আয়তনে ভারতের দ্বিতীয় ছোট হলেও প্রাকৃতিক ঐশ্বর্যের নিরিখে অনেকটাই বড় জায়গায় রয়েছে প্রতিবেশী রাজ্য সিকিম। দক্ষিণ ও পশ্চিম সিকিমের শান্ত, গ্রাম্য পরিবেশ, পাশাপাশি পাহাড়–উপত্যকা–হ্রদ–ঝর্না–অরণ্য–উদ্যান মিলিয়ে পূর্ব হিমালয়ের এই কাঞ্চনকন্যাকে অবাক–রূপসীর আখ্যা দেওয়াই যেতে পারে! কাঞ্চনজঙ্ঘার প্রেক্ষাপটে ছবির মতো সেজে আছে গোটা সিকিম। উজ্জ্বল কয়েকটি দ্রষ্টব্যস্থানকে জুড়ে পুজোর ছুটির সেরা ঠিকানা হতেই পারে এই রাজ্য l
গ্যাংটক
কলকাতা থেকে ট্রেন/বাস/শেয়ারের গাড়ি বা জিপে ভায়া নিউ জলপাইগুড়ি/শিলিগুড়ি, সিকিমের রাজধানী শহরে পৌঁছতে সব মিলিয়ে ১৮/২০ ঘণ্টা (মাঝখানে সামান্য বিরতি–সহ) সময় লাগে। অর্থাৎ রাতে রওনা দিয়ে পরের দিন বিকেলেই গ্যাংটক পৌঁছে সফর শুরু। তবে গোটা সিকিমের তুলনায় গ্যাংটক বেশ ঘিঞ্জি। মূল শহর থেকে মাত্র ৩ কিমি দূরে এনচে গুম্ফা, তার কাছেই মৃগ উদ্যান এবং রাজপ্রাসাদ দর্শনের মধ্য দিয়ে প্রথম দিনেই ঘোরা শুরু করা যায়।
পরের দিন সকালে জলখাবার সেরে বেরিয়ে পড়ুন ভাড়ার গাড়ি/ট্যাক্সিতে বিধানসভা ভবন, নামনাং ভিউ পয়েন্ট, রাজভবন, কটেজ ইনস্টিটিউট, ক্রাফ্ট মিউজিয়াম ঘুরে তাশি ভিউ পয়েন্ট থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার শোভা দেখতে। সন্ধেয় একটু পদব্রজে ঘোরা, স্ট্রিট ফুড পরখ করা, গান্ধী মার্গের লাল মার্কেটে কেনাকাটার জন্যে ঢুঁ। পরের দিন ৭ কিমি দূরের গণেশ টক, সেখানকার মন্দির, কাছের জুলজিক্যাল পার্ক, হনুমান টক ইত্যাদি দেখে নিন।
রাস্তায় নাস্তা সেরে চলুন ২৪ কিমি উজিয়ে বিখ্যাত রুমটেক গুম্ফা দর্শনে। ঘণ্টা খানেকের পথ হলেও চুক্তির গাড়ি মাস্ট, না হলে ফেরাটা চাপের। তৃতীয় দিন নির্দিষ্ট রাখুন ৩৭৭৪ মিটার উচ্চতার ছাঙ্গু লেক দর্শনের জন্য। ১ কিমি লম্বা, আধ কিমি চওড়া এবং ৫০ ফুট গভীর এই লেক বরফরাজ্যের মধ্যে এক অনির্বচনীয় নয়নলোভা ঐশ্বর্য। শীতে জল জমাট, চারদিকে শুধু বরফ, গরমে এই জল শোধন করে চলে আসছে গোটা গ্যাংটকে সরবরাহ হতে ।
গ্যাংটক–নাথুলা হাইওয়ে এবং সেনা বাহিনীর এলাকা হয়ে যেতে হবে চুক্তির জিপে। অনুমতি গাড়ির ড্রাইভারই ম্যানেজ করবে। ছাঙ্গুর ১৩ কিমি আগে শেরথাং থেকে রাস্তা দু’ভাগ হয়ে এগিয়েছে। একটা গেছে ৪ কিমি দূরের চীন–ভারত সীমান্ত নাথুলা পাসে। কর্তব্যরত দু’দেশের সেনাদের টহল দিতে দেখা যায়। যাওয়ার পথে পড়ে অবশ্য দ্রষ্টব্য বাবা মন্দির, শহিদ সেনানী হরভজন সিংয়ের নামে মন্দিরটি। গ্যাংটকে দু–তিন রাত কাটিয়ে পরের গন্তব্য ৩ দিন ২ রাতের জন্য প্যাকেজ ট্যুরে শুভ্রসবুজ ও ফুলেল ইয়ুমথাং।
