জামাইষষ্ঠী ওরফে শ্বশুরনিধন দিবস
সমীরকুমার ঘোষ
প্রবাদটা এমনি গড়ে ওঠেনি। কারো পৌষ মাস মানেই কারো সর্বনাশ। জামাইষষ্ঠী তারই উৎকৃষ্ট উদাহরণ। জামাতা বাবাজীবন বিয়েতে খাট-বিছানা, আলমারি-ড্রেসিংটেবিল, ঘড়ি-আংটি থেকে নগদ, মোটরবাইক ইত্যাদি যাবতীয় হাতিয়ে শ্বশুরকে ট্যাঁকখালির জমিদার বানিয়ে দেয়। আর জলজ্যান্ত মেয়েটাকে নেওয়ার কথা তো বাদই দিলাম। তাতেও রেহাই নেই। পবিত্রতার নামাবলী জড়িয়ে জামাইষষ্ঠী নামক আপদটি ফি বছর আসে। শাশুড়ি ঠাকরুন নিজের কত্তাটিকে দেউলে করে জামাইয়ের শুভকামনা করেন। শ্বশুরের ঘাড় ভেঙে দিনভর চলে জামাইয়ের নেত্ত। জামাইষষ্ঠী না বলে তাই এটিকে শ্বশুরনিধন দিবস বললেই খাসা মানাত!
একসময় জামাতা বাবাজীবনরা মিষ্টির হাঁড়ি হাতে, ফিনফিনে সাদা মসলিনের পাঞ্জাবি আর মালকোচা মারা ধুতি পরে শ্বশুরঘরে রওনা হত। এখন প্যান্ট-শার্ট পরে ওলা-উবের চড়ে হাজির হয়। তারপর শুধু চর্ব্য, চোষ্য ভোজন-ভজন। আম-কাঁঠাল, ইলিশ-রুই, কচিপাঁঠা, সন্দেশ-রসগোল্লা, আইসক্রিম— কনভয়ের মতো আসতে থাকে। রবি ঠাকুর লিখছেন, ‘ডাক পড়েছে অধ্যাপকের/ জামাইষষ্ঠী পার্বণে—/ খাওয়ায় তাকে যত্ন করে/ শাশুড়ি আর চার বোনে।’ আগে তো জামাইয়ের বাড়িতে ষষ্ঠীর তত্ত্ব হিসাবে আম-কাঁঠাল ইত্যাদি ঝাঁকায় করে পাঠাতে হত। এখনও হয়ত গাঁয়ের দিকে চল আছে।
খাওয়া ছাড়া ষষ্ঠীতে জামা-কাপড় ইত্যাদি প্রাপ্তিযোগও হয়। ‘নৌকাডুবি’-তে রবি ঠাকুর তার নমুনা পেশ করেছেন। কমলা বাপের বাড়ি থেকে চাকর উমেশকে নিয়ে আসে। ক্ষেমংকরী হেসে উমেশকে জিজ্ঞাসা করে, ‘তোর এই বাহারে কাপড়খানা তোকে কে দিল রে?’ উমেশ কমলাকে দেখিয়ে বলে, ‘মা দিয়াছেন।’ ক্ষেমংকরী কমলার দিকে চেয়ে পরিহাস করে বলে, ‘আমি বলি, উমেশ বুঝি ওর শাশুড়ির কাছ হইতে জামাইষষ্ঠী পাইয়াছে।’
নীলদর্পণ–খ্যাত দীনবন্ধু মিত্র ‘জামাইবারিক’ নামে একটা অসাধারণ গল্প লিখেছেন। এছাড়াও অনেকটা ঈশ্বর গুপ্তের ধাঁচে ‘জামাই-ষষ্ঠী’ নামে দুটো কবিতাও লিখেছিলেন। বেশ বড়ো। সবিস্তার বর্ণনা রয়েছে। পাঠক নাগালে পেলে চেখে দেখতে পারেন। ‘প্রথম বারের’ কবিতাটির একঝলক—
‘জ্যোষ্টি মাসে ষষ্ঠীবুড়ী যষ্টি করি করে।
জামাই জামাই বলি ফেরে ঘরে ঘরে।।
পররে পোষাক সব হওরে ত্বরিত।
চলরে শ্বশুরবাড়ী আমার সহিত।।
নব-বিবাহিত যত ছিল যুবাচয়।
দেবীকে আগতা দেখি প্রফুল্ল–হৃদয়।।...
পরিল ঢাকাই ধুতি উড়ানি উড়িল।
কামিজ পিরান পেংগি কত গায় দিল।।
কারপেট সুজ পায়, আঙ্গুলে অঙ্গুরী।
কাটিয়া বিলাতি সিঁতি বাড়ায় মাধুরী।।
ঘড়ির শিকল গলে, ট্যাঁকে থাকে ঘড়ি।
কোমরে সোনার বিছা, হাতে হেম ছড়ি।।...
সলজ্জ শ্বশুরবাড়ী খায় লজ্জা মনে।
মাথা খাও, খাও খাও, বলে রামাগণে।।...
অধুনা প্রস্তুত অন্ন, পঞ্চাশ ব্যঞ্জন।
চর্ব্ব্য চোষ্য লেহ্য পেয় করেন ভোজন।।’
‘দ্বিতীয় বারের’ কবিতায় দীনবন্ধু লিখছেন—
‘আইল সুখের ষষ্ঠী সুখ জ্যৈষ্ঠ মাসে।
ধাইল জামাই সব শ্বশুর-আবাসে।।...
দু তিন ছেলের বাপ যে সব জামাই
তারাও উঠেছে ক্ষেপে, বলে যাই যাই।।...
নানারূপ আলাপনে নিশি হয় শেষ
যে হয় জামাই সেই জানে সবিশেষ।।
দিনেক দুদিন থাকে মথুরা নগরে
বিদায়ি বসন লয়ে যায় নিজ ঘরে।।
মনসুখে প্রণমিয়া ষষ্ঠীর চরণ
রচিলেন দীনবন্ধু সুখের পার্ব্বণ।।’
রাজত্ব আর রাজকন্যার তত্ত্বটা সেই সত্যযুগ থেকে চলে আসছে। শিবকেই দেখুন! জাতে মাতাল, তালে ঠিক। নিজের চালচুলো নেই, এদিকে দেখে দেখে বিয়ে করল একেবারে সুন্দরী রাজকন্যেকে। শ্বশুরবাড়ি যেত সেজেগুজে। গানে প্রমাণ— ‘হৈমবতী শিবসোহাগী রাজার নন্দিনী/ তার কপালে পাগলাভোলা লোকে কী কবে/ সাজতে হবে শিব তোমারে সাজতে হবে।’ এখন তো এক কন্যার পরিবার। কম্পু পরিভাষায় ‘বাই ডিফল্ট’ সব জামাইয়ের। এ স্বাদের ভাগ হয় না-র মতো।
কাজী নজরুল ‘দাড়িবিলাপ’-এ লিখেছেন, ‘বাঙালির দাড়ি, বাঙালির শৌর্য সাথে গিয়াছে গো ছাড়ি।’ শুধু দাড়ি নয়, বাঙালির আহারও তাকে ছেড়ে গিয়েছে! কোলেস্টেরল, ইউরিক অ্যাসিড, অম্ল–অজীর্ণ আতঙ্কে সে সদা-কম্পপান। পাঁঠার মাংসের নাম শুনলে আঁতকে ওঠে। পেটে জিনট্যাক, র্যানটাক, জেলুসিলের জায়গা রেখে তবেই খেতে হয়। অথচ উনিশ শতকের শোভাবাজার রাজবাড়ির অন্দরমহলে উঁকি দিন। দেখবেন, জামাইষষ্ঠীর দিন ঠাকুরদালানে খাওয়ার এলাহি প্রতিযোগিতা চলছে। জামাইরা আবার পেশাদার ভোজপুরি খাইয়ে বামুন ভাড়া করে আনত। তাদের ফর্সা দশাসই চেহারা। সিনেমায় যেমন মারামারির সময় জামা খুলে ফেলাটাই নিয়ম, তেমনি খাইয়েরাও বসত আদুল গায়ে। আস্ত পাঁঠা খাওয়ার পরও অনেকের পেটে জায়গা থাকত। রাজা কালীকৃষ্ণ দেব বিজয়ীর গলায় সোনার মেডেল ছুঁড়ে দিতেন। খাবারের থালা এত বড়ো হত এবং তার চারদিকে নবগ্রহের মতো এত বাটির ভিড় হত যে, সঙ্গে আঁকসি দেওয়া হত, দূর থেকে বাটি টেনে আনার জন্য। অবশ্য, জামাইকে, বিশেষ করে নতুন হলে, লজ্জা লজ্জা ভাব দেখানোটা ছিল দস্তুর। আর শাশুড়ি ঠাকরুনের পাশে বসে পাখার বাতাস করা এবং ‘এটা খাও, ওটা খাও, নইলে আমার মাথা খাও’ বা ‘কিছুই তো খেলে না’ জাতীয় উপরোধ-অনুযোগ তো থাকতই।
