ভগবানের নবজাগরণ
ডঃ পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ হবার খেলায় মেতেছেন ভগবান।
আজ ভগবান নিজেকে বিকিয়ে দিয়েছেন। তিনি আজ পরাজিত তিনি আজ পরাধীন। আত্মসুখ ভুলে তিনি আজ নেমেছেন মাটিতে। অভিমানী ভগবান আজ সকলের করুণাপ্রার্থী। তাঁর শেষটুকুও হিংস্র মনোভাবী মানুষরূপী দানবেরা কেড়ে নিতে চায়। তাই শান্তিপ্রিয় ভগবান আজ শয়তানের প্রচণ্ড তাণ্ডবে ভীত ও ক্ষতিগ্রস্ত।
এসো, নেমে এসো রাস্তায়। এবার পথিক বা দর্শক হিসেবে নয়। নেমে এসো মানুষের মাঝে। আর কতদিন থাকবে এভাবে। নেমে এসো মানুষের মতো মানুষ হয়ে ভগবানের ডাকে। সেখানেই ফিরে পাবে, দেখা হবে অগণিত বোকা–সোকা সাদামাঠা নির্বোধ ভগবানের সাথে।
ভগবান আজ কিছুই বোঝেন না, বুঝতে চান না। তাই তো তিনি অবোধ। মুখোশের আড়ালে জমছে ঘন অন্ধকারের স্তুপ। অন্ধকারের ভেতরে অন্ধকার। সেই অন্ধকারের ভেতরে লুকিয়ে গেছেন ভগবান।
নিজেকে তিনি আজ গুটিয়ে নিয়েছেন। পরিচিত ভগবান হয়েছেন অপরিচিত। তার আজ আর দেখানোর কিছু নেই। নিঃস্ব ভগবান। গৃহহীন ভগবান। আজ তার থাকার জায়গা নেই। মাটে ঘাটে জলে ও জঙ্গলে তার বাস। তিনি নিজেই জানিয়ে দিয়েছেন যে তিনি হারিয়ে যাবেন। কী লাভ থেকে। এই তো সবাই মেনে নিয়েছে অত্যাচার। অনাচারের চাবুক এখন ডিসিপ্লিনের মতো, সকালে-বিকেলে। তাই তিনি ভেসে যাবেন। ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাবেন। তার আর আপামর জনসাধারণের জন্য বেঁচে থাকার ইচ্ছে নেই, মোহ নেই, লোভ নেই, আকাঙ্ক্ষা নেই। কোন কাজ নেই। সব কাজই তো কেড়ে নিয়েছে ক্ষমতালোভী শয়তানের দল। কালবৈশাখীর মতো ঝড়ের গতিতে পালিয়ে যাবেন তিনি।
পর্ব ২
শয়তানের দল ভারী। দানব ও শয়তান মিলেছে একসাথে। তারাই মালিক তারাই মাথা তারাই শাসক তারাই শোষক তারাই ত্রাতা। তাদের হাতেই লাঞ্ছিত হচ্ছেন ভগবান। চারদিকে ছড়াচ্ছে ত্রাস বিষাক্ত হয়ে যাচ্ছে মন ও মানুষের অন্তরআত্মা। শয়তানের মায়াবী জালে জড়িয়ে পড়ছে সমাজের উচ্চবর্গের সবাই। শয়তানের বিষাক্ত নিঃশ্বাসে জলবায়ু গাছপালা মাঠঘাট মন্দির–মসজিদ আজ সবই বিষাক্ত। শয়তানের দেহ ও মনে সঞ্চারিত হয়েছে বিষ যে বিষ ছড়িয়ে পড়ছে শরীরের আনাচে–কানাচে। শয়তান আজ শেষ করে দিতে চায় অবহেলিত ভগবানের শেষ অস্তিত্বটুকুই। দুষ্টুশক্তিরা আজ জমায়েত হয়েছে রাজপথে হাজারে হাজারে লাখে লাখে কোটিতে কোটিতে। তারাই জানিয়ে দিয়েছে সব কিছু যা ছিলো সকলের যা ছিলো ভগবানের ও মানুষের গর্বের সমাজের ছবি। সবই তারা বাতিল করে দেবে। ধংস্ব করে দেবে। সেই মতো তারা প্ল্যান করে ডেকেছে তাদেরই লোকজন। ওদের কোনো প্রয়োজন নেই মানুষ ও ভগবানের। ওরা আজ মানুষের মতো মজ্জাহীন দেহহীন কাপুরষ জন্তুদের মেরে পুড়িয়ে শেষ করে দিতে চায়।
