ভয়

ব্রত চক্রবর্তী

সোমেশ যখন দরজা ঠেলে তারার ঘরে এল, ঘড়িতে সন্ধে সাতটা। 
সোমেশ দেখল, তারা বিছানায় আধশোয়া শুয়ে। অল্প টিউনে ঘরে রেডিয়ো বাজছিল। তারা সুইচ অফ করছে। ঘরে অল্প আলো জ্বলছে। তবে খোলা জায়গায় রাস্তার আলো ঘরে এসে পড়েছে। 
তারা বিছানায় উঠে বসছে। সোমেশ একটা চেয়ার নিয়ে তারার বিছানার পাশে বসল। 
টাউন হলে অনু্ষ্ঠান শুরু হলে যে আলোটা হয়, সেই আলোটা এখন ঘরের ভেতর ফেললে দেখা যাবে, তারা বেশ সুন্দরী। সোমেশও বেশ। দুজনের কার কত বয়স, পরে দেখা যাবে। 
সোমেশ বলল, সন্ধেবেলায় শুয়ে যে। 
তারা বলল, অল্প জ্বর ভাব। 
— তাই?‌
পিঠের দিকে বালিশ রাখছে তারা, হ্যাঁ।
— তোমার আচমকা ফোন পেয়ে চলে এলাম। ফোনে বললে না, কী ব্যাপার?‌
— বলব, খুব জরুরি কথা। তার আগে চা খাও। 
— চা?
— হ্যাঁ।‌
খোলা দরজায় এক মহিলা। তারা গলা তুলল, ঝুনুদি, ভেতরে এসো।
খোলা দরজার মহিলা ঘরে এসে তারার বিছানার পাশে দাঁড়াল। তারা বলল, ঝুনুদি, চা দাও।
— তুমি খাবে ঝুনুদি?
— হ্যাঁ। দুকাপ। আর কে এসেছে দেখো।
— জানি। বলে তারার কানের কাছে মুখ এনে ঝুনুদি বলল, সোমেশ।
বিছানার অল্প দূরে টেবিল। সোমেশ হাত বাড়িয়ে কী একটা নেবে, মুখ তুলল, হাসল।
চা রেখে গেল ঝুনুদি। ঘরের পাখাটা চিকচিক দুই বা তিনের ঘরে। তারা পিঠের বালিশ সরিয়েছে। সোমেশ চায়ে চুমুক দিয়ে বলল, কী কথা? জরুরি?
তারা ঘরের চারপাশে দেখল। জানলায় চোখ একবার। সোমেশকে দেখল। বলল, আমি কেমন ভয় পেয়ে আছি।
— ভয়? কেন?
— উড়ো ফোন। 
— উড়ো ফোন?
— কদিন ধরে উড়ো ফোনে কারা আমায় ভয় দেখাচ্ছে। 
সোমেশ চা নিচ্ছে। তারা ওর চায়ের কাপে চুমুক রাখেনি। 
সোমেশ বলল, ভয় দেখাচ্ছে মানে? কীসের ভয়?
তারার গলা হঠাৎ ছমছম, হ্যাঁ, ভয়।
— কী বলছে?
তারা চুপ হয়ে যায়। সোমেশ ফের বলে, কী?
— বলে, তোমার সঙ্গে আমার কী সম্পর্ক। আর কেনই বা সম্পর্ক।
— আর? সোমেশ অবাক চোখে দেখে সামনে বসা তারাকে। 
— না, বলব না। ওসব বলা যায় না। 
— বলো। প্লিজ। না বললে বুঝব কী করে?
— বলে, তুমি সোমেশকে ছাড়ো। ও অনেকদিন তোমার পাশে। কেন? এরা কারা সোমেশ, যারা এইসব বলে। আর কী কড়া শাসানির গলা ওদের! উড়ো ফোনে ভয় লাগছিল।
সোমেশ স্তম্ভিত হয়ে শোনে উড়ো ফোনের সব কথা। বলে, বুঝছি না কারা এরকম বদমায়েশি শুরু করল। তারা, ফোনের কথা আর কিছু?
তারা একটু সময় নেয়। সোমেশকে দেখে। বলে, আছে। একই দিনে ছটা-আটটা উড়ো ফোন। বলে, সোমেশকে ছেড়ে তুমি অন্য কাউকে নাও। আমরা লোক দেব। এইসব খারাপ কথা। আর হিরজা বোলা।
— মানে?
— মানে বলল ওদের কথা না শুনলে ক্ষতি করে দেবে। ওরা খুব রাগি সোমেশ। বাড়ির কাউকে বলিনি। এই তোমাকে। আর শোনো—
— কী?
— ওরা লোক ভালো নয়। তুমি চুপ থাকবে। 
সোমেশ চুপ হয়ে যায়। চায়ের কাপ সরায়। মুখ তুলে দেখে, বোগেনভলিয়ার ডঁাটি ধরে এক ছায়া থিরথির সারা ঘরে। ঘরময়।

