ধন্বন্তরি ডাক্তার
ডঃ সঞ্জীব রায়
কিছু কথা
আজ ১ জুলাই, বাংলার রূপকার ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের একই সঙ্গে জন্ম ও প্রয়াণ দিবস। কিংবদন্তি মানুষটির প্রতি সম্মান প্রদর্শন পূর্বক এই বিশেষ দিনটিকে ‘জাতীয় ডাক্তার দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। চিকিৎসক হিসেবে তিনি শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, সমগ্র ভারতবর্ষের নিরিখেই একজন বিরল প্রতিভা, বাস্তবিকই ধন্বন্তরি। ডাক্তারির সঙ্গে সঙ্গে তাঁর আরও একটা দিক আছে। তিনি আজীবন মূল্যবোধের রাজনীতি করে গেছেন। বর্তমান পরিস্থিতির বিচারে বলা চলে যে তিনি ছিলেন সেই প্রজাতির মানুষ যাঁরা রাজনীতি করতে এসেছিলেন শুধুমাত্র দেবার জন্য, নেবার জন্য নয়। তথাপি এই মহান দিনে এই প্রতিবেদনে কোনো রাজনীতি নয়, তুলে ধরার চেষ্টা হয়েছে তাঁর জীবনের দুঃখ, বেদনাসহ সাফল্যের কিছু ঘটনা। এই সব ঘটনা মূলত জনশ্রুতির মাধ্যমেই প্রচলিত যাকে আইনের ভাষায় ‘পারিপার্শ্বিক প্রমাণ’ বলা যেতেই পারে। সেগুলির মূল্যায়ন বা বিচার অধিকার একান্তভাবেই পাঠকের নিজস্ব।
ঠাকুমার আদরের ভজন বা বিধান রায়ের ছোটোবেলা কেটেছে পাটনা শহরের নিকটবর্তী বাঁকিপুরে। বিধানের বয়স যখন ১৪ বছর সেই সময়ে তাঁর মাতৃবিয়োগ হয়। পরের বছর, ১৮৯৭ সালে ১৫ বছরের বিধান ম্যাট্রিক পাশ করেন। তারপর কিছুদিনের জন্য কলকাতা আসা। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে আইএ পাশ করে আবার পাটনা ফিরে যাওয়া, পাটনা থেকে অঙ্কে অনার্স নিয়ে বিএ পাশ (তৎকালীন সময়ে অঙ্কে অনার্স নিয়ে পাশ করলেও বিএ ডিগ্রি দেওয়া হত)। বিএ পাশ করার পর তিনি বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং কলকাতার মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির জন্য দরখাস্ত জমা দেন। দুটি জায়গাতেই নির্বাচিত হলেও তিনি পরবর্তী পড়াশোনার জন্য কলকাতার মেডিক্যাল কলেজকেই বেছে নেন।
১৯০২ সাল, বিধান রায়ের মেডিক্যালের প্রথমবর্ষ। তখন থেকেই পাকাপাকিভাবে তাঁর কলকাতায় থাকা শুরু। ওই বছরেই বিধানের বাবা প্রকাশচন্দ্র রায় কর্মজীবন থেকে অবসর নেন। বাবা বলে দেন যে পুত্রের জন্যে পড়াশোনা বাবদ কোনো খরচ করা তার পক্ষে আর সম্ভব হবে না। বিধান মেডিক্যাল থেকে বৃত্তি পেতেন। সেই টাকাতেই কোনোক্রমে পড়াশোনা ও থাকার খরচ তাঁকে চালাতে হত। বই কেনা তো দূরের কথা, খাতার সংস্থান করাও সব সময়ে সম্ভব হত না। অবলম্বন বলতে ছিল মেডিক্যাল কলেজ লাইব্রেরি। সেখানেই তিনি দিনের মধ্যে ৬/৭ ঘণ্টা কাটিয়ে দিতেন। লড়াই করতে করতেই ১৯০৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসএস ডিগ্রি পেলেন বিধান। ইতিমধ্যেই তাঁকে ডাক্তারি পড়ার খরচ জোগাতে কলকাতার রাস্তায় ট্যাক্সি চালাতে হয়েছে এবং পুরুষ নার্সের কাজ করতে হয়েছে। যা কিনা সম্ভবত ভারতবর্ষে তিনি প্রথম।