লাচুং–ইয়ুমথাং–কাটাও
উত্তর সিকিমের এই তিন মনোলোভা দ্রষ্টব্য মিলে প্যাকেজে বেরিয়ে পড়ুন গ্যাংটক থেকে। ১৪১ কিমি দূরের ইয়ুমথাং চারপাশের বরফমোড়া উঁচু উঁচু তুষারশিখর, সিমথানু ও সিংরা হিমবাহ, তরুণী ঝর্না, ঊষ্ণ প্রস্রবণ, আলফাইন ফুলের উপত্যকা মিলে এক দুরন্ত আকর্ষণ। তিস্তার পাড় ধরে সবুজে ছাওয়া অরণ্য, পাহাড়িপথ চিরে পৌঁছতে হয় ১১৮০০ ফুট উচ্চতার এই উপত্যকায়। মঙ্গন, সিংঘিক পেরিয়ে টুং সেতু হয়ে চুংথাং, লাচুং হয়ে ১৮ কিমি এগোলেই ইয়ুমথাং। প্রথম দিন লাচুঙে রাত্রিবাস।
পরের দিন ফুলবাহারে মন ভিজিয়ে, বরফপথে কাঞ্চনজঙ্ঘার সঙ্গে চোর–পুলিশ খেলতে খেলতে সিকিমের স্বর্গ ইয়ুমথাং পৌঁছনো। গোটা এলাকা অপার ফুলের ঝাঁপি যেন!ইদানিং ইয়ুমথাঙের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে কাটাও। লাচুংয়ের মাথায় ২৪ কিমি পূর্বে ডংকিলা পাহাড়ের ওপর ১২৬৬৬ ফুট উচ্চতায় কাটাওকে চারপাশ দিয়ে ঘিরে রেকেছে নানা গিরিশিখর। রডোডেনড্রন, বরফের রাজ্যে ইয়াক, একটু দূরেই মিলিটারি চেকপোস্ট— সব মিলে এক অন্য স্বাদের কাটাও। তবে চুক্তির জিপের সঙ্গে আগে কথা বলে না রাখলে মুশকিল।
রাবাংলা
অষ্টম দিনে গ্যাংটকে ফিরে গোটা দিন বিশ্রাম, কেনাকাটা সারুন। নবম দিনের সকালে ব্রেকফাস্ট সেরেই বেরিয়ে পড়ুন ৩ ঘণ্টার পথ পেরিয়ে দক্ষিণ সিকিমের রাবাংলার উদ্দেশে। পরিবার এবং/অথবা বন্ধুবান্ধব, স্বজন–পরিজন মিলিয়ে দলটা যদি ভারী হয়, সে ক্ষেত্রে নিজেদের ঠিকঠাক মানিয়ে নেওয়া যাবে এমন একটা ভাড়ার গাড়ি করে নিলে সব দিক থেকেই লাভ। কেননা ওই গাড়িতেই পশ্চিম সিকিমের বাকি দুই দ্রষ্টব্য নামচি ও পেলিং দিব্য ঘুরে নেওয়া যাবে, প্রতিটি জায়গায় সাইট সিয়িং বা আশপাশ ঘুরে বেড়াতেও আলাদা কোনও যানবাহন লাগবে না, ফলে সময় এবং অর্থ— দুটোই সেভ।
