালপালা বাড়ির ভিতরে এনে সাজাতো, সেই ধারণা থেকেই নাকি ক্রিসমাস ট্রি সাজানোর রাতির প্রচলন হয়। ক্রিসমাস ট্রি সাধারণত ২৪ ডিসেম্বর ক্রিসমাস ইভ-এর আগে সাজানো হয় এবং ১২ তম রাত অর্থাৎ ৬ জানুয়ারিতে খুলে ফেলা হয়। তবে ক্যাথলিকদের রীতিতে এটি জানুয়ারির শেষ পর্যন্তও রাখা হয়। অস্ট্রেলিয়াতে আবার এই ট্রি-কে ডিসেম্বরের শুরুতে সাজিয়ে রেখে গ্রীষ্মের ছুটি পর্যন্ত রাখার রীতি রয়েছে।
জনশ্রুতি ও প্রাচীন কাহিনী থেকে জানা যায়, একবার নাকি রোম শহরে দরিদ্র শীতার্ত শিশু একটি গরীব কাঠুরের ঘরে আশ্রয় চায়। কাঠুরে এবং তার স্ত্রী জনৈক ওই শিশুটিকে নিজেদের খাবার খাইয়ে নরম বিছানায় শুতে দিয়ে নিজেরা শক্ত কাঠের ওপর শুয়ে রাত্রি কাটান। সকালে ওই শিশুই স্বয়ং যিশুর রূপ ধারণ করে তাঁদের আচরণে খুশি হয়ে একটি গাছের টুকরো দিয়ে মাটিতে পুঁতে দেওয়ার কথা বলেন। এই ঘটনাটি ক্রিসমাস অনুষ্ঠানের কয়েকদিন আগে ঘটে। ক্রিসমাসের দিন দেখা যায় গাছের টুকরোতে অসংখ্য সোনালি আপেল ঝুলে রয়েছে। এই গাছ-ই ক্রিসমাস ট্রি। অপরদিকে আরেকটি কাহিনী অনুযায়ী, একবার এক গরীব শিশু কিছু পাইন গাছের চারা নিয়ে এক গির্জার মালির কাছে বিক্রির উদ্দেশ্যে যায়। চারাগুলো বেচে যে টাকা পাবে সেটি দিয়ে শিশুটি ক্রিসমাসে কিছু কিনতে পারবে। এই ভেবে পাইনের চারাগুলি খুব ভালো না হলেও মালিটি তার কাছ থেকে অধিক দামে চারাগুলি কিনে গির্জার চারদিকে পুঁতে দেয়।
ক্রিসমাসের সময় ওই চারাগুলি বিশালাকৃতি ধারণ করে এবং তার ডালপালা থেকে অজস্র তারার আলো দেখা দেয়। এই গাছই নাকি ক্রিসমাস ট্রি। জার্মান ভাষা থেকে গৃহীত ক্রিসমাস ট্রি ইংরেজি ভাষায় প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ১৮৩৫ সালে। ক্রিসমাস ট্রি জার্মানির গেইসমার শহরের সেন্ট বনিফেস (৬৭২–৭৫৪ সাল) একটি পুরনো ওক গাছের মূলে ফার জাতীয় গাছের বেড়ে ওঠা লক্ষ্য করেন যেটি তিনি যিশু খ্রিস্টের প্রতি বিশ্বাসের চিহ্ন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে যায়। ১৫৩৬ সালে মার্টিন লুথার নামক একজন ধর্মতাত্ত্বিক পাইন গাছের বনের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময়ে গাছের ডালে অসংখ্য তারা ঝলমল করতে দেখেন বলে শোনা যায়। তিনি তখন তার বাড়ির ক্রিসমাস ট্রি-কে আলোকসজ্জায় সাজিয়ে তোলার কথা প্রথম ভাবেন। স্বর্গোদ্যানের ট্রি অফ লাইফ-এর চিহ্ন হিসেবে এটির নতুন রূপদান করেন তিনি। ১৭৮১ সালে কানাডার কুইবেকে বার্নস উইক সৈন্যদের হাত ধরে এই ক্রিসমাস ট্রি-র প্রচলন শুরু হয়। তৎকালিন জেনারেল ফ্রেডরিক অ্যাডলফ রিডেসেল এবং তার স্ত্রী ব্যারোনেস ভন রিডেসেল সোরোলে একটি ক্রিসমাস পার্টির আয়োজনে ফার জাতীয় গাছে মোমবাতি এবং বিভিন্ন ফল দিয়ে সাজিয়ে ছিলেন। উনিশ শতকের শুরুর দিকে রাশিয়ার প্রিন্সেস হেনরিয়েট অফ নাসু ওয়েলবার্গ রাশিয়া তথা অস্ট্রিয়ার ভিয়েনাতে ক্রিসমাস ট্রি-র প্রচলন করেন। ১৮৪০ সালে ডাচেস ডিওরলিয়েন্স ফ্রান্সে এই ট্রি-র প্রচলন ঘটান। ব্রিটেনে এই ট্রি-র ব্যাপ্তি লাভ করে তৃতীয় জর্জের সময়।