তারার বাড়ি থেকে ফেরার পর পুরো দুদিন। এর মধ্যে সোমেশ বেশ কয়েকবার ফোনে ধরেছে তারাকে। না, ভয় দেখানো উড়ো ফোন আর আসেনি। তবু সোমেশের চিন্তা যায় না। সোমেশ গম্ভীর থাকে। সোমেশ ভাবে, কারা এ কাজ করতে পারে! তার আর তারার সম্পর্কে কাদের এত রাগ হল!
সোমেশ কাউকে সন্দেহ করে না। তবু সোমেশ সন্দেহে থাকে। চেনা মেলামেশার কেউ তার আর তারার? না বদ লোকজন? নিজের মোবাইল বাজলেই হাত বাড়াতে গিয়ে হাত কঁাপে সোমেশের।
রবিবার। অফিস নেই সোমেশের। রবিবার সন্ধেটা বরাদ্দ তারাদের বাড়ি। তারার ঘর। কিন্তু সোমেশ ভাবল, আজ থাক। ও-বাড়ি থেকে ফোন এলে দেখা যাবে। 
চা দুবার হয়ে গেছে সকালে। শ্রাবণ শেষ। ভাদ্রের ঝঁা রোদ্দুরে সারা বাগান। খর লাগছে গাছপালা, সব কিছু। কিন্তু খর-এর পাশে অন্য একটা আভা লেগেছে সব কিছুতে। রোদের বাগানে সোমেশ কিছুক্ষণ। কদিন ধরে একটা বই পড়ছে সোমেশ। আগাথা ক্রিস্টির দশ পুতুল। টেন ডলস। টেবিলে পাশাপাশি দশটা পুতুল সাজানো। বাড়িটায় একটা করে খুন হয়ে যায়। আর টেবিলে একটা করে পুতুল কমে যায়। কঁাধে ব্যাগ হাতে বেঁটে ছাতা নিয়ে এরকুল পোয়ারো খর্বকায় মহিলা এলেন তদন্ত করতে। ক্রাইম ফিকশন পছন্দ সোমেশের। আর্থার কোনান ডয়েল পড়ছিল একসময়। ডয়েল গোয়েন্দা শার্লক হোমসকে মেরে ফেলল। পাঠকরা বলল, হোমস নেই ডয়েল, তোমার লেখা আর পড়ব না। ওকে ফেরাও। আর্থার লিখলেন, রিটার্ন অব শার্লক হোমস। হোমস ফিরলেন।
টেবিলে দুটো কবিতার বই। দুটো গদ্যের। অখণ্ড গীতবিতান। মনে পড়ল তারা কী সুন্দর গান করে। ওর মা-ও, গীতবিতানে চোখ যেতেই মনে পড়ল সোমেশের। 
টেন ডলস নিয়ে পাতা চারেক পড়েছে সোমেশ। ফোন বাজল।
— বলছি। সোমেশ।
ও-প্রান্তের গলা কেমন ভারী আর কর্কশ। সেই গলায় বলল, তারার সঙ্গে তোমার কী সম্পর্ক?
সোমেশ থমকায়, সম্পর্ক। হ্যাঁ আছে। আমরা দুজন খুব বন্ধু। 
ভারী কর্কশ গলা, তারাকে তুমি ছেড়ে দাও। 
— এর মানে?
— যা বলছি। আমরা অনেকজন। ধনী ঘরের ওই সুন্দরী মেয়েকে তুমি ছেড়ে দাও।  ‌
সোমেশ রাগল, এর মানে? ‌আর হ্যাঁ, তার মানে আপনারাই ফোনে তারাকে ভয় দেখিয়েছেন।
— মানে কিছু নেই। আর হ্যঁা, তোমার ওই চঁাদ তারাকে আমরাই ভয় দেখিয়েছি।
— রাবিশ। অল স্টুপিড। কী চাইছেন?
— আমাদের কথা শোনো সোমেশ। 
— কী কথা?
— দিনকাল ভালো নয় সোমেশ, ও-প্রান্তে খুব হাসি, তারাকে তুমি ছেড়ে দাও। চতুর্দিকে কী সব হচ্ছে জানো তো।
— ছেড়ে দেব?
— হ্যাঁ। তারার ওখানে আমরা লোক দিয়ে দেব। তুমি ফঁাকা হয়ে যাবে।
রাখতে গিয়ে সোমেশ থামল, আর কবার এরকম ফোন করবেন? কে আপনারা?
— বলা যাবে না কে আমরা। তবে সোমেশ চৌধুরি, আমাদের কথা না শুনলে তোমাদের ক্ষতি নিতে হবে। তারা সান্যালকে তুমি ছেড়ে দাও।
সোমেশ ফোন কেটে দিল। মনটা খারাপ হয়ে গেল। সকালটাও। বোগেনভলিয়ার ডঁাটি ধরে একটা ভয়ও যেন ঘিরল সোমেশকে। তারার গলায় আশ্চর্য সুন্দর গান। ঝাড় লণ্ঠনের অনেক আলোর ছটা তারায়। এরা কারা? আড় চোখে টেবিলে রাখা টেলিফোনটা দেখল সোমেশ। তার মানে এরা আবার ফোন করবে। 