জামাইকে ঠকানোও শালা-শালিদের কাছে একটা শিল্প ছিল। ব্লটিং পেপারের দই, নুনের নারকেল কোরা, কাগজঠাসা শিঙাড়া বা মিষ্টি— কত কী তৈরি হত! ভাতের ভেতরে রেখে দেওয়া বাটি। ভাত ভাঙতে গিয়েই বোকা বনতে হত জামাইকে। এমনকি শোলা দিয়ে ভাত বানানোর ঘটনাও আছে। জামাই ভাত ভাঙতে যাবে এমন সময় টেবিলফ্যান চালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বোঝো কাণ্ড! শোনা যায়, বাঙালির বিশ্বনন্দিত জলভরা তালশাঁসের উৎপত্তি নাকি এই জামাইষষ্ঠী উপলক্ষেই। তেলিনিপাড়ার জমিদারগিন্নির অনুরোধে চন্দননগরের সূর্য মোদকের অবদান। সন্দেশে কামড় দিতেই সুগন্ধী গোলাপজলে গরদের পাঞ্জাবি ভিজে জামাতা বাবাজীবন বুদ্ধু বনে যান। আলফান্সো আমও হত জামাই-ঠকানো উপকরণ। রাজেন মল্লিকের মার্বেল প্যালেসে আলফান্সো আম-আমোদের কথা শোনা যায়। জামাইয়ের সামনে আম কাটতেই নাকি আমের পেটের ভেতর থেকে এক ধরনের ফড়িং ফুড়ুত করে উড়ে যেত। জামাইয়ের ভড়কে যাওয়া দেখে হেসে কুটিপাটি হত বাড়ির লোকজন।
জামাইদের প্রাপ্তিযোগের কারণেই হয়ত, তাদের নিয়ে অনেক প্রবাদ–প্রবচন গড়ে উঠেছে। তার একটি হল— ‘জন, জামাই, ভাগনা/ তিন নয় আপনা।’ কাজী নজরুল লিখছেন, ‘জুতো জামাই সার যার, জামাই সে মহাকাল’। সে জামাই আপনার হোক, না হোক, যে দেশে যে রীতি! জামাইষষ্ঠীর দিন শ্বশুরমশাইকে বুকে হাফশুল দিয়ে জামাইকে নেমতন্ন করতে হবে। দরকার হলে পিএফ, গ্র্যাচুইটিও ভাঙাতে হবে। না হলে গিন্নির মুখভার। আর আয়োজন তো একা জামাইয়ের জন্য হয় না, বাড়ির সবাই তাতে শামিল। তাই ‘জামাইয়ের নামে মারে হাঁস/ গুষ্টি সুদ্ধু খায় শাঁস।’
জামাইষষ্ঠীর প্রচলন নির্ঘাত কোনো জামাইয়েরই মস্তিষ্কপ্রসূত। তবে কথায় বলে, ঘুঁটে পোড়ে গোবর হাসে। মজা-লোটা জামাই একটা সময়ে শ্বশুর হয়। তখন তার মনে হয়, এ যুগে এসব সেকেলে প্রথা তুলে দেওয়াই উচিত।
একটা জামাই-বিতারণী প্যাঁচ অবশ্য গোপালভাঁড় শিখিয়েছিলেন। বিপজ্জনক। মনে আছে? সেই যে, গোপালের জামাইকে সন্ধের মুখে চোরের গপ্পো বলে বাইরের অন্ধকার ঘরে বসিয়ে রাখা এবং ভিতরে গিয়ে গিন্নিকে গাছ থেকে লেবু পেড়ে আনতে বলা। তারপর, শাশুড়িকে চোর ভেবে জামাইয়ের জাপটে ধরা এবং পূর্ব পরিকল্পনা মতো গোপালের লন্ঠন হাতে অকুস্থলে আসা। সেই দুর্ঘটনার পর জামাই সেই যে শ্বশুরবাড়ি ছাড়া হয়, আর ওমুখো হয় না। গোপালগিন্নিও জামাইকে আনার নাম মুখে আনে না।
একটা প্রবাদি পরামর্শ, ‘বিয়ে করবে দূরে, বাজার করবে ঘুরে’। মানে শ্বশুরবাড়ি দূরে হলে যাতায়াত সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল। ফলে একবার গিয়ে পড়লে বেশ কয়েকদিন মৌজে কাটানো যায়। এমনই এক ঘটনা নিয়ে জামাই-বিতারণের আরেক মজার কাহিনী আছে। যা থেকে ‘প্রহারেণ ধনঞ্জয়’ কথাটার উৎপত্তি। চার জামাই কিছুতেই শ্বশুরবাড়ি থেকে নড়ে না। তিনজনকে খাওয়া কমিয়ে, অপমান করে তাড়ানো গেলেও, চতুর্থজন ধনঞ্জয়ের ক্ষেত্রে কোনো দাওয়াই কাজ করে না। শেষে মেরে তাড়াতে হয়।
অতএব হে জামাতাকুল রয়েসয়ে, বুঝেশুনে শ্বশুরনিধনে মাতুন। তবে গত বছর এবং এ বছর করোনা দেবতা (দেবীও হতে পারে) শ্বশুরদের দিকে মুখ তুলে চেয়েছে। থালায় খাবার সাজিয়ে শ্বশুরমশাই জামাইকে মোবাইলে ভিডিও কল করছে। তারপর যেমন আমরা পুজো দেওয়ার পর তাবৎ ভোজ্য আত্মসাৎ করি, শ্বশুরের পোয়াবারো। মুখে দুঃখপ্রকাশ আর মনে মনে বলছে— দেখ, কেমন লাগে!
জামাইষষ্ঠী কি আদৌ জামাইদের?
সুমন কল্যাণ চক্রবর্তী
বাঙালি চিরকালই ভোজন রসিক। আর ‘বাঙালি-জামাই-ষষ্ঠী’ মানে পাত পেড়ে খাওয়া-দাওয়া। শ্বশুরমশাই দরাজ হাতে বাজার করে আনবেন আর শাশুড়ি পঞ্চব্যঞ্জনের আয়োজন করবেন কেবলমাত্র তাদের জামাই-এর জন্য। একদম শুরুতে জামাই-এর পাতে গরম ভাতে ঘি ও ভাজাভুজি, সঙ্গে ডাল। তারপর আস্তে আস্তে ‘রুই মাছের কালিয়া’, ‘ইলিশ সর্ষে-ভাপা’, ‘গলদা চিংড়ির মালাইকারি’, ‘কচি পাঁঠার মাংসের ঝোল’ ইত্যাদির সমাগম হতেই থাকবে। শেষ পাতে কয়েক প্রকারের সুস্বাদু মিষ্টি এবং মিষ্টি দই-এর আয়োজন অবশ্যই থাকবে। যেহেতু ভরা পেটে ফল খাওয়াটা স্বাস্থ্যকর, তাই শাশুড়ি তার জামাইকে আম-কাঁঠাল-লিচু খেতে দিতে ভুল করেন না। অনেকের ধারণা জামাইষষ্ঠী মানে ‘জামাই’-দের অনুষ্ঠান; কিন্তু জামাইষষ্ঠী আদৌ তা নয়। জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লা ষষ্ঠী তিথিতে যে অনুষ্ঠান ও পূজা অর্চনা করা হয়, তাকে সাধারণত জামাইষষ্ঠীর আখ্যা দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়। শাস্ত্র মতে এই দিনটি আদতে ‘জামাইদের’ জন্য নয়। বিবাহিত মহিলাদের কাছ থেকে এই অনুষ্ঠানকে একপ্রকার হাইজ্যাক করে নিয়ে নিজের বানিয়ে ফেলেছেন জামাইবাবাজীরা। এই ‘জামাইষষ্ঠীর’ আক্ষরিক অর্থ কী? কিভাবেই বা এই দিনটিতে জামাইরা গভীরভাবে জড়িয়ে পড়লেন?— রইল তার কিছু সংক্ষিপ্ত বিবৃতি।
■ ‘জামাই’ তো আপন হয় না, তাহলে জামাই-এর জন্য এত আয়োজন কেন? ইতিহাস ও বাংলার লোকাচার বলছে জামাই-আদর ‘ফাউ’ ছাড়া আর কিছুই নয়। ‘ছিল সন্তানের মঙ্গলকামনার ষষ্ঠী (পুজো)’, হঠাৎ ‘জামাই’ শব্দটি জুড়ে হয়ে গেল ‘জামাইষষ্ঠী’ নামক একপ্রকার বিশেষ অনুষ্ঠান। শোনা যায়, ‘জামি’ শব্দটি থেকে সম্ভবতঃ জামাই শব্দের সৃষ্টি, যার অর্থ সধবা বধূ বা কূলবধূ বা এয়োস্ত্রী; আর জামির বহুবচন ‘জাময়ঃ’। অনেকে মনে করেন, ‘জামাই’ শব্দটি সংস্কৃত ‘জামাতা’ আর ফার্সী ‘দামাদ’ শব্দ থেকেই এসেছে, যার অর্থ ‘মেয়ের স্বামী’। বাঙালি হিন্দু সমাজের প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, ‘মা ষষ্ঠীদেবী’ হলেন একজন লৌকিক দেবী, যার কৃপায় নিঃসন্তান সন্তানবতী হয় এবং তিনিই মাতৃকারূপে পূজিতা হয়ে সমাজের মঙ্গল করে থাকেন। শাস্ত্রমতে, জামাইষষ্ঠী আসলে সন্তান প্রাপ্তির আশায় মা ষষ্ঠীর ব্রত। প্রাচীনকালে, এই দিনটিতে সন্তান লাভের আশায় বিবাহিত মহিলারা ‘মা বিন্ধ্যবাসিনী স্কন্ধ ষষ্ঠীর’ পূজা