পরন্তু নিজেদের খুশিমাফিক ঘোরাটাও হবে। ৬৮০০ ফুট উচ্চতায় মৈনাম পাহাড়ের পদতলে রাবাংলায় মেঘ–রোদ্দুর ছুঁয়ে যায় সফরসুখী মানুষগুলোর শরীর। এ ছবি অবশ্য গোটা সিকিমেই পাবেন, তবে বেশি পাবেন পশ্চিমের গ্রামে–গঞ্জে। অনেকটাই নিরালা রাবাংলার অবস্থান গ্যাংটক আর পেলিংয়ের ঠিক মাঝামাঝি। ওক, রডোডেনড্রনের সান্নিধ্যে পাহাড়ি প্রেক্ষাপটে দু–এক দিনের আনন্দ–সফরের জন্য দারুণ! ট্রেকিংয়ের শখ থাকলে একদিন সকালে বেরিয়ে ঘণ্টা পাঁচেকের পাহাড়–ভ্রমণ সেরে আসা যায় ১০৫৬০ ফুট উচ্চতার মৈনাম পাহাড়চুড়ো থেকে। ছায়াঘেরা তরুপথে হাঁটায় যেটা জরুরি তা হল, মনের আর পায়ের জোর। পথ যাতে গুলিয়ে না যায়, তার জন্যে হোটেলে জানালে পথদর্শী সঙ্গী, মানে পেশাদার গাইডও মিলে যাবে।
নামচি
এক কী দু’রাত রাবাংলায় থেকে দশম/এগারো দিনের সকালে গন্তব্য হবে দক্ষিণ সিকিমের জেলা সদর নামচি। দেখার আছে দুটি মনাস্ট্রি, হস্তশিল্প সেন্টার, রক গার্ডেন, পার্ক, বাইচুং স্টেডিয়াম, সাই ক্যাম্প, কয়েকটি ভিউ পয়েন্ট। দিনে দিনে যেটুকু ঘোরার সেরে নিয়ে চুক্তির জিপ নিয়ে চলুন গেজিং হয়ে পেলিঙের দিকে।
পেলিং
পশ্চিম সিকিমের বড় দ্রষ্টব্য পেলিং। রাবাংলা থেকে ভায়া গেজিং (পশ্চিমের সদর শহর) ৫২ কিমি পথ পাড়ি দিতে চুক্তির গাড়ি তো অপেক্ষাই করছে হোটেলের সামনে। এখানে অবশ্য ছোট্ট করে জানিয়ে রাখি, এন জে পি বা শিলিগুড়ি থেকে সরাসরি ৩১ নং জাতীয় সড়ক ধরে প্রথমেই পেলিংয়ে পৌঁছেও শুরু করা যায় এই সফরনামা। পথের দূরত্ব ১৪০ কিমি এন জে পি থেকে, ১২৬ কিমি শিলিগুড়ি থেকে।
পেলিংগামী বাস, শেয়ারের গাড়িও অবশ্যই আছে। সকাল ১০/১১টা নাগাদ রওনা দিলে বিকেল ৩/৪টের মধ্যেই পেলিং। আর রাবাংলার হোটেল থেকে জলখাবার সেরে বেরোলে পেলিংয়ের আস্তানায় ঢুকে পড়বেন মোটামুটি দুপুর ১২টার মধ্যেই। লাঞ্চ ওখানেই। বিকেলে এশিয়াখ্যাত পেমিয়াংশি মনাস্ট্রিটা একটু ঢুঁ মেরে আসুন। ১৮ শতকের ঐতিহ্য। বুদ্ধ–জমানার হাজারো সংগ্রহ— পুঁথিপত্র, ফ্রেসকো, ছবি ইত্যাদির বিশাল ভাঁড়ার সিকিমের এই প্রধান গুম্ফাটিতে।
আমার মতে, দুপুরটা নষ্ট না করে একটু আগেভাগে বেরিয়ে পড়লে পেমিয়াংশির সঙ্গে প্রথম দিনেই জুড়ে নেওয়া যায় ২৫ কিমি দূরের বিখ্যাত খেচিপেরি লেক। সাড়ে ৬ হাজার ফুট উচ্চতায় পেমিয়াংশি প্রথমে ছিল ছোট্ট একটা মন্দির। পরে বিখ্যাত গুম্ফায় পরিবর্তন! কাছেই কাঞ্চনজঙ্ঘার ঘনিষ্ঠ প্রেক্ষাপটে রয়েছে সিকিমের দ্বিতীয় প্রাচীন রাজধানী বা চোগিয়াল রাজপ্রাসাদের ধ্বংসস্তূপ, যার পোশাকি নাম র্যাবডান্টসে রুইনস— বর্তমানে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া কর্তৃক সংরক্ষিত।