ডাক্তারি পড়াকালীন বিধানবাবু স্বনামধন্য ডাক্তার নীলরতন সরকারের নজরে আসেন। পাকা জহুরীর সঠিক জহর চিনতে ভুল হয় না। সরকারবাবু বিধানের ব্যাপারে একটু বেশিই স্নেহপ্রবণ ছিলেন। সেই সূত্র ধরেই বিধানবাবুর মাঝেমধ্যেই মাস্টারমশাইয়ের বাড়িতে আসা যাওয়া। সেখানেই পরিচয় হয় মাস্টারমশাইয়ের পাঁচ কন্যার মধ্যমা কল্যাণীর সঙ্গে। আলাপ পরিচয় থেকেই প্রণয়। প্রেম পর্ব চলাকালীন বিধানবাবুর মেডিক্যাল কলেজে এমডি পরীক্ষা এসে গেল। সবাইকে খানিক অবাক করেই বিধানবাবু পরীক্ষার অকৃতকার্য হলেন। ফলাফল খারাপের যথেষ্ট কারণ অবশ্যই ছিল। প্রকৃতপক্ষে তিনি পড়াশোনা করার জন্যে কোনো সময়ই পেতেন না। হাসপাতালে খাটুনি, অর্থের সংস্থানের চিন্তা, সর্বোপরি বইপত্রের অভাব— সব মিলিয়ে মিশিয়েই বিপর্যয়টা এক অর্থে অনিবার্যই ছিল।
কল্যাণীর দিক থেকে চাপ আসছিল। তাঁর বক্তব্য সহজ ও সরল। সম্পর্কের তো একটা গতি হওয়া দরকার। ইতস্তত করতে করতেই একদিন বিধানবাবু মাস্টারমশাইকে ব্যাপারটা খুলে বললেন। মাস্টারমশাই নিতান্তই ভালো মানুষ, বাইরে সিংহরাশি হলেও ঘরে মেষরাশি। ঘরে স্ত্রী নির্মলাদেবী যেটা বলবেন সেটাই হবে। ছাত্রের আর্জি স্ত্রীর কাছে ফেলামাত্র প্রস্তাব বাতিল। নির্মলাদেবীর বক্তব্য ছিল, ‘উঠতি ডাক্তার নিজের পেট ঠিক করে চালাতে পারে না, কোনো চালচুলো নেই, সর্বোপরি এমডি পরীক্ষাতেও ফেল।’ মাস্টারমশাইয়ের সাদা মনে কাদা নেই। যথাসময়ে ছাত্রের কাছে স্ত্রীর বলা কথাগুলি দাড়ি, কমা, সেমিকোলন সমেত বানান করে শুনিয়ে দিলেন, সঙ্গে জুড়ে দিলেন নিজের একটি মাত্র কথা, ‘তুমি যোগ্য হয়ে ওঠো, দেখি তখন আমি কী করতে পারি।’ মাস্টারমশাইয়ের বলা শেষ কথাটি ছাত্রের মনে গেঁথে গেল। বিধানবাবু সব শুনে সে দিনের মতন বিদায় নেন।
অত্যন্ত দ্রুত বিধানবাবু সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য বিলেত যাবেন। বলাবাহুল্য যে তিনি কল্যাণীর কাছে মাস্টারমশাইয়ের সঙ্গে কথোপকথন ও বিলেত যাবার সিদ্ধান্ত সবই গোপন করেছিলেন। ১৯০৯ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে বিধান রায় ইংল্যান্ডের উদ্দেশে পাড়ি দেন। তখন তাঁর পকেটে সম্বল বলতে ছিল মাত্র ১,২০০ টাকা। তাঁর ইচ্ছা ছিল ব্রিটেনের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান সেন্ট বারথোলোমিউ’স হসপিটাল থেকে চিকিৎসা শাস্ত্রের সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করার। সেই হসপিটালের ডিন এশিয়ার কোনো ছাত্রকে পৃথিবী বিখ্যাত এই হসপিটালে পড়াশোনার সুযোগ দিতে নারাজ ছিলেন। ফলস্বরূপ বিধান রায়ের দরখাস্ত খারিজ হয়। হতাশায় ভেঙে না পড়ে বিধান রায় একের পর এক দরখাস্ত জমা দিতে থাকেন। এইভাবে মোট ৩০ বার দরখাস্ত জমা দেবার পর বিধান রায়ের ধৈর্য ও জেদের কাছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরাজিত হয়ে তাঁর ক্ষেত্রে যাবতীয় নিয়মকানুন ও বাধানিষেধ শিথিল করেন। বিধান রায় ছিলেন অসাধারণ মেধাবী ও মনোযোগী ছাত্র। মাত্র দু’বছর তিনমাসের