করতেন অরণ্যে। সকালে ঘুম থেকে ভোরে উঠে স্নান সেরে উপোস করে মহিলারা নৈবেদ্যসহ হাতে পাখা নিয়ে বনে দেবীকে পূজা করতেন ভক্তি সহকারে। পূজা শেষে প্রসাদ খেয়ে উপোস ভঙ্গ করা হত। যেহেতু এই পূজা বনে অনুষ্ঠিত হত, তাই এই ষষ্ঠীর অপর নাম অরণ্যষষ্ঠী। এখন আর বনে পূজার প্রচলন নেই। বাড়ির মধ্যেই রীতি মেনে মহিলারা এই পূজা করে থাকেন। এখনকার মতো জামাইদের ভুরিভোজের আয়োজন হত না। তৎকালিন পুরুষতান্ত্রিক সমাজের চাপে এই লোকাচারটি ‘জামাইষষ্ঠী’-তে কীভাবে রূপান্তরিত হয়ে গেল, সেটাই আসল ব্যাপার। এই ঘটনা জানতে গেলে আমাদের পিছিয়ে যেতে হবে পুরনো দিনের সনাতন সমাজে যেখানে মেয়েরা ‘অন্তঃপুরবাসিনী’ হিসেবে চিহ্নিত ছিল। মেয়েদের একা একা বাপের বাড়ি যাওয়ার নিয়ম ছিল না। তাই মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি থেকে বাপের বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য স্বামীকেও মেয়ের বাপের বাড়িতে যেতে হত। যাই হোক, মেয়েকে পৌঁছে দিতে যেহেতু স্বামী আসছে, তখন তাকেও একটু যত্ন আত্তি তো করতেই হত। আর যত্ন আত্তি মানে তো অবশ্যই খাওয়াদাওয়া। তাই ষষ্ঠীর দিনে মা ও মেয়ে মিলে ষষ্ঠীর পূজা যেমন করতে পারত, তেমনই জামাইকে একটু আদর যত্নও করার সুযোগ পাওয়া যেত। এটাই আস্তে আস্তে পরিবর্তিত হয়ে রূপ নিল ‘জামাইষষ্ঠী’র, বদলে গেল লোকাচার ও কালচার ব্যাখ্যাটি।
ষষ্ঠী ব্রতকথার মূল গল্পটি লোকমুখে প্রচলিত। কথিত আছে, একটি পরিবারের দুই বউ-এর মধ্যে ছোটো বউ খুব লোভী প্রকৃতির ছিল। সে সব সময় ভালো খাবার নিজে খেয়ে শাশুড়ির কাছে গিয়ে নালিশ করত যে ভালো খাবারগুলি একটি কালো বিড়ালে খেয়ে নিয়েছে। বিড়াল যেহেতু মা ষষ্ঠীর বাহন, তাই বিড়াল ‘মা ষষ্ঠী’কে ঘটনাটি জানাল। মা ষষ্ঠীর অভিশাপে ছোটো বউয়ের এক এক করে সাত পুত্র ও এক কন্যা মারা গেল। ফলে, পরিবারের লোকেরা ছোটো বউকে ‘অলক্ষণা’ বলে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিল। ছোটো বউ মনের দুঃখে বনে গিয়ে কাঁদতে লাগল। শেষে মা ষষ্ঠী এক বৃদ্ধার ছদ্মবেশে তার কাছে এসে তার কান্নার কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। ছোটো বউ তার দুঃখের কারণ বলে মাফ চাইল। তখন মা ষষ্ঠী তাকে তাঁর (ষষ্ঠীর) পূজা করতে বলেন। ছোটো বউ সংসারে ফিরে এসে ঘটা করে মা ষষ্ঠীর পূজা করেন ও এক এক করে তার সাত পুত্র ও এক কন্যাকে ফিরে পায়। তারপর থেকেই দিকে দিকে ষষ্ঠী পূজার মাহাত্য ছড়িয়ে পড়ে। তাই মুখদর্শনের জন্য এবং মেয়ে সন্তানবতী হোক ও সন্তানরাও সুখে থাকুক এই মঙ্গল কামনায় ‘অরণ্যষষ্ঠী বা জামাইষষ্ঠী’ চিরন্তন ও শাশ্বত হয়ে রয়েছে। কথায় আছে, ‘যম-জামাই-ভাগ্না, তিন নয় আপনা’— যেটির অর্থ বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। যম হল মানুষের মৃত্যু দূত এবং ভাগ্না হল অন্যের বাড়ির ছেলে। কিন্তু ‘জামাই’ অন্যের বাড়ির ছেলে হলেও মেয়ের সঙ্গে সাংসারিক বন্ধনে বিশেষ সম্পর্কে আবদ্ধ। সুতরাং ভাগনাকে ছেড়ে ‘যম’, ‘জামাই’-কে ভালো রাখার অর্থ হল আদতে মেয়েকে ভালো রাখা। মেয়ের জন্য মঙ্গল চিন্তা এবং তার সংসার সুখে রাখা প্রার্থনাতেই যে ‘জামাইষষ্ঠী'র আবির্ভাব হয়েছে, সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।
জামাইষষ্ঠী উপাখ্যান
প্রণবকুমার মিত্র
আচ্ছা বলুন তো, ১৬ জুন, ২০২১ বা ১লা আষাঢ় ১৪২৮ বুধবার, বাঙালির ঘরে ঘরে বেশ একটা উৎসবের আমেজ কেন? হ্যঁা, ঠিকই আন্দাজ করেছেন— জামাইষষ্ঠী। সাধারণতঃ জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে পালিত হয় এই জামাইষষ্ঠী। তবে দুঃখের ব্যাপার এবার করোনা মহামারি ও আংশিক লকডাউনের গেরোয় সকলেই স্বেচ্ছায় ঘরকুনো হয়ে বসে আছে। সবার মুখেই এক কথা আসছে বছর আবার জামাইষষ্ঠী হবে।
চিরকাল দেখেছি বাড়ির গিন্নিমারা নিজেদের সন্তানদের মঙ্গলার্থে বছরের বেশ কয়েকটা ষষ্ঠী করে থাকেন। যেমন বৈশাখ মাসে স্কন্দষষ্ঠী এবং অশোকষষ্ঠী, জ্যৈষ্ঠ মাসে অরণ্যষষ্ঠী ও জামাইষষ্ঠী, শ্রাবণ মাসে লুন্ঠনষষ্ঠী, ভাদ্র মাসে চাবড়াষষ্ঠী, আশ্বিন মাসে দুর্গাষষ্ঠী, অঘ্রাণ মাসে গুহষষ্ঠী বা মুলাষষ্ঠী, পৌষ মাসে অন্নজপাষষ্ঠী, মাঘে শীতলষষ্ঠী আর চৈত্র মাসে অশোকষষ্ঠী।
হিন্দুদের তেত্রিশ কোটি দেবতার সঙ্গে আছে কিছু উপদেবতা। পঞ্চম শতকের বায়ু পুরাণে এই ষষ্ঠী দেবী ৪৯টি দেবীর অন্যতম। সংসারে সন্তানদের সুস্থ এবং দুধে ভাতে রাখার জন্য এই মা ষষ্ঠীর আরাধনা। এনাকে আরাধনার পিছনে একটা চলতি গল্প আছে ষষ্ঠীর পাঁচালি বইতে। আগে কৈশোরের আগেই মেয়েদের বিয়ে হয়ে যেত। শ্বশুরবাড়িতে নানা কষ্ট সহ্য করে থাকতে হত, এমনকি খাওয়ায় কষ্ট পর্যন্ত। এক বালিকা বধূ খিদের জ্বালায় রোজ হেঁসেল থেকে মাছভাজা চুরি করে খেয়ে নিত। শাশুড়ি জিজ্ঞেস করলে বলত, বেড়াল খেয়ে নিয়েছে। এক দিন হঠাৎ শাশুড়ির কাছে ধরা পড়ে যাওয়াতে শ্বশুরবাড়ি থেকে ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে বিতাড়িত হয়ে কাঁদতে কাঁদতে গভীর জঙ্গলের মধ্যে একটা গাছ তলায় একটা পাথর দেখে তাকেই মা ষষ্ঠী ভেবে পুজো আরম্ভ করে। ইতিমধ্যে ওর একমাত্র পুত্র সন্তানটিও হারিয়ে যায়। মা ষষ্ঠী ওকে লুকিয়ে রাখেন। কারণ মায়ের বাহন বেড়ালের নামে মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার অপরাধে। বহুদিন ধরে কিশোরীর একমনে পুজো পেয়ে সন্তুষ্ট হয়ে মা ষষ্ঠী ওর ছেলেকে ফেরত দিয়ে দেন। এ তো গেল মা ষষ্ঠীর উপাখ্যান। সেখানে