প্রথম বিকেলটায় ঘণ্টা খানেক গল্পগুজবের পাশাপাশি আপার পেলিং থেকে টুকটুক করে হেঁটে ঘুরে আসতে পারেন মনকাড়া পাহাড়ি নিসর্গে, ৯ হাজার ফুট উচ্চতায় সিকিমের দ্বিতীয় প্রাচীন মনাস্ট্রি সাঙ্গাচোলিং। পেমিয়াংশির সঙ্গে দেখে নেবেন কাছাকাছি গোটা তিনেক জলপ্রপাত বা ঝর্না— রিম্বি, কাঞ্চনজঙ্ঘা ও ছাঙ্গে। সঙ্গে খেচিপেরি লেক ও র্যাবডান্টসে। পাহাড়ে–অরণ্যে খেচিপেরির চারপাশটা জাস্ট অসাধারণ! স্বচ্ছ, টলটলে, ঝকমকে জল।
বৌদ্ধগুম্ফা, মন্দির। সব মিলিয়ে মনে রাখার মতো। পবিত্র হ্রদ বলেও স্থানীয় বিশেষ খ্যাতি আছে খেচিপেরির। আর একটা খেপে সাইট সিয়িংয়ের গন্তব্য হবে ২০ কিমি পথ পেরিয়ে এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম গর্জ সেতু সিনসোর ব্রিজ। যাওয়া–আসার পথে ডেন্টাম উপত্যকা, বাজারটা একটু ঘুরে নেওয়া যায়। আরও কয়েক কিমি এগোলে উত্তরে গ্রাম, সিনসোর পেরিয়েই। এ ছাড়া রঙ্গিত নদীর নিচে একটি টিলার ওপর তাশিদিং গুম্ফাটিও পেলিঙের অবশ্য দ্রষ্টব্যের মধ্যে পড়ে।
তবে রাবাংলা থেকে পেলিং আসার পথেও এটা ঘুরে নিতে পারেন। পেলিঙের জন্যে দু/তিন রাত বরাদ্দ রাখলে ভালো। সে ক্ষেত্রে এই সফরসূচির জন্য যাওয়া–আসা নিয়ে ১৪/১৫ দিন ধরে রাখলেই হবে। পেলিং থেকে এই সফর শুরু হতে পারে, শেষও হতে পারে, সেখান থেকে শিলিগুড়ি/এন জে পি ফিরে। সেদিনই রাতের ট্রেন/বাস ধরুন ঘরে ফেরার।
রুটম্যাপ
যাওয়া: ট্রেনে/বাসে এন জে পি/শিলিগুড়ি হয়ে সিকিমের যে কোনও জনপ্রিয় স্থানে সরকারি/বেসরকারি বাস, শেয়ার বা চুক্তির জিপ/গাড়িতে অনায়াসে পৌঁছনো যায়। হাওড়া থেকে রবিবার বাদে প্রতি দুপুরে ছাড়ে শতাব্দী এক্সপ্রেস,প্রতি মঙ্গলবার রাতে এসি সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস এবং প্রতি শনিবার রাতে দীঘা–হাওড়া–এন জে পি পাহাড়িয়া এক্সপ্রেস।
শিয়ালদা থেকে রোজ রাতে দার্জিলিং মেল, কাঞ্চনকন্যা ও পদাতিক এক্সপ্রেস ছাড়াও রোজ দুপুরে ছাড়ে তিস্তা–তোর্সা এক্সপ্রেস, সন্ধ্যায় উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস, সকালে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। যে কোনও ট্রেনে নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছে সেখান থেকে যে কটা দিনের সফর, তার পুরোটার জন্যই চুক্তির গাড়ি ঠিক করে নেওয়াটা হবে কাজের সিদ্ধান্ত। এ ছাড়া শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোডে সিকিম ট্যুরিজমের এস এন টি বাস স্ট্যান্ড থেকে সরকারি বাস ছাড়াও পাবেন সিকিমের বিভিন্ন গন্তব্যের জন্য চুক্তির/শেয়ারের গাড়ি।