মধ্যে সবাইকে চমক দিয়ে রেকর্ড সময়ের মধ্যে তিনি এমআরসিপি এবং এফআরসিএস পাশ করে ১৯১১ সালে ভারতে পদার্পন করেন। তিনি বিলেত থাকাকালীন তাঁর মাস্টারমশাই বা কল্যাণীর সঙ্গে কোনোরকম যোগাযোগ রাখেননি। এসে শুনলেন কল্যাণী আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন। বাবা, মা ক্রমাগত চেষ্টা করেছিলেন মেয়ের অন্যত্র বিবাহের ব্যবস্থা করতে, কিন্তু কল্যাণী কাউকেই কোনো সুযোগ দেননি। অসহায় পিতা ডাক্তার নীলরতন সরকার তাঁর ছাত্রের কাছে নিজের অক্ষমতার কথা অকপটে স্বীকার করলেন। ব্যক্তি বিধান অত্যন্ত বড়ো মনের মানুষ ছিলেন। তিনি বাকি জীবনে দ্বিতীয়বার বিবাহের চেষ্টা করেননি, তেমনই মাস্টারমশাইয়ের সঙ্গে সারাজীবন অত্যন্ত সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছেন। তবে তিনি এমন ব্যবস্থা করলেন যাতে করে পশ্চিমবঙ্গের মানুষজনের কাছে ‘কল্যাণী’ নামটি সর্বদা মুখে মুখে ঘোরে। রাজ্যে প্রথম পরিকল্পিত শহর তৈরি করে তিনি তার নাম রেখেছিলেন ‘কল্যাণী’।
ডাক্তার হিসেবে বিধান রায় জীবতকালেই কিংবদন্তি হয়ে উঠেছিলেন। রোগ নির্ণয়ে তাঁর আশ্চর্য ক্ষমতা ছিল। তিনি নিজে অবশ্য কয়েকবার বলেছিলেন, এই ক্ষমতা তাঁর অনেকটাই মাস্টারমশাইয়ের কাছে শেখা। তাঁর চিকিৎসার ব্যাপারে নানাবিধ কাহিনীও প্রচলিত আছে। আসুন সেগুলো একটু আলোচনা করা যাক। ১৯৪৫ সাল। মহাত্মা গান্ধী কয়েকদিনের জন্য সোদপুরের খাদি প্রতিষ্ঠান ভবনে বাস করছিলেন। সেই সময় বাপুজির একজন শিষ্যা শ্রীমতী কাঞ্চন বেন খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েন। অবস্থার দ্রুত অবনতি হয়। সবাই যখন আশা ছেড়ে দিয়েছেন সেই সময় বাপুজির নির্দেশে বিধান রায়কে ধরে আনা হয়। আসার পরেই ম্যাজিক। বিধান রায়ের চিকিৎসার কল্যাণে মৃত্যুপথ যাত্রী শ্রীমতী বেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন। সেরে ওঠার পর শ্রীমতী বেনের সরল স্বীকারোক্তি, ‘আমি মৃত্যুকে উপলব্ধি করলাম।’
জন কেনেডির সঙ্গে দিল্লিতে মিটিং চলছে। সেই মিটিংয়ে বিধান রায় আমন্ত্রিত। মিটিং শেষে বিধান বললেন, ‘আপনার পিঠে একটা মারাত্মক ব্যথা আছে। কেনেডি একেবারেই অবাক। বিধানের চটজলদি জবাব আমি পেশায় ডাক্তার নেশায় রাজনীতিবিদ। বিধান রায়ের অনুরোধেই কেনেডির সঙ্গে পিঠে ব্যথা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হল। ভাগ্যক্রমে জন কেনেডির কাছে চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্রও ছিল। বিধান রায় প্রেসক্রিপশনে কিছু সংযোজন করে দিলেন। কথাবার্তার শেষে কেনেডি সাহেব খানিকটা আবেগপ্রবণ হয়ে বিধান রায়কে তাঁর ‘ফি’–র পরিমাণ জানতে চাইলেন। বিধানবাবু ফি হিসেবে ৩০০ কোটি চাইলেন। বলা বাহুল্য পুরোটাই পশ্চিমবঙ্গের উন্নতিকল্পে। কেনেডি চটজলদি ব্যবস্থা করে দিলেন। কিন্তু বিধানবাবু টাকাটা পাবার সময় তৎকালীন অর্থমন্ত্রী মোরারজি দেশাই বেজায় চটলেন। শেষে অবশ্য নেহরুর হস্তক্ষেপে বিধান রায় পুরো টাকাটাই পশ্চিমবঙ্গের উন্নতিকল্পে পেয়ে যান।