জামাইষষ্ঠীর ব্যাপারটা এল কী করে? আসলে জামাই বাবাজীবন সন্তানতুল্য। তাই তার মঙ্গল ও দীর্ঘায়ু কামনার্থে এই জামাইষষ্ঠী ব্রত পালন সব শ্বাশুড়ি মায়েদের। এর পিছনেও একটা ব্যাপার আছে। জামাইষষ্ঠীর দিন জামাই ও মেয়ে তার বাপের বাড়ি আসে। পুরাকালে নাবালিকা কন্যার বিয়ে দিয়ে শ্বশুর বাড়ি পাঠানোর পর বাবা বা যিনি কন্যা সম্প্রদান করেছেন, তাঁর মেয়ের বাড়িতে যাওয়া বা অন্ন গ্রহণ নিষিদ্ধ ছিল, যতক্ষণ না সে গর্ভবতী হয়ে সন্তানের জন্ম দিচ্ছে। তাই বহু দিন আদরের কন্যাকে না দেখার জন্য প্রাণ আকুলি বিকুলি করত। তখন মেয়ের সঙ্গে দেখা হওয়ার একটা উপায় মাতব্বররা বের করলেন। সেটা হল জামাইষষ্ঠী। ওই দিন মেয়ে জামাই বাবাজীবনের সঙ্গে বাপের বাড়ি আসে। সেখানে দোড়গোড়ায় বাড়ির গিন্নিমা মেয়ে জামাইকে উলু দিয়ে, প্রদীপের তাপ দিয়ে বরণ করে, হাতে মহাষষ্ঠীকে স্মরণ করে হলুদ সুতো বেঁধে দিয়ে, পাঁচ রকম অতি উওম ফল, মিষ্টি ধরিয়ে দিয়ে, হাতপাখা দিয়ে হাওয়া করে, মাথায় ১০৮ দূর্বার আঁটি ও ধান দিয়ে ‘দীর্ঘায়ু হও’ বলে আশীর্বাদ করে ঘরে ঢোকাবে। তারপর মেয়ে জামাইয়ের হাতে জামা কাপড় দেওয়ার রীতি। এই সুযোগে হয়ত কয়েকদিন কন্যার বাপের বাড়ি থাকার সুযোগও জুটে যায়। এই জামাইষষ্ঠী মাধ্যমে দুটি পরিবারের মেলবন্ধন সুদৃঢ় হয়। বিদ্যাসাগরের আমলে বেশিরভাগ কিশোরীর কুলিন বুড়ো বর জুটত। আর কিছু দিনের মধ্যেই বিধবা হয়ে বাপের বাড়ি চলে এসে থাকত। তাই বোধহয় বুড়ো জামাইয়ের দীর্ঘায়ু কামনায় মা ষষ্ঠীর কাছে শাশুড়ি মায়েদের আকুল আবেদন এই জামাইষষ্ঠীতে।
জামাইকে তিন চার রকমের মাছ, খাসির মাংস, বিভিন্ন রকমারি তরকারি ও দই মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়িত করেন বাড়ির গিন্নিমা, দুপুরে ও রাতে। সঙ্গে তালপাতার পাখায় বাতাস। আজ থেকে একশো বছর আগে একান্নবর্তী পরিবারে এই জামাইষষ্ঠী একটা বিরাট অনুষ্ঠান ছিল। ক্রমে বর্তমানের এই গতিশীল যুগে ইউনিট ফ্যামিলিতে পঞ্চ ব্যাঞ্জন রান্না করে জামাইকে খাওয়ানোর রেওয়াজ প্রায় উঠে গেছে। তার বদলে কোন নামী হোটেলে বা রেস্তোরাঁয় টেবিল বুক করে খাওয়ানোর রেওয়াজ চালু হয়েছে উভয় পরিবারের সুবিধামতো দিনে। বছর দশেক আগে দেখেছি বাড়ির গিন্নিমা ফোনে জামাইকে জিজ্ঞেস করছে— বাবা নানু, এবার আরামবাগ চিকেনের দোকান থেকে কোন পাখির মাংস কিনব আমাকে বলে দাও, কোন রকম লজ্জা না করে।
জামাইষষ্ঠী পালন করার কারণ বোধহয় জামাইকে তেলানো যাতে মেয়ে শ্বশুরবাড়িতে ভালো থাকে।
নবদ্বীপে প্রতিষ্ঠিত মন্দিরে এই জামাইষষ্ঠীর দিন মহাপ্রভুকে জামাই বেশে সাজিয়ে দুপুরে ভূরিভোজের আয়োজন হয় এবং সকলে এই মহাপ্রসাদ খেয়ে তৃপ্তি লাভ করে।
‘জামাইষষ্ঠী’ নামে প্রথম সবাক চলচ্চিত্র তৈরি করেন পরিচালক অমর চৌধুরী ১১ এপ্রিল ১৯৩১ সালে। তারপর এই জামাইষষ্ঠী নিয়ে অনেক কৌতুক নকশা ও রেকর্ড হয় বহু কৌতুক শিল্পীর গলায়।
বহু পরিবারে দেখা যায় জামাই একদম ঘরের ছেলে হয়ে যায় কয়েক বছরের মধ্যেই। আবার বিপরীতও হয়। যেখানে জামাই বাবাজীবন শ্বশুরবাড়ি থেকে নানা জিনিসপত্র হাতানোর ধান্দা করে। তাই বোধহয় চলতি প্রবাদ আছে— যম, জামাই, ভাগ্না / কেউ নয় আপনা।
জামাইষষ্ঠী
অশ্রুরঞ্জন চক্রবর্তী
মেয়ে–জামাই ষষ্ঠীরদিন বাইকটাতে চেপে
এল দেখে শাশুড়ি মা–র বুকটা ওঠে কেঁপে।
ফিসফিসিয়ে শাশুড়ি মা শ্বশুরকে তাই বলে—
টাকাপয়সা সঙ্গে নিয়ে বাজারে যাও চলে।
ঘুরে ঘুরে বাজারেতে কিনবে অনেক কিছু
মাছ–মাংস–আলু–পটল–দই–মিষ্টি–লিচু।
শ্বশুর বলে, কিনব সবই করবে না তো ভয়
তোমার শুধু একার জামাই, আমার জামাই নয়?
চিন্তা তো নেই, ঘরে আছে পেনসনেরই টাকা
তোমার কথায় কিনব সবই, করব পকেট ফঁাকা।
শ্বশুরের এই কথা শুনে জামাই হাসে ফিক্
ঠোঁটের ফঁাকে দঁাতগুলো তার করে যে চিক্চিক্।
জামাইষষ্ঠী
দেবব্রত দত্ত
বাজার যেন আগুন এখন, দাম বাড়ছে লাফিয়ে!
বাবাজীবন নাইবা এলে লকডাউনে হাঁফিয়ে।
হাজার টাকায় 'খোকা ইলিশ' কিনতে গিয়ে দেখি,
শ্বশুর হওয়ার কী অপরাধ, বুঝবে জামাই সে কি!
লিচুর কেজি একশো টাকা, ফজলি আমও আশি!
আটশো টাকা নগদ দিলে এক কিলো হয় খাসি।
মরা মরা চিংড়িগুলোই এদিক ওদিক করে,
সঙ্গে কিছু কচুর লতি নিলাম মনের জোরে।
জামাইষষ্ঠী শুনলে যেন, হঠাৎ হঠাৎ চমকাই,
ভালোয় ভালোয় কাটলে পরে আমরা একটু দম পাই!
খাবে যেটা সঙ্গে এনো, হবে না তা মন্দ!
বাজার-টাজার এই শহরে ক'দিন ধরেই বন্ধ।
বাবাজীবন চলছে আমার অফিসে রোজ কামাই,
গুষ্টির এই ষষ্ঠী পুজো কেমন করে নামাই!
গাড়ি-টাড়ি চলছে কমই, তবু আসার ইচ্ছে!
যত্ন করে খাইয়ে দেবো, রেশনে যা দিচ্ছে।
জামাইষষ্ঠী
রবিন কুমার দাস
‘খ্যান্ত পিসির দিদি শ্বাশুড়ির’ ঘুম আসে না চোখে
ষষ্ঠীতে না জামাই এলে বলবে কি সব লোকে,
প্রথম বছর ষষ্ঠী প্রথম আসবে মেয়ে জামাই
লক-ডাউনে একটা বছর হয়নি মোটেও কামাই।
গোদের ওপর বিষ ফোঁড়া ভাই যা ছিল তা দিয়ে
এই বোশেখে ধার দেনা সব করে দিলাম বিয়ে,
নিয়ম মেনে দ্বিরাগমন পালন করতে গিয়ে
একেবারেই ফতুর হলাম কেনা কাটা নিয়ে।
মাছ-মাংস-বিরিয়ানি, পাবদা মাছের ঝাল
দই-সন্দেশ-চাটনি-পাঁপড় খাইয়ে করি কাল,
যা দিই পাতে এক নিমেষে জামাই করে সাবাড়
রেগে-মেগে যা ছিল সব ধরে দিলাম খাবার।
এদিক ওদিক দেখলো না সে রইলো কারা বাকি
এমন কাণ্ড দেখে তাকে ষষ্ঠীতে আর ডাকি,
এসব নিয়ে ভাবছি যখন কোভিড এলো দেশে
নেমন্তন্ন ফিরিয়ে দিল জামাই নিজে শেষে।
মিসটেক
প্রদীপ চিকি
কই, কোথায় গেল আমার বাবা জীবন?