সোমেশের আশঙ্কাই সত্যি। এর পর পর পর উড়ো ফোন। উড়ো মানে হুমকি ফোন। কথা শুনতে হবে না হলে ক্ষতি নিতে হবে। সোমেশ খেয়াল করে পরের পর ফোনে ভাষা বদলে যাচ্ছে ওদের। খুব খারাপ কথা আসছে ফোনে। ওর আর তারার সম্পর্ক নিয়ে নানা খারাপ কথা। গালিগালাজও। সোমেশ ভেবেই পায় না কারা? এদের কি কেউ রিক্রুট করেছে? কাজে লাগিয়েছে ওর আর তারার সম্পর্ক ভাঙার জন্য। সোমেশ খেয়াল করে ওর আর তারার সম্পর্ক ছ-‌বছরের। দু-বাড়ির লোকজন জানে এসব। তবে?‌ বাইরের কার বা কাদের চোখ লাগল এতে! সোমেশ মনে করে অল্প কদিন আগে দুটো ভারী অনুষ্ঠানে তারা গান করেছে। সোমেশ পাশে ছিল। সোমেশ কবিতাও বলেছে। এতে কী হয়! কার রাগ হতে পারে! আর ওদের ভাষা এত লিপা ভালগার সোমেশের কান জ্বলে যায়। উড়ো ফোন তারার কাছে আরও আসছে কিনা জানতে হবে। সোমেশের জায়গায় তারার পাশে অন্য লোক দেবে এর মানে কী হল। সন্দেহ খুব খারাপ জিনিস। সোমেশের একবার মনে হয় ওর বাড়িতে কারুর গা নেই তারা সোমেশ সম্পর্কে, তারাদের বাড়ি থেকে কেউ রিক্রুট করেনি তো ওদের?
আজ বাড়ি থেকে বেরিয়ে অফিস যাবার পথে ঝঞ্ঝাটে পড়ল সোমেশ। একটা নয়, দুটো-তিনটে। পরপর। টের পেল উড়ো ফোনের লোকজন রাস্তায় নেমেছে। সামনে চলে আসছে।
প্রথম ঝঞ্ঝাট স্কুটার। গলির মোড়ে পাশের দোকান থেকে যখন সিগারেট নিচ্ছে, রোজই নয়, মোড় পেরলেই বড়ো রাস্তা, একটা ঘটনা ঘটল। একটা স্কুটার এসে দঁাড়াল সোমেশের পাশে। স্কুটারে দুজন। অচেনা সোমেশের। স্কুটারেই বসে দুজন, পা দেয়নি জমিতে। 
দুজনেই খুব হাসছে, সোমেশ দেখল। একজন বলল, জয় তারা, দ্বিতীয়জন বলল, আমাদের কথা শোনা হচ্ছে না কেন?
সোমেশের অবাক গলা, কোন কথা?
দুজনের একজন বলল, ফোনে তো বলা হয়েছে। তারাকে ছাড়তে হবে, না হলে ক্ষতি নিতে হবে। অন্যজন বলল, তারার পাশে তুমি নয়, আমরা লোক দিয়ে দেব। 
সোমেশ স্তম্ভিত। চুপ চেয়ে দেখে। সিগারেট জ্বালিয়েছে, টান দিতে ভুলে যায়। স্কুটার বেরিয়ে যায়।
দ্বিতীয় ঘটনাটা হল বাসে ওঠার মুখে কঁাধে কার চাপড়। রাইট শোলডারে। সোমেশ চমকে ঘাড় ঘোরাতেই শোনে চাপা গলা কার, তারা কে? সোমেশ চমকায়। 
কেউ! না, কই! পরপর লোক উঠছে বাসে। বুঝে উঠতে পারে না কে বলল। কে? তারা কে?
অফিসে সেকশন অফিসারের ঘরে আসতেই অফিসার বললেন, সোমেশ প্লিজ বোসো। একটা কথা আছে। চেয়ারে বসে সোমেশ। কথা। কী?
— একটা ফোন এসেছিল তোমার নামে এ-ঘরে। কী সব বলল। অনেক এলোমেলো কথা সব। আর হ্যঁা, তোমার বান্ধবী তারাকে নিয়ে কিছু কথা। এরা কারা সোমেশ?
— জানি না।
— বলল যে তারাকে তুমি যেন ছেড়ে দাও। ওরা চাইছে না তুমি তারাকে নাও। 
সোমেশ চমকায়।