মৃত্যুর কিছুদিন আগে বিধান রায় চোখের অস্ত্রোপচার করার জন্য ভিয়েনা যান। চোখ অপারেশন করার পূর্ব মুহূর্তে তিনি যখন অপারেশন টেবিলে উঠতে যাচ্ছেন, সেই সময় হঠাৎ একটি কাশির আওয়াজ পেলেন। ডাঃ রায় অবিলম্বে যে ব্যক্তি কাশছেন তাঁর পরিচয় জানতে চান। ডাক্তারবাবুরা জানান যে উক্ত ব্যক্তি তাঁদের সহকর্মী অর্থাৎ ডাক্তার, ওনার একটু সর্দি, কাশি হয়েছে। বিধান রায় ডাক্তারবাবুদের কথায় কর্ণপাত না করেই বলেন, অবিলম্বে ওই ব্যক্তিকে বুকের এক্স–রে করতে বলুন। ওনার টিবি হয়েছে। বিধান রায়ের কথা শুনে ওই ডাক্তার এবং তাঁর অন্যান্য সহকর্মীরা নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি করতে থাকেন। তথাপি এক্স রে করা হয় এবং ধরা পড়ে যে উনি সত্যি সত্যিই টিবিতে আক্রান্ত।
মানুষ হিসেবে বিধান রায় বিরাট মাপের ছিলেন। তিনি মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন বেশ কিছুটা সময় জ্যোতি বসু ছিলেন বিরোধী দলনেতা। এই জ্যোতিবাবু এবং স্নেহাংশু আচার্যের সঙ্গে বিধান রায়ের সম্পর্কের কথা আজকের নেতাদেরও মুখে মুখে ঘোরে। বিধান রায়ের প্রয়াণের পর স্বয়ং জ্যোতি বসু একটি আলোচনায় তাঁর সঙ্গে বিধান রায়ের সম্পর্কের একটি তথ্য ফাঁস করে দেন। জ্যোতিবাবুর কথা অনুযায়ী সেদিন বিধানসভায় একটি বিষয় নিয়ে তুমুল হট্টগোল, চেঁচামেচি চলছিল। হাউসে মুখ্যমন্ত্রী না থাকায় বিরোধীদের চিৎকার উত্তরোত্তর বাড়তেই থাকে। বিধান রায় বেশ দেরি করেই বিধানসভায় প্রবেশ করেন। সভার আলোচনা, তর্কাতর্কি যথারীতি একসময় শেষ হল। অধিবেশন শেষে ফেরার সময় বিরোধী দলনেতা জ্যোতিবাবুর ঘরে তাঁর সঙ্গে দেখা করে বিধানবাবু বলে গেলেন কিছু কথা। তিনি বলেছিলেন যে জ্যোতিবাবু যেন আজ পার্টি অফিস না গিয়ে সরাসরি বাড়ি যান, কারণ তাঁর বাবার শরীর ভালো নয়। তিনি তাঁর বাবার শরীর পরীক্ষা করে আসলেন বলেই বিধানসভায় উপস্থিত হতে বিলম্ব হয়েছে। ভাবা যায়! কী উদার মানুষ ছিলেন তিনি।
বিধান রায় প্রকৃত অর্থেই একজন অসামান্য মানুষ, যিনি চিকিৎসক ও মুখ্যমন্ত্রীত্ব দুটোই সমান দক্ষতা বা মর্যাদার সঙ্গে সম্পন্ন করেছেন। তিনি চিকিৎসক হিসেবে সত্যিই ছিলেন অসামান্য প্রতিভার অধিকরী। তৎকালীন সময় তো আজকালকার মতো ‘প্যাথলজিক্যাল টেস্ট ছাড়া চিকিৎসা হবে না’ এমন ব্যবস্থা ছিল না। সর্বোপরি এত ল্যাবরেটরি তখন ব্যাঙের ছাতার মতন গজিয়েও ওঠেনি। বিধান রায় রোগীর নাড়ি টিপে, হাঁটাচলা দেখে, কখনও বা শুধু দূর থেকে রোগ নির্ণয় করে অব্যর্থ ওষুধ প্রয়োগ করতেন। একেবারে ধন্বন্তরি। কিন্তু ধন্বন্তরিও জীবনে একজনের ক্ষেত্রে চরম ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। চূড়ান্ত আত্মবিশ্বাস তাঁকে ভুল পথে আটকে দিয়েছিল। ফলে সারাজীবন শুনে চলা মাস্টারমশাইয়ের উপদেশ তিনি একবারের জন্যই কর্ণপাত করেননি। তিনি কবিগুরুর চিকিৎসক ছিলেন। কবিগুরু