বাজারের থলিটা রোয়াকে নামিয়ে রেখে জামাইয়ের খোঁজ করলেন বেচারাম। গরমে গলদঘর্ম। এমনিতে সংসারে তিনি বলদঘর্ম হয়েই থাকেন। সারাদিন বলদের মতো খাটনি। অন্তত তেমনটাই তাঁর দাবি। রিটায়ার করার পর ভেবেছিলেন দু-দণ্ড শান্তিতে জীবন কাটাবেন। সে স্বপ্নের সলিল সমাধি ঘটেছে তাঁর স্ত্রী শান্তির কল্যাণে। উফফ্, কী কুক্ষণে যে শান্তিকে বিয়ে করেছিলেন! শান্তি নামটা নাকি ওঁর দাদুর দেওয়া। শান্তিলতা বিশ্বাস। বিয়ের আগে অবিশ্যি বিশ্বাস ছিলেন। বেচাও ভেবেছিলেন তাঁর টালির চালায় শান্তি লতায় পাতায় বিরাজ করবে। কতবড়ো ভুল করেছিলেন, টের পেতে বিলম্ব হয়নি। ঘরে ঢুকলেই শুনতে পান টালির চালে অশান্তির শিলাবৃষ্টি। বিয়ের পর শান্তির নামের থেকে বিশ্বাস যেমন ভ্যানিশ, বেচার মন থেকেও গিন্নির প্রতি বিশ্বাস উধাও। বেশিরভাগ বউরা একটু সন্দেহবাতিক হয়। স্বামীদের সন্দেহ করার চিরন্তন অভ্যাস। বেচার ক্ষেত্রে পুরো উলটো। বউয়ের কাজকর্মের প্রতি এতটুকু বিশ্বাস নেই। চোখে চোখে না রাখলেই বিপদ। আবার রাখলেও ঝামেলা। শান্তির ভুলত্রুটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখালেই চোখ রাঙানি শুরু। বাধ্য হয়েই গোবেচারা হয়ে থাকতে হয় বেচাকে। পূর্বপুরুষ সূত্রে পাওয়া উপাধিটা তাঁর জীবনে অভিশাপ হয়ে দাঁড়াল। অফিস, সংসার সবখানেই বেচারাম দাসের দাসত্ব করে কেটে গেল।
আজ কিন্তু সে গুটিয়ে থাকবে না। জামাইয়ের সামনে তাহলে মানইজ্জত ধুলোয় মিশবে। মেয়ের বিয়ের পর প্রথমবার জামাইষষ্ঠী। লকডাউনের চক্করে সেটাও লাটে উঠতে বসেছিল। ভাগ্যিস, বাজার-দোকান কিছু সময়ের জন্য হলেও খোলা। কদিন ধরেই টুকটাক করে জোগাড় করছে। কিন্তু মাছ-মাংস-মিষ্টি টাটকা না কিনলে চলে। বাজারে সব ঠিকঠাক ছিল। হঠাৎ একটা শববাহী গাড়ি গা ঘেঁষে বেরিয়ে গেল। একটু দূরেই শ্মশান। আজকের দিনে এসব দেখতে ভালো লাগে না। চলজলদি বাজার সেরে বাড়ির দিকে পা বাড়াল বেচারাম।
কোথায় গেলে গো বাবাজীবন? আসতে কোনো অসুবিধা হয়নি তো?
না, বাবা অসুবিধা হয়নি। ঠিকঠাক এসে গেছি।
জামাইয়ের কণ্ঠস্বর কেমন কানে ঠেকল বেচার। ঘরপোড়া গরু। স্বর কখন এমন অবস্থা হয় বিলক্ষণ বোঝে। তাহলে কি মেয়ের সঙ্গে গোলমাল। মেয়েটাও তো মায়ের ফোটোকপি। নির্ঘাৎ জামাইকে দাবড়েছে। নাহলে মিউ মিউ করে উত্তর দেবে কেন। জীবনের জীবনেও কি অশান্তি? মনে ভাবে বেচা।
গিন্নি এদিকে এসো। বাজারটা তোলো।
গজগজ করতে করতে পাশের ঘর থেকে শান্তি বেরিয়ে আসে। বেচা বোঝে কিছু একটা গড়বড় হয়েছে। নাহলে জামাইষষ্ঠীর সকালে সংসারে নিন্মচাপের আগের পরিবেশ হয় না।
আহা, খামোখা বিরক্ত হচ্ছ কেন। কী হয়েছে বলবে তো?
আমার শ্রাদ্ধ হয়েছে। বাজারের ব্যাগ না নিয়েই ঘরে ঢোকে শান্তি।
পাশের ঘর থেকে মেয়ের ফোঁপানির আওয়াজ শুনতে পেল। ঝড়ের পর ঝিরঝিরি বৃষ্টিপাত।
বেচা ওদিকে পা বাড়িয়েও থমকাল। জামাই কিছু বলার চেষ্টা করছে। কিন্তু শুনবে কে?
ঘরে ঢুকতেই শান্তি দুটো জামাকাপড়ের প্যাকেট মেঝেতে ছুঁড়ে ফেলল।
কী আছে?
দেখো, তোমার জামাই, ষষ্ঠীতে কী উপহার দিয়েছে।
প্যাকেট খুলে বেচা দেখে, একটায় দুটো থান কাপড়। অন্যটায় সাদা ধুতি।
বেচা একবার কাপড়গুলোর দিকে তাকায়, পরমুহূর্তে শান্তির মুখের দিকে। জামাইষষ্ঠীর জন্য নতুন জামদানিটা পরেছিল। কপালে সিঁদুরের টিপটা জ্বলজ্বল করছে। কতদিন শান্তিকে এইরূপে দেখেনি। বেচার মনে পড়ছিল বিয়ের দিনের কথা।
পাশের ঘরে তখন আগুনে জল ঢালার পালা চলছে। "বিশ্বাস করো, আমি এগুলো নিইনি। তাড়াহুড়োয় ওদের সঙ্গে কিভাবে প্যাকেটটা পাল্টে গেছে। কাছেই তো দোকান। আমাকে দাও পাল্টে আনছি।"
বেচার মনে পড়ল, বাজারের হই-হট্টগোলকে ছাপিয়ে যাচ্ছিল, শ্মশানযাত্রীদের কলতান, "বলো হরি, হরি বোল।"
কে জানত খানিক বাদে ওর সংসারে ওটাই জামাইষষ্ঠীর রিংটোন হয়ে উঠবে।
প্রিয় জামাইষষ্ঠী
অমিত কাশ্যপ
অনেক ভেবে চিন্তে দেখেছিলাম, বিয়ে একবারই। জম্পেশ একটা তারিখ হবে, যাতে মনে থাকে। শীতকালটা ভালো, গুছিয়ে সাজা যায়, খাওয়া যায়। কিন্তু মনে রাখার কোনো তারিখ নেই।
বৈশাখ চমৎকার। বছরের প্রথম মাস। গরম, তা হোক, মনে তো থাকবে। পঁচিশে বৈশাখ, কবিগুরুর জন্মদিন। মহোৎসব। বিয়ের দিন, ভোলার কোনো চান্স নেই। বাড়তি পাওয়া, পরের মাসে জামাইষষ্ঠী। জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী।
এক নম্বর জামাইষষ্ঠী। রমরম। সকাল সকাল, প্রাতঃরাশ পর্ব থেকে শুরু। ফলাহার, সঙ্গে কচুরি সুন্দরীর আবির্ভাব, আলুর দম সহযোগে। বিজ্ঞাপন বিরতির মতো চা, নয়তো সরবত। শাশুড়ি মা'র পাখার বাতাসের তুলনা নেই। সঙ্গে নতুন ধুতি-পাঞ্জাবির গন্ধ। আরো একটু বেশি পাওনা রোমান্টিক শালিদের আদর। যাই হোক বউ কাছাকাছি ঘুরলেও, আজ ব্রাত্য। সমস্ত আলো আজ আমার মুখে।
সময় গড়িয়ে গড়িয়ে লাঞ্চ। মেন কোর্সের মেনু লম্বা ফর্দর মতো। আসছে তো আসছেই। সেই পরীক্ষা সামলে অপরাহ্ন। লাইটের ওপর হালকা করে টিফিন। ডিনারের কথা ভাবতে ভাবতে মন বলল, চল পানসি বেলঘরিয়া, জীবনে এই তো প্রথম। হোক মনে রাখার মতো। পকেট হালকা হয়ে গেছে শাশুড়ি আর শালিদের দৌলতে। মনে মনে বলি, জয় হোক জামাইষষ্ঠী।
প্রথমবার জামাইষষ্ঠী
কাজী সামসুল আলম
একই গ্রামের ক্লাস ফ্রেন্ড স্বপন, খুবই লাজুক টাইপের । বাড়িতে ওর মা অসুস্থ হওয়ায় সদ্য কলেজ পাশ একমাত্র ছেলের বিয়ে দিয়ে দেয় ওর বাবা। প্রথমবার জামাইষষ্ঠী যাবে। স্বপনের মা বাবা এবং স্ত্রী সবাই বলল, আমাকে এবং আর এক বন্ধু অনিমেষকে যেতে। আমরা গেলাম, বিরাট বাড়ি, বাড়ির সামনে বেশ বড় পুকুর, সান বাঁধানো ঘাট। আমি পুকুরে জাল ফেলতে জানি, সাঁতারও জানি। জামাইষষ্ঠীর কদিন আগেই প্রচুর বৃষ্টি হয়েছিল। পুরো পুকুর জলে থইথই। পুকুরের ধার দিয়ে জাল টানছিলাম, আমি পুকুরের মাঝের দিকে ছিলাম, অনিমেষ ডাঙ্গার দিকে ছিল, সাঁতার জানত না। হঠাৎ পা পিছলে যায়, সেইখানে পুকুর খাড়া ঢাল। ও জলে পড়ে যায়। হাবুডুবু খেতে থাকে। আমি জাল ছেড়ে সাঁতরে ওকে তুলতে যাই, ও আমাকে টানতে থাকে, আমি ওর ভার নিতে পারছিলাম না, আমিও তলিয়ে যেতে থাকি। হঠাৎ হাতের কাছে একটা বাঁশের অংশ দেখে ধরি। অনিমেষের হাত এক হাতে, বাঁশ এক হাতে। পাড়ে এসে বুঝলাম, বাঁশটি স্বপনের শশুরমশাই বাড়িয়ে ছিলেন। সেদিন দুজনে আচ্ছা বাঁচন বেঁচেছি। সেই প্রথম সেই শেষ জামাইষষ্ঠী যাওয়া।
আমার প্রথম জামাইষষ্ঠীর কথা
তপনকুমার গোস্বামী
১৯৮০ সালে আমার শ্বশুরমশাই কর্মসূত্রে ছিলেন বিহারের ‘বেরমো’-তে। কাজেই প্রথমবার জামাইষষ্ঠীতে যাবার জন্য আমার কয়েকদিন ছুটির প্রয়োজন। ছুটির দরখাস্ত দেখেই ম্যানেজার সাহেব বললেন— বলেন কী মশাই, জামাইষষ্ঠীতে সাতদিন ছুটি!