কলকাতার উল্টোডাঙা, ধর্মতলা থেকে কলকাতা, উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণবঙ্গ বা ভূতল পরিবহণের অনেক বাস ছাড়াও বেসরকারি লাক্সারি কোচ, ভলভো বাসেও পৌঁছনো যায় শিলিগুড়ি। দিনভর মেলে এগুলো। তবে রাতের গাড়ি ধরলে পরের দিন সকালেই উত্তরবঙ্গ থেকে রওনা দিলে বেলা থাকতে থাকতেই পৌঁছে যাওয়া যাবে নির্দিষ্ট গন্তব্যে। কেননা সিকিমের মোটামুটি সব কটি গন্তব্যেরই দূরত্ব শিলিগুড়ি থেকে বড়জোর ৪/৫ ঘণ্টার।
তবে সিকিমের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে সরকারি বাস বা শেয়ারের জিপ মিললেও সংখ্যায় তা একেবারেই নগণ্য। বেস্ট, এন জে পি/শিলিগুড়ি টু এন জে পি/শিলিগুড়ি এভাবে একটা চুক্তির গাড়ির বন্দোবস্ত করে নেওয়া, যাতে গোটা জার্নিটা নিরাপদ, নির্ঝঞ্ঝাট এবং নিশ্চিন্তের হয়। যাতায়াতের সময় দুটো দিন কমানো যায় দমদম–বাগডোগরা উড়ান ধরলে।
বাগডোগরা থেকে পেলিং, রাবাংলা, জোড়থাং সড়কপথে যুক্ত, ফলে গাড়ি পেতে অসুবিধা নেই। আর একটা তথ্য জেনে রাখুন, গ্যাংটক থেকে কপ্টার সার্ভিসে আধ ঘণ্টায় বাগডোগরা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাপনা আছে সিকিম পর্যটন উন্নয়ন নিগমের তরফে। থাকা: গ্যাংটক, রাবাংলা, নামচি, পেলিং— প্রতিটি স্পটেই রাত্রিবাসের একাধিক বন্দোবস্ত। ইয়ুমথাং প্যাকেজে আলাদা থাকা–খাওয়ার ব্যবস্থাপনা থাকে। রাবাংলায় বেসরকারি হোটেল/লজ এবং পেলিঙের আপার–মিডল–লোয়ার এলাকায় প্রচুর হোটেল। দ্বিশয্যা ঘর ৮০০–২,০০০ টাকার মধ্যে।
খানাপিনা
সিকিমের মূল খাবার বাঙালিদের মতোই— ভাত, রুটি। এ রাজ্যের মূল অধিবাসী নেপালি, ভুটিয়া, লেপচারা সেটাই পছন্দ করেন। মাংস ও ডেয়ারি প্রোডাক্টও এঁদের পছন্দের, বাঙালিরও তো তা–ই! ফলে খানাপিনার ব্যাপারে মনে হবে না অন্য রাজ্যে আছি বলে। হোটেল–রেস্তোরাঁয় চাইনিজ–কন্টিনেন্টাল ছাড়াও বাঙালিদের পছন্দের প্রায় সব পদ ও ডিশ মেলে। তবু রাজ্যের নিজস্ব কিছু পদ ট্রাই করা তো অবশ্যই দরকার।