প্রস্টেট গ্ল্যান্ড (ক্যান্সার নয়) এবং কিডনির সমস্যাজনিত কারণেই মারা যান। এই তথ্য যে কোনো কারণেই হোক গুরুদেবের তিরোধানের ৭৫ বছর পর জনসমক্ষে আসে। কবিগুরুর কিন্তু প্রস্টেট গ্ল্যান্ডের কোনও অপারেশন করা হয়নি। ‘সুপ্রাপিউবিক সিস্টোটমি’ নামক এক বাইপাস সার্জারির মাধ্যমে একটি টিউব বা নল তাঁর ইউরিনারি ব্লাডারে ঢুকিয়ে জমে থাকা মূত্র বের করে দেওয়া হয়। কাজটি করেন ডাঃ ললিত বন্দ্যোপাধ্যায়। বলাবাহুল্য এই কাজে ডাঃ বিধান রায়ের পূর্ণ সমর্থন ছিল। ডাঃ নীলরতন সরকারের একাধিকবার বারণ তিনি গ্রাহ্য করেননি। কবিগুরু চলে গেলেন (৮০ বছরের মানুষটি) অপারেশনের ধকল সহ্য করতে না পেরে। ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট রাখি পূর্ণিমার দিন ইন্দ্রপতন হল। তিনি অস্তাচলে চলে গিয়ে প্রমাণ দিয়ে গেলেন ধন্বন্তরিরাও এক–আধবার ভুল করে। তাঁর পরিণামও হয় ভয়ঙ্কর।
১৯৬২ সালের আজকের দিনে ডাক্তারবাবু (বিধান রায়) সকালে প্রাত্যহিক রোগী দেখা সেরে, গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কাগজপত্র সইসাবুদ করে নিত্য সাধনা কবিগুরুর একটি ব্রহ্মসংগীত গাইবার পরে কিছুটা সময় নিয়ে চলে গেলেন অস্তাচলে। সেখানে কবিগুরুর কাছে মাথানত করে অপরাধ স্বীকার করা যে বাকি রয়ে গেছে!
Leave a Reply
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Comments
এমন ব্যক্তিত্ব পৃথিবীতে খুবই কম এসেছেন ।আজ জন্মদিন-প্রয়াণদিনে তাঁকে স্মরণ, দারুণ উদ্যোগ ।এই মহা ব্যক্তিত্বকে এক সাধারণ বাংলা-প্রিয় মানুষের অন্তরের ভেতর থেকে প্রণতি
- গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
Thu, Jul 1, 2021 9:08 PM
এমন ব্যক্তিত্ব পৃথিবীতে খুবই কম এসেছেন ।আজ জন্মদিন-প্রয়াণদিনে তাঁকে স্মরণ, দারুণ উদ্যোগ ।এই মহা ব্যক্তিত্বকে এক সাধারণ বাংলা-প্রিয় মানুষের অন্তরের ভেতর থেকে প্রণতি
- গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
Thu, Jul 1, 2021 9:08 PM
এমন এক ব্যক্তিত্বকে আজকের দিনে পাঠকদের সামনে এত সুন্দর ও সাবলীল ভাষায় তুলে ধরার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। শ্রী বিধানচন্দ্র রায়ের প্রতি আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম।
- Oindrila Banerjee
Thu, Jul 1, 2021 10:10 PM
আজকের লেখাটি পড়ে মন শ্রদ্ধায় ভরে উঠলো। ডঃ বিধান চন্দ্র রায় ক্ষণজন্মা পুরুষ। আপনার প্রবন্ধে ওঁনার কল্যাণকর রূপ প্রাঞ্জল ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে ।খুব ভালো লাগলো। প্রণাম।
- Arpita Bhattacharya
Fri, Jul 2, 2021 5:27 AM
Kekhata Asadharon laglo. Informative. Onek information pathak der uddeshye lekha r janoyo Lekhok k onek dhanyabad janai. Dr. Roy er maton eto baro maper Doctor r hoito duto hobe na. Pronam janai onake.
- SUMAN KALYAN CHAKRABORTY
Sat, Jul 3, 2021 11:29 PM