পরিত্যক্ত আস্তাবলের মতো ভগবান ও মানুষের দরকার ফুরিয়ে গিয়েছে। তাই তো দানব আর শয়তানের মিলনে তৈরি হয়েছে নতুন গ্রাম নগর ও শহর। সেই শহরেই নতুন বিনোদনের খোরাক হিসেবে রাখা হয়েছে উলঙ্গ মানুষ ও ভগবানের চিত্র। সেখানেই দিনমজুরের কাজে নিযুক্ত হয়েছে লাঞ্ছিত মানুষ ও ভগবান। ওঁরাই রয়েছে শয়তান ও দানবের সেবায়।
পর্ব ৩
কী শুনেছ! শুনেছ কি আমি হারিয়ে গেছি। নবাব আলীবর্দির মতো দানবের অত্যাচারে ভাসমান গ্লেসিয়ারের মতো টুকরো টুকরো হ'য়ে ভেসে গেছি পাহাড়ি নদীতে। তবে জেনে রেখো, আমিও আসছি। আগ্নেয়গিরি হয়ে ফুটন্ত লাভার মতো ফিরে আসছি এই অত্যাচার অনাচার অবিচারের হিসাব কড়ায়-গন্ডায় বুঝে নিতে। আমি আসছি আমফানের থেকেও অধিক গতিতে এবার বিচার হবে অন্যভাবে।
সময় ও ঢেউ কারুর জন্য থেমে থাকে না। আজ মন ও মানুষের চাপে সেও দাঁড়িয়ে গিয়েছে। এখন তো সবই বদলে যাচ্ছে। বদলাচ্ছে চাওয়া–পাওয়া আদবকায়দা আদর–আবদার মন প্রাণ বেশভূষা। এই বদলের হাওয়ায় ভেসে যেতে হবে সকলকেই। মানুষ ও ভগবান আজ ক্লান্ত, বিধ্বস্ত, পরিশ্রান্ত।
শেষ হোক এই অস্থায়ী ভঙ্গুর অভিশপ্ত সমাজ। শেষ হোক দানব ও শয়তানের শাসন। জেগে উঠুক অভুক্ত ভগবান। তার আর যাওয়ার, পালাবার, লোকাবার জায়গা নেই। তিনি ফিরে আসুন। ফিরে এসে গড়ুক নতুন সমাজ। গন্ধরাজ, গোলাপ আর রজনিগন্ধার সুবাসে ভরে উঠুক পথ–ঘাট বাড়ি–ঘর নদী–নালা। এই বদলের আবহাওয়ায় চাই নতুন সূর্য। চাই নতুন আলোর বন্যা। চাই ভগবানের নবজাগরণ।
ছবি : গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
Leave a Reply
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Comments
Bah.....khub shundor r prashongik
- Anunay
Tue, Jun 15, 2021 12:33 PM
কবিতাটি বিষয় বস্তু ভাল তবে ফ্ল্যাট ন্যারেটিভ। আশা করব, কবি এবং সম্পাদক মণ্ডলী আমি যেটি বলতে চাইছি বুঝবেন। ধন্যবাদ।
- SWARUP MONDAL
Tue, Jun 15, 2021 10:30 PM
Thought provoking indeed. Khub bhalo lekha
- Parth P Roy
Thu, Jun 17, 2021 12:15 AM