আমি বিনয়ের সঙ্গে বললুম— আজ্ঞে আমাকে সেই সুদূর বিহারে যেতে হবে কিনা। তাই...! ম্যানেজার সাহেব কটাক্ষ করে বললেন— বলি বাংলাদেশে কী আর মেয়ে ছিল না, যত্তোসব!
জামাইষষ্ঠীর দিন তিনেক আগে শ্বশুরমশাই এলেন মেয়ে জামাইকে নিয়ে যেতে। পরদিন ভোরবেলা হাওড়া থেকে ব্ল্যাক ডায়মন্ড এক্সপ্রেসে ধানবাদ। সেখান থেকে বাসে প্রায় ঘন্টা তিনেক পরে বেরমো-র সানডেবাজার বাসস্ট্যান্ড। সেখান থেকে অটোরিকশায় গান্ধীনগর। মানে আমার তৎকালীন শ্বশুরালয়। ভোর পাঁচটার আগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে রোদে ধুলোয় মাখামাখি হয়ে প্রায় ধুঁকতে ধুঁকতে বিকেল তিনটেয় ভিনরাজ্যে শ্বশুরালয়ে জামাইষষ্ঠী উপলক্ষে আমার প্রথম পদার্পণ।
দুরাত্রি বিশ্রামের পর জামাইষষ্ঠী। খাওয়াদাওয়া বেশ জমিয়েই হল। কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি অভিজ্ঞতা। এখানে ‘বোকারো কোলিয়ারি’ আন্ডারগ্রাউন্ড নয়। ওপেন কোলিয়ারি। এখান থেকে রোপওয়ে দিয়ে ট্রলি করে কয়লা যাচ্ছে বোকারো থার্মালে। চোখের সামনে খুলে গেল অভিজ্ঞতার নবদিগন্ত।
নিজ ভূমে
ফটিক চৌধুরী
'জামাই' সম্ভাষণ শুনলেই কমবেশি সকলেরই মধ্যে একটি সম্ভ্রমের উদ্রেক হয়। আগে একান্নবর্তী পরিবারে জামাইয়ের আগমন মানে বিপুল আদর-যত্ন ও খাওয়া দাওয়ার আয়োজন। সে পিসেমশাই হোক বা বড়ো জামাইবাবু। আমার মনে হত বন্যেরা বনে সুন্দর, জামাইয়েরা শ্বশুরালয়ে। আরও মনে হত, কবে আমি জামাই হব, যখন প্রত্যেক পুরুষেরই জামাই হবার অধিকার আছে !
অবশেষে বিবাহসূত্রে একদিন জামাই হতে হল। একমাত্র রাজকন্যেকে বিয়ে করে কয়েকগুণ বেশি খাতির। যতবার শ্বশুরবাড়ি, ততবারই যেন জামাইষষ্ঠী। তবে শ্যালক শ্যালিকা না থাকায় জীবন বৈচিত্র্যহীন। এরকম বঞ্চিত জামাইয়ের তুলনা যেন লবণহীন তরকারি।
প্রথম জামাইষষ্ঠীর দিন নিম্নচাপে সারা কলকাতা জলমগ্ন। কীভাবে যাওয়া যায়! আমাদের বেহালা তবুও ততটা বেহাল নয়, যতটা ঠনঠনিয়া। এদিকে শ্বশুরবাড়িতে প্রথম জামাইষষ্ঠীতে জামাইবরণের বিশাল আয়োজন সারা। সত্তরের দশকে টেলিযোগাযোগ ততটা সুলভ ছিল না। অভিজ্ঞ শ্বশুরমশাই শাশুড়িকে নিয়ে আবহাওয়ার পূর্বাভাস বুঝতে পেরে সমস্ত সাজসরঞ্জাম নিয়ে ট্যাক্সি করে আমার কোয়ার্টারে এসে হাজির। জামাইয়ের বাড়িতেই হয়ে গেল প্রথম জামাইষষ্ঠী। মন্দ হয়নি, নিজ ভূমে।
মনে আছে ষাঁড়ের তাড়া
সুব্রত ভট্টাচার্য
প্রথম জামাইষষ্ঠী।
চৌঁত্রিশ বছর আগে।
বড়ো শালার পাঠানো ভাড়াগাড়িতে করে শ্বশুরবাড়িতে। শুধু হাত-পা ধোওয়ার অপেক্ষা। শুরু হল অত্যাচার! খাওয়ানোর।
জলখাবারে ফুলকো লুচি। আলুর দম। মিষ্টি। দাদা লুচি ভাজছে। ছোটো ভাই আর আমার বউ পরিবেশন করছে। নির্দেশনায় অসুস্থ শাশুড়িমা। রান্নাবান্না বড়ো শালাই করছে।
দুপুরে ভাত শাকভাজা শুক্তো ডাল পাঁচরকম ভাজা পাঁঠার মাংস মাছের কালিয়া পাঁপড় চাটনি দই সন্দেশ।
হাতের নাগালে শিবপুর বি-গার্ডেন। বিকেলে বউকে নিয়ে বেড়াতে গেলাম। বউয়ের হাত ধরে ঘুরছি। ওর লজ্জা। আপত্তি। শুনিনি।
ঠিক এইসময় একটা ষাঁড় ছুটে এল !
আমরা জঙ্গলে ঢুকে গেলাম। ভাবছেন তো শাপে বর হল? সে গুড়ে বালি। বউয়ের মেজাজ তখন সপ্তমে।
রাতে থাকতে হল। ওটা নাকি নিয়ম। রাতের আহার লুচি ছোলার ডাল মিষ্টি দিয়ে মিটলেও রাতটা মধুর হল না।
বউকে কাছে টানতে গেলে ও ঝেঁঝে উঠল, "তোমার জন্য ষাঁড়ের তাড়া খেলাম। ষাঁড়টাকে বোধহয় কোনো গরুই পাত্তা দেয়নি। মেজাজ গরম ছিল। আমাদের হাত ধরাধরি করতে দেখে ওর মাথা ঠিক থাকেনি! যত সব আদিখ্যেতা! যাও, সরো !"
জামাইষষ্ঠী
প্রবক্তা সাধু
বুড়ো কালে ইতি'র বাবা হঠাৎ মনে ভাবে,
পাঞ্জাবি আর ধুতি পরে শ্বশুরবাড়ি যাবে।
জষ্ঠি মাসে ষষ্ঠী পূজায় অনেক কিছু খাবে,
আগের মতো আদর যত্ন জামাকাপড় পাবে।
নিজের বয়স ষাট পেরিয়ে শ্বশুর গেছেন মরে,
শাশুড়ি মা বেঁচে আছেন বল গিয়েছে পড়ে।
শালা আছে গোটা দুয়েক শালি শ্বশুর বাড়ি,
শালা বৌ-রা দারুণ রসিক করেন কাড়াকাড়ি।
জামাই আছে নিজের দুটি ছেলে পরের জামাই,
ষষ্ঠী হবে সবার ঘরে কেমনে বলো থামাই?
ইতি'র বাপের বুদ্ধি শুদ্ধি নাই বুঝি আর বাকি,
ছেলেমেয়ের বিয়ের পরে ষষ্ঠী থাকে নাকি?
ইতি বলে থাক না বাবা জামাই আছে ঘরে,
এসব কথা শুনলে লোকে হেসেই যাবে মরে।
ষষ্ঠী পূজার ফল ফলাদি মণ্ডা মিঠাই ভাতে,
মধুমেহ রোগ বেড়ে যায় নিষেধ নিতে হাতে।
এতক্ষণে বুঝল মাখন তরুণ বয়স হলে,
শ্বশুরবাড়ি মধুর হাঁড়ি যাবার বায়না চলে।
কিপটে শ্বশুর
স্বাগতা ভট্টাচার্য
কত্তা আমার কিপটে ভীষণ খরচাপাতির বেলায়
কুটুম বাড়ির কেউ থাকে না গতিক দেখে পালায়।
আনতে ইলিশ বললে উনি আনেন পোনা মাছ
দই মিষ্টি বললে দেখান ধুতি খুলেই নাচ।
ভয়েই আছি নতুন জামাই আসলে হবে কী
বেয়াই বেয়ান শুনলে পরে করবে ছি ছি ছি।
সকাল থেকেই ফন্দি আঁটেন জামাইষষ্ঠী আজ
বাজার থেকে মিষ্টি এনো অনেক আছে কাজ।
চশমা চোখে বেরিয়ে গেলেন হাতে নিয়ে থলে
খানিক বাদে ফিরে এসে কেশে নিয়ে বলে,
হঠাৎ করে জ্বর এসেছে মুখটি করে হাঁড়ি
তাড়াতাড়ি খবর দিও মেয়ের শ্বশুর বাড়ি।
আমি তো বেশ ভ্যাবাচেকা খবর দিলাম ওদের
জামাইষষ্ঠী করতে আসার ইচ্ছে গেল তাদের।
দিন গড়িয়ে সন্ধে হল বলেন কাছে ডেকে
এ যাত্রা খুব বেঁচেছি নস্যি নিয়ে নাকে।
পারিবারিক উৎসব
দীপঙ্কর বেরা
বিয়ের প্রায় সাত আট মাস পরে আমার প্রথম জামাইষষ্ঠী।
কর্মসূত্রে বাড়ি থেকে বাইরে থাকি তাই এই ঘরোয়া উৎসবে সকাল সকাল হাজির হয়ে যাই। লাইন দিয়ে আমি মধ্যমণি হয়ে বসে আছি। শাশুড়ির জামাই বরণ ও জামাইয়ের শাশুড়ি সম্মানের পরে আমি আম কাঁঠাল ও অন্যান্য মিষ্টি ফলাহারের সামনে অর্ধাঙ্গিনীকে ডেকে নিলাম।
আমাদের তখন মনের সঙ্গে মন, আরো কাছাকাছি সঙ্গোপন হওয়া ও সাংসারিক রচনায় একাত্ম হওয়ার পালা চলছে। বললাম— একেও একটু বরণ করুন না। আপনাদের মেয়েও আজ আমার ও আপনাদের আরো কাছাকাছি হোক।
কথাটি সব জামাইদের মনে ধরল। মেয়েরা বসল সামনে। আবার বরণ সম্মান ও মর্যাদায় নতুন করে হাসি ঠাট্টা আনন্দ যেন হিল্লোলে মেতে উঠল।
একটু পরে হাতে হাত ধরে বলল— উৎসব যাই হোক, সম্মান ও মর্যাদার চেয়ে বড়ো কিছু নেই।
আমি বললাম— ঠিক তাই। আর তার সঙ্গে চাই রকমারি পেট পুজো। ঘরোয়া উৎসবের ওটিই তো সবচেয়ে বড়ো মজা।
সেই মজা এখনও অব্যাহত। পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো উৎসব পারিবারিক উৎসব। বাঁচিয়ে রাখা জীবন।
এক জীবনে
সঞ্জীব সেন
জামাইষষ্ঠী এসে কেন যে এখানে ঘুরতে এলাম।
না এলে আপনার সঙ্গে দেখাও হত না আর দেখা না হলে মনে পড়ত না, তাই না মানবদা...
কেন সেদিন আমরা মিলিত হলাম, ঠোঁটে রাখলাম ঠোঁট, প্রেম না ভালবাসা! সে ব্যাপারে আজও নিশ্চিত নই। আমাদের নিয়ে কি অপূর্ব প্রেমকাহিনী লিখেছেন বিধাতা!
মনে আছে মানবদা, আমাদের সেইসব স্বপ্নগুলো!
আমরা কীভাবে সহস্রবার মরতাম আর সহস্রবার বেঁচে উঠলাম।
একদিন আপনি আর একদিন আমি আর সাক্ষী ছিল বিকেলের রাঙা আলো, তাই না মানবদা!
ডিকশনারিতে স্বামী মানে হাজবেন্ড শব্দের অর্থ মাস্টার, বন্ধু নয়, আবার ভাল স্বামী হতে গেলে ভালো বন্ধু হতে হয়, তাই না মানবদা, আচ্ছা অভিধানে সব শব্দের পর্যাপ্ত অর্থ মেলে? মেলে না বলেই সত্যিকারের স্বামী হয়ে ওঠা খুব কঠিন।
কিন্তু কাকে জানাব সেকথা, কার বুকে মাথা রেখে দুদণ্ড কাঁদব, বলুন না মানবদা?
এক জীবনে কি সব পাওয়া যায়! তাই না মানবদা...
জামাইষষ্ঠী
কেদারনাথ দাস
প্রথমবারে জামাইষষ্ঠীর সময় আমি জোয়ান,
শালি বলত চুপি চুপি 'হিরো নম্বর ওয়ান'!
জিনসের প্যান্ট পরা— তাতে অনেক ফাটা,
চুল আমার 'মিঠুন' যেন সামনে টেরিকাটা।
আম জাম লিচু কলা নিয়ে আমার কাঁধে
মিষ্টির প্যাকেট হাতে সঙ্গে আমার 'রাধে'।
পৌঁছতেই দৌড়ে এসে শালার পঙ্গপাল
লুট করল এমন সেসব, করল হাঁড়ির হাল।
শ্বশুর আমার গরিব বলে চিকেন আনি কিনে,
আধসিদ্ধ রান্না খেলাম সেসব মশলা বিনে।
অনেক টাকা গচ্চা দিলাম কিনতে নতুন জামা,
ধুতি পেলাম সাতপুরনো দাতা বৌ–এর মামা।
ফেরার সময় শাশুড়ি মা'র আহ্লাদি আবদার—
'ফাদার-ইন-ল'-কে নিয়ে আমার বাড়ি যাবার!
সেটাই আমার জামাইষষ্ঠী প্রথম এবং শেষ,
ঘরজামাই-এর ষষ্ঠী কিসে? এই তো আছি বেশ!
জামাইষষ্ঠীর ছড়া
বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়
শেয়াল যাবে শ্বশুরবাড়ি এবার জামাইষষ্ঠীতে
উত্তেজনায় ঘুম আসে না স্বপ্ন দেখার মস্তিতে।
লকডাউনে মন্দা বাজার খাবার অমিল বন দেশে
এই কটা দিন কাটবে তবু পোলাও পায়েস সন্দেশে।
টিউশনি সব বন্ধ এখন দিন গুজরান ধার করে
বনের যত ছাগলছানা আসে না কেউ তার ঘরে।
অদ্ভুত সব রোগ বালাইয়ে জংলীপুরের দেশটাতে
অভাগাদের মরতে হবে খিদে এবং তেষ্টাতে।
জীবন বাঁচে পরব নিয়ে গ্রাম শহর ও বস্তিতে
শেয়াল যাবে শ্বশুরবাড়ি এবার জামাইষষ্ঠীতে।
প্রথম জামাইষষ্ঠীর কথা
সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
আমি সবে পঁচিশে। প্রেমিকা আঠারো পেরিয়ে কয়েক মাস। প্রেম জমে উঠেছে। নানা রঙিন স্বপ্ন দুজনের দুচোখ জুড়ে। প্রেমিকার বাড়ির কোনো একজন অত্যন্ত ঘনিষ্ঠলোকের চোখে পড়ে গেল আমাদের প্রেম। ব্যস, প্রেমিকার বাড়িতে লক্ষণরেখা। চরম প্রহরায় প্রেমিকার লেখাপড়া-টিউশন চলছে। আমি প্রহর গুনতে থাকি কখন প্রেমিকার সঙ্গে একটু কথা বলার সুযোগ মেলে। সুযোগ পেয়েই স্বপ্ন ধরতেই দিলাম উড়ান। হঠাৎ এমন ঘটনায় দুই পরিবার হতবাক। শ্বশুর বাড়ির লোকজনের অভিমানের কারণেই ললাটে জুটলো না জামাইয়ের তকমা। তকমা পেতেই পাঁচবছর পার। কিছুটা স্বস্তি আর খানিকটা অস্বস্তি নিয়েই শ্বশুরবাড়ির অভিযানে পাড়ি দিলাম জামাইষষ্ঠীর দিনে। মনে আছে প্রথম জামাইষষ্ঠী, তাই জমিয়ে মার্কেটিং করেছিলাম। শ্বশুরের জামা-প্যান্ট, শ্বাশুড়ির শাড়ি, শালির শালোয়ার আর বাড়ির দীর্ঘদিনের কাজের মাসির জন্য কাপড়। মিষ্টি, আম আর কিছু টুকটাক। শ্বশুরবাড়ির লোকজনের ব্যবহারে ও আপ্যয়নে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম সেদিন। মা ষষ্ঠীর কৃপাতেই পাঁচবছরের দুই পরিবারের সম্পর্কের প্রাচীর আর বিবাদ মিটে গেল চিরকালের জন্য। জীবনে এক পরম পাওয়া।
জামাইষষ্ঠী
বদ্রীনাথ পাল
'জামাইষষ্ঠী' করতে যাবো প্রথম শ্বশুর ঘর—
বউটি এসে কানে কানে বললে অতঃপর।
"রেস্ত কিছু বেশিই নিও রাখতে হলে মান—
নইলে জেনো সেথায় গিয়ে নেই কো পরিত্রাণ"!
শ্বশুরবাড়ি পৌঁছে যেতেই শালা-শালির দল—
আমায় ঘিরে লাগিয়ে দিল তুমুল কোলাহল!
যদিও খেলাম মাছ মাংস মিষ্টি এবং দই—
তারপরেতে কী ঘটল, সেটাই এবার কই!