মোমো, থুকপা এখন বাংলার প্রায় সর্বত্র অ্যাভেলেবল। আমি বলব অতুলনীয় স্বাদের কিছু সিকিমিজ আইটেমের কথা। যেমন কিনেমা কারি (সয়াবিন কারি), পাক্কু (মাটন কারি), চামব্রে (বিভিন্ন ধরনের চালে তৈরি নেপালি পোলাও), তিল কো আলু (নেপালি আলুর দম), সিদরা কো আচার (ড্রাই ফিশ পিকল), ভাতামাস কা আচার (সয়াবিন পিকল), সেল রোটি (চাল, ময়দা, দুধ, ঘি, চিনি মিশিয়ে গড়া উপাদেয় রুটি— মাংস, আলুর দম, কিনেমা কারি সহযোগে জাস্ট ফাটাফাটি), ছুরপি সুপ ও আচার (চিজ + পেঁয়াজ, মুলো, শশা, লঙ্কা, টমাটো, আদা ইত্যাদি উপকরণ মিশিয়ে বানানো), খালো ডাল।
এগুলো ট্রাই করলে মুখে লেগে থাকবে। আর স্থানীয় সুরা ছাং চাল–গম থেকে তৈরি যথেষ্ট তেজি পানীয়! বাঁশের চোঙার পাত্রে ঢেলে স্থানীয়রা অবশ্য দিব্যি মেরে দেন। তবে আপনি অতিথি। পা ফেলবেন দেখেশুনে। পানীয় পা–মাথা ধরে না টানে, মগজে রাখতে হবে। হাতের কাছে যখন বিলিতি জিনিস মেলার ব্যবস্থা আছে, আছে পানশালাও, সন্ধের পর মনখারাপের তাই কোনও চান্স নেই!
কেনাকাটা
সিকিমের রাজধানী গ্যাংটকের লাল মার্কেট বা গান্ধী রোড চত্বরে কেনাকাটার ঢালাও সুযোগ আছে, ততটা রাবাংলা বা পশ্চিম সিকিমের কোথাও নেই। তবে পেলিঙে বেশ কিছু দোকানপাট এবং ডেন্টাম গ্রামীণ বাজার বা লেগশিপের মার্কেটে স্থানীয় হস্তশিল্প বা সংগ্রহযোগ্য মেমেন্টো কিনতে পারবেন। অন্যত্রও কমবেশি দোকান–বাজার আছে, রীতিমতো দরদামও করা যায়, মাথায় রাখবেন। তবে সে কাজে দড় না হলে ঠকার ভয় থেকে যায়।
সে ক্ষেত্রে সরকারি ফিক্সড প্রাইস শপে, টিবেটিয়ান হ্যান্ডিক্রাফটসের শোরুমে ঢুকে পড়াটাই ঠিক হবে। দাম এবং গুণমানে ভরসা রাখা যায়। কিনতে পারেন শীতবস্ত্র, শাল, হাতে বোনা ভেড়ার লোমে তৈরি পোশাক, কম্বল, কার্পেট, কাঠ ও বাঁশের হস্তশিল্প, বিখ্যাত সিকিম চা, ছোকসি আসবাব, লেপচা উইভ ব্যাগ, ঘর সাজানোর জন্য নানা আকারের মেটাল বা প্রিসিয়াস স্টোনের ড্রাগন সেট ইত্যাদি।
আরও বিশদে জানতে: সিকিমের যে কোনও স্থানেই যান, প্রথমেই কলকাতায় সিকিম ট্যুরিজমের কার্যালয় থেকে যাবতীয় খুঁটিনাটি, সরকারি আস্তানা বা লজ, যানবাহনের খোঁজখবর ইত্যাদি নিয়ে আসুন। ঠিকানা: সিকিম হাউস, ৪/১ মিডলটন স্ট্রিট, কলকাতা–৭০০ ০০১। ফোন: ২২৮১৫৩২৮/৭১০৫। ওয়েবসাইট: www.sikkimtourism.org।
ছবি: অনীশ ঘোষ
Leave a Reply
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Comments