তারা বলল, সোমেশ কেমন গম্ভীর লাগছে আজ আর অন্যমনস্ক। পেলিং। কেমন পেল চেহারা! 
সোমেশ হাসল, তা হবে। 
— অফিসফেরত?
— হ্যাঁ।
— না বলো কেন এরকম লাগছে।
— পরে। বলছি।
সন্ধ্যার আলোজ্বলা ঘর। সোমেশ চেয়ারে বসল। আজ তারার গায়ে জ্বর নেই। বেশ ঝকঝকে চেহারা। বিছানায় একটা বই উলটে রাখা। পড়ছিল হয়তো। সোমেশ ফোন করেছিল, আসবে। 
তারা বলল, তুমি বসো। চা-খাবার নিয়ে আসি।
— শুধু চা। খাবার নয়। 
— টিভিটা দেব?
— না।
সোমেশ হঠাৎ বলল, বিছানায় ওটা কী বই?
তারা ঠোঁট তুলল, জানি না।
চায়ে চুমুক দিয়ে সোমেশ বলল, প্রথমটা বুঝতে পারিনি। এবার আমার কেমন ভয় লাগছে।    ‌
তারা চেয়ারে বসে, মুখ তুলল, কাকে ভয়?
— উড়ো ফোনের লোকজনকে। ওরা এবার খুব ভয় দেখাচ্ছে। তোমাকে। এবার আমায়। কেবল বলছে ওদের কথা শুনতে। যেটা নিয়ে ভাবি না সেটা নিয়ে ভাবতে বলছে।
— কী? আমারটা জানি। তোমায় কী বলছে?
— তোমার-আমার সম্পর্ক। বলছে—। সোমেশ থেমে যায়।
— কী হল?
— না, থাক।
— না, বলো।
— বলছে তোমাকে যেন ছেড়ে দিই। না হলে ওরা আমাদের ক্ষতি করে দেবে। আর সব খুব খারাপ কথা। ‌টকিং বিটারসি অ্যান্ড আপ সেটিং। তারা, ওরা খুব ডেঞ্জারাস। ভায়োলেন্ট। 
তারা চেয়ে দেখে সোমেশকে। 
সোমেশ গড়গড় করে তারার কাছে কদিনের সব বলে যায়। উড়ো ফোন। ফোনের সব কথাবার্তা। পানের দোকানের সামনে স্কুটার, স্কুটারে ধমক ঠাট্টা। বাসে ওঠার মুখে কঁাধে চাপড়। অফিসে সেকশন অফিসারের ঘরে তারাকে নিয়ে কথা। আরও যা কিছু। সোমেশ বলে, কিন্তু যা বুঝছি ওরা আরও বাড়বে। একটা ভয়ানক কিছু করতে চাইবে। 
সোমেশ তারার দিকে চেয়ে না চেয়ে বলে, জানি না ওরা কারা, যারা ভয় দেখায়। আমি তো ভেবে পাই না কী যায় আসে ওদের তারার সঙ্গে আমার একটা সম্পর্ক রয়েছে তা নিয়ে। তাও ছবছর পর। সোমেশ দমে যায়। একটা ফিকে বেদনাও রিনরিন।
সোমেশ ভাবে, কাদের বিরাগভাজন হঠাৎ করে ও আর তারা নামের এই মেয়ে। না, খেয়াল করে কোনো ঘটনা নেই। কিছু না। 
স্কুটারে কারা‌? বাসে ওঠার মুখে কঁাধে চাপড় কার? অফিসে সেকশন অফিসারের ঘরে ফোন কার?
কারা উড়ো ফোনে ধমকায় ওকে আর তারাকে। ভয় দেখায়। আঙুল তুলে বলে বি নেকলিজেবল তারার কাছে না হলে ওরা ক্ষতি করবে দুজনের। সোমেশ ভেবে যাচ্ছে পরপর।
সোমেশ ঘেমে ওঠে।
সোমেশ সম্পর্ক ভাবে না। জানে এটুকুই সম্পর্ক রয়েছে ওর আর তারার। একটা সম্পর্ক। তা কার বা কাদের অসুবিধা তৈরি করল। 