পরবর্তীক্ষেত্রে রানী ভিক্টোরিয়ার রাজত্বকালে প্রিন্স অ্যালবার্ট জার্মানি থেকে ব্রিটেনে এই ক্রিসমাস ট্রি সাজানোর প্রচলন করেন। ক্যাথরিন মারিয়া সেগুইক নামক একজন আমেরিকান সাহিত্যিক ১৮৩৬ সালে নিউ ইয়ারস ডে নামক একটি গল্পে প্রথম ক্রিসমাস ট্রি–র উল্লেখ করেন। ক্রিসমাস ট্রি-তে বৈদ্যুতিন আলো (বাতি) ঝোলানোর চল শুরু করেন ১৮৮২ সালে এডিসন কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যাডওয়ার্ড জনসন। পোপ দ্বিতীয় জন পল ১৯৮২ সালে ভ্যাটিকান সিটিতে এই ট্রি–র প্রচলন করেন যেটি যিশু খ্রিস্টের প্রতীক হিসেবে প্রসারতা লাভ পায়। ঊনবিংশ শতাব্দীতে পোইনসেটিয়া নামক মেক্সিকো-র একটি দেশজ গাছ ও ক্রিসমাস ট্রি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এটি ছাড়াও রেড অ্যামারিলিস, হলি, মিসলটো ও খ্রিস্টমাস ক্যাকটাস ও এই ক্রিসমাস ট্রি-র জায়গা দখল করে নেয়। এই সকল গাছ দিয়ে প্রধানত বাড়ির অভ্যন্তর সাজানোর রেওয়াজ-ই বেশি। অপরদিকে, নিউজিল্যান্ডে পহুটুকুওয়া ট্রি ক্রিসমাস ট্রি হিসেবে চিহ্নিত। এই ট্রি-তে কেবলমাত্র বড়দিনের সময়ই লাল রঙের ফুল ফোটে। উইন্ডসর ক্যাসেলে ব্রিটিশ রাজপরিবারের হাত ধরেই ক্রিসমাস ট্রি-র নকশা কাটার প্রচলন শুরু হয়, যেটি আস্তে আস্তে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে নরওয়ের প্রতি ইংল্যান্ডের সমর্থনের উপহার স্বরূপ লন্ডনের ট্রাফালগার স্কোয়ারের ক্রিসমাস ট্রি নরওয়ের অসলো থেকে উপহার হিসেবে প্রাপ্ত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসে ১৯৭৯ সালে প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার ক্রিসমাস ট্রি-তে স্টার বসিয়েছিলেন। ক্রিসমাস ট্রি কেবল প্রতীক ও আনন্দের জন্য সাজানো হয় তা নয়, এটি দাতব্য কাজে অর্থ উত্তোলনের জন্য এবং উপহার হিসেবেও বিবেচিত হয়।
ক্রিসমাসকে সংক্ষেপে এক্স-মাস (x mas) লেখার রীতিও বহুল প্রচলিত। অনেকের ধারণা এটি যেমন সহজে উচ্চারণ করা যায় তেমনই এক্সমাসের ‘এক্স’ যিশুর ক্রসকে বোঝায়। কিন্তু দুটি ধারণাই ভুল। তার কারণ, ক্রিসমাস শব্দটি গ্রীসে ডাকা হয় Christos নামে যে বানানটার শুরু এক্স-এর মতন দেখতে একটি অক্ষর দিয়ে। প্রাচীন গ্রীক ভাষায় 'X' বা ‘চি’ হল খ্রিস্ট শব্দের প্রথম অক্ষর। এই অক্ষরটি আবার ল্যাটিন অক্ষর ‘X’-এর সমরূপ। মোটামুটি ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে তৎকালিন মানুষজন এই অক্ষরটিকে খ্রিস্ট শব্দের নাম সংক্ষেপ হিসেবে এক্স মাস (X mas) কথাটি চালু করে ফেলেন, যেটি বর্তমানে বহুল ব্যবহৃত।
আমেরিকান উপাখ্যান অনুযায়ী, সান্তা ক্লজ, তাঁর স্ত্রী স্লেজ গাড়ি সহ আট-নটি বলগা হরিণের সঙ্গে সুদূর উত্তর মেরুতে বসবাস করেন। সুদূর উত্তরে (সাইবেরিয়ার) একধরনের মাশরুম পাওয়া যায়, যার নাম আমানিতা মুসকারিয়া। এই মাশরুমটি খেলে মানুষের মধ্যে তন্দ্রাভাব কাজ করত ও দৃষ্টিভ্রম হত। সেই সময় আশেপাশে দৃশ্যমান বলগা হরিণকে মানুষ আকাশে উড়ন্ত অবস্থায় দেখত আর কল্পনা করত বড়দিনের সময় সান্তা ক্লজ সব ঘরে উপহার দিয়ে যাচ্ছেন এই উড়ন্ত বলগা হরিণ টানা স্লেজ গাড়ি চড়ে।
শিশু অনুরাগী, শুভ চেতনার প্রতীক ও দয়ালু সান্তা ক্লজ এবং ক্রিসমাস ট্রি নিয়ে বড়দিন উপলক্ষে উপহার প্রদান ও সাজসজ্জার মধ্যে দিয়ে যিশু খ্রিস্টকে আনন্দের সঙ্গে চিরাচিত প্রথায় প্রতিবছর বরণ করুন।
সব ছবি: আন্তর্জাল
Leave a Reply
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Comments