বিকেল হতেই ওরা সবাই ধরল চেপে হাত—
বললে "চলুন ম্যাটিনি শো, হোক্ না যতই রাত।
তারপরেতে চিনা হোটেল, করান ভুরিভোজ—
'জামাইষষ্ঠী' দিনটা বলুন আসবে কি আর রোজ"?
গত্যন্তর কোথায় আমার, কম নয়, জন দশ—
তাদের কাছে মানতে হল সেদিন আমায় বশ!
শেষ কালেতে মিটল যখন তাদের সে আব্দার—
হাতড়ে দেখি, পকেটটাতে নেই যে কিছুই আর!
দুখের কথা এরপরেতে বলব কী আর ভাই—
ফিরব বাড়ি! টিকিট কাটার পয়সাটুকু নাই।
সেদিন থেকেই তিক্ত মনে ধরেই গেছে ভয়—
"জামাইষষ্ঠী"? প্রাণ থাকতে শ্বশুরবাড়ি নয়!
জামাই ষষ্ঠী
বিদ্যুৎ মিশ্র
ষষ্ঠী পুজো করতে হবে এবার ঘটা করে
খাতির যত্নে কম না হয় গিন্নি বলে ভোরে।
বাজার থেকে মাছের মুড়ো এসো এবার নিয়ে
খেতে দেবো মিষ্টি দই আর পান সুপারি দিয়ে।
বছর পরে জমাই এল খুশির সীমা নাই
দুধের পায়েস নতুন কাপড় সবার সেরা চাই।
সাত সকালে থলি হাতে তাই হয়েছি বার
এমন সময় শিং বাগিয়ে আসল ছুটে ষাঁড়।
আচমকা সে গুঁতিয়ে দিল পিছন থেকে জোরে
শূন্যে আছাড় খেলাম আমি জ্ঞান হারালাম পরে।
সেখান থেকে হাসপাতালে কাটল পুরো মাস
গিন্নি এসে খোঁজ করে যায় বলে সর্বনাশ।
ষষ্ঠী পুজো করতে গিয়ে বিপদ হল ভারি
সুস্থ হয়ে তাড়াতাড়ি ফিরো এবার বাড়ি।
হেসেই বলি তখন আমি লুকিয়ে বেডের নিচে
মূল্যবৃদ্ধির জন্য এটা ফন্দি ছিল মিছে।
নতুন জামাই
কৌশিক আচার্য
আর যেখানে যাওনা রে ভাই
গঙ্গা নদীর পার
ঘন ঘন শ্বশুরবাড়ি
যেও না খবরদার।
শ্বশুর বাড়ি ভারি মজা
নতুন জামাই বলে,
পুরনো হলে বুঝবে রে ভাই
জামাই কাকে বলে।
প্রথম প্রথম জামাইষষ্ঠীতে
দেখবে মুখে হাসি,
তার পরেতে দেবে তোমায়
খেতে সবই বাসি।
মনে মনে ভাববে তখন
একা ভালো ছিলাম,
কলিযুগে কেন আমি
বিয়ে করতে গেলাম।
প্রথম জামাইষষ্ঠীর কথা
মুকুলরঞ্জন চক্রবর্তী
প্রথম জামাইষষ্ঠী উপলক্ষ্যে শাশুড়ি খান্নার হরি সাহার হাট থেকে রেডিমেড প্যান্ট-জামা কিনেছিলেন আমার জন্যে। প্যান্টা ছিল প্রাক্তন রাজ্যপাল নুরুল হাসানের সাইজের আর জামাটা ছিল উঠতি কঞ্চিসরু নায়িকার ব্লাউজের মতো আঁটোসাঁটো। হাত তুলতে গিয়ে জামার বগলের জায়গাটা ফঁ্যাস করে ছিঁড়ে গেল। অচিরে সেটা ন্যাতায় নতুন রূপ পরিগ্রহ করেছিল। প্যান্টটা কোমরে পেটো দড়ি দিয়ে বেঁধে কিছুদিন চালিয়েছিলাম— পরে সেটা ভিখারি প্রত্যাখ্যান করেছিল। জামাইষষ্ঠীর দিন শাশুড়ি পঞ্চব্যঞ্জন সহ খেতে দিয়ে প্রায়ান্ধকার ঘুপচি ঘরে হ্যারিকেন জ্বালিয়ে দিলেন। পরে সেটি আমার হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলেন!
শাশুড়ি খেতে দিয়ে বললেন, ''বাবা প্রথমেই গ্র্যান্ডহোটেল থেকে আনা দামি সুস্বাদু ধোকাটা খাও। পরে আমার হাতের পদগুলো খেও কেমন!''
পরে বউ হাসতে হাসতে ইঁটাহত সাপের মতো বেঁকে বেঁকে বলেছিল, ''আসলে মা ধোকাটাই রান্না করে তোমাকে গিলিয়েছিল। বাকিটা কেনা।
ধোকাটা আমার গলায় হরিনামজপা থলির মতো ঝুলছে গো!
অনলাইনে জামাইষষ্ঠী
জুলি লাহিড়ী
নন্দদুলাল একলা ঘরে, মেজাজ খারাপ খুব
কখনও শুয়ে, কখনও বসে, চিন্তায় দেয় ডুব।
বিয়ের পরে প্রথম এল জামাইষষ্ঠীর পালা
জেগে জেগেই স্বপ্নে দেখে— মস্ত কাঁসার থালা।
সরু চালের গরম ভাতে গাওয়া ঘি-এর গন্ধ
কষা খাসির মাংস, মাছের মাথাটা নয় মন্দ।
গলদা চিংড়ি, ইলিশ ভাপা, সুক্তো, সঙ্গে ভাজা
দই মিষ্টি মণ্ডামিঠাই, আমগুলো বেশ তাজা।
বন্ধ ঘরে বেজে ওঠে হাতের মুঠোফোন
ভিডিও কলে শাশুড়ি আছেন, বড্ড আপনজন।
শাশুড়ি বলেন, জামাইবাবা, লকডাউনের দিনে
শ্বশুর তোমার অর্ডার দিয়ে এনেছে মিষ্টি কিনে।
ধান দুর্বা আছে, আছে খাবার রকমারি
করোনা ভয়, অনলাইনে তাই ষষ্ঠী সারি।
কপাল চাপড়ে নন্দ কাঁদে, কেন করলাম বিয়ে
জামাইষষ্ঠী যায় পেরিয়ে নাকের ডগা দিয়ে...
জামাইষষ্ঠী
শুভজিৎ রক্ষিত
এক নবদম্পতির জামাইষষ্ঠী—
জৈষ্ঠ্যের দাবদাহে নতুন জামাই তলব পেয়ে চলে শ্বশুরবাড়ি।
মেয়ের বাবা ঝোলা হাতে; আম, কাঁঠাল আর ইলিশ তাতে;
খোঁজে মাছের ডিম!!
মেয়ের মায়ের খুন্তি নাড়া, পাক খায় যত কড়াই জোড়া ক্ষির!
বাড়ির সবাই ব্যস্ত যখন মেয়ে আসে, সঙ্গে জামাই তখন; ব্যস্ততা আর আদরের ভিড়।
দিদা দাদু ক্লান্ত চোখে, নাতনি-জামাই মিষ্টি মুখে।
ব্যস্ত মায়ের হাতে তখন পুজোর থালার ঘটা।
পূজাপাট সেরে তবে, জামাইরাজা বরণ হবে।
রাজ আহারে সাজবে আজ, জামাইষষ্ঠী জিন্দাবাদ।
পাঁচুবাবুর পাঁচ জামাই
অংশুমান চক্রবর্তী
পাঁচুবাবুর ঘরে এল পাঁচ মেয়ে পাঁচ জামাই
সকাল থেকে ব্যস্ত সবাই, তাই তো অফিস কামাই।
জামাইষষ্ঠী আসে কেবল করতে পকেট ফাঁকা
মাংস পোলাও মিষ্টি পায়েস, খরচ অনেক টাকা।
পাঁচু ভাবেন, শ্বশুর হয়ে বাড়ল বড়ো জ্বালা
জামাইগুলো খাবার ওড়ায় শুধুই থালা থালা।
গিন্নি বলেন, যখন তুমি জামাই ছিলে নিজে
বছরে এই দিনটা এলে করতে ভাবো কী যে!
পাঁচু বলেন, একা জামাই ছিলাম তখন আমি
পঞ্চ জামাই নিয়ে এখন দরদরিয়ে ঘামি!
Leave a Reply
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Comments
এবারের জামাইষষ্ঠী সংকলনটি অত্যন্ত চমৎকার ও গুরুত্বপূর্ণ বলে প্রতীয়মান হয়েছে। রম্য নিবন্ধ, ছোটছোট গল্প এবং কবিতায় একেবারে প্রাণবন্ত। চিরন্তন বাঙালীয়ানা সংস্কৃতির জামাইষষ্ঠী একদিকে যেমন মধুর আরেকদিকে তেমনই বিধুর। তবুও এই ঐতিহ্য আবহমানকাল টিকে থাকুক এটাই কাম্য। কালি কলম মনন এর সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ। প্রবক্তা সাধু।
- Probokta Shadhu
Wed, Jun 16, 2021 9:50 PM
Sottie opurbo..ovutopurbo
- INDRAJIT MALAKAR
Thu, Jun 17, 2021 10:45 AM