পাখাটা তিরতির। সোমেশ চা শেষ করেছে। ঠিক পাশের চেয়ারে বসে তারা। সোমেশ চোখ ঘুরিয়ে ঘরের সব কিছুতে চোখ রাখে। আলোজ্বলা সন্ধের ঘরে। টেবিলে ন্যারোল্যাকের প্যাকেট। দেয়ালে দুটো ছবি। সোফাসেট। টিভি। রেডিয়ো। একটা টুলের ওপর রাখা হারমোনিয়াম। চোখ সরাতেই বোগেনভলিয়ার ডঁাটি ধরে একটা ভয় ধরে নিচ্ছে সোমেশকে। নিল।
সোমেশ ঝোঁকে তারার দিকে, উড়ো ফোন আর আসে তোমার কাছে?
— আসছে। তারার গলা। এখন তো বুঝে গেছি। দুকথা বলে ফোন কেটে দিই। তবে এক মহিলা। গতকাল সকালে। তারা চুপ হয়ে যায়। 
— কী বলল?
তারা চোখ সরায়। সে অনেক কথা। আমি খুব সুন্দরী। খুব ভালো গাছ করি। তার পাশে এনি ওয়ান ইনসিগনিফিকেন্ট। আমি যেন ছেড়ে দিই তাকে। এইসব অফেনসিভ হাবিজাবি কথা। চোখ জল করে দেয়। 
— আর?
— আর বললেন ওরা আমাকে নিয়ে কিছু ভাবছেন। গেসিং। প্ল্যানিং। 
সোমেশ অবাক চেয়ে দেখে তারাকে, তুমি কী বললে?
তারার চাপা গলা। ওই দুটো অনুষ্ঠান। টিভির অনু্ষ্ঠান। সব বললেন মহিলা। আর তোমার কথা। পাশে কে! কেন! এইসব।
তারা রাগল এবার। আমার মনে হয় এই এরাই। উড়ো ফোনে ভয় দেখাচ্ছে আমাদের দুজনকে। সম্পর্ক চাইছে না দুজনের। সব ওই উড়ো ফোনের মহিলার লোকজন বলে মনে হয়।
সোমেশ তারার পাশে, বলে, বলছে, কথা না শুনলে ক্ষতি করে দেবে। এই তো। বলছে তোমার পাশে আমি নয় আর। ওরা অন্য লোক দেবে। 
— আমাকে লোভ দেখাচ্ছে। তারার গলা। 
— আমাকে ধাক্কায় ফেলছে। সোমেশের গলা। 
সোমেশ বলল, পেলটক লাগছে নিজেকে। হতাশ। ফ্রমলেশ। জানি দিস টাইম ইজ ডেঞ্জারাস। টকিং ডেঞ্জারাসলি। তারা আয়াম অ্যাফ্রেড। চারপাশে যা হচ্ছে সব। আর উড়ো ওরা। কেমন জোর চলে যাচ্ছে। 
— এই তুমি থামো। তারা হঠাৎ যেন ধমকায় সোমেশকে। প্লিজ টকিং স্টপ।
সোমেশ চুপ করে যায়, থামব। থামতে বলছ। থেমেই যাব?
— হ্যাঁ।
তারা কিছুক্ষণ চুপ চেয়ে দেখে সোমেশকে। কিছু বলে না। সোমেশ অবাক হয়ে দেখে চেয়ার ছেড়ে উঠে তারা কখন ওর কঁাধে হেলান নিয়ে দঁাড়িয়েছে। তারা ওর মাথার চুলের ভেতর আঙুল চালিয়ে চালিয়ে বিলি কাটতে লেগেছে। ‌

ছবি: গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

Comments

  • bes sundor...
    - sourav manna

    Sat, Jun 12, 2021 10:44 AM

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *